মিশে আছো নিঃশ্বাসে

মিশে আছো নিঃশ্বাসে !! Part- 02

কিরে তোর শরীরের ভাজগুলো এতো সুন্দর কেনোরে?আমাকে পাগল করার জন্য বুঝি।এসব দেখিয়ে অন্য ছেলেদের পাগল করতে পারবি।এই নিহালকে নয়।বোঝতে পেরেছিস ডুগডুগি।”

নিহালের কথা শুনে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।ছিহহ ছেলেটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।জীবনে কল্পনাও করিনি এমন একটা বাজে কথা আমাকে শুনতে হবে।তাও নিজের ক্রাশের কাছ থেকে।

অামি যখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব ভাবছিলাম তখন নিহাল আবারও বলে উঠলো,

“এভাবে সং সেজে দাড়িয়ে আমাকে শরীর দেখাবি নাকি ভিতরে যাবি?অবশ্য আমার দেখতে কোনো প্রবলেম নেই তুই দেখাতে চাইলে 😏।”

আমি আর এক মিনিটও ওখানে দাড়িয়ে না থেকে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসলাম।তারপর এক দৌড়ে নিজের রুমের ওয়াশরুমে এসে দুই হাত হাটুতে রেখে হাফাতে লাগলাম।

মা গো মা কি সাংঘাতিক পোলা ভাবা যায়।আর একটু হলে তো আমি লজ্জায় দম বন্ধ হয়ে মরেই যেতাম মনে হয়।(সোজা হয়ে দাড়িয়ে রেগে)আমি কি বলেছি নাকি যে তাকে আমার শরীর দেখাবো?সেই তো সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থাকে।এখন ‘যতো দোষ নন্দ ঘোষ’ হাহ।

(বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে অবনি।এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট সে। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমন মায়াবীও।কোনো দিক দিয়েই কমতি নেই তার।

নিহাল ও অবনির বাবা দুজনেই একসাথে পার্টনারশীপে বিজনেজ করছে।একটা বড় কোম্পানিও আছে তাদের।

নিহালরা দুই ভাই।সেই বড়।ছোট ভাইয়ের নাম আহান।নিহালের ২ বছরের ছোট সে।
লিহাল এতোদিন ঢাকা হোস্টেলে থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছে।৩ মাস হলো এখানে অবনি যে ভার্সিটিতে পড়ে সেখানেই মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েছে।তাকে দেখলে যেকোনো মেয়েই ক্রাশ খেতে বাধ্য।দেখতে খুব সুদর্শন।তবে সে একনাম্বারের মেয়েবাজ ছেলে।মানুষ যেমন জামাকাপড় চেঞ্জ করে সে তেমন মাসে মাসে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে।)

ভার্সিটিতে এসে অনেক্ষন যাবত নিহালকে খুজে যাচ্ছি।কিন্তুু তাকে পাওয়াতো দূরে থাক তার কোনো চিহ্নও নেই আশেপাশে।হঠাৎই কিছু একটা ভেবে ভার্সিটির পেছনের পুলের দিকে হাটা ধরলাম।

সেখানে এসে হ্যা যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই।নিহাল একটা মেয়ের কাধে মাথা রেখে তার সাথে প্রেমালাপ করতে ব্যাস্ত।আমি তাড়াহুড়ো করে ওখানে তাদের সামনে গিয়ে দুই হাতে মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে রেগে বলতে লাগলাম,

“ওই গাব গাছের পেত্নী তোকে না আমি মানা করছিলাম নিহালের আশেপাশেও যেনো তোকে না দেখি।তাও তোর কত্ত বড় কলিজা তুই আবারও ওর সাথে এখানে বসে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।আজ তোর একদিন কি আর আমার যতোদিন লাগে।”

অবনির কান্ড দেখে নিহাল পেছন থেকে অবনির কোমড়ে দুই হাত রেখে তাকে হেচকা টান মেরে মেয়েটার থেকে ছুটিয়ে পেছনে নিয়ে আসে।মেয়েটাও ছাড়া পেয়ে ততোক্ষণে চম্পট।

আমি এদিকে এখনও রাগে ফুসছি।নিহাল আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার সামনে এসে হালকা রেগে বলল,

“কি করলি তুই এটা হে?জানিস মেয়েটাকে পুনরায় পটাতে আমার পুরো এক ঘন্টা টাইম লেগেছে।আগেরটার সাথেও তোর কারণে ব্রেকআপ হয়ে গেছে।এখন কি তোর জন্য আমি গার্লফ্রন্ড ছাড়া থাকবো?”

আমার এবার রাগটা আরও বেড়ে গেলো।আমি রেগে বললাম,

“ইসস যেভাবে বলছেন মনে তো হচ্ছে আপনাকে কেউ না খেয়ে থাকতে বলছে।এহহ ভাব কতো দেখো।কেনো গার্লফ্রেন্ড ছাড়া কি আপনি ইন্তেকাল করবেন শুনি?করলে করবেন আপনার কবরে আমি একশটা ফুলের তোরা গিফ্ট করে আসবোনে।যত্তসব ফাউল কোথাকার।”

অবনির কথা শুনে নিহাল বাকা হেসে বলল,

“আপাততো মরার কোনো শখ নেই।তবে তোর সাথে প্রেম করার শখ আছে।”

মুহুর্তেই আমার রাগের সব হাওয়া ফুসস হয়ে উড়ে গেলো।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“মানে😕।”

নিহাল অবনির দিকে এগুতে এগুতে বলল,

“মানেটা খুব সোজারে ডুগডুগি পটল।তোর কারণে যেহেতু আমার দু-দুটো ব্রেকআপ হলো তাই যতোদিন পর্যন্ত না আবার কোনো নিউ গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে ততোদিন পর্যন্ত তোর সাথে প্রেম করবো।মানে তুই আজ থেকে আমার নিউ গার্লফ্রেন্ড।”

আমি পেছাতে পেছাতে কাপা কাপা গলায় তার দিকে আঙ্গুল তুলে বললাম,

“এ….একদম না বলে দ…..দিচ্ছি।(হাতে ইশারা করে)দূ….দূরে যান।দূরে যা…যান বল…….আআহহ।”

আর কিছু বলার আগেই আমার পায়ের নিচ থেকে জমিন গায়েব হয়ে গেলো।আমি যেইনা পা ফসকে পুলে পরে যেতে নিবো ওমনি কেউ আমার এক হাত খুব শক্ত করে ধরে ফেলল।হ্যা নিহাল।আমি ভয়ে ভয়ে একবার পানিতে তো একবার তার দিকে তাকাচ্ছি।সে একটা ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল,

“আব তেরা কেয়া হগা ডুগডুগি।কি সাহসীগিরি শেষ তোর।এখন হাতটা ছেড়ে দিলেইতো তোর কেল্লাফতে হয়ে যাবে।এবার বল আমার সাথে প্রেম করবি কিনা?”

আমি এক পলকের জন্য রেগে বলে উঠলাম,

“জীবনেও না।”

“তাহলে আমিও হাতটা ছেড়েই দি।কি আর করার।বাই বাই ডুগডুগি।(আফসোসের অভিনয় করে)পেলামনা তোকে জীবনের তরে,তোমার আমার দেখা হবে মরনের পরে😩।”

বলেই সে আস্তে আস্তে আমার হাতটা ছেড়ে দিতে লাগলো।আমি আবারও বললাম,

“প্লি…প্লিজ হাত ছাড়বেন না।আমি সাতার জানিনা।পড়লে আর উঠতে পারবোনা।(ভয়ার্ত কন্ঠে)”

সে বলল,

“তুই কি আমার কথা শুনেছিস তাহলে আমি কেনো শুনবো তোর কথা।”

বলে আবার যেই তার হাত থেকে আমার হাতটা ছটতে যাবে ওমনি আমি চোখ বন্ধ করে চেচিয়ে বললাম,

“হ্যা হ্যা আমি রাজি।আমি রাজি।”

বলার সাথে সাথে নিহাল আমাকে টেনে একদম তার সাথে মিশিয়ে তার এক হাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো ও বলল,

“এইত্তো গুড গার্ল।যাহ এবারের মতো মাফ করে দিলাম।তবে বারবার কিন্তুু করবোনা বলে দিলাম।”

এদিকে সে আমার এতো কাছে আসাতে আমার বুকে যেনো কেউ তাকঢুম তাকঢুম করে ঢুল পিটাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে।তার শরীর থেকে এক অদ্ভুত মাতাল করা একটা গ্রান আসছে।যেই গ্রাণটা বোধহয় কোনো গোলাপকেও হার মানাবে।আমি যখন চোখ বন্ধ করে তার শরীরের সেই মাতাল করা গ্রাণটা নিতে ব্যাস্ত তখন সে আমাকে ওভাবে ধরা অবস্থায় রেখেই বলল,

“কিরে তোর ভিতরে কি কেউ আছে নাকি।যে তোর বুকে ডিজে সং বাজাচ্ছে।এতো ডুগডুগ শব্দ হচ্ছে কেনো শুনি।আমার কাছে কিন্তুু ভালোই লাগছে।খুব ইনজয় করছি আমি।কেরি অন।”

নিহালের কথা শুনে আমি তারাতারি তার বুকে দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছিটকে দূরে চলে আসি ও রেগে বলি,

“আপনি আসলেই একটা অসভ্য😡।”

“তাই নাকি।তা আরও দেখাবো নাকি অসভ্যতামি😏।”

“ধুর ছাতার মাথা ভাল্লাগেনা।”

কথাটা বলে রেগেমেগে বোম হয়ে সেখান থেকে চলে এসে সোজা বাড়ির পথে হাটা দিলাম।আজ এসবের চক্করে ক্লাসগুলোও মিস হলো।

বাড়িতে আসতেই আম্মুর একগাদা প্রশ্ন।এতো তারাতারি কেনো চলে আসলাম,রেগে আছি কেনো,কি হয়েছে ব্লা ব্লা ব্লা।আমিও তার কোনো কথার জবাব না দিয়ে বিরক্তি নিয়ে রুমে চলে আসলাম।আমি কি ডিকশনারি নাকি যে সারাক্ষণ সবাই প্রশ্ন করতেই থাকে।যত্তসব।
,
,
,
,
রাত ১ টা ৫ মিনিট,,,,,,,,

আমি গভীর ঘুমে মগ্ন।ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমার পেটে সুরসুরি দিচ্ছে।………………

to be continue…………………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *