সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 13

উনাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।কেবিনের সামনের বেঞ্চটাতে বসে আছি আমি।আমার ডান সাইটে মাইশা আর রুহান।রুহানের কাঁধে মাথা রেখে মাইশা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। ওদিকে মিডিয়ার চিৎকার চেচামেচি চলছে। হসপিটালের বাইরে এসেছে এক ঝাঁক পাবলিক।যারা আহান আর রুহানের ফ্যান।সবকিছুতে যেন অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে হসপিটাল কতৃপক্ষ।তারা বলছেন এতো শোরগোল প্রেসেন্ডের জন্য ক্ষতিকর।গার্ড দিয়ে সবাইকে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।ফাঁকা পেলে দু’তিন জন চলেও আসছে হসপিটালের মধ্যে।কেউ এসে ধাক্কা ধাক্কির মধ্যে সেলফি তুলছে মাইশা রুহানের সাথে তো কেউ অটোগ্রাফ চাচ্ছে রুহানের কাছে।তাড়াহুড়ো করে রুহান তখন মাইশাকে নিয়ে চলে এসেছিলো।রুহানের গার্ডগুলো এই মাত্র হসপিটালে এসে পৌঁছালো।হসপিটাল কতৃপক্ষ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে স্বীদ্ধান্ত নিয়েছে বাইরের কেউ ভেতরে আসতে পারবে না আর ভেতরের কেউ বাইরে আসতে পারবে না প্রেশেন্ডের বাড়ির লোক ছাড়া।আমি নিরবে বসে আছি।আমার যে মাথায় কিচ্ছু আসছে না।পাশ থেকে কানে আসছে মাইশা আর রুহানের বলা কথা।রুহান মাইশাকে বলছে,
-জানেমন সকাল থেকে কিচ্ছু খাও নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে শরীরটা খারাপ করবে তো।চলো কিছু খেয়ে নেবে।
মাইশা কান্না মৃশ্রিত কন্ঠে,
-না রুহান প্লিজ আমাকে খেতে বলবেন না কিছু। আমার আপু কিছু খাই নি কাল থেকে। আমি কিভাবে খাবো?
-আমিও খাই নি। (মন খারাপ করে)
-কেন? আপনি কেন খান নি?
-তুমি না খেয়ে থাকবে আর আমি খেয়ে নেবো এমনটা ভাবলে কি করে?
কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে মাইশা এক দৃষ্টিতে রুহানের দিকে তাকায়। রুহানের চোখে চোখ রাখলে মাইশার চোখটা ভিজে যায়। রুহান মাইশার দু’চোখের পানি মুছে দিয়ে গালটা আকড়ে ধরে বলে,
-এভাবে চোখের পানি ফেলবে নাতো।আমার কস্ট হয় না বুঝি? জানো তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি?
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
মাইশা টলমল চোখে মাথাটা হালকা ঝাকিয়ে বলে,
-হুমমম। জানি তো।
রুহানের বুকে মাথা রাখে মাইশা।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলেন উনার জ্ঞান ফিরেছে। যে কোনো একজন দেখা করতে যেতে পারবেন।কিন্তু বেশি শোরগোল করা যাবে না।আমি বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায় ডাক্তারের কথায়। দেখি শ্বাশুড়ি মা হসপিটালে এসেছেন।ছুটে এসে ডাক্তারের সামনে দাড়িয়ে তিনি বললেন আমি যাবো ডাক্তার। আমার ছেলেকে আমি দেখবো।তার কথা শুনে আমি আবার বসে পরলাম বেঞ্চটাতে।মাইশা উঠে দাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে আমি হাত ধরে ওকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিয়।ডাক্তার শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে কেবিনের মধ্যে যায়।মাইশা আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,
-এটা কি করলি আপু? তোর যাওয়া উচিৎ ছিলো।উনি কেন গেলেন?
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
-ছিঃ মাইশা।এভাবে বলতে নেয়। মা হন উনার।তোর বিয়ে হয়েছে তোকেও বুঝতে হবে।স্বামীর উপরে স্ত্রীর যেমন অধিকার থাকে মায়েরও তেমন অধিকার থাকে। ত্রিশ বছর ধরে উনি আমার স্বামীর উপর নিজের মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন।কতই না ত্যাগ আর কস্ট সহ্য করেছেন উনাকে গড়ে তুলতে যেগুলো আমার অজানা।আমাদের সম্পর্ক মাত্র কয়েকটা দিনের।এই সম্পর্কের চেয়েও উনাদের মা ছেলের সম্পর্ক অনেক গুণ বড়।ছেলের এমন অসুস্থতায় কোনো মা শান্ত থাকতে পারে না।আমার শ্বাশুড়ি মায়ের মনের অবস্থাও এখন ঠিক নেয়। তাই উনার কাছে তারই যাওয়া উচিৎ।
-তুই ঠিক বলেছিস আপু।আসলে এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার শুধু বোনের কস্টটাই চোখে পরেছে।অন্য কিছু দেখি নি আমি।তাই বলে ফেলেছি।আমিও কখনো আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে ভেদাভেদ করবো না।
এমন সময় শব্দ পেয়ে চেয়ে দেখি কেবিনের দরজা খুললো।কেবিনের থেকে শ্বাশুড়ি মা চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসছে। আমি শ্বাশুড়ি মাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে উঠে দাড়ায়। মনের মধ্যে এক আশার কিরণ জেগে ওঠে।এবার আমি যাবো উনার কাছে।অনেক ব্যাকুলতা নিয়ে আমি কেবিনে দরজার কাছে আসি।ভেতরে ঢুকতে যাবো হেঁচকা টানে শ্বাশুড়ি মা আমাকে অনেকটা দূরে নিয়ে আসেন।তিনি আমাকে বলেন,
-আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য তুমি দায় বৌ মা।তোমার কাছে আমার অনুরোধ আমার ছেলেটার সামনে যেও না আর।ওকে ওর মতোন থাকতে দাও।ও তোমাকে দেখলে আরও কস্ট পাবে।তখন ওর কি হবে বুঝতে পারছো? আর তুমি তো আমার ছেলেকে ভালোবাসো না।পছন্দও করো না।এক প্রকার জোড় করে তোমাকে বিয়ে করা হয়েছে।একটু সময় দাও।আহান সুস্থ হোক।আমি নিজে যেভাবেই হোক আহানকে বোঝাবো তোমাকে ডিভোর্স দিতে।
ডিভোর্সের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে।আমি শ্বাশুড়ি মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বসে পরি।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
-প্লিজ এমনটা বলবেন না মা।আমি সত্যি খুব ভালোবেসে ফেলেছি উনাকে।উনাকে ছাড়া পারবো না আমি বাঁচতে।মা প্লিজ আমাদেরকে আলাদা করবেন না।এভাবে আর বলবেন না আমাকে।আমি সত্যিই জানি না যেই ভুলটা করেছি আপনি বলেছেন।যদি জানতাম শুধরে নেওয়ার চেস্টা করতাম।আমাদের সব ভুল বুঝাবুঝি ঠিক করে নিতাম।
শ্বাশুড়ি মা আমাকে ধরে উঠিয়ে দাড় করায়। আমার দুই কাঁধ ধরে বলেন,
-তুই সত্যি বলছিস আরু? আমার আহানকে তুই ভালোবাসিস? সারা জীবন থাকবি ওর পাশে?
-হ্যাঁ মা হ্যাঁ।আপনি একবার বলুন আমি কি করেছি।প্লিজ মা বলুন।
-হ্যাঁ, বলবো।আজ তোকে সব বলবো আমি।
চলবে,,,,