ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 13

আমি হৃদের পিছনে ছুটলাম।হৃদকে কিছু বোঝানোর সুযোগ পেলাম না।আমাকে ধাক্কা দিয়ে ইজি বাইকে উঠে চলে গেলো হৃদ।হসপিটালে এসে ডাক্টার, নার্সের এতো ভীর দেখে হৃদও দাড়িয়ে পরলো।আবির চৌধুরী হৃদের নাম ধরে ডেকে এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলো।হৃদকে দেখা মাত্র এগিয়ে গিয়ে নিজের সর্বচ্চো শক্তিটুকু দিয়ে একটা কষিয়ে চড় মারলো হৃদের গালে।তারপর হৃদের শার্টের কলারটা টেনে সকলের সামনে এনে চিৎকার করে বলল কেন করেছো তুমি এমনটা? আমার হসপিটালের নাম বদনাম করতে? আমার ছেলেকে ফাঁসাতে নাকি ওই পেশেন্টের সাথে কোনো শত্রুটা আছে তোমার? আবির চৌধুরীর এমন কান্ড দেখে আপু ছুটে এসে হৃদকে টেনে সরিয়ে নিয়ে হৃদের গালে হাত রেখে বলল তোমার গালে নি তো হৃদ? হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।আপু ঘুরে আবির চৌধুরীর মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে বলল কি করেছে আমার হৃদ? কোন অপরাধের জন্য ওর সাথে আপনি এমন বিহেভ করছেন?আবির চৌধুরী আরও রেগে গেলো।আপুর

দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল তুমি কি কিছুই জানো না? ফুল তোমাকে যেই ভিডিওটা পাঠিয়েছিলো সেটা কি তুমি দেখও নি? নাকি স্বামীর প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো? আপু এবার ভয়ে চুপসে গেলো।আমতা আমতা করতে লাগলো।আবির চৌধুরী ভিডিওটা অন করে আপুর সামনে ধরলো।একে একে ঘুরে ঘুরে উপস্থিত সবাইকে ভিডিওটা দেখালো।এবার আপুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলল এই হচ্ছে তোমার স্বামী। তখন তো মেঘকে অনেক কিছু বলেছিলে।ওকে কিছু বলবে না? পুলিশে ফোন লাগাও ডা.নূর।
আপু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাটু নুইয়ে বসে পরলো আবির চৌধুরীর সামনে।দু’হাত জোড় করে বলল প্লিজ স্যার হৃদকে ক্ষমা করে দিন।আজ পর্যন্ত হসপিটালের জন্য আমি কিছু করেছি সব কিছুর বিনিময়ে ভিক্ষা চাচ্ছি আমার হৃদকে ক্ষমা করে দিন।স্যার আপুর কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজে পুলিশকে কল লাগালো।আপু উঠে দাড়িয়ে ফোনটা টেনে নিয়ে আবির চৌধুরীর চোখের দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল শুনতে পান নি আপনি আমি কি বলেছি? হৃদকে ক্ষমা করতে বলেছি। হৃদ আমার স্বামী। ঠিক যেমনটা মেঘ আপনার ছেলে।ভিডিওটা তো আপনি এখন দেখেছেন।কিন্তু যখন মেঘকে থানা থেকে আনলেন তখন তো আপনি জানতেন না মেঘ অপরাধ করে নি।মেঘ আপনার ছেলে বলে ওকে ক্ষমা করে দিলেন।আর আমার স্বামী আপনার হসপিটালের একজন ডাক্টার বলে ওকে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন? ভুলে যাবেন না স্যার পাঁচ বছর ধরে এই হসপিটালটা আমি নিজের মতো করে চালাচ্ছি।আপনার থেকেও বেশি কাজ আমি করেছি।আজ আমি বলছি যখন আমার স্বামীকে পুলিশে দেওয়া হবে না তখন হবে না।

আপুর হৃদকে এমন সাপোর্ট করতে দেখে মেঘ স্যার খুব কস্ট পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।আর আমি এসে হসপিটালের গেইটের সামনে দাড়ালাম।আপু এবার শান্ত হয়ে আবির চৌধুরীর কাছে অনুরোধ করে বলল আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার এভাবে কথা বলার জন্য।কিন্তু আমি আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি।আর বিশ্বাস করুন ওই ভিডিওটা আমি দেখি নি।আমার ফোনটা নস্ট হয়ে গিয়েছিলো।আজ নতুন ফোন কিনেছি।আমি ভিডিওর কথাটা শুনে এগিয়ে আসলাম।আবির চৌধুরীকে বললাম স্যার ক্ষমা করে দিন ডা.হৃদ স্যারকে।অপরাধীকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া উচিৎ। হতে পারে অপরাধের পিছনে কোনো কারণ ছিলো।আবির চৌধুরী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল কি বলছো ফুল এসব? এতো বড় একটা জঘন্য অপরাধের পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? আমি চুপ হয়ে রইলাম।উনি আবার বলল ওহহ বুঝেছি ডা.হৃদ তোমার পরিবারের সদস্য, তোমার বোনের স্বামী এইজন্য? তুমি চাও না ডা.হৃদ জেলে যাক তাই না? আমি চোখদুটো নিচু করে আছি।আবির চৌধুরী বলে উঠলো ঠিক আছে তাই হবে।অন্য কারও কথায় নয় তোমার জন্য ডা.হৃদকে এবারের মতোন ক্ষমা করে দিচ্ছি।এই অবস্থায় তুমি চিন্তামুক্ত থাকো সেটাই চাই আমি।তবে আমার একটা শর্ত আছে।আমি তাকাতেই বলে উঠলো আমার বংশের প্রদীব মেঘের সন্তানের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।কথা দেও এই কয়েকমাস নিজের যত্ন ঠিকভাবে নেবে। সবসময় হাশি, খুশি আর সাবধানে থাকবে? আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ অর্থ বোঝালে উনি আমার মাথায় হাত রেখে চলে গেলেন।আমি ভাবছি উনাকে সত্যিটা বলা খুব জটিল হয়ে যাবে।যদি জানে আমি প্রেগনেন্ট না তাহলে হৃদকে পুলিশে দেবে।না এটা হতে দেওয়া যাবে না।হৃদ যা করেছে আবেগের বশে করেছে।আমাকে ভালোবেসে অন্ধ হয়ে করেছে।সঠিক সময় না আশা পর্যন্ত আমাকে প্রেগনেন্সির সত্যিটা লুকাতে হবে।আর হৃদকে বোঝাতে হবে।

একে একে ভীর কমতে থাকলো।হৃদ আপুকে বলল তুমি খুব ভালো নূর।আমাকে এতোটা ভালোবাসো আমি জানতাম না।আপু কিছু বলতে যাবে হৃদ বলে উঠলো খুব দ্রুত তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিবো।দেখও সে তোমার মতোই এতোটা ভালো হবে।আমার সাথে থেকে কখনো তুমি সুখি হবে না।আমার ভালোবাসাও পাবে না।নিজের কথা শেষ করে নিজের চেম্বারে চলে গেলো হৃদ।
আমি ছুটলাম হৃদের পিছনে।ছুটে হৃদের চেম্বার গেলাম।ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে

ঘুরে দাড়াতেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো হৃদ এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি? এভাবে নক না করে কেন ঢুকেছো তুমি? আমি ওর চিৎকারে কোনো পাত্তা না দিয়ে ছুটে সামনে এসে দাড়ালাম।ওর গালে হাত রেখে বললাম তোমার কি কিছু মনে নেই হৃদ? হৃদ আমায় দুই কাঁধে হাত রেখে ঠেলে দূরে সরাতে লাগলো আমি ওর হাতদুটো নিয়ে নিজের কোমড়ে গুজে দিলাম।হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।আমি হৃদের শার্টের কলারটা টেনে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে গিয়ে মুখটা মলিন করে বললাম সব ভুলে গেছো? হৃদ কোনো কথা বলছে না দেখে ওর শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগলাম। হৃদ আমার হাতদুটো ধরে বসলো।আমি বললাম কি হলো মনে পরছে না? ওর দু’পায়ের উপরে পা রেখে দাড়িয়ে একটু উঁচু হয়ে মুখের কাছে মুখটা এনে বললাম মনে করো না হৃদ।মাথাটা আকড়ে ধরে হৃদের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হৃদ আমায় এক ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দিয়ে আমার চুলের মুঠি টেনে দাড় করিয়ে বলল নষ্টামি করতে এসেছিস এখানে? এখন বুঝছি মেঘের তো কোনো দোষই না। নিশ্চয় ওকে তুই জোর করেছিলি। তুই এতোটা নোংরা ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।বল আর কত ছেলের সাথে বেডে শুয়েছিস।কত ছেলেকে নিজের শরীর দিয়েছিস? এই বাচ্চাটা মেঘেরই না অন্যকারও?
চলবে,,,,