ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 27

আপুর মেয়েকে আমি নিয় নি।আমার মনে হচ্ছিল এটা আমার সন্তান নয়।আবার ভেতর থেকে একটা টান অনুভব করছিলাম।ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম একি সত্যি আমার সন্তান? ডাক্তার প্রথমে কিছু না বললেও পরে শিকার করলো। সবটা খুলে বললো আমায়।আমি আপুর সাথে দেখা করতে চাইলাম। ডাক্তার আমাকে অপেক্ষা করতে বলে আপুকে আনতে গেলো।আর ফিরলো হৃদের সাথে।

আমার সামনে এসে দাড়িয়ে ডাক্তার কিচ্ছু বললো না।হৃদ বলল নূর আপু এই হসপিটাল থেকেই চলে গেছে।ওকে বলে গেছে এই সন্তানটিকে নিয়ে আমাদের সুখে থাকতে।তার বদলে আপুর সব অপরাধ ক্ষমা করে দিতে।আমি হৃদের উপর খুব রেগে গেলাম।ওকে প্রশ্ন করলাম আপুকে কেন জেতে দিলো।হৃদ বললো আমার খুশির জন্য।ও চায় না আমি সন্তান হারানোর কস্টটা নিয়ে বাঁচি।তাই আমার জন্য এমনটা করেছে।আমি হৃদকে অনেক বোঝালাম। মেঘ স্যারের অবস্থার কথা বললাম আপু চলে যাওয়ার পরে স্যার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।ঠিক মতো খাই না।নিজের যত্ন নেয় না।সারাক্ষণ নিজেকে রুমে বন্দী করে রাখে।আমার পাশেতো তুমি আছো হৃদ।আমাদের আবার সন্তান হবে।আমার কথা ভেবো না আপুকে ফিরিয়ে আনো।আপু তার এক সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবে।বাবা ছাড়া সে কিভাবে বড় হবে? আর স্যার জানলে কতটা কস্ট পাবে।এতোটা স্বার্থপর আমরা নই হৃদ।যে অন্যের কোল খালি করে নিজেরা সুখে থাকবো।

হৃদ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুটে গেলো।হসপিটাল থেকে আপুর ঠিকানা নিয়ে যেখানে থাকে ওখানে গিয়ে জানতে পেলো কিছুক্ষণ আগে বাড়িওয়ালার কাছে চাবিটা দিয়ে আপু তার বান্ধবীর সাথে চলে গেছে। কোথায় গেছে বলে যায় নি।হৃদ আর আমি অনেক ভাবার চেষ্টা করেছি কে আপুর বান্ধবী। আর কোথায় থাকে সে।কিন্তু পাই নি।আমি হৃদের সাথে মেঘ স্যারের বাড়িতে আসলাম। স্যারের কোলে তুলে দিলাম তার সন্তানকে। এতোদিন পর আজ যেন স্যার একটু দেহে প্রাণ খুঁজে পেয়েছে। আপুর কথা শুনে স্যারের আবার খুব কস্ট হচ্ছে। আর তার অন্য সন্তানের কথা ভাবছে।
একে একে আট’টা বছর পার হয়ে গেলো। আপুর কোনো খোঁজ আমরা পাই নি।স্যার আর আপুর মেয়ে মিলি।যে স্যারের সাথে থাকে।একদম স্যারের উপরে গিয়েছে।স্যারের মতো খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে।ঠান্ডা মাথায় কাজ করে মিলি।

অন্যদিকে আপুর অরেক মেয়ে। নাম তুলি। যে আপুর সাথে থাকে।একদম আপুর মতো হয়েছে।যা একবার বলবে তা করেই ছাড়বে।স্কুলের প্রথমদিন এসেই জেদ দেখিয়ে গাছে উঠেছে সে।নিচ থেকে চিৎকার করে টিচাররা বলছে তাকে নামাতে।সে আরামচে গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে পেয়ারা খেতে খেতে বলছে।কি দাড়ায়ান কাক্কু পেয়ারা দেবে নাতো।দেখও আমি নিজে পেরে খাচ্ছি।ভেবেছিলে এইটুকু মেয়ে গাছে উঠতে পারবে না।এই দেখও আমি গাছে উঠেছিও আর পেয়ারা খাচ্ছিও।
এমন সময় স্যার মিলিকে নিয়ে স্কুলের সামনে এসে গাড়িটা থামালো।গাড়ি থেকে নেমে মিলিকে বোঝালো সকলের সাথে সুন্দর ব্যাবহার করতে।টিচারদের সব কথা অক্ষর অক্ষরে মানতে।মিলি সম্মতি জানিয়ে চলে যেতে পেছনে ঘুরলো।আর সামনে ভীর দেখতে পেয়ে স্যারকে ডেকে উঠে বলল বাবাই ওখানে এত মানুষ কেন?
স্যার ব্যাপারটা দেখে মিলির হাত ধরে এগিয়ে গেলো।ভীরের মধ্যে থেকে সামনে এসে গাছের উপরে হুবহু মিলির মতোন মুখটা দেখে মেয়েটিকে মিলি নামে চিৎকার করে ডেকে উঠলো।তুলি চিৎকার শুনে নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো তার মতো দেখতে একটি মেয়েকে তার বাবা জড়িয়ে ধরে আছে।বিস্মিত হয়ে গাছের ডাল থেকে হাত ছুটে নিয়ে পরে গেলো তুলি।

মেঘ স্যার এগিয়ে আসলো তুলির কাছে।একবার মিলিকে আর একবার তুলিকে দেখছে।একই স্কুলের ইউনিফর্মে কে তুলি কে মিলি গুলিয়ে যাছে।তুলি তেমন চোর্ট না পেলেও ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।স্যার সংশয় কাটিয়ে তুলিকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।তুলিকে উঠিয়ে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে চলে এলো।মিলিও স্যারের সাথে গাড়িতে উঠে হসপিটালে আসলো।
স্যার হসপিটালের মধ্যে এসে চিৎকার করলে আমরা সব ডাক্তার নার্স ছুটে আসলাম।স্যারের কোলে তুলিকে দেখে মিলি ভেবে আমরা খুব ব্যস্ত হয়ে পরলাম।তুলির জ্ঞান ফিরলো।আর স্যারকে বলল আমাকে কোল থেকে নামান আঙ্কেল।আমি বাচ্চা না।মিলি পেছনের থেকে এসে বললো খালা মণি ওটা আমি না।আমার মতো দেখতে।তুলি হা হয়ে মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে বলছে একটা চিমটি কাটতে।
আমি মেঘ স্যারের কাছে জানতে চাইলাম মেয়েটাকে কোথায় পেলো।স্যার আমাকে বলল তুলির স্কুলের সামনের পেয়ারা গাছে উঠে বসে ছিলো।একে আর হারাতে দেবে না।এর জন্য হলেও আপুকে ফিরে আসতে হবে।
চলবে,,,,,