ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 14
হৃদ আমায় দুই কাঁধে হাত রেখে ঠেলে দূরে সরাতে লাগলো আমি ওর হাতদুটো নিয়ে নিজের কোমড়ে গুজে দিলাম।হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।আমি হৃদের শার্টের কলারটা টেনে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে গিয়ে মুখটা মলিন করে বললাম সব ভুলে গেছো? হৃদ কোনো কথা বলছে না দেখে ওর শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগলাম। হৃদ আমার হাতদুটো ধরে বসলো।আমি বললাম কি হলো মনে পরছে না? ওর দু’পায়ের উপরে পা রেখে দাড়িয়ে একটু উঁচু হয়ে মুখের কাছে মুখটা এনে বললাম মনে করো না হৃদ।মাথাটা আকড়ে ধরে হৃদের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হৃদ আমায় এক ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দিয়ে আমার চুলের মুঠি টেনে দাড় করিয়ে বলল নষ্টামি করতে এসেছিস এখানে? এখন বুঝছি মেঘের তো কোনো দোষই না। নিশ্চয় ওকে তুই জোর করেছিলি। তুই এতোটা নোংরা ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।বল আর কত ছেলের সাথে বেডে শুয়েছিস।কত ছেলেকে নিজের শরীর দিয়েছিস? এই বাচ্চাটা মেঘেরই না অন্যকারও?
আমি হৃদকে বলার চেস্টা করলাম হৃদ শুনলো না।আমাকে টেনে এনে চেম্বারের বাইরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।আমি ছিটকে পরে যেতে লাগলাম এমন সময় মেঘ স্যার এসে আমার হাতটা ধরে বসলো।সেটা দেখে হৃদ আরও রেগে গিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে চেম্বারের ভেতরে ঢুকে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। স্যার আমার কাছে জানতে চাইলো হৃদের রাগের কারণ।আমি স্যারকে সব খুলে বললাম।স্যার সব শুনে হৃদকে বোঝাতে ওর চেম্বারের ভেতরে যেতে চাইলো।আমি স্যারকে আটকালাম।স্যারকে বললাম হৃদ এখন প্রচন্ড রেগে আছে।আমার কথা তাই শুনছে না আপনি গেলে ও যদি আপনার গায়ে হাত তোলে? ওর রাগটা একটু কমুক আমি নিজে ওকে বুঝিয়ে বলব।
নূর আপু পেছনে দাড়িয়ে আমার আর স্যারের বলা কথা সব শুনে ফেললো।স্যার চলে যেতেই আমার হাত ধরে টেনে নিজের কেবিনে এনে বলল
হৃদ কি সত্যি তোকে ভালোবেসেছে? জবাব দে ফুল।কি বলছিলি মেঘকে তুই? তোকে না বলেছিলাম হৃদ আমার।মেঘের সন্তান তোর গর্ভে আর তুই হৃদের সাথে মেঘের বাড়িতে বাসর করেছিস এটা জেনেও মেঘ কেন রাগলো না? মেঘ কি তোকে ভালোবাসে না? উত্তর দে ফুল।আমাকে ঝাকিয়ে আপু বললো কি চলছে তোর মনের মধ্যে? মেঘকে রেখে এখন হৃদকে ধরেছিস? আমি আপুর কথার কোনো উত্তর দিলাম না।কারণ আমি জেনে গিয়েছি এই সমস্ত সমস্যার জট আপুই পাকিয়েছে।আমার চুপ থাকা দেখে বিরক্ত হয়ে আপু আমায় দুগালে চড় মারতে লাগলো।আমাকে টেনে ধরে ঝাকিয়ে বলল চুপ করে আছিস কেন? আমি কাঁধ থেকে আপুর হাতদুটো এবার নামিয়ে দিয়ে বললাম হৃদ আমার স্বামী। ও আমাকে ভালোবাসে।তুমি ওকে কেন বলেছিলে আপু আমি মেঘ স্যারকে ভালোবাসি? আমিও হৃদের মতোই ওকে খুব ভালোবাসি। আর আমি প্রেগনেন্ট নই।মেঘ স্যার নির্দোষ হয়ে শাস্তি পাচ্ছিলো তাই আমি মিথ্যা বলেছি।অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো তুমি আপু।আমার কথা বিশ্বাস করও স্যার তোমাকে খুব ভালোবাসে।আমার আর হৃদের মাঝ থেকে তুমি সরে যাও।
আপু রেগে আমায় এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল ভুলেও কখনো ভাববি না আমি সরে যাবো হৃদের জীবন থেকে। হৃদকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি।এতোগুলো বছর ওর জন্য অপেক্ষা করেছি আমি।হৃদকে ছোটবেলা আমিই তোর নামে উশকাতাম।কারণ ওর চোখে তোর প্রতি ছিলো ভালোবাসা। আমিই ওটা ঘৃনাই পরিনত করেছিলাম তোকে আমাদের বাড়ির থেকে তাড়ানোর জন্য।হৃদের বাবা তোকে আমাদের বাড়িতে এনেছিলো।একটা রাস্তার মেয়ে তুই আমাদের বাড়িতে থাকবি সেটা হতে পারে না।বাবা-মা মারা গিয়েছে অনাথ আশ্রমে যা।তা না করে আমাদের বাড়িতে এসেছিস।সব কিছুতে তোর দাবীটা একটু বেশি ছিলো।খাবার, পোশাক এমনকি আমার খেলার পুতুলটাও তুই আহ্লাদী স্বর তুলে নিজের করে নিয়েছিলি।আমি পারতাম না তোকে সহ্য করতে।একটা রাস্তার মেয়ের এতো ভালোবাসা পাবার কোনো যোগ্যতাই নেই।কিন্তু আমার সব আশা ভেঙে গেলো যখন অনাথ আশ্রমে রেখে আসার কিছুদিন পর আমার বাবা-মা তোকে দত্তক নিয়ে ফিরিয়ে আনলো।একমাত্র তোর জন্য হৃদকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।আমাকে সারাটা জীবন হোস্টেলে থেকে পড়তে হলো।বাবা-মায়ের আদর তুই বেশি পেয়েছিস আমার থেকে।হ্যাঁ তোর বাবা-মায়ের মৃত্যুটা কাকুমণির হাতে হয়েছে।কিন্তু সেটা ছিলো এক্সিডেন্ট।তাই বলে তোকে বাড়িতে আনতে হবে?
আমি আপুকে বললাম এতো রাগ আমার উপরে তোমার? একটাবার আমাকে বলতে আমি তোমার যা যা নিয়েছি সব তোমায় ফিরিয়ে দিতাম।আপু আমায় ঘুরিয়ে বলল, হৃদকে দিয়ে দে।আমি বললাম পারবো না আপু। হৃদ আমার স্বামী। আপু বলল কিসের স্বামী? কি প্রমাণ আছে হৃদ তোকে বিয়ে করেছে? পারলে প্রমাণ করে দেখা।আমি আপুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।আপু জোড়ে হেসে উঠে বলল হৃদ ফিরে আসবে শুনে তোকে আমি নিজ দায়িত্বে এই হসপিটালে এডমিশন করিয়েছিলাম।যেন তুই বাড়ি থেকে দূরে থাকতে পারিস।হোস্টেলে থেকে নিজের মতো জীবনটা উপভোগ করতে পারিস।এতে যদি তোর জীবনে কেউ এসে যায় তাহলে আমি আমার হৃদকে পাবো।বিয়ের দিন তুই যখন বললি তুই প্রেগনেন্ট।আমি বিয়ে না করে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে থানায় গিয়ে মেঘকে ছাড়িয়ে এনেছি।তোকে ভালোবাসি বলে না।তখন আমি ভেবেছিলাম তুই যদি মেঘকে ভালোবেসে থাকিস।মেঘকে নিয়ে সুখী হোস তাহলে হৃদ তোকে অনেক ঘৃণা করবে।আর ওর মনে আমি দ্রুত নিজের জায়গা করে নেবো।আর এখন বলছিস তুই প্রেগনেন্ট না? সমস্যা নেই এখন তুই যাই বলিস না কেন তোর কেরিয়ারের ক্ষতি হবে।আবির চৌধুরীর হসপিটাল এটা।তুই তার ভাবনা নিয়ে, ফিলিংস নিয়ে খেলেছিস? ভুলে যাস না তুই তাকে কি কথা দিয়েছিলি।নিজের ভালো চাস তো মেঘকে বিয়ে করে নে।প্রেগনেন্ট হয়ে সন্তানের যত্ন নে।এখন যা আমার সামনে থেকে বলেই একটা ধাক্কা দিলো আপু।আমি কিছুটা ছিটকে গিয়ে দরজার সাথে ঘা খেয়ে কপালটা কেটে গেলো।আমার কপাল থেকে রক্ত ঝরছে।সেদিকে আমার খেয়াল নেই।ভাবছি এটা আপুর কোন রূপ?
আপুর কেবিন থেকে বেড়িয়ে আনমনা হয়ে হাটছি আমি।হঠাৎ হাতে কারও স্পর্শ পেয়ে ঘুরে দাড়াতেই কেউ আমায় কাছে টেনে নিলো।আমার থুতনিতে হাত রেখে রুমাল দিয়ে কপালের রক্ত মুছতে লাগলো।আমি চোখ তুলে হৃদের মুখটা দেখে কেঁদে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।বললাম তুমি এসেছো হৃদ।তোমার মনে পরেছে সব? হৃদ ছলছল চোখে আমাকে টেনে মুখটা ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল আমাকে ক্ষমা করে দে ফুল।আর কখনো তোকে আমি ভুল বুঝবো না।মেঘ আমাকে সব বলেছে।তুই শুধু আমার।
চলবে,,,,,
Comments