1. নতুন গল্পঃ6. শিক্ষণীয় গল্প

বউ এর সাথে সেক্স করেছি জানুয়ারীর এক তারিখ

সেক্স

-“সর্বনাশা ব্যাপার স্যার। আমার বউ টা নষ্টা।”
-জিজ্ঞেস করলাম, “কেন কি হয়েছে ভাই? এ কথা কেন?”
-সে জবাব দিলো, “বউ এর সাথে সেক্স করেছি জানুয়ারীর এক তারিখ। ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখ শুনি সে প্রেগনেন্ট। আলট্রাসনো টেস্ট করালাম। রিপোর্ট কইলো বাচ্চার বয়স নাকি দেড়মাস!! এখন আপনি বলেন স্যার, বিদেশ থেকে এসে ওর সাথে থাকলামই ১ মাস ধরে, বাচ্চার বয়স দেড় মাস কেমনে হয়?? নিশ্চই ঘটনা আমি আসার আগে ঘটাইসে সে। আমি বিদেশে কষ্ট করে টেকা কামাইসি আর সে দেশে রং করে বেড়াইসে। রং করার রেজাল্ট এখন তার পেটে। দুই যায়গায় আল্ট্রাসনো করাইসি। রিপোর্ট একই। এদিকে বউ উল্টা আমার উপর রাগ দেখায়। কয় আমি নাকি তারে ভুল বুঝতেসি। কিন্তু আমি তো বেকুব না স্যার। রিপোর্ট তো আমি ই পড়তে পারতেসি। স্পষ্ট লেখা ৬ সপ্তাহের বাচ্চা পেটে। রিপোর্ট দেইখা ওরে পারলে তখনি তালাক দেই। পরে বন্ধুবান্ধব বুঝাইলো যে গোপনে মিটমাট করে ফেলা ভালো। বউ একটা ভুল হয়তো করে ফেলসে। এখন স্যার আমি এত উদার না। আগে ওর পেটের জারজ সন্তান টা নষ্ট করি, তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। এখন আপনি বাচ্চা নষ্ট করার উপায় টা বলেন স্যার”
এক নিশ্বাসে লোকটা এতগুলো কথা বলে থামলো।
আমি বললাম, “মিয়া, আপনে একটা বেকুব”
লোকটা থতমত খেয়ে বললো, “কি কইলেন স্যার? আমি বেকুব? ক্যান?”
আমি তাকে ব্যাখ্যা দিলাম,

“পেটের বাচ্চার বয়স যেদিন থেকে আপনি সেক্স করেছেন, সেদিন থেকে হিসেব করা হয় না। যেদিন সেক্স করেছেন তার আগে প্রায় দু সপ্তাহ যোগ হবে। ডাক্তারী হিসেবে সেই মাসে আপনার বউ এর মাসিক যেদিন হয়েছিলো সেদিন থেকে বাচ্চার বয়স গুনা শুরু হয়। কবে সেক্স করেছেন সেটা ম্যাটার করে না।সুতরাং আপনার বাচ্চার বয়স ৬ সপ্তাহ হিসাব ঠিকই আছে। শুধু শুধু বউটারে সন্দেহ করেছেন”
সে লোক বলে, “কি বলেন স্যার? এটা কেমনে হয়? ওর পেটে বাচ্চা দিলামই তো এক মাস হয়। দেড় মাস হবে কেন?”
আমি হাসতে হাতসে বললাম, “মিয়া আপনি তার ভিতর বাচ্চা দেওয়ার কে??? আপনি বাচ্চার অর্ধেক দিয়েছেন। বাকি অর্ধেক তার পেটে গত ১৪ দিন ধরে তৈরী হচ্ছিলো। এগুলো ডাক্তারী হিসাব। আপনার বুঝা লাগবে না আর। যথেষ্ট বুঝেছেন। এখন যান, বউ এর কাছে যান। ক্ষমা চান। তার সাথে ভালো করেননি”
আরো অনেক্ষন বুঝালাম।- সেক্স
সেই লোক কিছু অবিশ্বাস নিয়েই আমার কাছ থেকে বিদেয় নিলো। পরে সে আরো অনেক ডাক্তারকেই জিজ্ঞেস করেছে। সবাই আমার মতই জবাব দিয়েছে। কিন্তু মানুষের সন্দেহভরা মন বিচিত্র জিনিস। সে ঐ বাচ্চা শেষ পর্যন্ত এবরশন ই করেছে। তবে বউ কে তালাক দেয় নাই।

যে কোন বিষয়ে “#সাধারন_হিসাব” আর “#মেডিকেলীয়_হিসেব” কখনো এক হয় না। আপনি হয়তো কমন সেন্স দিয়ে মনে করবেন ঘটনা এমন। আসলে ঘটনা টা ছিলো অন্যরকম।
কিছু উদাহরন দিয়ে সাধারন হিসেব আর মেডিকেলীয় হিসেবের পার্থক্য দেখাই,
#উদাহরন-১
❏ ঘটনাঃ
রোগীর প্রেশার অনেক। ২২০/১৪০।
❏ সাধারন হিসাবঃ ❌ সেক্স
“ডাক্তার সাব, এক ঘন্টা হয় রোগী আনলাম এখনো প্রেশার কমিয়ে স্বাভাবিক করতেসেন না ক্যান?? এখনো ১২০/৮০ তে না নামাতে পারলেন না। আপনার চিকিৎসা তো ভালো না।”
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ ✅
একজন তীব্র হাই প্রেশারের রোগীর প্রেশার কখনোই হঠাৎ করে নরমালে আনতে নেই। ঐ ব্যাক্তিকে ঔষধ দিয়ে যদি সাথে সাথে প্রেশার নরমালে আনার চেষ্টা করা হয়, তাইলে উনি স্ট্রোক করতে পারেন। ধাপে ধাপে সময় নিয়ে প্রেশার নরমালে আনতে হবে।

#উদাহরন-২
❏ ঘটনাঃ
রোগীর ডাইরিয়া। ১৫-২০ বার হয়ছে।
❏ সাধারন হিসাবঃ ❌
হাসপাতালে নিবো যেন ডাক্তার সায়েবেরা এক্ষন ডাইরিয়া বন্ধ করে দেন। ব্রেক কষাইতে হবে। নাইলে সর্বনাশ!!
“ও ডাক্তার সাব, রোগী হাসপাতালে আনলাম ৬ ঘন্টা, এখনো পাতলা পায়খানা বন্ধ করলেন না। খালি স্যালাইন পুশ দিতেসেন লিটারের পর লিটার। ঘটনা কি?”
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ ✅
ডাইরিয়া বন্ধ ধীরে সুস্থে হবে। আগে রোগীর শরীর থেকে যে ২-৩ লিটার পানি বেরীয়ে গেছে সেটা ভরতে হবে। প্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিকের সাহাজ্যে ডাইরিয়া ধীরে ধীরে সময় নিয়ে থামুক, নো প্রবলেম। কিন্তু শরীরে পানি যেন ঠিক থাকে। নইলে সর্বনাশ। কিডনী ফেল হবে।
#উদাহরন-৩
❏ ঘটনাঃ
মোটা হওয়া।
❏ সাধারন হিসাবঃ ❌ সেক্স
মোটা হবার আসল কারন হচ্ছে তেল চর্বী জাতীয় খাবার। মুরগীর মাংস গরুর মাংস। যেমন এক ভদ্রমহিলার ভাষ্য,
“ও ডাক্তার সাব!!!, আমি তো কিছুই খাই না। মাছ মাংস সব বাদ দিসি। তাও দিনে দিনে মোটা হইতেসি ক্যামনে? রহস্য কি??”
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ ✅
মানুষের মোটা হবার পিছনে আসল কারন ভাত, চিনি, মিষ্টি, চকলেট.. ইত্যাদি অর্থাৎ শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া এবং বসে বসে শারিরীক পরিশ্রম ছাড়া দিন পার করা। চর্বি জাতীয় খাবারই আসল কারন না।
তো উপরের ভদ্রমহিলা সকালে চা তে তিন কাপ চিনি খান, দুপুরে ভরপেট ভাত খেয়ে একটা ভাতঘুম দেন। এগুলো যে মোটা হবার কারন, তা তিনি জানেন ই না। তাই রহস্য বুঝছেন না।

#উদাহরন-৪
❏ ঘটনাঃ
স্বপ্নদোষ..
❏ সাধারন হিসাবঃ ❌সেক্স
স্বপ্নদোষ হলে শরীরের বিরাট ক্ষতি হয়। শরীর থেকে সব শক্তি বেরীয়ে যায়। দূর্বল হয়ে যেতে হয়। শুকিয়ে যেতে হয়।
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ ✅
রাস্তায় লাগানো কলিকাতা হারবাল এর পোষ্টার গুলো পড়া বাদ দেন ভাই। পায়ে ধরি।
স্বপ্নদোষ ন্যাচারাল ঘটনা। এতে কোন শারিরীক ক্ষতি হবার কথা না। ওসব পোষ্টার পড়ে পড়ে মনের ভিতর ভয় ঢুকে থাকে সবার। স্বপ্নদোষ হলেই ভাবে কি না কি হয়ে গেল।
মানসিক দূর্বলতা থেকে শরীর ও দূর্বল হয়। মন দূর্বল হয়।

#উদাহরন-৫
❏ ঘটনাঃ
হাত বা পা ভাঙ্গা/মচকানো।
❏ সাধারন হিসাবঃ ❌ সেক্স
হাতে পায়ে মচকেছে বা ভেঙেছে মানে হলো সেখানে মালিশ দিলে ভালো। গরম সেক দিলে আরো ভালো। আরাম হবে।
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ ✅
হঠাৎ হাতে পায়ে আঘাত পেয়ে ভাংলে বা মচকালে কখনোই মালিশ বা গরম সেক দিতে হয় না।
দরকারে নীচে বালিশ দিয়ে হাত বা পা উচু করে রাখতে হয় এবং ওখানে ঠান্ডা সেক দিতে হয়।
গরম সেক বা মালিশ দিলে নিমিষের মাঝে যায়গাটা ডাবল ফুলে উঠবে। ব্যথা বাড়বে। রক্ত জমাট বাড়বে। এমনকি ফুলে গিয়ে রক্তনালী ও ব্লক হতে পারে।

:::
মূল কথা হলো, কোন মেডিকেল ইস্যু তে কমন সেন্স খাটিয়ে কোন ছোট বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে একবার অন্তত পরিচিত ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।- সেক্স
কারন এসব ক্ষেত্রে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই কমন সেন্স ধোঁকা দেয়।
-শাহরিয়ার পারভেজ

👉 এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *