মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-15

রিনা প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো-;
-:কি বলতে চাইছিস তুই??
তৃষার পাশ থেকে পুলিশ অফিসার বলে উঠলো-;
-;মানেটা আমি আপনাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি।এই দেখুন এখানে মিস্টার নাজমুল শেখের কিছু পপার্টির পেপারস এগুলো কোর্ট থেকে পাশ করে আনা হয়েছে,,এখানে স্পষ্ট লেখা আছে নাজমুল শেখ কাউকে নিজের পপার্টি দেওয়ার কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেন নি কিন্তু একটা ভুয়ো দলিল দেখিয়ে দাবি করেছিলেন নাজমুল শেখ এমন চুক্তি করেছিল যাতে লেখা আছে তিনি যদি কোনোদিন কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে একমাত্র আপনি নিজেই পারেন তার পপার্টি কিনতে।আর তাছাড়াও আপনি এই বাসা কেনার সময় কোনো টাকা দেন নি,,বলা যাই জোর জবরদস্তি এই বাসায় আছেন আপনারা।
নাঈম সাহেব রেগে বলে উঠলেন-;
-: অফিসার কি প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে??
-:প্রমাণ অনেক কিছু আছে ভাই।
নাজমুল শেখের কথায় নাঈম সাহেব বেশ চমকে উঠলেন। নাজমুল শেখ ভিতরে ঢুকে বলে উঠলেন-;
-:তুই ভেবেছিলি আমি খুব দুর্বল তাই তোর সব অন্যায় মেনে নিয়েছি।কিন্তু তুই ভুল,,আমি আগে থেকেই জানতাম তোর এই নোংরা কুকির্তির কথা কিন্তু তুই শুধু মাত্র আমার ভাই বলে এতো দিন ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু আর নয়।তুই আর তোর মেয়ে মিলে আমার মেয়ের অনেক ক্ষতি করেছিস।তোর বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ আমি পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছি।
-:মিস রিনা আপনার বিরুদ্ধে ও আমাদের কাছে অভিযোগ আছে আকাশ খান নামক একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টকে প্রতারণা করা এবং আপনার বোনকে অন্যজনের দ্বারা হিউমিলেট করার জন্য আপনাকেও আমরা গ্ৰেফতার করবো,,আর এর জন্য যথেষ্ট প্রমাণ‌ও আমাদের কাছে আছে।
আর নাজমুল শেখকে ফ্রট করার জন্য এই বাসা এবং নাজমুল শেখের সমস্ত পপার্টি আবার তিনি ফেরত পাবেন।
রিনা আর নাঈম সাহেব আর কিছু বলতে পারলেন না,,তাদের সমস্ত পর্দা আজ ফাঁস হয়ে গিয়েছে,, পুলিশ তাদের গ্ৰেফতার করে নিয়ে গেল।
নাজমুল শেখ তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল-;
-: আমার থেকে খুশি আজ আর কেউ নেই,,আমি আজ সব পেয়েছি তৃষা।এবার তোর আর আকাশের মাঝে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেই আমি শান্তি পাবো।
তৃষা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো-;
-:তা হয় না বাবা।
-:কেনো মা?
-: তুমি ভুলে গেছো কাল আমি তোমাদের কি বলেছিলাম??
-:হ্যা কিন্তু তুই কি পারিস না সব ভুলে গিয়ে আকাশকে ক্ষমা করে,, আবার সুখে শান্তিতে সংসার করতে?
-:বাবা যে সংসারে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর বিশ্বাস নেই সেখানে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় বাবা।কাল যদি অন্য একজন আমার একটা ছবি এডিট করে আকাশকে দেখায়,,তাহলে হয়তো দেখা গেল সে তখনও তাদের বিশ্বাস করলো আর আমাকে ভুল বুঝলো।
-:তুই যখন নিজেই চাস না আকাশের সাথে সংসার করতে তাহলে আমি আর তোকে জোর করবো না।
-:আমি জানতাম আব্বু তুমি আমাকে বুঝবে।
আকাশ অফিসে বসে আছে এমন সময় একজন লোক এসে তার কেবিনে ঢুকলো।আকাশ লোকটাকে দেখে বলে উঠলো-;
-:আপনি!!
-:জ্বি,,তৃষা ম্যাডাম আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো-;
-:তৃষা আপনাকে এখানে পাঠিয়েছে?
-:হুম।
আকাশ মুখের চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো-;
-:কেন আপনাকে এখানে সে পাঠিয়েছে?আমার সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই আর যতো টুকু সম্পর্ক আছে তা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ করে দেবো।
-:আজ্ঞে তার জন্য‌ই এখানে আসা,,যাতে আপনাকে বেশি ঝামেলা না করতে হয়।
-:মানে!!
-:এই নিন ম্যাডাম আপনার জন্য একটা পার্সেল পাঠিয়েছেন।
আকাশ একবার পার্সেলের দিকে তাকিয়ে আর একবার লোকটার দিকে তাকিয়ে পার্সেলটা খুলল। পার্সেলের ভিতর কয়েকটা ছবি,,একটা পেন ড্রাইভ আর একটা সাদা কাগজ দেখতে পেল।ছবি কটা হাতে নিয়ে দেখতেই আকাশের চোখ কপালে উঠে গেল,,ছবিতে রিনাকে একটা ছেলের বাহুর মাঝে দেখা যাচ্ছে আর একটা ছবিতে তৃষার সাথে যে ছেলেটাকে আকাশ ছবিতে দেখেছিল,,সেই একই ছেলের সাথে রিনাকে একটা রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে।এসব দেখেই আকাশের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে,,এবার সে তারাতাড়ি পেন ড্রাইভটা বের করে লেপটপের সাথে কানেক্ট করল,,ফাইল ওপেন করতেই আকাশ আরেক দফা অবাক হলো।সেখানে রিনার সাথে রাসেলের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ আর ফারুকের সাথে কথা বলার একটা ভিডিও ক্লিপ ছিল।সব দেখার পর আকাশ মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো-:এ কি করলো সে??
কিছুক্ষণ পর মনে হলো ওখানে একটা সাদা খাম‌ও ছিল,,তাই তাড়াতাড়ি করে সেটা খুলতেই দেখলো সাদা কাগজের উপর কালো কালি দিয়ে লেখা তৃষার আবেগ পূর্ণ একখানি চিঠি।
প্রিয়,-;
আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছিলাম না,,তাই অবশেষে অনেক চিন্তা করে ঠিক করলাম প্রিয় বলে সম্বোধন করাটাই আমার পক্ষে উপযুক্ত হবে।ক্ষমা করবেন আপনার জীবনে কালো অন্ধকারের মতোন এসে আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে দেওয়ার জন্য।নিজের বাবাকে আরও একটু পৃথিবীর আলো দেখানোর লোভ সামলাতে না পেরে একদিন এক অসহায় মেয়ে আপনার পায়ে পড়ে ভিক্ষা চেয়েছিল কিছু টাকার জন্য।আপনি সেদিন তাকে নিরাশ করেন নি,,তাকে অনেক উপকার করেছিলেন সেদিন,,তার বাবার অপারেশন সমস্ত খরচ দেওয়ার বিনিময়ে তাকে কিছুদিনের জন্য কিনে নিয়েছিলেন।সেদিনের সেই অসহায় মেয়েটা,,আমি ছিলাম,,তাই নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি,,ভাগ্যিস সেই মেয়েটা আমি ছিলাম,,ন‌ইলে আপনার মায়ের মতোন মা পেতাম কিভাবে?
মাত্র অল্প কদিনেই আমাকে নিজের স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে এটাই বুঝিয়েছিলেন যে তিনি চলে যাওয়ার পর আপনাকে আর ওই সংসারটাকে আমাকেই সামলাতে হবে। সংসার করার লোভ এতটাই আমার মনের মধ্যে বাসা বেঁধে নিয়েছিল যে নিজের জীবনের চরম ভুল কাজটা একদিন করেই ফেললাম,,আপনাকে ভালোবেসে ফেললাম আকাশ।তাই এটাও ভুলে গেলাম যে আমাদের মতোন মেয়েদের জীবনে ভালোবাসা বলে কোনো অধ্যায়‌ই নেই।আর যেখানে আমাদের সম্পর্কটাই ছিল‌ একটা ভিত হীন সম্পর্ক।
রিনাপু এর সম্পর্কে আমি কিছুই বলবো না,,যা প্রমাণ পেয়েছেন আশা করি তাতেই আপনি বুঝতে পারছেন রিনাপু আপনাকে নয় আপনার সম্পত্তিকে ভালোবেসে এসেছিল এতো দিন।তার যোগ্য শাস্তি এখন সে পাচ্ছে।আমার বাবাকে চিট করার জন্য আর আপনাকে মিথ্যা প্রেমের জালে ফাঁসানোর জন্য সে আর তার বাবা এখন জেলে।
আপনার সাথে আমার সম্পর্ক এইটুকু পর্যন্ত‌ই ছিল।মামণিকে কথা দিয়েছিলাম রিনাপু এর থেকে আপনাকে রক্ষা করবো আর সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো। দ্বিতীয় কথাটা পূরণ না করতে পারলেও প্রথম কথাটা পূরণ করতে পেরেছি এটা ভেবেই আমি শান্তি পাচ্ছি।
আপনাকে কোনোদিন‌ও ডিভোর্স দিতে পারবো না,,কারন আপনি মিশে আছেন আমার অস্তিত্বে,, কিন্তু আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি কোনো দিন‌ও আপনার জীবনের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবো না।ভালো থাকবেন,,,দোয়া রইল আমার তরফ থেকে আপনি যাতে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করেনেন।জানি আমাকে আপনি খুঁজবেন না তাও বলে রাখি আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করবেন না প্লিজ,,কারণ আমি এই দেশ ছেড়ে সারা জীবনের মতো চলে যাচ্ছি।
ইতি-;
আপনার এক কালো অধ্যায়
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]