অপেক্ষা !! Part- 08 ( শেষ পর্ব )
লেখিকাঃ আতিকা জাহান।
বাসায় এসে দেখি শুভ আমাদের বাসায়।আমি আর রাফিন আশ্চার্য হয়ে গেলাম ওকে দেখে ও কি করে এলো আমাদের আগে। সবাই আমকে আর রাফিন কে কেমন আড় চোখে দেখছে,সবার মাঝ থেকে মা আর বাবা বেরিয়ে এসে বললো।
মা-সেজুতি এদিকে আই।রাফিন আমাদের সাথে এত বড় প্রতারনা করলে।ছিঃ, তুমি নিজে সেজুতিকে লুকিয়ে রেখে আমাদের চোখে ভালো সাজার জন্য শুভ কে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছ।লজ্জা করে না তোমার?।
(আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না শুভ বাবা মার ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলেছে মিথ্যা দিয়ে)
রাফিন-বিশ্বাস করুন আন্টি শুভো এসব করেছে।আজ আমি না গেলে হয়তো শুভ সেজুতিকে,,,,
মা-একদম চুপ থাকো।শুভ কেনো কিডন্যাপ করবে সেজুতিকে ওর সাথে তো কিছুদিন পর সেজুতির বিয়ে।
আমি- মা বিশ্বাস করো রাফিন যা বলছে সব সত্যি।শুভ আমাকে,,,,
বাবা-তুৃমি একদম চুপ করে থাকো সেজুতি।তোমার লজ্জা করে না শুভর সাথে বিয়ে ঠিক হবার পরো তুমি রাফিনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছো।তোমার ভগ্য ভালো এত কিছুর পরো শুভ তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
রাফিন – আঙ্কেল আন্টি বিশ্বাস করুন আমি সেজুতিকে কিডন্যাপ করিনি।
মা-হ্যাঁ সেটা তো জানি।আর এটাও জানি সেজুতি তোমার সাথে ইচ্ছা করে পালিয়েছিলো।ভালো মুখে বলছি বেরিয়ে যাও এখনো সময় আছে না হলে তোমাকে পুলিশে দেবো,সেজুতিকে কিডন্যাপ করারা অপরাধে।
শুভ-আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না মা। আমি খবর দিয়ে দিয়েছি অলরেডি।
আমি-শুভ তুমি কাজটা মোটেও ভালো করোনি।ফাসবে কিন্ত তুমি অবশেষে।
রাফিন -আন্টি আমি সেজুতিকে ভালোবাসি(কথাটা বলার সাথে সাথে আমার বাবা রাফিনের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো আর বললো,”লজ্জা করে না তোমার অভদ্র ছেলে,তুমি জানোনা সেজুতির বিয়ে ঠিক।আঙ্কেল আপনি আমাকে জেলে পাঠান তবুও সেজুতিকে শুভর সাথে বিয়ে দিবেন না প্লিজ।
বাবা- কি করবো না করবো সেটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার।সেটা তুমি আমাকে শেখাবে। না তোমাকে দেখছি পুলিশে না দিলে হবে না।
শুভ -সেটাই করছি আঙ্কেল আর কিছুক্ষন ওয়েট করুন।পুলিশ এখনি চলে আসবে।
আমি -চুপ করো তোমরা সবাই।পুলিশ কেনো আসবে । আর যদি আসে তবে শুভোকে ধরবে রাফিনকে নয়।(এটা বলার সাথে সাথে মা আমাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেলো।ঘরে নিয়ে আটকে রাখলো।আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে দেখছি রাফিনকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তবুও আমি কিছু করতে পারছি না ওর জন্য।দেখলাম শুভ রাফিনের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো।আর রাফিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটো ছলছল করছে ওর।
( বুঝতে পারলাম আমি এখনো ভালোবাসি রাফিন কে)
-পরের দিন সকালে আমি উঠে পুলিসস্টেশন যাবো বলে রেডি হয়ে নিচে নাবছি ঠিক তখন দেখি শুভ।
শুভ-কোথাই যাচ্ছ সেজুতি?
আমি-সে কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?
শুভ-হ্যাঁ দিতে হবে।কারন কিছুদিন পর তুমি আমার বৌ হবে।
আমি-তোমার এখনো মনে হয় এতকিছুর পরো আমি তোমাকে বিয়ে করবো?ভাবলে কিভাবে তুমি?আমি তোমাকে কিছুতে বিয়ে করবো না।এ জমনে তো না।
মা-তাহলে কাকে বিয়ে করবি?ঐ বজ্জাত ছেলেটাকে?যার সাথে তুই পালিয়েছিলি?
আমি-মা রাফিন একদমি বজ্জাত নয়।বরং তোমাদের শুভোই বজ্জাত।মা আমি বলে দিলাম আমি কিন্ত কিছুতে বিয়ে করবো না শুভোকে।কিছুতে না।
বলে আমি পুলিসস্টেশন গেলাম।গিয়ে শুনি গতকাল রাতেই রাফিনকে ওর বাবা ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।কি করবো এখন আমি, আমি রাফিনদের বাসাও চিনি না।হ্যাঁ একমাত্র বিথি আপু আমাকে সাহায্য করতে পারে।কল দিলাম আপুকে।সবটা খুলে বললাম।বলার পর আপু বললো আমি যেনো শুভোকে বিয়ে না করি।আর আপু আমাকে একটা বুদ্ধি দিলো।
আমি বাসায় ফিরে গেলাম গিয়ে দেখি বাড়ি সাজানো হচ্ছে।
আমি-মা এসব কি?
মা-বাড়ি সাজানো হচ্ছে।
আমি-কিসের জন্য।
মা-কাল তোর আর শুভোর বিয়ে।
আমি-কি বলছো মা।আমি শুভ কে বিয়ে করবো না মা।কিছুতেই না।বলে আমি রুমে চলে গেলাম।দেখলাম শুভ বসে আছে আমার রুমে।
তুমি, তুমি আমার রুমে কি করছো বেরিয়ে যাও এখুনি।গেট আউট।
শুভ-কালকেরর পর থেকে এই রুমটা আমাদের দুজনারি তো হবে।থাকলে সমস্যা কি।
আমি শুভোর সার্টের কলার টা ধরে বললাম সে স্বপ্ন তোমার জীবনেও পুরণ হবে না।সাথে সাথে শুভ আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো।তোমাকে পাবার জন্য এত কিছু করেছি তাহলে আর অনেক কিছু করতে পারি বুঝলে?
তাই রাফিনের ভালো যদি চাও বিয়েতে রাজি হয়ে যাও নয়তো খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
আমি-কি করবে তুমি?
শুভ – সেটা সময় হলেই দেখতো পাবে।(কথাটা বলে শুভ বেরিয়ে গেলো)।
পরেরদিব বৌ সেজে বসে আছি অনেকবার পালানোর চেষ্টা করেছি পারিনি।শুভ পাহারা বসিয়েছে গেটে।
হঠাৎ আমার বেলকনিতে একটা কিছু পড়ার শব্দ এগিয়ে গিয়ে দেখলাম রাফিন বেলকনিতে।
আমি-রাফিন তুমি কিভাবে এলে এখানে?
রাফিন ঐ তো পাচিল টোপকে। হঠাৎ ও হাটু গেড়ে আমাকে প্রপোজ করলো’বিয়ে করবে আমাকে?”
আমি-রাফিন তুমি পাগল?এতকিছুর পরো তুমি,,,
রাফিন-হ্যাঁ এতকিছুর পরো বলবো ভালোবাসি তোমাকে।
আমি-রাফিন এসব পাগলামি বাদ দাও।যাও এখান থেকে।না হলে শুভ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।শুভ খুব খারাপ,, ও একটা সাইকো।ও তোমাকে দেখলে এবার হয়তো মেরে ফেলবে তোমাকে।যাও প্লিজ।
রাফিন-ভালোবাসো আমাকে?ভরসা আছে আমার উপরে?
আমি-চুপ করে রইলাম।
রাফিন -বলো সেজুতি ভালোবাসো?
আমি রাফিনকে জড়িয়ে ধরে বললাম হ্যাঁ ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।
রাফিন-পালাতে পারবে আমার সাথে(ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে)।
আমি-কি বলছো শুভ জানতে পারলে মেরে ফেলবে একদম তোমাকে।
রাফিন- ভরোসা করো আমাকে?
আমি-হ্যাঁ করি।
রাফিন -তবে চলো।
আমি-কোথাই?আর বের হবো কি করে?
রাফিন চলো সে ব্যাবস্থা আমি করে এসেছি। বেলকনি বেয়ে নিচে নেমে পালিয়ে গেলাম রাফিনের হাত ধরে।বাসা থেকে বের হয়ে শুধু দৌড়েছি দুজন,একটা কাজি অফিসে ঢুকে বিয়ে করলাম।ওর বন্ধুরা ওয়েট করছিলো ওখানে আমাদের জন্য,আর আমার আপুও। বিয়ে শেষে,কিছুটা দুর এসে বাসে উঠে,রওনা হলাম দুজন।
-রাফিন।
-হ্যাঁ বলো।
-আমরা কোথাই যাচ্ছি?
-জানিনা।বাস যতদুর যাই ততোদুর যাবো।মনে করো এটাই আমাদের হানিমুন।দেখো বাসের সবাই কেমন ভাবে আমাদের দেখছে।
-দেখুক,আর কাউকে ভয় পায় না,পরোয়া করি না কাউকে।
-আমি রাফিনের কাধে মাথা রাখলাম।মনে হচ্ছে জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসেছি।রাফিন আমার কপালে একটা চুমু দিলো।মনে হচ্ছে পৃথীবির সব সুখ পেয়ে গেছি।
অবশেষে মনে হলো এই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করাটা আমার সার্থক হয়েছে।
আজ আমাদের ৪র্থ বিবাহবার্ষিকী। একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে আমাদের।নাম রেখেছি রাফি।আমরা এখন দেশের বাইরে থাকি।রাফিনের বাবা মা সব জানতো ওরাই আমাদের বাইরে যাবার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো।
আমার বাবা মা আজো মেনে নেইনি আমাদের।আপুর সাথে কথা হয় মাঝে মাঝে। শুনেছিলাম শুভকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে ওর বাবা মা।তবে ওদের কোনো বেবি হয় না।হয়তো এটাই ওর পাপের শাস্তি।শুভ অনেক খুজেছে নাকি আমাকে।অনেক সুখে আছি আমি।রাফিন আমাকে ভীষন ভালোবাসে।আগের থেকে এখন আরো বেশি ভালোবাসে ও আমাকে।ভাবছি এবার দেশে যাবো।৪ বছর হলো দেশ ছেড়েছি।আমার ছেলেটাকে দেখলে যদি বাবা মায়ের রাগ কমে।
দোয়া করবেন সবাই।
—-সমাপ্ত—-
অসাধারণ,সত্যিই অনেক ভালো লাগলো…