পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 35

________________________________________
চাঁদ নেমেছে দিনের আকাশ ঠেলে।কিন্তু ইহানের মদের বোতল এখনো গড়াগড়ি করছে ফ্লোরে।ভাঙ্গা টুকরো পরে আছে এক কোনে।সে নিজে পরে আছে সোফার কোণ ঘেঁষে।লাউড স্পিকারে গান বাজছে।
তার মাথা কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে যেন।ঈমান তাড়াহুড়া করে রুমে ডুকে পরে।হাতে তার লাল কার্ড।ইহান শুয়ে গড়াগড়ি করছে।গান বন্ধ হতেই সে রেগে চোখ খুলে।অনেক মদে গিলেছে তাই তার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।কাল সন্ধ্যা থেকে এখন রাত পর্যন্ত সে শুয়েই আছে।ঈমানকে দেখেই রেগে ইহান বললো,
—-“ বাবা সমস্যা কি তোমার??গান বন্ধ করেছ কেন??হোয়াই???”
ঈমান ছেলের কাছে হাটু গেড়ে বসলো।মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—-“ তোকে অরিত্রান খান ইনভাইট করেছে পার্টিতে আর তুই না যেয়ে এখানে বসে আছিস??যাওয়া উঁচিত।শুধু তুই না আমিও যাবো।চল।আজ বড় একটা ডিল হওয়ার কথা মিষ্টার রউশানের সাথে তুই যানস না??হতে পারে আমাদের সাথে ডিল করবে!!”
ইহান চুক করে শব্দ করে চোখমুখ কুচঁকে নেয়।বিরক্তি ভরা গলায় বলে,
—-“ আমি যাবো না।আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
ঈমান ছেলেকে বললো,

—-“ তোর কত মেয়ে লাগবে বল??আমি জোগাড় করে দিবো।চিন্ত করিস না।”
—-“ না বাবা আমার ওকেই চাই।”
ঈমান বিরক্ত হয়ে বললো,
—-“ আচ্ছা যা ওই মেয়েই তোর হবে।নাম কি ওই মেয়ের??”
—-“ ওয়াসেনাত!”রিমনের শান্ত গলা।
ঈমান নিজেই বেকুব হয়ে বললো,
—-“ মেয়ের নাম যেনে আমার কাম নাই বাপের নাম বল??”
ইহান হাসলো।ইমান ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ হাসার কি আছে??”
ইহান আরো হাসলো।হাসতে হাসতে বললো,
—-“ ওর বাবার নাম শুনলে সমস্যা আছে।”
ঈমান কৌতুহলি হয়ে বললো,
—-“ কি সমস্যা??”
ডুলো পায়ে উঠে দাড়ায় ইহান।মদের বোতল একপাশে রেখে আলমারি থেকে জামা বের করতে শুরু করে।ঈমান আবার প্রশ্ন করে,
—-“ কি সমস্যা বলবি তো??”
ইহান যেন শুনতেই পেলনা।হাসছে শুধু।ঈমান রেগে গেল।চওড়া গলায় বললো,
—-“ বলবি কি সমস্যা??”
ইহান ব্লেজার বের করতে করতে বললো,
—-“ জার্নালিষ্ট তৌফিক আহমেদ!!মেয়ে তৌফিক বিনতে ওয়াসেনাত!!মা ওয়াসিকা জাহান!!”
নামগুলো কানে আসতেই আঁতকে উঠে ঈমান।মাত্র তো জেলের বাতাস খেয়ে বের হয়েছে।আর আসতে না আসতেই এই জার্নালিষ্ট!!!মেজাজ খিঁচে গেলো তার।বাবার অবস্থা দেখে ইহান হাসতে হাসতে বললো,
—-“ জার্নালিষ্টের মেয়ের জামাই মাফিয়া ডন!!!হা হা হা!!ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না বাবা??”
ইহান শিশ বাজিয়ে হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে ডুকে পরে।ঈমান বিড়বিড় করে বলে,
—-“ ওই শালা তৌফিকরে চিনা আছে জেলের ভাত খাওয়াবে ফাসিঁতে ঝুলাবে।দরকার হলে খুন করবে তবুও মেয়ে দিবে না।যা মারাত্নক!!তিন বছর আগেই বুঝা হয়েগেছে।”
ইহান ওয়াসরুমের দরজার বাহিরে উকিঁ দিয়ে বললো,
—-“ শেট আপ বাবা শালা মানে কি??হুম??সম্মান করো।আমার জানেমান হুসনেপারীর বাপ..”
জিভ কামড়ে বললো,
—-“ স্যরি ওর বাবা।”
ঈমান ছেলেরে কিছু গালি দিলো।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে এলো।এই ছেলে যে তার সবচাইতে বড় হাতিয়ার।একে হাত ছাড়া করা যাবে না।কিছুতেই না।
___________________________

অরিত্রানের আসেপাশে দাড়িয়েঁ আছে দু’জন সার্ভেন্ট।একজনের হাতে কনভার্স আর একজনের হাতে ব্ল্যাক ব্লেজার।তার সামনে একজন দাড়িঁয়ে তার টাইয়ের হুক ঠিক করে দিচ্ছে।রিমন শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে রুমে ডুকলো।একজন এগিয়ে এসে ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে দেয়।কনভার্স পরিয়ে দেয় একজনে।লম্বা চুলগুলো দু’হাতে কপাল থেকে সরিয়ে পিছনে উল্টে দেয়।গলার একটা বুতাম খুলে দেয় সে।নিজেকে পছন্দ হচ্ছে না তার।মুহূর্তেই সে বিরক্ত হয়ে উঠে।এতো কষ্টে বাধাঁ টাইটা টেনে খুঁলে ফেলেছে অরিত্রান।রিমন বুঝতে পেরেছে অরিত্রান রেগে আছে।আজ সন্ধ্যা থেকেই সে রেগে আছে।হাত বাড়িয়ে সবাইকে বাহিরে যেতে বললো রিমন।অরিত্রান ব্লেজার খুলে ছুঁড়ে দেয়।আলমারি থেকে নতুন আর একটা বের করে।এভাবে একটার পর একটা ছুঁড়ে মারছে সে।রিমন সব দেখছে।কাঁচের আলমারিতে ঘুঁষি বসিয়ে দেয় সে।রাগ যেন রি রি করছে শরীরে।কাঁচের দরজা ছন ছন করে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে।অরিত্রানের হাত জুড়ে রক্ত।বেয়ে বেয়ে পড়ছে।সেই রক্তে লাল হচ্ছে নিচের ফ্লোর।সাদা ফ্লোর লাল হয়ে উঠছে।রিমন আঁতকে উঠে।দ্রুত এগিয়ে আসে।অরিত্রানের হাত ধরতেই অরিত্রান ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয় সে হাত।রিমন আবার হাত ধরতে চায়।অরিত্রান হাত আরো কাঁচ ভাঙ্গায় চেপে ধরে।রিমনের কলিজা কেঁপে উঠে।চেঁচিয়ে বললো,
—-“ কি করছিস অরিত্রান??হাতের অবস্থা তো খারাপ।আরো খারাপ করছিস!!চিন্তা করছিস কেন যাকে খুঁজছিস পেয়ে যাবি।এই রিমন অত চালাক না।তুই তো মাত্র খবরটা পেয়েছিস ধর্য্য!!
অরিত্রানের চোখ লাল।শরীর তেজি হয়ে আছে।রেগে রুমের সব জিনিস এক এক করে ভেঙ গুরিয়ে দিচ্ছে সে।রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না অরিত্রান।তবুও আজ কাল তাকেও চুপ থাকতে হয়!!অরিত্রান খান চুপ থাকে!!ভাবতেই তার শরীর জ্বালা করছে!!সেই রাগ এই বস্তুগুলোর উপর চালিয়ে দিচ্ছে।রিমন মহা ঝামেলায় পড়েছে।নিচে অলরেডি গেস্ট চলে এসেছে।এখনই অরিত্রান ঝামেলা করছে।রিমন না পারতে একটা মিথ্যা বলবে।যদিও সে যানে না সেটা আদো হবে কি না।রিমন অরিত্রানের পাশে দাড়াঁয়।অরিত্রান মাত্র ফুলদানিটা উপরে তুলেছে।রিমন কে নিজের পাশে দেখে সে তার দিকে ফিরে তাকালো।চোখ গরম করে বললো,
—-“ কিছু বলবি???”
রিমন ভয়ে ভয়ে বললো,
—-“ নিচচচচ চচ চচ!!”
অরিত্রান ফুলদানি ঠাস করে ছুড়ে বললো,
—-“ পরেরটা ভাঙ্গার সময় শুনবো।”
বলেই সে বিছানার পাশের একটা ফুলদানি নিয়ে ছুড়ে দিয়ে বললো,
—-“ এবার বল??”
রিমন চোখ বুজে বললো,
—-“ নিচে সবাই চলে এসেছে।”
অরিত্রান রেগে তেজি গলায় বললো,
—-“ তো আমি কি করবো???ড্রিংক সার্ভ করবো???”
রিহান দু’গালে হাত দিয়ে বললো,
—-“ এই না না।আমি শুধু বললাম নিচে চল।ভাবীও নিশ্চুয়ই এসেছে।”
অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ নিশ্চুয়ই মানে কি???”
রিমন ঢোক গিলে বললো,
—-“ চলেই এসেছে।শুধু তোর অপেক্ষা।”
অরিত্রান উঠে দাড়ালো।শার্ট খুলতে শুরু করলো।ঘামে শরীর ভিজে আছে।রিমন বোঝেনা অরিত্রানকে।কালকেও ভাঙ্গচুড় করেছে আজও।তবে আজ তো হাত কেঁটে বসে আছে।রিমনের বেশ ভয় লাগে এসব।এই ছেলের নিজের গায়ের রক্ত নিজের কাছেই দামি না।ধরে বেঁধে কে রাখবে কে জানে??নিচে যদি ওয়াসেনাত না আসে নিজের মাথাটা তৈরি রাখতে হবে!!কথাটা ভাবতেই আঁতকে উঠে রিমন।

_______________________________
কাঁচের বাড়িটা ঝকঝক করছে।চারপাশে লাইট আর আলোর ছড়াছড়ি।বাড়ির সামনে বিশাল গেট।গেটের দু’কোণায় দু’জন করে চারজন গার্ড।কালো ড্রেস পরে দাড়িয়ে আছে।যাদের কার্ড আছে তাদের ডুকতে দেওয়া হচ্ছে।ওয়াসেনাতদের সিএনজি গেটের সামনে থেমেছে।সিএনজি থেকে নেমে দাড়াতেই একজন গার্ড এগিয়ে যায়।চোখেমুখে বিরক্তির রেখা তার।তাকে দেখে মনে হচ্ছে ওয়াসেনাতদের উপর সে প্রচন্ড রেগে আছে।কিন্তু এই রাগের কোন কারন খুঁজে পেলো না বাবা মেয়ে।গার্ড গলা উচিঁয়ে বললো,
—-“ এই বাড়ির সামনে কি কাজ??যাও এখান থেকে।”
ওয়াসেনাত চমকে বললো,
—-“ আমাদের ইনভাইট করা হয়েছে।”
গার্ড যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে।রাগি গলায় সে বললো,
—-“ হুম!!চিনা আছে তোমাদের মত মানুষকে!!ভালো জামা পড়লেই অরিত্রান খানের বাড়ির সামনে দাড়ানোর যোগ্য হওয়া যায় না।এই নিয়ে শত খানেক লোক তাড়িয়েছি।সবাই বলেছে ইনভাইট করা হয়েছে।কিন্তু কার্ড দেখাতে বললে হাওয়া হয়ে যায়।এই বাহানা সেই বাহানা দেয়।”
ওয়াসেনাত তেজি গলায় বললো,
—-“ আপনি আমাদের একবারো জিজ্ঞেস করেছেন কার্ড আছে কি না??না জিজ্ঞেস করেই চলে যেতে বলছেন কেন??আশ্চর্য্য!!!”
গার্ড তাছিল্য করে বললো,
—-“ সিএনজি করে আর যাই হোক অরিত্রান খানের ইনভাইট করা মানুষ আসতে পারে না।”
তৌফিক হাসলো।ওয়াসেনাত খুবই বিরক্ত হলো।এটা হাসার সময় হলো না কি??তার বাবার উচিঁত ছিলো কিছু কথা শুনিয়ে দেওয়া।কিন্তু তিনি তা না করে হাসছে।তৌফিক কার্ড দেখিয়ে বললো,

—-“ সব শ্রেনীর মানুষকে সম্মান করতে শিখো।গাড়ি থাকলেই সে যোগ্য হবে এটা আশা করি তোমার বস অরিত্রানের শিক্ষা না।চলো ওয়াসেনাত।”
গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।ওয়াসেনাত ভারি গলায় বললো,
—-“ বাবা তোমার ওই লোকটাকে আরো কিছু বলা উচিঁত ছিলো।মানুষকে তার কি আছে তা দিয়ে নয় সে কেমন সেটা দিয়ে বিচার করা উচিঁত।”
মেয়ের কথার জবাবে তৌফিক আবার হাসলেন।ওয়াসেনাত বিরক্তিতে মুখ কুঁচকালো।বাবার এই অর্থ বিহিন হাসির কোন মানে খুঁজে পেলোনা সে।
তৌফিকের বসকেও ইনভাইট করা হয়েছে।তৌফিক তার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে চলে গেলো।ওয়াসেনাত রিমির সাথে কথা বলছিলো।পার্টির কিছু বিশেষ কারন আছে।এর মাঝে একটা হচ্ছে রিমনদের বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া।অরূপ এখনো আসেনি।বাকি সবাই চলে এসেছে।রিমিকে রিমন ডেকেছে।তাই সে ওয়াসেনাতকে বললো,
—-“ তুই অপেক্ষা কর আমি আসছি।”
রিমি শাড়ির কুঁচি হাতে দেয় এক দৌড়।ওয়াসেনাত হাসে।হালকা আকাশি রঙ্গে বেশ সুন্দর লাগছে তাকে।ওয়াসেনাত দাড়ালো না।বাড়ির বাহিরের অংশটাও সুন্দর।একপাশ খালি পড়ে আছে।অপর পাশে সুইমিংপুল।সেই পুলের আসেপাশেও মানুষ আছে।সবার হাতে একটা করে গ্লাস।মেয়েদের ড্রেস হাঁটু পর্যন্ত।এই জামাগুলো দেখলে ওয়াসেনাতের হাসি পায়।বলতে ইচ্ছে করে ভাই কাপড়ের কি অভাব পরেছে??তবে ভুলেও সে এই কথাগুলো বলে না।সে এই দিকে ভীতু খুব।ওয়াসেনাত ঘুরে ঘুরে সব দেখছে।এতো সুন্দর কাঁচের তৈরি বাড়ি সে আগে কখনো দেখেনি।সামনাসামনি তো জীবনেও না।সবই কাঁচের।ভিতরের সবই দেখা যাচ্ছ।কিন্তু কিছু জায়গায় সাদা পর্দা তাই দেখা যাচ্ছে না।ভিতরে অনেক মানুষ।তাই সে বাহিরেই ঘুরছে।বাড়ির সবই সুন্দর কিন্তু এই বাড়িতে ফুলের বাগান নেই।ব্যাপারটা ওয়াসেনাতের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তার মতে সব বাড়িতে একটা বাগান হওয়া চাই।তবে অনেক নাম না জানা গাছ আছে ।মাথা উচিঁয়ে দাড়িয়ে আছে তারা।পাতার উপরে ঝুলছে ফেইড়িলাইট।বাতাসের হালকা বারিতে গাছ সহ পাতা দুলছে।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে হিরা ঝড়ছে।সুইমিংপুলের পাশ ঘেঁষে হাটছেঁ সে।নীল সচ্ছ পানিতে নিজের ছাঁয়ামূ্র্তি দেখে সে নিজেই একটু হাসলো।একটা কোণার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে।কিন্তু কি আশ্চর্য্য সেদিকে কেউ যাচ্ছে না।ফিসফিস করে কথা বলে আবার চুপ হয়ে যাচ্ছে।একজন লম্বা লোক দাড়িয়ে আছে।গায়ে তার কালো ড্রেস ,কারো সাথে কথা বলছে মনে হয়।ওয়াসেনাত কৌতুহলি হয়ে সামনে আগাতে যাবে তার আগেই ঝপাং করে তার গায়ে ফেইড়িলাইট এসে পরে।মাথা সহ শরীরে জড়িয়ে পরে সব।ওয়াসেনাত ভড়কে যায়।সাথে হালকা ভয়ও পায়।মৃদু চেচিঁয়ে উঠে!!
—-“ আউঁচচচ!!!”
ফোন কানে অরিত্রান দ্রুত পিছনে তাকায়।ওয়াসেনাতকে দেখেই এগিয়ে আসে।ওয়াসেনাত লাইটগুলো সরাতে চাচ্ছে।চোখে মুখে আঁতক নিয়ে সে বিড়বিড় করে বলছে,
—-“ ভালো করে লাগাতে পারে না!!তাহলেই তো আর খুলে মানুষের গায়ে পরে না।এখন খুলবো কিভাবে??”
ওয়াসেনাতের জুবুথুবু অবস্থা দেখে কিছু মেয়ে,মহিলা হেসে উঠে।ওয়াসেনাত চোখবাকিঁয়ে তাকায়।অরিত্রান পরখ করছে ওয়াসেনাতকে।লাল লম্বা গাউন।এই প্রথম ওয়াসেনাত কনুই পর্যন্ত হাতার জামা পরেছে।হাতার পাশে পাথর বসানো।হাতার শেষ অংশে ঝুলছে ঝুড়।দু’হাত ভর্তি লাল কালো কাঁচের চুড়ি।লাল সিল্কের হিজাব।জামার নিচে ভারি কাজ করা।হাতের পিঠের একপাশে হালকা লাল লাল হয়ে আছে।এই ক্ষুদ্র ব্যাপারটাও অরিত্রানের চোখ এড়ালোনা।চাঁদের আলোর সাথে লাইটের আলো যোগ হয়ে অদ্ভুত রূপের লাবন্য ছড়াচ্ছে।বাতাসে ভেসে আসছে একটা মাতাল করা গন্ধ।এটা কি ওয়াসেনাতের গায়ের গন্ধ??মুহূর্তে অরিত্রান নিজেই বললো,হুমম!!হাতার ঝুরের আর চুড়ির শব্দ মিলে দারুন একটা শব্দের সুর ভাসিয়ে তুলছে।যেন এই সুইমিংপুলের পানিতে এই শব্দ মিশে এক হচ্ছে।আর চোখ!!!অরিত্রানের নিজের চোখজোড়াই থমকায়!!নীল চোখে চিকন কাজল ভাসছে!!নীলের মাঝে হালকা কালো,সেই চোখের উপর ,নিচ ঘন পাঁপড়ি।সেই পাঁপড়িতে ভাসছে কালো কাজল!!!ফেইরিলাইটের আলোতে জ্বলজ্বল করছে লাল জামাটা।লাল হয়েছে ঠোঁটজোড়া,গালজোড়া।
ঠাসসস করে অরিত্রান সুইমিংপুলে পরে যায়।ওয়াসেনাতকে দেখতে সে এতোই মনোযোগি ছিলো যে সুইমিংপুলে যে সে পড়ে যাচ্ছে সেদিকে তার খবর নেই।ওয়াসেনাত চোখ তুলে তাকায়।অরিত্রান ডুবে আবার উঠেছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের এমন অবস্থা দেখে খিলখিল করে শরীর দুলিয়ে হেসে উঠে।বাকি উপস্থিত সবাই ভয়ে চুপসে আছে।ওয়াসেনাতই একমাত্র ব্যক্তি যে হাসছে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের দিকে।অরিত্রান পানির উপরে দু’হাত ভাসিয়ে রেখেছে।সিল্কি চুলগুলো সব চোখের উপরে এসে পরেছে।কালো ড্রেস ভিঁজে চুপচুপ অবস্থা।অরিত্রান চোখতুলে ওয়াসেনাতের হাসিঁ দেখছে।কয়েকজন ফিসফিস করে বলছে,এই মেয়ে কি পাগল না কি???”
অরিত্রান চারদিকে একবার তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে।কালো ড্রেস পড়া কিছু গার্ড এগিয়ে এসে বললো,
—-“ সবাই জায়গা ত্যাগ করুন।”
সবাই কথা মত এক এক করে চলে যায়।ওয়াসেনাত এখনো হাসছে।অরিত্রান নিজের গায়ের ব্লেজার খুলে হাতে নেয়।একজন গার্ড ওয়াসেনাতের সামনে চোখ গরম করে বললো,

—-“ আপনি যাচ্ছেন না কেন??”
ওয়াসেনাত নিজেকে দেখিয়ে বললো,
—-“ এগুলো খোলার ব্যবস্থা করলে চলে যেতে পারি।”
গার্ডস পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলাতেই অরিত্রান হাক দিয়ে ডেকে উঠে।নিজের গার্ডসদের নামও সে জানেনা।এগুলো রিমন দেখে।রেগে অরিত্রান বললো,
—-“ এদিকে আয়।”
গার্ডস মাথা নিচু করে সুইমিংপুলের কাছে সে দাঁড়ালো।অরিত্রানের চোয়াল শক্ত।লাল মুখশ্রী।গার্ড ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ভাবছে সে কি করেছে??অরিত্রানের সামনে হাটুঁ গেড়ে বসতেই অরিত্রান ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয় গালে।গার্ড হুমড়ি খেয়ে সুইমিংপুলেই পড়ে।কাশতে কাশতে উঠে দাড়ায় সে।ঠোঁট ফেঁটে গেছে তার।কেন এই চড় দেওয়া হয়েছে সে জানে না।প্রশ্নও করলো না।উঠে যেতে যেতে বললো,
—-“ স্যরি স্যার??”
অরিত্রান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
—-“ চোখের সামনে যাতে আর কখনো না দেখি।জান নিয়ে নিবো।”
গার্ডের অবস্থা খারাপ।উপরে উঠে দেয় এক দৌড়।ওয়াসেনাতের সামনে এসে দাড়িঁয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পানির দিকে তাকিয়ে অরিত্রান চেচিঁয়ে উঠলো,
—-“ তোর সাহস তো কম না!!আবার ওর সামনে দাড়াঁস কিভাবে??”
গার্ডের মাথায় এবার ব্যাপারটা এসেছে।সে বিনয়ের সাথে বললো,
—-“ স্যরি ম্যাম!!!”
ওয়াসেনাত কিছুই বললো না।বুঝলে তো বলবে।সে তো কিছুই বুঝলো না।চারপাশ খালি।কেউ নেই ওয়াসেনাত আর অরিত্রান ছাড়া।ওয়াসেনাত মুখের উপরে হাত দিয়ে হাসি থামাতে থামাতে অরিত্রানের সামনে এসে দাড়ায়।মুখ টিপে হেসে বললো,
—-“ আপনাকে দেখে আমার খুবই হাসি পাচ্ছে।”
অরিত্রান ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে বললো,
—-“ হাসো কে মানা করেছে।”

ওয়াসেনাত ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো।তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—-“ আমি শুনেছি ছেলেরা বুক পকেটে ভালোবাসা নিয়ে ঘুরে আপনি তো চোখ নিয়ে ঘুড়ছেন।”
ওয়াসেনাত আবার হাসছে।অরিত্রান চোখ উঠানামা করছে।সে তাকিয়ে আছে লাইটগুলোর দিকে।জ্বলজ্বল করছে ।ওয়াসেনাতের মাথার উপরের লাইট গুলো বেশি জ্বলছ।ওয়াসেনাতের ফর্সা মুখ হলুদ লাগছে।ওয়াসেনাত হাত নাচিয়ে বললো,
—-“ আজ কি পানিতেই পার্টি করবেন??”
অরিত্রান সিল্কি চুলগুলো দু’হাতে পিছনে ঠেলে বললো,
—-“ তুমি চাইলে দু’জনেই করতে পারি।”
অরিত্রান আবার পানিতে ডুব দেয়।চুল সামনে থেকে পিছনে ঝাকিয়ে নেয়।পানির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা ওয়াসেনাতের চোখে মুখে ছিঁটকে পরে।অপ্রস্তুত হয়ে পরে সে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে এগিয়ে আসে।ওয়াসেনাত ভীতু হয়।যদি টেনে ফেলে দেয়।সে একটু পিছিয়ে যেতে চায়।অরিত্রান আরো এগিয়ে আসে।ওয়াসেনাতের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে সে।হাত বাড়িয়ে ওয়াসেনাতের হাত টেনে ধরে অরিত্রান।ওয়াসেনাত ভয়ে চোখ বড় করে।অরিত্রান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।মাথার চুল ঝাকিঁয়ে ওয়াসেনাতের চোখে মুখে পানির ছিঁটে দেয়।কেঁপে উঠে ওয়াসেনাত।শিরশির করে উঠে পায়ের তলা।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মাথা আর একটু টেনে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—-“ যেখানে ভালোবাসা রাখলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অরিত্রান খান সেখানে ভালোবাসা রাখে না।যত্নের জিনিস যত্নে রাখতে যানে সে।”
অরিত্রান হাত ছেড়ে পুল থেকে উঠে দাড়াঁয়।শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খুলে পানি ঝেঁড়ে নেয়।পাশের একটা টেবিল থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াসেনাতের কাছে এসে দাড়াঁয়।হাত মুখ মাথা মুছে তোয়ালে ওয়াসেনাতের হাতে ধরিয়ে দেয়।তারপর ওয়াসেনাতের আরো কাছে এসে তার গুলো খোলা শুরু করে।ওয়াসেনাত তাকিয়ে দেখছে ভিজা শরীরে অরিত্রানকে।মেয়েরা রূপবতী হয়ে ওয়াসেনাতের জানা আছে তাহলে ছেলেরা কি হবে??এটা তার জানা নেই।যানা থাকলে অরিত্রানকে বলতো সে।ওয়াসেনাতের কোমড় পেচাঁনো শেষ তার খুলে অরিত্রান ফ্লোরে ফেলে দেয়।ওয়াসেনাতের সামনে আর বেশি সময় থাকা যাবে না।সে দ্রুত পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নেটের উড়নার সাথে অরিত্রানের ঘড়ি নাটকিয় ভাবে টান খায়।ওয়াসেনাত উড়না টেনে ধরলো।অরিত্রান আবার পিছিয়ে এসে ওয়াসেনাতের সামনে দাড়িয়ে পরে।ঘড়ি থেকে উড়না ছুটাতে ছুটাতে বললো,

—-“ এতো কাছে কাছে টানলে তো তোমার বাবাকে টপকেই আমি তোমাকে নিজের করে নিবো।তখন না যানি তোমার হিটলার বাবা আমার কি করে??”
ওয়াসেনাত চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
—-“ আপনার এতো সাহস??আমার বাবাকে হিটলার বললেন??”
অরিত্রান হাসলো।হাসতে হাসতে বললো,
—-“ আমার মস্তিষ্ক খুবই ভালো তাই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ভালোই কাজ করে।সে হিসেবে আমার মস্তিষ্ক বলছে আমার লাইফের বিশেষ করে আমার প্রেমের হিটলার হবে তোমার হিটলার বাবা।”
ওয়াসেনাত ফসঁ করে উঠলো।তেজি গলায় বললো,
—-“ একদম বাবা নিয়ে কথা বলবেন না!!আমার বাবাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য আমি কিন্তু আপনার সাথে ব্রেকআপ করবো বলে দিলাম।”
অরিত্রান হো হো করে হেসে বললো,
—-“ প্রেম করলাম কখন যে ব্রেকআপ করবা??”
ওয়াসেনাত ফোনা তোলা সাপের মত নাক ফুলিয়ে আছে।অরিত্রান উড়না খুলে দিয়ে গায়ে জড়িয়ে দেয়।নাকটা হালকা আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে দিয়ে বললো,
—-“ এতো লাল হওয়া আমার জন্য ঝুঁকির বুঝলা পরীজা।শেষে কি না কি করে বসবো।”
বলেই এক চোখ টিপে হাসে।ওয়াসেনাত বিষম খায়।চোখ বড় করে তাকায় অরিত্রানের দিকে।কথাটা বুঝতে পেরে লজ্জায় কুকড়েঁ উঠে নাক ফুলিয়ে বলে,
—-“ অসভ্য!!!”
অরিত্রান ঠোঁট গোল করে হাসে।নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো,
—-“ তাই না কি!!বিনা দোষে আমি দোষি হলাম।এতে তো লস বলো??বিজনেস ম্যান কখনো লসে পরতে চায়না জানো তো!!আমি বরং একটু অসভ্যতামি করি??তাহলে তোমার বলা কথা মিথ্যা হবে না।”
ওয়াসেনাত কিছুটা সরে আসে।অরিত্রান ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়।কাছে এসে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—-“ ফেইড়ি লাইটে জড়িয়ে তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো।ইউ আ’র লুক লাই’কে ফেইরিপরী!!”
অরিত্রান সামনে এগিয়ে যায়।ওয়াসেনাত পিছন থেকে দেখে।মিটমিট করে হেসে বলে,
—-“ অসভ্য!!!”

_________
ইহান প্রচন্ড রাগ নিয়ে বসে আছে।কারন তার সাথে রিপা এসেছে।নিষেধ করার পরেও এসেছে।ইহানের মাথায় এটাই আসছে না রিপা কার্ড পেয়েছে কোথায়??কে দিলো??অরিত্রান??কিন্তু অরিত্রান তো রিপাকে চিনে না।তাহলে কে দিলো??না কি সে নিজেই জোগাড় করেছে??বুঝতে পারছে না ইহান।অরিত্রানের অপেক্ষায় আছে সবাই।সে এখনো আসেনি।ঈমানের চেহারা দেখার মত!!সে তৌফিকের চোখের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠছে।ভয়ে চুপচাপ বসে আছে সোফায়।তার সাথে অনেকেই কথা বলছে ।সে যে জেল ফেরত আসামি সে দিকে কারো তেমন মাথা ব্যথা নেই।সবই ইহানের ভয়ে।মাফিয়া বলে কথা।ছেলেকে নিয়ে গর্ব হয় ঈমানের।ভয় মানুষের বড় দুর্বলতা।ঈমান টাই টেনে নিজে নিজে হাসলেন।ইহান মদের গ্লাস হাতে বসে আছে!
মাদৌলি তার বাবার সাথে পার্টিতে এসেছে।অদ্ভুত ভাবে আজ সে শাড়ি পরেছে।নেটের শাড়ি।চুল ছেড়ে দিয়েছে।হাতে পরেছে ডায়মন্ডের সাদা পাথরের চুড়ি।কালো শাড়ি।হাই হিল।হাতা কাটা ব্লাউজ।মুখে হালকা মেকআপ।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।হলে প্রবেশ করতেই সব ছেলে,মেয়ের চোখ তার দিকে তাক হয়ে আছে।যেন স্বর্গ থেকে হুর এসেছে।চোখ ঝাঝাঁনো রূপ।ইহানের নেশা জড়ানো চোখও ঝাঁ ঝাঁ করে উঠেছে।হাতে কালো ব্যাগ চেপে সে হলের মাঝে এসে দাড়িঁয়েছে।মেয়েরা হিংসার চোখে তাকিয়ে আছে।রিমন নিজেও অবাক??মেয়েটাকে আজ সত্যি মারাত্নক লাগছে।রিমি রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রিমনের দিকে।তার নিজের মুখই হা হয়ে গেছে।রিমি রিমনের মুখ হাত দিয়ে ঠেলে বন্ধ করে দেয়।রিমন বিষম খায়।রিমির দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বললো,
—-“ স্যরি!!!”
রিমি দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে।চোখ সরিয়ে সামনে হেঁটে যায়।ওয়াসেনাত কে খুঁজে নিয়ে আসে।বিড়বিড় করে কানে কানে বলে,
—-“ ওই শয়তান মাদৌলি এসে হাজির হয়েছে।”
ওয়াসেনাত একটু চারপাশে তাকিয়ে বললো,
—-“ কোই?”
—-“ আরে ভিতরে চল।দেখবি আছে।”
ওয়াসেনাত ভিতরে যায়।অরূপ দরজার কাছে দাড়িয়েই মাদৌলিকে দেখছে।তাক লাগিয়ে দিয়েছে যেন সবাইকে।তৌফিক একবার চোখ তুলে মাদৌলিকে দেখে।মনে মনে তার মোটেও পছন্দ হলো না।এতো কিছু দেখিয়ে শাড়ি পড়ার কি আছে।ওয়াসেনাত অরূপের পাশে এসে গলা খঁক খঁক করে কেশে বললো,
—-“ কি ভাইয়া পছন্দ হয়েছে না কি??”
অরূপ ওয়াসেনাতকে খেয়াল করলো না।অন্যমনষ্ক হয়ে বললো,
—-“ বাপরে কি হট মেয়ে!!পছন্দ হবে না এমন কিছু নেই এর মাঝে।”
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—-“ আব্বুরে বলি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে!!”
অরূপ হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর মত বললো,
—-“ এদের বিয়ে করে লাভ নাই।কিছুই তো বাকি রাখে নি।সব দেখিয়ে বেরাচ্ছে।ছেঃ!!
—-“ আর তুই খুব ভালো না??ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন??তাকালে দোষ নাই দেখালে দোষ???”
অরূপ ভড়কে যায়।পিছনে তাকিয়ে দেখে ওয়াসেনাত মুখে হাত দিয়ে হাসছে।রিমি রাগে রি রি করছে।অরূপ জোড়পূর্বক হেসে বললো,
—-“ ইয়ে মানে তুই পিছনে কি করছিস??”
—-“ তোরে দেখি!!”রিমির কাট কাট জবাব।
অরূপ মাথা চুলকে বললো,
—-“ আসলে আমি মাত্র এসেছি!!”
—-“ হইছে তোরে আর বলতে হবে না।তুই দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে দেখ।আমরা যাই।চল ওয়াসু!!”
অরূপ নিজের মাথায় নিজে গাড্ডা মেরে ওয়াসেনাতকে পিছন থেকে ডাকে,
—-“ ওয়াসু!!”
ওয়াসেনাত হাসতে হাসতে বললো,
—-“ আপনি দেখায় মন দেন ভাইয়া!!”
সবার অপেক্ষা অরিত্রান এক ঘন্টা পরে নিচে আসে।অরিত্রানের গায়ে লাল শার্ট।কালো ব্লেজার।ঘড়ির হুক লাগাতে লাগাতে নিচে নামছে সে।ঘরময় নিশ্চুপ হয়ে আছে।শুধু অরিত্রানের জুতোর শব্দ ভেসে আসছে।ওয়াসেনাত চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে।চারপাশে কালো লেদারের সোফা।কালো টি-টেবিল,মদের দোকান মনে হচ্ছে একটা কোণাকে।চারপাশ দামি আসবাবপত্রে সাজানো।উপরে বিশাল ঝাড়বাতি।কোনায় কোণায় বিশাল ফুল দানি।নিচের ফ্লোরও কাচেঁর।সিঁড়িগুলোও কাঁচের।আসেপাশে সাদা পর্দা ঝুলছে।কাচেঁর জানালা দেখে ওয়াসেনাত অবাক হয়।বাপরে জানালাও আছে!!ওয়াসেনাত একমাত্র ব্যক্তি যে ঘুরে ঘুরে দেখছে সব।বাকি সবার চোখ অরিত্রানের খটখট পায়ের শব্দের মত তার সাথে।অরিত্রান নিজেও একটু অবাক!!যেখানে এতো নিশ্চুপ হয়ে সবাই তাকে দেখছে সেখানে ওয়াসেনাত তার বাড়ি দেখছে।হালকা হাসলো সে।ওয়াসেনাত যে কি এটা তার চাইতে ভালো কে আর জানবে।ওয়াসেনাতের বিশাল লম্বা জামা ফ্লোরে ছড়িঁয়ে আছে।ওয়াসেনাতের তালে তালে সে জামা ঘুরছে।অরিত্রান তাকিয়ে আছে সেদিকে।সবাই এবার নিজেদের দৃষ্টি ওয়াসেনাতের দিকে দেয়।চারপাশে হালকা মিউজিক ভাসছে।সবার চোখ ওয়াসেনাতের দিকে থাকলেও ওয়াসেনাত একটা ফুলদানি দেখতে ব্যস্ত।কাঁচের ফুলদানির উপরে সোনালি কাজ।কি অসাধারন ডিজাইন!!তাজ্জব হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে সে।তৌফিক ফোনে কথা বলছিলো।ওয়াসেনাতের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে দেখে ফোন কাটতে নেয় ,ওয়াসেনাত হালকা ঘুরে তখনই জামার সাথে লেগে একটা ফুলদানি ঠাসসস করে নিচে পরে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়।ওয়াসেনাত পিছনে ঘুরলেই তার জামায় জড়িয়ে যাবে কাঁচের টুকরো টুকরো অংশ।ফুলদানি থেকে নীল পানি বের হচ্ছে।কাঁচের চারকোণা ফুলদানি ছিলো।ওয়াসেনাতের পায়ে জুতো নেই।ভুলে বাহিরে খুলে রেখে এসেছে।জামার পিছনের অংশ অনেক লম্বা।সামনের অংশ তার তুলোনায় ছোট।অরিত্রান তীক্ষ্ন চোখে তাকায়।সাদা পা জোড়া খালি দেখেই চমকে উঠে সে।ওয়াসেনাত চারপাশে ঘুরে দেখছে কোথায় কি ভেঙেছে।অরিত্রান সিঁড়ি দিয়ে না নেমে পাশ থেকে টপকে লাফিয়ে দৌড়ে আসে।তৌফিক ফোন পকেটে নিতে নিতে চেঁচিয়ে বলে,
—-“ ওয়াসু সরো!!”
অরিত্রানের দৌড় দেখে সবার সাথে ওয়াসেনাত নিজেও অবাক!!হচ্ছেটা কি??অরিত্রানের এমন দৌড়ের কারন কি??সে ??ওয়াসেনাত পা এগিয়ে চারপাশে দেখতে যাবে তার আগেই অরিত্রান ওয়াসেনাতের পায়ের তালু নিজের হাতে আকড়েঁ নেয়।সবাই স্তব্দ!!ওয়াসেনাত নিজেও অবাক!!অরিত্রান রাগে ফঁস ফঁস করে বললো,
—-“ স্টুপিড না কি তুমি??এই কাঁচ নরমাল কাচঁ না।আর এই পানি,পায়ে পুশ হলে বা পানি লাগলে কি হবে যানো??পায়ে শুধু ইনফেকশন হবে না!!পা কাটতে হবে!!ডাফার!!”
ওয়াসেনাত এত কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
—-“ কিন্তু কেন??মানে এই ফুলদানি এতো আলাদা কেন??”
—-“ আগে পিছিয়ে যাও !!সরো!!”
ওয়াসেনাত সরে দাড়ায়।অরিত্রান হাটুতে ভড় দিয়ে থেকেই বললো,
—-“ where are your shoes??”
ওয়াসেনাত নিজের পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সবার পায়ের দিকে তাকায়।অবাক হয়ে বলে,
—-“ সবাই জুতো পরে এসেছে??”
অরিত্রান দাঁড়িয়ে রাগে কটমট করে বললো,
—-“ ইডিয়েট!!গার্ডস ম্যামের জুতো এনে দেও।”
ওয়াসেনাত নিজেই বেশ লজ্জিত।নরমালি এমন কাঁচের ফ্লোরে জুতো পরে আসে কি না সে জানে না।রিমির সাথে ঢুকার সময় অত খেয়াল করেনি।তাই তো খুলেই চলে এসেছে।গার্ড ওয়াসেনাতের জুতো এনে দেয়।সবাই ফিসফিস করছে।চারপাশে আতঙ্ক।সবার আগ্রহ কে এই মেয়ে!!অরিত্রানের চোখে মুখে প্রচন্ড রাগ।এই ফুলদানি খুবই আলাদা ভাবে তৈরি।কিনার সময় নিষেধ করা হয়েছিল তাকে।তার তো ঝুঁকি পছন্দ।তাই কিনেছে সুইজাল্যান্ড থেকে।ফ্লোরের নীল পানি দেখে ওয়াসেনাত প্রশ্ন ছুঁড়ে বলে,
—-“ নীল পানি গুলো কথা থেকে এসেছে।আর এই দাঁত??”
অরিত্রান কিছুই বললো না।ফুলদানিতে দাঁত খোদাই করা ছিলো।সাপের দাঁত।ফ্লোর পরিষ্কার করতে বলা হলো।তৌফিক মেয়ের বাহু টেনে নিজের বুকে চেপে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ আ’ম স্যরি স্যার।ও আমার মেয়ে।”
অরিত্রান না চেনার ভঙিতে বললো,
—-“ ও তাই না কি??”
তৌফিক কন্ঠ ছোট করে বললো,
—-“ হুম স্যার।আর আমি প্রচণ্ড দুঃখিত।আপনি ফুলদানির দাম বলেন আমি পরিশোধের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
অরিত্রান ব্লেজার পিছনে উড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাড়াঁলো।ভ্রু নিচের দিকে নামিয়ে নেয় সে।তৌফিক অপ্রস্তুত হয়ে পরে।ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“ ব্যথা পেয়েছ কি??”
ওয়াসেনাত মাথা নাড়ালো।অরিত্রানের চোখ তীক্ষ্ন।তৌফিক মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—-“ ঠিক ভাবে চলা ফেরে করলে কি হয়।”
ওয়াসেনাত হেসে বললো,
—-“ কিছুই হয় না।আমি ঠিক আছি বাবা।”
তৌফিক অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ স্যার দামটা যদি বলতেন!!”
অরিত্রান হাসলো।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এক একজনের চোখ কপালে।অরিত্রান ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে চুল সরিয়ে বললো,
—-“ আপনি মনে হয় খুবই সৎ।যাই হোক এর মূল্য দিতে হবে না।আপনার মেয়ে সেফ তো সব সেফ!!”
অরিত্রান সামনে থেকে সরে যায়।অন্যদের সাথে কথা বলায় সে মত্ত।তৌফিক গভীর চোখে অনুসন্ধান চালিয়েও অরিত্রানের কথার মানে বের করতে পারলো না।
পার্টি জমজমাট হয়ে উঠেছে।কেউ নাচ করছে তো কেউ গান করছে।তৌফিকের পাশে ওয়াসেনাত কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে তৌফিক কোথাও যেতে দিচ্ছে না।আজকের পার্টি রিমনদের জন্য।অরিত্রান একটা বড় বাজেটের ডিল সাইন করেছে তাই এই পার্টির আমেজ আরো বেড়েছে।অরিত্রান সোফায় পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছে।তার সামনে ইহান।অরিত্রানের ইচ্ছে করছে এখনি মেরে পুঁতে দিতে।ইহানের নামে এত এত রাগ নিজের ভিতরে পুঁষে রেখেছে বলে বুঝাতে পারবে না কাউকে।চোখ দু’জনেরই তেজি।রিমন ভাবে,এরা কি অদ্ভুত।চোখদিয়েই শত্রুতা উদ্ধার করতে পারে।এতো তেজি চোখ হয় না কি??অরিত্রানের চোখ দেখলেই তার মাথা ঘুড়ায়।সবুজ চোখ!!গাঢ় একটা রং!!এই রঙের চোখ আর আছে কিনা সে যানে না।অরিত্রান একবার তাকালেই কলিজা কাঁপে।আর এই ব্যক্তির কলিজা কাপিঁয়েছে বাচ্চা একটা মেয়ে।রিমন নিজে নিজে হাসে।সবাই শুধু ওয়াসেনাতকে দেখছে।ব্যাপারটা ওয়াসেনাতের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।সাবার অরিত্রানের আজকের ঝালাঁক দেখে মনে হচ্ছে স্পেশাল কেউ এই মেয়ে!!কেউ কেউ তো বলাবলি করছে এই মেয়ের সাথে অরিত্রান খানের কিছু তো চলে!!মাদৌলি ঘুরে ঘুরে সবার কথা শুনছে।ওয়াসেনাতের মাথা থেকে পা ,পা থেকে মাথা সব দেখা শেষ তার।স্পেশাল কিছুই দেখলো না সে।উল্টা বড্ড ব্যাকডেটেড লাগছে।অরিত্রান এই মেয়ের পা বাচাঁতে লাফিয়ে দৌড়েছে!!রিমি রিমনকে নিয়ে টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়।জোড়া জোড়া নাচ করছে অনেকেই।অরিত্রান অনেক সময় বসে ছিলো।ইহানকে রিপা নিয়ে গেছে।মেয়েটাকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান কশতে হচ্ছে ইহান কে।অরিত্রান উঠে দাড়াঁয়া।সবাই আবার যার যার কাজ ফেলে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রান উঠেছে মানেই কিছু হবে।অরিত্রানের দৃষ্টি ওয়াসেনাতের দিকে।সে এগিয়ে যাচ্ছে এক পা একপা করে।ওয়াসেনাত ভীতু চোখে তাকায়।মনে মনে বিড়বিড় করে,আজ কি বাবার সামনে বাশঁ খেতে হবে।এই লোক তো খাইয়েই ছাড়বে।অরিত্রান ব্লেজার খুলে রেখেছে।পকেটে হাত গুঁজে সে ওয়াসেনাতের সামনে দাড়িঁয়েও সরে তৌফিকের সামনে দাড়াঁয়।সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে ছিলো।অরিত্রানের গতি পরিবর্তন দেখে সবাই সবার কাজে মন দেয়।হালকা হালকা গান বাজছে।তবুও সবার কান খাড়া।অরিত্রানের দিকে মুখিয়ে আছে সবাই।অরিত্রান ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
—-“ মিষ্টার তৌফিক!!”
তৌফিক অবাক হয়ে তাকায়।অরিত্রান তার সামনে কেন??ছোট করে জবাব দেয় তৌফিক,
—-“ ইয়েস!!!”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে একবার তাকায়।তৌফিক মেয়ের একটা হাত বাচ্চাদের মত ধরে আছে।অন্য হাতে জুসের গ্লাস।পাশে তার বস।সবাই আবার কৌতুহলি হয়ে তাকায়।ওয়াসেনাতের ভয়ে বুকে হাতুরি পিটা হচ্ছে।অরিত্রান হাত বাড়িয়ে বললো,
—-“ Can I dance with your daughter.”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।তৌফিক তাজ্জব বনে দাড়িয়ে আছে।বিস্ময়ে হতবাক সে।ওয়াসেনাত নিজেও শক্ট!!!কি বলছে এই লোক??পাগল হলো না কি??পৃথিবীতে এই প্রথম মনে হয়ে কেউ এমন আজগোবি অফার দিচ্ছে কোনো মেয়ের বাবাকে!!!ওয়াসেনাত নিশ্চিত আজ এখানে মারামারি হবেই!বাবা নিশ্চিত অরিত্রানের গালে ভড়া ময়দানে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিবে!শুধু একটা