আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 08
বেশ কিছুক্ষণ পর বিধানের আম্মু এসে দরজা নক করলো। বিথী দরজা খুলে দিতেই সে প্রবেশ করলো।
মিসেস চৌধুরীঃ বিথী মামনি তুই যে বেডরুমে এসে পড়লি? কোনো সমস্যা?
বিথীঃ না মামনি কিছু না। এমনেই ভালো লাগছিল না। ( মাথা নিচু করে )
মিসেস চৌধুরীঃ ওহ। যা বলতে এলাম! তোর মা বাবা এসেছে তোদের। নিয়ম অনুযায়ী আজ তুই আর বিধান তোদের বাড়ি যাবি। তাই তৈরি হয়েনে! ( হাসিমুখে )
বিথীঃ নাহ মামনি আমি যাবো না! ( মাথা নিচু করে )
মিসেস চৌধুরীঃ সে কি! কেনো! ( অবাক হয়ে কারণ সাধারণত এ সময় মেয়েরা বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম শুনলেই খুশিতে লাফায় )
বিথীঃ মামনি আমার ভালো লাগছে না। আর তাছাড়া তোমার কি আমাকে ভালো লাগছে না বিরক্তিকর লাগছে যে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাবার বাসায় পাঠাতে চাচ্ছো! ( অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে )
মিসেস চৌধুরীঃ না বিথী মামনি! আচ্ছা আমি বেয়ানকে বলে আসি তোরা যাবি না।
বলে সে চলে গেলো।
,
মিসেস চৌধুরী চলে যেতেই বিথী সোফায় বসে আবার চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
বিথীঃ শুনেছি যখন নিজের পাশে কাউকে না পাবে তখন মা বাবাকে পাবে। কোথায় আমি তো পেলাম না! আমাকে তো তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে নরকে ফেলে দিলো। ( মনে মনে )
এসব ভেবে আবার কাঁদতে লাগলো।
,
,
বেশ কিছুক্ষণ পর মিসেস চৌধুরী বিথীর রুমে আসলেন তবে একা নয় বিথীর মাকে নিয়ে।
মিসেস চৌধুরীঃ আমি বলেছি তুই যেতে চাচ্ছিস না কিন্তু বেয়ান কিছুতেই মানছে না!
ঠিক সে সময় রূপ রুমে প্রবেশ করলো।
রূপঃ মামনি তোমাকে নিচে ডাকছে! তাড়াতাড়ি চলো!
বলে টেনে নিয়ে গেলো মিসেস চৌধুরীকে। মিসেস চৌধুরী যেতেই (বিথীর মা) নিরাশা সোফায় যেয়ে বসলেন বিথীর সাথে।
নিরাশাঃ কিরে মা কেমন আছিস? কেমন লাগছে এখানে? ( বিথীর হাত ধরে )
বিথীঃ যেমন রেখেছো তেমনই আছি অনেক অশান্তিতে! বুঝছো তুমি! ( হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে )
নিরাশাঃ এমন করছিস কেন মা? বুঝেছি মায়ের সাথে রাগ করেছিস। বাড়ি চল ছোটবেলার মতো তোকে তোর পছন্দের সব রান্না করে খাওয়াবো যাতে তোর রাগ গলে পানি হয়ে যায়!
বিথীঃ দেখ একদম নাটক করবে না আমার সাথে! জেনে শুনে ব্লাকমেইল করে আমাকে এই নরকে ফেলেছো এখন এই কেয়ারিং হওয়ার ড্রামা করতে হবে না। তোমার স্বামী তো আমাকে বলেছিল বিয়ে না করলে তার বাড়ির দরজা আমার জন্য বন্ধ। তাকে বলে দিও বিয়ে করে আমি নিজেই সেই দরজা চিরতরের জন্য বন্ধ করলাম! ( রেগে দৃঢ় কণ্ঠে )
নিরাশাঃ আমরা যা করেছি তোর ভালোর জন্য……….
বিথীঃ থামো আর বলবে না এই কথা! তোমরা আমার ভালোর জন্য নয় নিজেদের মান সম্মানের বৃদ্ধির জন্য করেছ। এতে আমার সুখ হোক না হোক, সম্মতি থাকুক না থাকুক তোমাদের কিচ্ছু যায় আসে না! কিচ্ছু না! তুমি যাও এখান থেকে নাহলে যে মানের জন্য এতো অশান্তিতে আমি তা ধুলোয় মিশাতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। ( রাগী কণ্ঠে )
নিরাশা তার মেয়ের রাগ। তার মেয়ের রাগ ছোট খাটো ঝড়ের মতো যা সব ধ্বংস করতে পারে সেকেন্ডে কারণ বিথী মোটেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। তাই নিরাশা চোখে পানি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মিসেস চৌধুরী থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেলেন।
,
,
,
বিথী নিজের জন্য বিছানা করলো ফ্লোরে। তারপর ব্যালকনিতে থাকা কাউচে চোখ বন্ধ করে বসে সব ভাবতে লাগলো।
বিথীঃ তুমি ভাঙতে পারো না এতো তাড়াতাড়ি বিথী! এতো ক্রাওয়াড তুমি হতে পারো না! কিপ পেশিয়েন্স! কিন্তু কি করবো? আমার তো কেউ নেই বড্ড একা আমি। এই চৌধুরী ম্যানশন ছেড়ে কোথায় যাবো আমি? শত হোক একজন মেয়ে আমি রাস্তায় তো রাত কাটাতে পারবো না! বাবা মার কথা কি বা বলবো! আমার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করব? পড়ার খরচ খাবার খরচ আরও কতো কি! আর টিউশনির টাকায় তো পড়ার খরচই হয় না! নাহ ভাবতে পারছি না কিছু! ( মনে মনে )
বিঃদ্রঃ মেয়েদের জন্য সব ছাড়াটা সহজ হয় না অনেক কঠিন হয়। তাই অতি কষ্ট না পেলে কোনো মেয়েই হয়তো ছেড়ে চলে যায় না। কারণ মেয়েরা সব কাজে সেফ না যেমন একটা ব্যাচলর ছেলে এই দেশে রিকশা চালিয়ে খেতে পারলেও মেয়ে পারবে না। মেয়েরা শারীরিক শ্রম দিতে পারবে না তা না। মেয়েদের জন্য সব জায়গায় নিরাপত্তা থাকে না। কারণ তাদের একা পেয়ে নরপশুরা ঝাপিয়ে পড়ে যেকোনো সময়। তাই অনেক ভেবে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জীবন তো আর গল্প নয় যে বাসা থেকে পালালে সাইড হিরো এসে বাসায় নিয়ে আদর যত্ন করবে।
বিধান রুমে যখন বেডরুমে আসলো তখন হাতঘড়িতে দেখলো রাত ১টা বাজে।
বিধানঃ মেয়েটা মনে হয় এতোক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। আমিও ঘুমিয়ে যাই।
বিধান রুমে যেয়ে অবাক হয় কারণ ফ্লোরে বিছানা তৈরি করা থাকলেও সেখানে বিথী নেই। বিথিকে না দেখে বিধান এদিক ওদিক খুজতে লাগে। শেষে ব্যালকনিতে থাকা ছোট্ট ওপেন রুমে পায় বিথীকে। বিথী সেসব ভাবতে ভাবতে ব্যালকনিতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। বিথীর চোখ, নাক, কান এখনো কান্নার জন্য লাল হয়ে আছে। গালের অশ্রুর দাগগুলো এখনো শুকোয়নি।
বিধানের বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অপরাধবোধে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। কারণ বিথীকে যে ভীষণ ভালোবাসে ছেলেটা। বিধানকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শোয়িয়ে একটা তোয়ালে ভিজিয়ে এনে বিথীর মুখ ধুয়ে দেয়। বিথী বেশি কাঁদলো মাথার তালু গরম হয়ে ব্যথা করে তাই তেল দিয়ে দিলো তালুতে। বিথী ভিষণ ক্লান্ত থাকায় কিছুই টের পেলো না।
বিথীকে ঠিক করে বিধান ফ্রেশ হয়ে এসে বিথীকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
বিধানঃ সরি জান! রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না আমি বুঝো না কেনো! বারবার রাগাও আমাকে! সরি আই এম রেয়ালি সরি তবে তোমার আড়ালেই। ভালোবাসি শুধুই তোমাকে তবে তোমার আড়ালেই। কি করবো আমাদের সংসার যে, ‘আড়ালে ভালোবাসার সংসার’।
চলবে,,,
সব খানে মেয়ে মেয়ে, কেন হে ভাই কামড়াই। কোথায় দেখেছেন একজন মেয়ে শশুর বাড়িতে গেলে কেউ খারাপ ভাবে টাচ করলে বলা যায় না। নেড়িবাদ বাদ দেন। ছেলে মেয়ে প্রতিপক্ষ না, সহযাত্রী।