মিশে আছো নিঃশ্বাসে

মিশে আছো নিঃশ্বাসে !! Part- 03

আমি গভীর ঘুমে মগ্ন।ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমার পেটে সুরসুরি দিচ্ছে।নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে সামনে নিহালকে দেখেই ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে আসাম করে বসে পড়লাম।সে এতোরাতে আমার রুমে কি করছে?এই ছেলে কি আমাকে শান্তি দিবেনা?আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“আপনি?আপনি এতোরাতে এখানে কি করছেন।”

সে সোজা গিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে পরলো ও বলল,

“তো কোথায় থাকবো শুনি।আমার প্রেমিকার ঘরে আমি আসবোনা তো কে আসবে হে?ঐ পাশের বাড়ির টাকলা আংকেল?”

“প্রেমিকা!কে আপনার প্রমিকা।(আশেপাশে তাকিয়ে)এখানেতো আমি ছাড়া আর কাউকে দেখছিনা।তাহলে আপনার প্রেমিকাটা এখানে আসলো কোথা থেকে?(ভ্রুজোড়া কুচকে)”

সে আমার দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলল,

“এমা তোর তো দেখি ভুলে যাওয়ার রোগও আছে।(স্বাভাবিকভাবে)কেনো মনে নেই আজ সকালে কি বলেছিলি।”

এবার আমার হুট করেই সকালের কথাটা মনে পড়ল।আমি বললাম,

“হ্যা মনে আছে।তাই বলে কি আপনি এতো রাতে হুটহাট আমার ঘরে চলে আসবেন নাকি?তাও আবার আমার বিছানায় শুয়ে আছেন।কেউ দেখলে কি মনে করবে ভাবতে পারছেন আপনি!”

নিহাল নড়েচড়ে আর একটু আয়েশ করে শুয়ে বলল,

“সে যে যাই বলুক আই ডোন্ট কেয়ার।আচ্ছা শোন তুই আজ থেকে রাতে ওইসব গেঞ্জি-টেঞ্জি পড়ে ঘুমাবিনা বুঝলি।তোর ওই ভুড়িওয়ালা পেট দেখতে আমার ভালো লাগেনা।ওই দেখ এখনও দেখা যাচ্ছে।”

আমি আমার পেটের দিকে তাকিয়ে দেখি টি-শার্টটা কুচকে অনেকখানি উপরে উঠে গেছে।ডিম লাইটের আলোতে সবকিছু বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।আমি তারাতারি করে টি-শার্টটা নিচে নামিয়ে নিলাম।এবার খুব লজ্জা লাগছে আমার।শালার ব্যাটা লুইচ্চা।হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়তেই তাকে হালকা রেগে ভ্রুজোড়া কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,

“তার মানে ওই সময় আপনি আমার পেটে সুরসুরি দিচ্ছিলেন।”

“হ্যা দিয়েছি তো😏।”

“তো মানে কি!আপনার সাহস হয় কি করে আমার পেটে হাত দেওয়ার😡?”

“এই শোন এতো বেশি কথা না বলে আগে বলতো তোদের ঘরে চানাচুর আছে?”

“হোয়াটট!চানাচুর!চানাচুর দিয়ে কি করবেন আপনি?(অবাক হয়ে)”

“কি করবো আবার খাবো😋।তুই কি কচি খুকি ফিডার খাস নাকি যে এটাও বোঝিস না😏।”

“কিইইই!এতো রাতে চানাচুর খাওয়ার জন্য আপনি এখানে এসেছেন😱!দেশে কি চানাচুরের অকাল পড়ছে?”

“সে যেই জন্যই আসি সেটা তোর দেখার বিষয় না।এখন যাতো যেটা বলেছি গিয়ে নিয়ে আয়।(অর্ডারের সুরে)”

“আমি পারবোনা।নিজের বাসায় গিয়ে খান।যান😤।”

সে এক ঝটকায় শোয়া থেকে উঠে আমার সামনে তার মুখটা এনে বলল,

“তাহলেতো বিয়ের আগেই তোর সাথে বাসরটা সেরে ফেলতে হয়।কি বলিসরে ডুগডুগি😉।”

তার কথা শুনে আমি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তাড়াহুড়োয় সেখান থেকে উঠে নিচে চলে আসলাম।যেই পোলা কোনো ভরসা নেই।কখন না জানি কি করে বসে।আচ্ছা ও কার বিয়ের কথা বলছিলো?ধুর এসব আউলা ফাউলা চিন্তা করে আমি কি করবো?(নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে)অবনি নিজের চরকায় তেল দে।ওই রামছাগলের কথা ভেবে তোর কোনো ফয়দা হবেনা।

রান্নাঘর থেকে চানাচুরের বক্সটা নিয়ে সোজা ঘরে চলে আসলাম।তারপর চানাচুরের বক্সটা এক প্রকার আছাড় মেরেই নিহালের সামনে রেখে দাতে দাত চেপে বললাম,

“নিন ব্যাটা রাক্ষস খান।খেয়ে জলদি এখান থেকে বিদায় হোন দেখি।”

নিহাল অবনিকে রেগে ধমক দিয়ে বলল,

“এই আমাকে কি তোর কোনো ভিখারি মনে হয় যে এভাবে বলছিস।তোর সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছিনা।তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস?এখন এই সবগুলো চানাচুর তুই খাবি।এটা তোর শাস্তি।”

“কি বলেন এসব পাগল ছাগলের মতো।এই এক বক্স চানাচুর আমি খাবো!ইম্পসিবল😨।”

নিহাল বাকা হেসে বলল,

“তাহলে আমার দ্বারাও অনেক কিছু পসিবল।”

বলেই আমার কাধের দু-পাশে তার দুই হাতের ভর ছেড়ে দিলো।আমার প্রাণপাখিটা এদিকে আকুমবাকুম করছে ভয়ে।কারন সে তার নিচের ঠোঁটের এক সাইড কামড়ে ধরে আমার ঠোঁটের দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

“ক…..কি করছেন নি……নিহাল?”

“কেনো যা তুই চাইছিলি তাই করবো এখন।(সয়তানি হাঁসি দিয়ে)”
,
,
,
,
,
সকালে বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা।কি করে উঠবো?রাতে পুরো এক বক্স চানাচুর যে খেয়েছি।ঐ গন্ডার মার্কাটার জন্য এখন আমার পেটের বারোটা বেজে রয়েছে।কোনোরকমে শোয়া থেকে উঠে বদহজমের একটা পিল খেয়ে নিলাম।একটু পর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।

ভার্সিটি ছুটির পর শিহাবের সাথে মাঠের এক কোণে থাকা বেঞ্চে বসে আছি।আমাদের ভার্সিটির চারপাশ ঘিরেই স্টুডেন্টদের বসার জন্য এরকম বেঞ্চ রয়েছে।শিহাব আমার ক্লাসমেট।বন্ধুও বলা চলে।তবে ততো ভালো বন্ধু না।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিয়া বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ।হালকা জ্বর,ঠান্ডা আরকি।তাই সে ৩ দিন যাবত ভার্সিটিতে আসছে না।সে জন্যই এতদিন শিহাবের সাথে একটু-আধটু কথা বলি।তাও নিজ থেকে নয়।সেই সেধে সেধে আমার সাথে কথা বলে।পরে আমিও বলি।

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে যখন শিহাবের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত তখন সে আমার অন্যকিছু দেখতে ব্যাস্ত।তবে আমি সেটা প্রথমে খেয়াল করিনি।করতামও না যদিনা তখন নিহাল আসতো।

আমার কথা বলার মাঝখানেই কোথা থেকে নিহাল এসে হুট করে আমার আর শিহাবের মাঝখানে জায়গা করে বসে পড়লো।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে চরম রকমের রেগে আছে।চোখদুটো দিয়ে তার জোয়ালামুখীর মতো আগুন বের হচ্ছে।সে ওই রাগীভাবে মুখে র্জোরপূর্বক একটা হাঁসির রেখা টেনে তার একহাত আমার অপরপাশের বাহুতে রেখে এক ঝটকায় আমাকে তার আরও কাছে টেনে নিলো।আমি তার মতিগতি কিছুই বোঝতে পারছিনা।শুধু হাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি।তার হাতটা এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যেনো মনে হচ্ছে তার নখগুলো আমার মাংসের ভিতর ঢুকে যাবে।ব্যাথা পাচ্ছি তাও কিছু বলতে পারছিনা।টু শব্দটা পর্যন্ত না।কারণ এখানে শিহাব রয়েছে।শিহাবও যে কিছুটা বিরক্ত এসবে তা ওর চেহারা দেখলে যে কেউই বলে দিতে পারবে।

নিহাল ওই হাঁসিটা মুখে রেখেই শিহাবের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“এইযে মি.শিহাব আপনি এখন আসতে পারেন।(চোখ টিপ মেরে)ইউ নো না উই আর জিএফ-বিএফ।সো ইটস পার্সোনাল।”

শিহাব মনে হয় কথাটা শুনে খুব বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“জিএফ-বিএফ মানে!(আমার দিকে তাকিয়ে)কই অবু তুমিতো আমাকে এই বিষয়ে কিছু বলনি যে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে! ”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

“আ….আ…আসলে ও হ…………”

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিহাল চোখমুখ শক্ত করে শিহাবকে বলল,

“কেনো আমি বলেছি তাতে হয়নি।ওর বলতে হবে কেনো?(আমার দিকে ফিরে বিরক্তিকর সুরে)এই চলোতো। এখানে পাবলিক প্লেসে প্রেম করা যায় বুঝি।চলো এখান থেকে।”

বলে সে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার এক হাত ধরে এক প্রকার টেনে হিচরে সেখান থেকে নিয়ে আসলো।শিহাব হয়তো তখনও বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে আমাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আর নিহাল একটা গার্ডেন পার্কে পাশাপাশি বসে আছি প্রায় আধঘন্টা হতে চলল।এখন দুপুর টাইম।তাই পার্কে তেমন মানুষজন নেই বললেই চলে।নিহাল কিছুই বলছেনা।শুধু রাগে হাত একবার মুষ্টিবদ্ধ করছে,তো এই এক হাত দিয়ে অন্য হাতের আঙ্গুল ফোটাচ্ছে,তো আবার মাথা নিচু করে চুল ধরে টানছে।হয়তো রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টায়।আর আমার এদিকে ভয়ে হাত-পা রিতীমত মতো কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।চোখ দুটোও টলমল করছে।এখন না জানি সে কি করে আমার সাথে?ভেবেই আমার অন্তরাত্মা কেপে কেপে উঠছে।

আমি যেই দুই হাতে ভর দিয়ে তার থেকে আরএকটু দুরত্ব বজায় রেখে বসতে যাবো ওমনি সে মাথা নিচু করে রেখেই খপ করে তার পাশে থাকা আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।আমি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই সে রেগে শান্ত গলায় বলল,

“এখন পালাচ্ছিস কেনো?……………………

to be continue…………………. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *