সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 14

ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আমি।বিয়ের পর বাবা-মা মেনে নেন নি।সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলো আমার সাথে। আমার স্বামী ছিলেন অনাথ। তিন কুলে তার কেউ ছিলো না।তার ছোট্ট ঘড়ে আমাকে নিয়ে উঠেছিলেন।বাবার অফিসে চাকরি করতেন উনি।আমাকে বিয়ে করার পর উনার চাকরিটা চলে যায়। তখন তার হাতে তেমন কোনো কাজ ছিলো না।সংসারে অভাব অনটন সব ছিলো কিন্তু ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না।অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে রাতে যখন বাড়িতে ফিরতেন তখন শূন্য মুখে হাসি ফুটিয়ে আমাকে শান্তনা দিতেন।আমি বুঝতাম আমার জন্য আজ উনাকে এতো কস্ট করতে হচ্ছে।তখন আত্নহত্যার ভয় দেখিয়ে উনাকে বিয়ে করেছিলাম আমি।অনেক চেস্টা করেও উনার মুখে আমি ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারি নি।তাই বাবা যখন আমার অন্যত্রে বিয়ে ঠিক করেন তখন প্লান করে উনাকে নিজের করে নিয়।আমার মাস্টার্স কমপ্লিট ছিলো।উনাকে বলেছিলাম আমিও জবের জন্য ট্রাই করি।উনি প্রথমে রাজি হতে চান নি।কিন্তু সংসারের কথা ভেবে রাজি হয়ে যান।আমি ফাস্ট ইন্টারভিউ দিয়েই জবটা পেয়ে যায়।অনেক খুশি ছিলাম আমি।প্রথম মাসের এডভান্সের টাকাটা দিয়ে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসি।উনাকে বলি জব হয়ে গেছে আমার আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।উনি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেছিলো তোমাকে আমি বেশি দিন জব করতে দেবো না রোকসানা।আমি খুব শীঘ্রই একটা জব খুঁজে তোমাকে বিশ্রাম দিবো।উনার কথায় আমি হেসেছিলাম।আমি বলেছিলাম আমিও তাই চায়। আপনি জব করুন আর আমি আপনার সংসার সামলায়।আমাদের ছোট্ট একটা বেবি হোক।বেবিকে নিয়েই সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়।কথাটা বলে দুজনেই হেসে উঠেছিলাম।কিন্তু সেই হাসি বেশীক্ষণ থাকলো না।অফিসের দ্বিতীয় দিন যখন আমি কাজে ব্যস্ত তখন বস ডেকে পাঠায় আমাকে।আমি জানতাম না ওই অফিসের বস কে।আমি যখন বসের মুখোমুখি হলাম তখন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম।এ আর কেউ না যার সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো সেই আমার অফিসের বস।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা কাঁপি করছিলো।সে বসা ছেড়ে উঠে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরল আর বলল সে আমাকে ভালোবাসে।আমি কেন তার সাথে এমন করলাম? কিন্তু আমি তো তাকে ভালোবাসতাম না।তাহলে আমার কি দোষ সে আমাকে ভালোবাসলে? আমি জবটা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম।উনাকে সব বললে উনিও বুঝতে পেরেছিলো।কিছুদিন পর উনার একটা ভালো জব হলো।সংসারে খুশীর জোয়ার নেমে আসলো।এক বছরের মাথায় আমার কোল জুড়ে ফুটফুটে একটা ছেলে বেবি আসলো।তার নাম রাখলাম আহান।আহান একদম ওর বাবার মতোন হয়েছিলো।অনেক শান্ত, শিষ্ট ও মেধাবী। আহান যখন ক্লাস পঞ্চম শ্রেনীতে পরীক্ষা দিয়েছিলো তখন এ প্লাস পেয়েছিলো। বাবার কাছে আবদার করেছিলো একটা ঘড়ির জন্য। ওকে নিয়ে রিক্সাতে করে উনি ঘড়ির দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিলছিলেন।এমন সময় একটা ট্রাক এসে রিক্সাটাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এক্সিডেন্টের সাথেই উনি মারা যান।আর আহান রাস্তার এক কোণে পরে ছটফট করছিলো রক্তাক্ত দেহটা নিয়ে। হসপিটালে নিয়ে উনাকে মর্গে রাখা হয় খাটলিতে সাদা কাপড়ে ঢেকে।আর আহানকে অপারেশন থিয়েটারে। উনার ফোন থেকে আমার ফোনে ফোন আসতেই আমি খবরটা পেয়ে অনেক বড় একটা ধাক্কা খাই।হৃদয় ভাঙা কান্না নিয়ে ছুটে যায় হসপিটালে।উনার মৃত দেহটা দেখে আমার পায়ের নিচের মাটি টা সরে যাচ্ছিলো।আমার জীবন মরণ, দিন দুনিয়ার সাথী এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? তার নিথর দেহটাকে ঝাকিয়ে কতবার যে ডেকেছি। বলেছি প্লিজ চোখ খুলুন না।আমি আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকতে পারি? প্লিজ চোখ খুলুন। আমার প্রাণের বাতি আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।উনি শোনে নি।আমার বুকটা খালি করে চলে গেছেন উনি।
এটুকু বলেই শ্বাশুড়ি মা কাঁদতে শুরু করলেন।উনার কান্না দেখে আমারও খুব কস্ট হচ্ছে।আমি শ্বাশুড়ি মায়ের কাঁধে হাত রেখে শান্তনা দিলাম।উনাকে বললাম,
-প্লিজ মা এভাবে ভেঙে পরবেন না।শান্ত হোন মা।তারপর কি হয়েছিলো মা? বলুন না আমাকে? আমি কি করেছিলাম উনার সাথে যার জন্য উনি আমার সাথে এমন করেন?
শ্বাশুড়ি মা চোখ মুখ শাড়ির আঁচল টেনে মুছে আবার বলতে শুরু করলেন,
ডাক্তার বলেছিলো আহানের দুই পায়ের কিছু জায়গায় অনেক বড়সড় ভাবে আঘাত লেগেছে।সাড়তে কয়েক বছর সময় লাগবে।ততোদিন আহান হুউল চেয়ার ব্যাবহার করবে।উনার দেওয়া সংসার খরচ থেকে বাঁচানো টাকাগুলো তখন আহানের চিকিৎসায় খরচ করে ফেলি।আহানের জন্য একটা হুউল চেয়ার কিনি।তারপর যখন হসপিটাল থেকে বাসায় আসি তখন আসেপাশের পাড়া প্রতিবেশী আমাকে এসে শান্তনা দিয়ে যান।বলেন আহানের জন্য শক্ত হতে।আহানকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে কোনো জবেও ঢুকতে পারছিলাম না তখন।ওর যে মাকে খুব প্রয়োজন ছিলো।সারাক্ষণ ওর মাকে পাশে লাগতো।বেশ কিছুদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালিয়েছিলাম।আহানকে নিয়ে হুউল চেয়ারে করে স্কুলে নিয়ে যেতাম।আবার স্কুল ছুটির পর ওকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম।হঠাৎ একদিন রাস্তায় সেই মানুষটার সাথে দেখা হলো যার সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো।সে আমার সব খোঁজ খবর নিয়েই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি না করে দিই। আর সেই দিন থেকেই আমাকে রাত বিরাতে বিভিন্ন পরপুরুষ এসে কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিতে থাকে।আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হই না।একদিন তো এমন পরিস্থিতিতে পরেছিলাম যে মাঝ রাতে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিলাম।আমার চিৎকার শুনে পাড়া প্রতিবেশী ছুটে আসে।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।সবাই আমাকে রাতে শান্তনা দিয়ে যান।আমার শক্তি হয়ে পাশে দাড়ান।ঠিক তার পরের দিন একজন প্রতিবেশী ভাবি এসে বলেন তোমাকে একজন ভালোবাসে।বিয়ে করতে চায়।করে নিলেই তো পারো।এতো তিথিক্ষা সহ্য করে সমাজে বেঁচে থাকার কি দরকার? আমি সেই ভাবির কাছে বলি কার কথা বলছেন? তখন ভাবি তাকে আমার রুমের মধ্যে নিয়ে আসেন আর নিজে বাইরে বেড়িয়ে যান।রুমের মধ্যে এসে সে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন আর ভাবি বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়।তার চিৎকারে শুনে ছুটে আসে গোটা এলাকা জুড়ে মানুষ। আমি দরজা খুলতেই সবাই আমার চরিত্র নিয়ে অনেক কথা শুনান।চারিত্রিক ছাপ্পা লাগিয়ে দিয়ে যায় সবাই আমার উপর।সবাই চলে গেলে ভাবির হাতে এক বান্ডিল টাকা ছুড়ে সেও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যায়। আহান আমার রুমের বারান্দায় বসে থেকে সমস্ত কিছু দেখেছে।আহানের খুব রাগ উঠেছিলো।যদি পারতো উঠে গিয়ে তাকে ইচ্ছা মতো মারতো।কিন্তু ছেলেটা যে তখন হাঁটতে পারতো না।ঘটনার পরি প্রেক্ষিতে প্রতিবেশীরা আমাকে আর ভালো নজরে দেখতেন না।তাদের ছেলে মেয়েকেও আমার কাছে আর পড়তে পাঠাতেন না।সেই লোকটা মাঝে মাঝে আসতো আর আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতো। আমি সব দিক বিবেচনা করে, আহানের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে বিয়ে করে নিয়েছিলাম তাকে।বিয়ের পর জোড় পূর্বক সে আমার উপর বহুবার নিজের অধিকার বোধ ফলিয়েছিলেন। তার সাথে থাকতে থাকতে আমিও তার এই আচারণের প্রতি একটা সময় পর অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে।কিন্তু আহান তাকে কখনো মন থেকে বাবা মেনে নিতে পারেন নি।সব সময় আহান তাকে ছোট করে কথা শুনাতো।মাঝে মাঝে আহানের কথায় উনার দু’চোখে অশ্রু ভরে উঠতো।
আহানের যখন ১৭ বছর বয়স তখন আমার দ্বিতীয় স্বামীর ছোট ভাই আর তার ভাইয়ের বউ গ্রাম থেকে শহরে আসে।শুনেছিলাম পারিবারিক সমস্যার কারণে বহু দিন দুই ভাইয়ের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন ছিলো।তাদের বিপদের কথা শুনে আমি আমার স্বামীকে বলি তাদের আশ্রয় দিতে।সে আমার কথায় তাদেরকে আশ্রয় দেয়।তাদের একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে ছিলো।খুব মিস্টি করে কথা বলতো সে।মেয়েটার বয়স ছিলো ৬।আমার আহানের কাছে গিয়ে দাপিয়ে ঝাপিয়ে অনেক বিরক্ত করতো।আহান ওকে পাত্তা না দিলে চুল টেনে ছিড়ে ফেলতো।বলতো এই আহান আমি এসেছি আর তুমি বইয়ের মধ্যে মুখ গুজে রেখেছো কেন? তোমার বইয়ে আমি আগুন ধরিয়ে দেবো।ওর বিরক্ত বোধ কাটিয়ে উঠতে না পেরে আহান যখন ওর সাথে শান্ত গলায় কথা বলতো তখন আহানের গালে মুখে চুমু দিয়ে বলতো তুমি খুব ভালো।মেয়েটা কে জানিস? তুই। তোর সাথে আমার আহানের খুব জমতো।
তোর বাবা নিশিথ।মদ খেয়ে রোজ বাড়িতে ফিরতো।আর মিরা তোর মা।স্বামীর অত্যাচারে অতিস্ট হয়ে গিয়েছিলো।তুই একদম মিরার প্রতিচ্ছবি হয়েছিস আরু।যখন মিরাকে খুব মারতো তোর বাবা।তখন মিরা নিরবে মুখ টিপে কাঁদত।যখন মাঝ রাতে মিরার সামনে তোর বাবা অন্য মেয়েকে নিয়ে এসে রুমে ঢুকে যেতো।আর মিরাকে রুম থেকে বের করে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতো।তখন মিরা কাউকে কিছু না বলে দরজার সামনে বসে চোখের জল ফেলতো।নিজের মধ্যে দমিয়ে রাখতো কস্টগুলো।তোকেও জানতে দিতো না তোর বাবার আসল রূপটা।তোর সারাটা দিন, নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব আহানের সাথে কাটতো।যার জন্য তোর চোখেও এসব পড়ত না।
প্রতিদিনের মতোই সেদিন আমি ঘড় গোছ করছিলাম।কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে।আমার পেটের উপরে আচমনা কারও হাতের শীতল পরস অনুভব করি।আমি ভাবি আমার স্বামী। তাই চোখ দুটো বন্ধ করে রাখে।ধীরে ধীরে তার স্পর্শ যেন অস্বাভাবিকে পরিণত হয়।আমি চোখ মেলে চেয়ে দেখি তুই আমার সামনে দাড়ানো পিছনে ঘুরতেই তোর বাবাকে দেখতে পাই।তুই মা মা করে চিৎকার করতে থাকিস।তোকে খুঁজতে খুঁজতে আহান চলে আসে সেখানে।আহান তোকে বলে এভাবে মাকে কেন ডাকছো? তুই আহানকে কিছু না বলেই তোর মা আসলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলিস।ওই আন্টিটা পঁচা মা।বাবাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে।আহান এগিয়ে বলে কিসব বলছো আরু তুমি? উত্তরে তুই বলেছিলি ঠিকই বলেছি।তোমার মা পঁচা। খুব বাজে তোমার মা।আহান রেগে তোর গালে একটা চর মেরে বসে।তুইও আহানের গালে চর মরে বলিস তোমরা খুব পঁচা। নোংরা খুব তোমরা।আজ থেকে আমি আর তোমার কাছে যাবো না।তোমার সাথে খেলবোও না।ঘুমাবোও না।
এমন সময় আমার স্বামী আসে।সে তোর মুখে এমন কথা শুনেই আচ করতে পারে কি হয়েছে।আমার হাত ধরে টেনে তোর আর আহানের থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেসা করলে আমি বলে দিই যেটা হয়েছে।সবটা শুনে সে রেগে যায়।আর তার ভাইকে মারতে থাকে।কারণ সে জানে তার ভাইয়ের স্বভাব।
চলবে,,,,