ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 15

আপুর কেবিন থেকে বেড়িয়ে আনমনা হয়ে হাটছি আমি।হঠাৎ হাতে কারও স্পর্শ পেয়ে ঘুরে দাড়াতেই কেউ আমায় কাছে টেনে নিলো।আমার থুতনিতে হাত রেখে রুমাল দিয়ে কপালের রক্ত মুছতে লাগলো।আমি চোখ তুলে হৃদের মুখটা দেখে কেঁদে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।বললাম তুমি এসেছো হৃদ।তোমার মনে পরেছে সব? হৃদ ছলছল চোখে আমাকে টেনে মুখটা ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল আমাকে ক্ষমা করে দে ফুল।আর কখনো তোকে আমি ভুল বুঝবো না।মেঘ আমাকে সব বলেছে।তুই শুধু আমার।

আমি আর হৃদ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।মেঘ স্যার এসে হৃদের পিঠে হাত রাখলো।হৃদ আমাকে ছেড়ে ঘুরে দাড়িয়ে স্যারের হাত ধরে বলল আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও ভাই।না জেনে আমি তোমাদের সন্দেহ করেছি।তোমার সাথে অন্যায় করেছি।স্যার বলল ফুলকে খুব ভালোবাসো তাই না? হৃদ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ অর্থ বোঝালে স্যার মুচকি হেসে চলে গেলো।হৃদ আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে আপুর চেম্বারের দিকে আগাতে লাগলো।আমি হৃদের হাতটা পেছনের থেকে টেনে ধরলাম।হৃদকে বললাম আপুকে এখন কিছু বলো না হৃদ।তুমি জানো না আপু কতটা ভয়নক হয়ে উঠেছে তোমাকে পাওয়ার জন্য।আবির চৌধুরী যেটা জানে সেটা মিথ্যা এটা প্রমাণ হলে উনি তোমায় পুলিশে দেবে।উনি শুধুমাত্র তোমাকে পুলিশে দেয়নি আমাকে খুশি করবে বলে।উনি জানে আমার গর্ভে মেঘ স্যারের সন্তান।না না হৃদ আপুকে তুমি রাগিও না।স্যার আপুকে খুব ভালোবাসে।আমাদেরও উচিৎ আপুর মনে স্যারের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা।হৃদ আমার কথা শুনতেই চাইলো না।অনেক বোঝানোর পর নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো।আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল আমার সত্যিই কিছু মনে নেই ফুল।আজ কি করেছি আমি? মেঘ বলল তাই না হলে আমি সত্যিটা জানতে পারতাম না।আমি মুখটা ঘুরিয়ে লাজুক চোখে বললাম অনেক দুষ্টামি করেছো।হৃদের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম আমাকে ওভাবে রেখে আসলে কেন? কত বোঝানোর চেস্টা করেছি তোমায়।হৃদ আমায় কোলে তুলে নিলো।ওর চেম্বারের মধ্যে এসে ভেতর থেকে দরজাটা লক করে আমাকে দরজার সাথে চেপে ধরল।আমার গলায় আর কাঁধে নিজের নাক ঘেঁষতে লাগলো।আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা সরে এসে দাড়ালাম।হৃদ পেছনের থেকে এসে আমার চুল সরিয়ে জামার চেইন খুলে পিঠে ঠোঁট ছুয়াতেই আমি ঘুরে হৃদের ঠোঁট আঙুল দিলাম।হৃদ আমায় কিছু না বলে আচমকা কোলে তুলে নিলো।সোফায় এনে শুইয়ে দিয়ে ওড়নাটা সরিয়ে আমার পাশে শুয়ে পরলো। কোমড়টা ধরে টেনে ঘুরিয়ে নিলো নিজের দিকে।আর ঠিক তখনই দরজায় নক করলো নূর আপু।একদল স্টুডেন্ট আর ডাক্তারকে নিয়ে এসে দাড়িয়ে আছে।আমি হৃদকে সরানোর চেস্টা করছি।আর হৃদ আমাকে টেনে ধরছে।আমার হাত দুটো চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।আমি এক ধাক্কায় হৃদকে সোফা থেকে ফেলে দিলাম।হৃদ ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠলো।বাইরে থেকে আপু শুনে বলে উঠলো হৃদ তোমার কি হয়েছে? চিৎকার করলে কেন? হৃদের ধ্যান ফিরলো।উঠে দাড়াতেই আমি কান ধরে ওকে ছরি বলে উঠলাম।তাড়াহুড়ো করে ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে জানালার সামনের লম্বা পর্দাটার পিছনে লুকিয়ে পরলাম।হৃদ গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।
আপু হৃদের হাত পা মাথা ঘুরে ঘুরে দেখছে।কোথাও কোনো চোর্ট না পেয়ে হাতটা টেনে ধরে বলল তোমার কোথাও লাগেনি তো হৃদ? আওয়াজ পেয়ে আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।

হৃদ সঙ্গে সঙ্গে আপুর থেকে নিজের হাতটা টেনে সরিয়ে নিলো।আপু উপস্থিত সবাইকে দেখিয়ে হৃদকে বলল এদের সাথে হসপিটালে আমার খুব ভালো সম্পর্ক।এরা সবাই কাল তোমায় ভোট দেবে।হৃদ কোনো কথা বলল না।গম্ভীর হয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাড়িয়ে রইলো।কথা বলতে বলতে আপুর নজর এবার পর্দার দিকটায় এলো।আর পর্দার নিচে আমার পা জোড়া দেখে নিলো।কিন্তু কিছু না বলেই সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।

হৃদ এসে পর্দা সরিয়ে আমাকে টেনে বের করলো।আমাকে জোড়িয়ে ধরার আগেই হৃদকে ঠেলে ওর চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলাম।
হসপিটালের ভেতরে হাটছি আর অনেকক্ষণ ধরে আমার পেছনে কারও পায়ের শব্দ পাচ্ছি।পেছনে ঘুরে দেখি তিন জোরা পা।তিনজন জড়িয়ে ধরে ঘুরালো আমায়।মিনি, নিশি আর প্রিয়া তিনটাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।হাসতে হাসতে একজন অন্যজনের উপর ঢলে পরছে।আমি কিছু জানতে চাইলে ওরা আমার মুখ চেপে ধরে ফাঁকা একটা রুমে এনে দরজাটা আটকিয়ে বলল কিরে কি করছিলি এতোক্ষণ? আমি কিছু বললাম না চুপ হয়ে রইলাম।মিনি এসে পেছনের থেকে আমার জামার চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে হালকা কেশে বলল কে খুলেছিলো এটা? প্রিয়া বলল কে আবার ডা.হৃদ স্যার।আমি বলে উঠলাম তোরা কিভাবে জানলি? ওরা আমার কাঁধে ভর দিয়ে দাড়িয়ে বলল আমরা তোকে উনার চেম্বার থেকেই বের হতে দেখেছি।ওড়না ঠিক করতে করতে লাজুক চোখে চুলগুলো সামনে এনে হাটছিলি।পিঠের দিকে তাকিয়ে চেইনটা খোলা দেখেই বুঝতে পেরেছি ভেতরে কিছু তো হয়েছে।আমি ওদের থামালাম।হাসতে বারণ করে একটা বেঞ্চে এনে বসালাম।সবটা বললাম ওদের।আপু এতো খারাপ এটা যেন ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না।এমন সময় মাম্মাম ফোন দিলো আমায়। বলল হৃদ আর আপুর বাসর ঘর কোন ফুল দিয়ে সাজাবে। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে যেই ফুল ইচ্ছা সেই ফুল দিয়ে সাজাতে বলে কল কেটে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।হৃদ অনেকক্ষণ আমাকে না দেখতে পেয়ে ফোন করলে ওকে বললাম রাতে বাড়িতে সবাই আপু আর ওর বাসরের ব্যাবস্থা করে।প্রথমে কথাটা শুনে হৃদ হেসে আমাকে রাগালেও পরে কথা দিলো নূর আপুকে নিজের কাছে ঘেঁষতেও দেবে না।দরকার পরলে আমার রুমে গিয়ে ঘুমোবে।

রাত তিনটা বাজে।বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পরলে হৃদ গিয়ে আমার রুমে ঘুমিয়েছে।এদিকে হোস্টেলে বসে আড্ডা দিচ্ছি মিনি,নিশি,প্রিয়া আর আমি।ওরা বলছে কাল আমি কাকে ভোট দিবো।অবশ্য ওরা ধরেই নিয়েছে মেঘ স্যার আর হৃদের মধ্যে হৃদকে ভোট দিবো আমি।যদিও আমি ওদের সামনে কারও নামই বলি নি।তবে আমি চাই মেঘ স্যার ইলেকশনে জিতুক।উনি যেমন সৎ, তেমন একজন আদর্শবান ডাক্তার। হৃদ আবেগ দিয়ে কাজ করে। ও যদি জিতে যায় তাহলে যেকোনো সময় নিজের পাওয়ারটার জন্য অনেক ভুল সিদ্ধান্তও নিতে পারে।তাই মেঘ স্যারই এই পজিশনটার যোগ্য।হসপিটালের জন্য, পেশেন্টদের জন্য স্যারকে ভোট দেবো আমি।
চলবে,,,,