আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 07
বিথীও ঘোরে চলে গিয়েছিল। সবার করতালির আওয়াজে ওদের হুশ আসে।
বিথী বিধানকে আলতো করে সরিয়ে মিসেস চৌধুরীর পাশে এসে দাঁড়ালো। আর বিধান বিথীর লজ্জায় চলে যাওয়া দেখে মুচকি হাসলো। ওদের ডান্সে সবাই এতোটাই বিমোহিত ছিল যে ওদের ডান্স শেষ হতেই সবাই ওয়াও এবং ওয়ান’স মোর বলে চিৎকার করে উঠলো। এসব দেখে বিথী লজ্জায় লাল হতে লাগলো। বিথীর লজ্জা আর একজনের চোখে পড়লো সে হলো মিসেস চৌধুরী।
মিসেস চৌধুরীঃ হয়েছে আর হবে না! আমার বিথী মামনি একবার নেচেই লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে আরেকবার নাচলে তো খুঁজেই পাবে না কেউ!
এই কথায় রিসেপশনে থাকা প্রতিটি গেস্ট হেসে উঠলো। ফলে বিথী আরও লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। রূপ বুড়ি বিথীর এ অবস্থা দেখে মিসেস চৌধুরীর হাত থেকে মাইক টেনে নিলো।
রূপঃ সবাই চুপ! কেউ হাসবা না, দেখছো না আমার বৌআপু লজ্জা পাচ্ছে! ( রেগে বলল )
এ কথায় সবাই আরেক দফা হেসে উঠলো। রূপ এতোটাই কিউট কেউ একবার দেখলে ওকে আদর না করে ভালো না বেসে থাকতে পারে না।
বিধানঃ ওরে বুড়ি তোর এতো লাগছে কেন! ( রূপকে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে )
রূপঃ বারে আমার একটা মাত্র বৌআপু আমি তার খেয়াল রাখবো না! কিন্তু তোমার আবার হাসো কেন, আমার কথার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না কেউ! ( মুখ ফুলিয়ে )
বিধানঃ এই কেউ হাসবে না কিন্তু! বুড়ি রাগ করবে! ( মুখ টিপে হেসে )
এ কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হেসে উঠলো।
রূপঃ গুড ব্রো! ( বিধানের গালে চুমু দিয়ে )
,
,
এসব কথোপকথনের সময় কেউ একজন এক দৃষ্টিতে বিধানকে দেখিছিলো। সে বিধানের আড়ালের ভালোবাসা বিথী।
বিথীঃ এ যেনো এক নতুন রূপ বিধান চৌধুরীর! তার মতো রাগী, এরোগেন্ট, ইগোস্টিক বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমিও করতে জানে! নাকি শুধু আমার সাথেই এমন! ( মনে মনে )
মিসেস চৌধুরীঃ বিথী মামনি চলো এখন একটু বসে রেস্ট নেও। ( বলে বিথীকে নিয়ে সোফায় বসালেন )
এমন সময় বিথীর বেস্টু দিপ্ত এলো। আর বিধানের মাকে একজন ডাক দেয়ায় সে চলে গেলো!
বিথীঃ কিরে লেট লতিফ আজকেও লেট! ( দিপ্তর মাথায় হালকা চড় মারলো )
দিপ্তঃ তো তুই কি রাণী ভিক্টোরিয়া নাকি যে তোর রিসেপশনে লেট আসা যাবে না! ( ভেঙচি কেটে )
বিথীঃ মেয়েদের মতো ভেঙচি দিস না! মানুষ অন্য কিছু মনে করবে! ( দাঁত কেলিয়ে )
দিপ্তঃ আমাকে যাই মনে করুর, তোরে নিশ্চয়ই সবাই তেঁতুল গাছের পেত্নি মনে করছে! ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
বিথীঃ কুত্তাহ! ( রেগে )
এভাবেই তাদের দুষ্টুমি ও হাসাহাসি চলছিল। তবে এই হাসাহাসি বিধানের মোটেই সহ্য হচ্ছিলো না তাই সে তাদের দিকে প্রথম থেকেই বিথী ও দিপ্তর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। বিধানের বাসায় ফিরার সময় হয়ে যাওয়ায় সে বিথীকে বলে চলে গেলো। ফলে বিথী বসে বসে রেস্ট নিতে লাগলো। বিথীকে একা স্টেজে দেখে ইফতিকা সুযোগ পেলো ওকে অপমান করার।
ইফতিকাঃ এই সামান্য দুই টাকার মেয়ে নিয়ে সবার এতক্ষণের আদিখ্যেতা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। আমার বিধানকে আমর থেকে কেড়ে নিয়েছিস এর শাস্তি তো পেতেই হবে। ( মনে মনে এসব বলে বাকা হাসলো )
,
,
ইফতিকা নিজের মতো কিছু এক্সট্রা মডার্ন মেয়েদের নিয়ে স্টেজে আসলো বিথীর কাছে।
বিথীঃ আসলামু আলাইকুম আপুরা! ( সবাই বিথীর বয়সে বড় হওয়ায় আগে সালাম দিলো )
ইফতিকাঃ আমাদের কি নিজের মতো বেহেনজি টাইপ মনে করছো যে সালাম দিচ্ছ। সে হাই!
একজনঃ আরে ইফু ছাড় তো কোথা থেকে উঠে এসেছে তা আগে ভাব। থার্ড ক্লাস জায়গা থেকে উঠে এসে এতো তাড়াতাড়ি কি হাই সোসাইটির বিহেভিয়ার ক্যারি করতে পারবে নাকি! ( বলেই সবগুলো মেয়ে হেসে উঠলো )
এসব শুনে বিথীর মরে যেতে ইচ্ছে করছে কারণ বরাবরই ওর আত্মসম্মানবোধ বেশি। ঠিক সেই সময়ই বিধান এলো। বিথী ভাবলো বিধান হয়তো ওর হয়ে জবাব দিবো। প্রতিটা মেয়েই তার স্বামী থেকে এক্সপেক্ট করে যে তার স্বামী আর যাই হোক তার সম্মান ক্ষুণ্ন হতে দিবে না। কিন্তু বিথীর ধারণ পাল্টে দিলো বিধান।
ইফতিকা প্রথমে একটু ভয় পেলো বিধানের আসায় কারণ সকালের ইফতেখারকে ছাড় দেয়নি বিথীর বিষয়ে বাজে বলার জন্য কিন্তু বিধান কিছু না বলায় ইফতিকা আরো সুযোগ পেয়ে বসলো।
বিধানঃ তোরা এখানে কি অবস্থা!
একজনঃ এই তোমার গেয়ো মিডেলক্লাস বউকে দেখতে এলাম যে হাই সোসাইটির ম্যানার্স কতটুকু শিখেছে। ( বলেই সবাই হেসে উঠলো )
এসব কথায় বিধানের রাগ লাগলেও এই রাগটা বিথীকে দিপ্তর সাথে দেখে যে রাগ হয়েছিল তার থেকে বেশি না। তাই বিধান কোনো রিয়েক্ট করলো না!
ইফতিকাঃ জানো তোমার গেয়ো বউটা তো জানতো না যে বড়লোক ছেলে ফাঁসিয়ে বিয়ে করলেই হাই সোসাইটির হওয়া যায় না! ( এ কথায় সবাই হেসে উঠলো তবে বিধান কোনো রিয়েক্ট করলো না )
,
,
এদিকে বিথী এসব সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। যেহেতু এখন রাত প্রায় বারোটা হওয়ায় বেশি মানুষ নেই এবং যারা আছে তারা খাবারের জায়গায় তাই বিথীর চলে যাওয়া কেউই খেয়াল করলো না। বিথী রুমে এসে নিজের শরীর থেকে গহনা টান দিয়ে খুলে ফেলল আর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো যদিও ওর কান্নার আওয়াজ নিচে থাকা হাই ভলিউমের গানের জন্য কারো কান পর্যন্ত পৌছালো না।
বিথীঃ কেন আব্বু আম্মু! কেন আমাকে এই নরকে পাঠালে! এতোটাই বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম তো বলতে রক্ত বিক্রি করে হলেও টাকা এনে দিতাম। ( চিৎকার করে কাঁদতে )
[বিঃদ্রঃ অনেক বাবা মাই ছেলে ভালো বলে বা যেকোনো কারণে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেন কখনো জোর করে কখনো হয়তো বিথীর বাবার মতো ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে। শুধু একটা কথাই বলবো আপনি কি করে এতো শিউর হন আপনার মেয়ে সুখীই হবে হয়তো আপনার মেয়ের ভালোর জন্য নেয়া সিদ্ধান্ত তার সারাজীবনের দুঃখের কারণও হতে পারে]
প্রায় অনেকক্ষণ কেঁদে বিথী নিজেকে স্বাভাবিক করে এবং নিজের কেনা একটা শাড়ি ও স্বর্ণের ছোট্ট ঝুমকা ও পেনডেন্ট পড়ে বারান্দার খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে। বিথী কখনোই জবলেস থাকতো না। এসএসসি এক্সামের পর থেকেই পড়াতো বাচ্চাদের এবং সেই টাকা দিয়েই নিজের প্রায় সব সখ পূরণ করতো যদিও তা প্রয়োজনে নয় শুধুই সখের বশে।
বিথীঃ এই চৌধুরী বাড়ির বউ হওয়ার কারণেই আমার আত্মসম্মানে দাগ লাগলো শপথ করলাম এই বাড়ির টাকায় খাওয়া ব্যতিত একটা টাকাও নিজের জন্য খরচ করবো না। ( মনে মনে )
চলবে,,,