00

সত্য ঘটনা অবলম্বনে – জীবনের গল্প !! Part- 06 (Last-Part)

আমি অস্থির চিত্তে বারবার সানিতার বাবাকে কল করতে থাকলাম। কিন্তু বরাবরই তার ফোন সুইচ অফ দেখালো।এদিকে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার উপক্রম হলো!
কিছুক্ষণ বাদে সানিতার বাবা যে মহিলাকে তার বন্ধুর স্ত্রী বলে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সেই মহিলা আসলো।
তাকে দেখা মাত্রই আমি এক লাফে দাঁড়িয়ে পরলাম। খুব চিন্তিত গলায় বললাম,
আপা আমার মেয়েটা কোথায়? ওর জন্য আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে! ওকে যদি একটু আমার কাছে দিতেন।
ওই মহিলা খুব অদ্ভুত রকমের একটা হাসি দিয়ে বলল,
আরে আপনি বেকার চিন্তা করছেন।
আপনার বাচ্চা ঠিক জায়গাতেই আছে। আর খুব ভালোও আছে। ও আমাদের বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করছে। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই।
তবে আপনি চাইলে আপনার বাচ্চার কাছে আপনাকে নিয়ে যেতে পারি।
আমিও বাচ্চার কাছে যেতে খুব আগ্রহ দেখালাম।সে মহিলা আমাকে সাথে করে নিয়ে দোতালায় গেলো।
তারপর হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দিয়ে একটা রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
এবার আমি সত্যিই খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লাম!
কারন আমার যে আর বুঝতে বাকি নেই আমি কোথাও ফেঁসে গিয়েছি।
আবারো সেই বিশ্বাসঘাতক আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে। আমি দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম! কিন্তু এই বন্ধ করে আমার কান্না কে শুনবে?
মিনিট দশেক পরেই এক মধ্য বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
তাকে দেখেই আমি কাঁদতে কাঁদতে দু’পা জড়িয়ে ধরলাম। আকুতি ভরা গলায় বললাম,
মাগো!

আপনি তো আমার মায়ের মতই। আপনাকে না হয় মা বলেই সম্মোধন করলাম। আমাকে কেনো এভাবে আটকে রেখেছেন? আমার বাচ্চাটার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমাকে ছাড়া! আমার বাচ্চাটার কাছে আমাকে নিয়ে যান। ও যে একটা দুধের শিশু সেটা কি আপনারা বুঝতে পারছেন না? আমাকে কেনো বন্দি করে রেখেছেন?
সে মধ্য বয়স্ক মহিলা আমাকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,
তুমি জানো না তোমাকে ২০০০০ টাকার বিনিময় এখানে বিক্রি করা হয়েছে? আর বিক্রি করা হয়েছে মানে কি সেটা তো আর তোমাকে আমার বোঝাতে হবে না। তাই এসব ন্যাকামি না করে তৈরি হয়ে যাও।
সে মহিলা আমার মুখের উপর আধা ছেঁড়া কিছু পোষাক ছুড়ে মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
আমি পাগলের মতো কাঁদতে লাগলাম সন্তানের বিহনে,,,,!
হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। এটাকে ঠিক উপস্থিত বুদ্ধি বলা যেতে পারে। ভয়,চিন্তা কিংবা আতঙ্কে আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমার সাথে যে আমার ফোনটা এখনো আছে। কিন্তু এটাও ওরা যে কোন মুহূর্তে ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে পারে।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে সব ভয়-ভীতি ভুলে গিয়ে দ্রুত ভাইয়ার নাম্বারে কল ঢুকালাম। একবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে ভাইয়া কল রিসিভ করলেন। যেন ভাই আমার কলের জন্যেই অপেক্ষায় ছিলেন!

আমি কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়াকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এই মুহুর্তের কঠিন অবস্থা সম্পর্কেও পরিষ্কারভাবে বললাম। সেইসাথে আকুতি মিনতি করে ক্ষমাও চাইলাম। যত বড় অন্যায়ই করি না কেনো আমি যে ভাইয়ার বড় আদরের বোন!
আমার জীবনের এই কঠিন পরিস্থিতির কথা শুনে ভাইয়া কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কিন্তু সাহস হারাতে বারণ করলেন। ভাইয়া আমাকে বারবার একটা কথাই বললেন,
আমি যেনো আমার ফোনটা কিছুতেই হাতছাড়া না করি। যেভাবেই হোক ফোনটা যেনো ওদের নাগালের বাহিরে রাখি এবং অন করে রাখি।
আমিও ভাইয়ের কথা মতোই কাজ করলাম।
আমার সাথে খারাপ কিছুই ঘটতে পারলো না।
হয়তো ফোনের জন্যেই সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলাম।
পরদিন সকালবেলায় ভাইয়া সহ আরও কয়েকজন পুলিশ সে বিল্ডিং ঘেরাও করে ফেললো।
ভাইয়াকে পেয়ে আমি পাগলের মত কাঁদতে কাঁদতে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম! মাফ চাইতে চাইতে আমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠলো। কিন্তু মাতৃ হৃদয় আমার তখনও শুধু আমার সন্তানের খোঁজই করছিলো!
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া আমার মেয়ে,,,,,,,,
ভাইয়াও পাগল হয়ে উঠলো।
এদিক ওদিক চতুর্দিকে খোঁজ করতে লাগলো আমার মেয়েকে। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না সানিতা কে। অগত্যা ভাই আমাকে একাই সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। আমার মন ভেঙে দুমড়েমুচড়ে শেষ!
সানিতার অভাবে আমি প্রায় মৃত্যুমুখী!
ওদেরকে রিমান্ডে দেওয়ার পর এতোটুকুই জানা গেলো, সে রাতেই নাকি ওরা সানিতা কে বিদেশে পাচার করে দিয়েছিলো।
এ সংবাদ কানে আসার পর আমি আরো বেশি ভেঙে পরি! কেমন যেনো একটা পাগল হয়ে যাই!
আমার জীবনের সবথেকে বেশি ভুল ছিলো আমার সরলতা আর বিশ্বাস।
সেজন্যই বোধহয় আমি আমার বেঁচে থাকার কারণটা কেউ হারিয়েছিলাম!
হারিয়েছিলাম আমার চোখের মনি!
আমার সানিতা কে!

এভাবেই আমার জীবনটা অসমাপ্ত রয়ে যায়।
আমার সাথে আর খারাপ কিছু ঘটার বাকি নেই। যা ঘটেছে তাই যেন অনেক!
সে মুখোশধারীর জীবন আরো বেশি দুর্গতির মুখোমুখি হয়েছিলো। কারো বিশ্বাস আর সরলতা নিয়ে খেললে এমনই হয়!
অবশ্য আমার এসব কিছু বলে কি লাভ?
আমিতো সর্বহারা!
অসমাপ্ত জীবনের গল্প।
আরফাহ হুমায়রা