বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ ৫

শার‌মিন আক্তার
–আয়াত কোন এক ভরশার খো‌ঁজে কেবল তুলির দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো। তু‌লি আয়া‌তের চো‌খের ভাষার কোন জবাব না দি‌য়ে আয়া‌তের হাত ধ‌রে বাই‌রে গি‌য়ে দেখ‌লে কি
হ‌য়ে‌ছে?
‌বাই‌রে গি‌য়ে দে‌খে ক‌য়েকজন অচেনা লোক দা‌ড়ি‌য়ে তনয়াকে উদ্দেশ্য ক‌রে উল্টা পাল্টা কথা বল‌ছে। তনয়া দা‌ড়িয়ে নীরব কান্না কর‌ছে।
তু‌লিঃ তনয়া কি হ‌য়ে‌ছে কারা ওনারা?
তনয়াঃ আমার বাবা-মা, শ্বশুর-শ্বাশু‌রি, আর অভি।
তু‌লিঃ তো এই হ‌চ্ছে সেই মিঃ অভি! তা মিঃ অভি আপনার আমাদের বা‌ড়ি আসার কি কারন?
অ‌ভিঃ এ বা‌ড়ির ছোট ছে‌লের সা‌থে আমার স্ত্রী পা‌লি‌য়ে এসে‌ছে।
আয়াতঃ কি যা তা বল‌ছেন!
তু‌লিঃ আচ্ছা! স‌ত্যি! তার কি প্রমান আছে আপনা‌দের কা‌ছে?
অ‌ভিঃ এই দেখুন এই ছ‌বি গু‌লো।
তু‌লি ছ‌বিগু‌লো হা‌তে নি‌য়ে দেখ‌লো। এই ছ‌বিগু‌লো আর তু‌লি‌কে পাঠা‌নো ছ‌বিগু‌লো একদম এক। ছ‌বিগু‌লো‌তে আয়াত আর তনয়া একসা‌থে আছে। আর দু‌টো ছ‌বি‌তে আয়াত তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে। কিছু ছ‌বি‌তে আয়াত তনয়া হাত ধ‌রে আছে। আর কিছু ছবি‌তে আয়াত তনয়া‌কে কো‌লে নি‌য়ে হাঁট‌ছে। ছ‌বি গু‌লো দে‌খে তু‌লি আয়া‌ত আর তনয়ার দি‌কে তাকা‌লো। আয়াত অসহায় দৃ‌ষ্টি‌তে তু‌লির দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। বা‌ড়ির সবাইও ছ‌বিগু‌লো দে‌খে হতভম্ব হ‌য়ে গে‌লো। তনয়া লজ্জায়, ঘৃনায় আর ক‌ষ্টে মা‌টির দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। তনয়ার মন চাই‌ছে মা‌টির নি‌জে ডু‌কে যে‌তে।
তনয়ার মাঃ সে‌দিন অভি যখন ব‌লে‌ছি‌লো তুই অভি‌কে ফে‌লে অন্য একটা ছে‌লের সা‌থে পা‌লি‌য়ে গে‌ছিস! সে‌দিন প্রথ‌মে বিশ্বাস হয়‌নি কিন্তু এখন‌ তো দেখ‌ছি অভি সবই স‌ত্যি বল‌ছে। তোকে আমার নি‌জের মে‌য়ে বল‌তে লজ্জা ক‌রে। তুই বিবা‌হিত একটা ছে‌লে সা‌থে——- ছিঃ ছিঃ তনয়া ছিঃ।
আর আয়াত তোমা‌কেও ব‌লি নি‌জের এত সুন্দর স্ত্রী থাক‌তে অন্যের স্ত্রীর দি‌কে নজড় দি‌তে লজ্জা ক‌রে না? ছিঃ এই তোমার শিক্ষা!
আয়াত পাথ‌রের মু‌র্তির মত শুধু তু‌লির দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো। আজ ওদের সম্পর্কটা এমন জায়গায় দাড়া‌নো যেখা‌নে একটু ভুল বুঝা বু‌ঝি‌তে নষ্ট হ‌য়ে যাবে অনেক গু‌লো সম্পর্ক।
অভিঃ এখন বিশ্বাস হ‌লো তো? যে আপনার স্বামী আর তনয়ার ভিতর অবৈধ সম্পর্ক চল‌ছে! ওদের কার‌নে আমা‌দের #বদনাম হ‌চ্ছে! ওদের নোংড়া নাজা‌য়েজ সম্প‌র্কের কার‌নে———-
বা‌কিটা অ‌ভি আর বল‌তে পার‌লো না! এর আগেই তু‌লি ঠাস ক‌রে অভির দু’গা‌লে দু‌টো চড় ব‌সি‌য়ে দি‌লো। উপ‌স্থিত সবাই স্তব্ধ হ‌য়ে গে‌লো।
তু‌লিঃ চুপ কর! তুই কে‌ রে আমার আয়া‌তের চ‌রিত্র সম্প‌র্কে বলার? তোর সাহস কিভা‌বে হয় আমার স্বামী‌কে নোংড়া কথা বলার ? তুই কি ভে‌বে‌ছিস আমার স্বামী তোর মত এত নোংড়া যে, নি‌জের স্ত্রীর ঘ‌রে পরপুরুষ ডু‌কি‌য়ে দি‌বে! বা নি‌জের স্ত্রী‌কে ছে‌ড়ে পরস্ত্রীর দি‌কে নজড় দি‌বে? শোন আমাকেও তুই কতক্ষন আগে এই ছ‌বি গু‌লোই পা‌ঠি‌য়ে ছি‌লি তাই না? আমি জা‌নি এ ধর‌নের নোংড়া কাজ তোর মত নোংড়া লোকই করতে পা‌রে।
একটা কথা শু‌নে রাখ আমার বাবাও যদি আয়া‌তের নামে ‌এমন কথা ব‌লে তাও বিশ্বাস কর‌বো না। সারা পৃ‌থিবীও য‌দি আয়া‌তের বিপ‌ক্ষে যায় তাও আমি আয়া‌তের প‌ক্ষে থাক‌বো। কারন আমি আমার আয়াত‌কে বিশ্বাস করি আর সারা জীবন কর‌বো। তনয়া‌কে বে‌শি দিন ধ‌রে না জান‌লেও যতটুকু জে‌নে‌ছি তা‌তে তনয়া এমন নোংড়া কাজ জীব‌নেও কর‌তে পা‌রে না। আরে তোর ম‌নে কি আল্লাহর ভয় নাই যে, এত নোংড়া‌মি ক‌রেও আবার কোন মু‌খে কথা বল‌ছিস?
অ‌ভিঃ আমি কি নোংড়া‌মি ক‌রে‌ছি? নোংড়া‌মি তো আপনার স্বামী আর তনয়া কর‌ছে। হ্যা আপনা‌কে ছ‌বিগু‌লো আমি পা‌ঠি‌য়ে‌ছি। যা‌তে আপনার চোখ খু‌লে! কিন্তু‌ ছবিগু‌লো তো স‌ত্যি! কোন রকম এডিট করা না। বিশ্বাস না হ‌লে চেক ক‌রে দেখ‌বেন।
তু‌লিঃ আর একটা নোংড়া কথা বল‌লে জিব টে‌নে ছি‌ড়ে ফেল‌বো। তুই কি ভে‌বে‌ছিস তুই যা বল‌বি আমি বিশ্বাস কর‌বো? হ্যা ছ‌বি গু‌লো এডিট করা না। কিন্তু ছ‌বিগু‌লো‌কে তুই যে নোংড়া নজ‌রে দেখ‌ছিস বা সবাই‌কে দেখা‌চ্ছিস এমন নোংড়া ভা‌বে দেখার মত কিছু হয়‌নি। প্রথম ছ‌বিটায় যেটা আয়াত তনয়ার হাত ধ‌রে আছে সেটা মে‌বি দু সপ্তাহ আগে তোলা! তুই ওদের দেখে ওদের ছ‌বি তুল‌লি ‌কিন্তু পিছ‌নে গা‌ড়িতে যে আমি বসা ছিলাম সেটা দেখ‌লি না! সে‌দিন আমরা তিন জন একসা‌থে ঘুরতে ‌বেড় হ‌য়ে‌ছিলাম। তনয়ার পার্সটা ভু‌লে রাস্তার অপর পা‌শের দোকা‌নে রে‌খে এসে‌ছি‌লো। আমার মাথা ঘুরা‌চ্ছি‌লো তাই গা‌ড়ি‌তে বসেছিলাম আর আয়াত‌কে ব‌লে‌ছিলাম তনয়া‌কে সা‌থে নি‌য়ে রাস্তা পার হ‌তে কারন ওখা‌নে গা‌ড়ির চাপ খুব বে‌শি। তখন তনয়া‌কে রাস্তা পার করা‌নোর সময় আয়াত তনয়ার হাত ধ‌রে ছি‌লো বন্ধুর মত। নোংড়া দৃ‌ষ্টি ভ‌ঙ্গি‌তে না।
আর জ‌ড়ি‌য়ে ধরার পিকটা তখনকারই কারন আসার সময় তনয়া বেখেয়ালী অবস্থায় হাট‌তে গি‌য়ে গা‌ড়ির সাম‌নে এসে প‌রে তখন আয়াত ওকে নি‌জের দি‌কে টান দেয়, ওকে বাঁচা‌নোর জন্য নোংড়া‌মি করার জন্য না। আক‌ত্মিক ভা‌বে তখন তনয়া আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌ছি‌লো ভয় পে‌য়ে। আমি গা‌ড়ি‌তে ব‌সে সব দেখ‌ছিলাম। কিন্তু তখন দুজ‌নে অনেক অস‌স্তি‌তে প‌রে গে‌ছি‌লে‌া। আয়াত তখন আমার দি‌কে চোখ দু‌লে তাকা‌তেও লজ্জা পে‌য়ে‌ছিলো। আমি বিষয়টা‌কে ইগ‌নোর ক‌রে‌ছিলাম কারন আমি চাই‌নি ওরা আমার সাম‌নে লজ্জায় মাথা নিচু ক‌রে থাকুক । তাই এমন ভান করলাম যে‌নো কিছু দে‌খিনি।
আর এই ছ‌বিটা যেটায় আয়াত তনয়াকে কো‌লে নি‌য়ে হাট‌ছে সেটার কথাও আমি জা‌নি। আয়াত আগেই বল‌ছে , কোন প‌রি‌স্থি‌তে প‌রে তনয়া‌কে কো‌লে নি‌য়ে‌ছি‌লো! তিন চার‌দিন আগে তনয়া আয়া‌তের সা‌থে একট‌া জব ইন্টারভিউ‌য়ের জন্য যায় তখন আসার প‌থে তনয়া মাথা ঘু‌রে হঠাৎ ক‌রে প‌রে যায়। তখন আয়াতের কা‌ছে তনয়া‌কে কো‌লে ক‌রে নেয়া ছাড়া কোন উপায় ছি‌লো না। একটা মানুষ মর‌তে বস‌ছে অথ‌চো তা‌কে নি‌য়েও আপ‌নি নোংড়া ছ‌বি তুল‌লেন ছিঃ ছিঃ।
আর আপ‌নারা! (তনয়ার বাবা মা‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে) আপনারা‌ তো তনয়ার বাবা মা তাই না। তাহ‌লে নি‌জের মে‌য়ের উপর আপনা‌দের কোন বিশ্বাস নাই? যা‌কে বাইশ তেইশ বছর ধ‌রে লালন পালন ক‌রে বড় কর‌লেন তার কথা বিশ্বাস না ক‌রে মাত্র দু আড়াই মা‌সের প‌রি‌চি‌তো একটা ছে‌লে তা‌র কথা বিশ্বাস ক‌রে নিজের মে‌য়ে‌কে বা‌ড়ি থে‌কে বের ক‌রে দিলেন? যে সময়টা তনয়ার আপনাদের সব থে‌কে বে‌শি জরু‌রি ছিলো সে সময়টায় আপনারা নি‌জেদের মে‌য়ে‌কে বিশ্বাস কর‌লেন না বরং অভির মত নোংড়া একটা ছে‌লে‌কে বিশ্বাস কর‌লেন! আপ‌নি তনয়া‌কে ধিক্কার দি‌চ্ছেন, ঘৃনা কর‌ছেন অথচ তনয়ার উচিৎ আপনা‌দের মত বাবা মা‌কে ধিক্কার জানা‌নো। ছিঃ ছিঃ ধিক্কার আপনা‌দের মত বাবা মা‌য়ে‌দের।
তু‌লির কথায় তনয়ার আর অভির প‌রিবা‌রে মুখ বন্ধ হ‌য়ে গে‌লো। কেউ কোন কথা বল‌ছে না। চুপচাপ দা‌ড়ি‌য়ে আছে।
তনয়াঃ মা বাবা! শু‌নে‌ছি সন্তা‌নের কষ্ট সবার আগে বাবা মা টের পায় তাহ‌লে আমি এই দেড় মাস ধ‌রে কতটা ক‌ষ্টে আছি সেটা‌ কি তোমরা এক বারও টের পাও‌নি? মন কাঁ‌দে‌নি তোমা‌দের আমার জন্য? একতরফা একজ‌নের কথা বিশ্বাস ক‌রে নি‌জের মে‌য়ে‌কে, নি‌জের রক্ত‌কে দূ‌রে ঠে‌লে দি‌লে? কেমন বাবা মা তোমরা? অভির সা‌থে তোমরাই আমার বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি‌লে আমি নি‌জে থে‌কে ওকে বি‌য়ে ক‌রি‌নি। তারপরও তোমরা আমা‌কে বিশ্বাস না ক‌রে অভি‌কে বিশ্বাস কর‌লে? আজ তোমা‌দের জন্য আমার #বদনাম হ‌লো। সবাই আমা‌কে বা‌জে মে‌য়ে ব‌লে জা‌নে। আমার বদনাম হ‌য়ে‌ছে সেটা মে‌নে নিলাম কিন্তু তোমরা আজ আয়া‌তের ভা‌লো একটা মানুষ‌কেও #বদনা‌মের ভা‌গিদার ক‌রে দি‌লে। আজ আয়াত না থাক‌লে হয়‌তো আমার স্থান এত‌দি‌নে প‌তিতাল‌য়ে হ‌তো। আজ তু‌লি আয়াত আর ওদের প‌রিবার আমার পা‌শে না থাক‌লে হয়‌তো দু‌টে‌া জীব‌নের মৃত্যু হ‌তো।
অ‌ভির মাঃ দু‌টো জীবন?
তনয়াঃ হ্যা তিন চার দিন আগে যে আমি অসুস্থ ছিলাম তখন আমি জান‌তে পা‌‌রি যে আমি পেগ‌নেন্ট। (তনয়ার কথা শু‌নে অভিসহ সবাই চম‌কে উঠ‌লো। ) ওভাবে তা‌কি‌য়ে কি দেখ‌ছো অভি হ্যা এটা তোমারই অংশ। কিন্তু আমার ভাব‌তেই ঘৃনা লা‌গে যে আমি তোমার মত পশুর সন্তা‌নের মা হ‌তে চ‌লে‌ছি। ম‌নে চায় এ প্রান‌টাকে পৃ‌থিবী‌তে আনার আগেই মে‌রে ফে‌লি। যাতে তোমার মত নোংড়া পশুর কোন অংশ আমার শরী‌রে না থা‌কে। কিন্তু কি জা‌নো আমি তো মা সেটা চে‌য়েও পার‌বো না। তাই না চাই‌তেও তোমার বাচ্চাটা‌তে পৃ‌থিবী‌তে আন‌বো। জা‌নি লো‌কে আমা‌কে নানা কুকথা বলবে। কারন আমি বাচ্চার না‌মের জায়গায় তোমার নাম কখ‌নো দি‌বো না। ‌তোমার মত পশুর প‌রিচ‌য়ে বড় হবার চে‌য়ে পিতৃনামহীন থাকা অনেক ভা‌লো।
তনয়ার বাবা মা ফু‌পি‌য়ে ফু‌পি‌য়ে কাঁদ‌ছে আজ তাদের বলার মত কোন ভাষা মু‌খে নেই ।
তনয়াঃ তোমরা চ‌লে যাও এখান থে‌কে সবাই। আমি তোমা‌দের মুখ দেখ‌তে চাই না। মা তু‌মি না সে‌দিন বল‌ছি‌লে আমি তোমা‌দের জন্য মৃত! আজ থে‌কেই স‌ত্যিই এটা মে‌নো আমি তোমা‌দের জন্য মৃত। চ‌লে যাও চিৎকার ক‌রে ব‌লে তনয়া কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে রু‌মে চ‌লে গেলো।
সবাই চ‌লে যা‌চ্ছি‌লো। আসচর্য্য ব্যাপার অভি নি‌জের চেহার যে হিংস্রতা নি‌য়ে এখা‌নে এসে‌ছি‌লো কিন্তু যাবার সময় ওর চেহারায় তার থে‌কে দ্বিগুন অনুতাপ দেখা যা‌চ্ছে।
এমন ঘটনায় আয়াত‌দের বা‌ড়ির সবার মন ভিষন খারাপ হ‌য়ে যায়। সবার ম‌নে ক্ষোপ থাক‌লেও কেউ সেটা প্রকাশ ক‌রে না। কিন্তু আর্থি আর নীরার মেজাজ ভিষন গরম হ‌য়ে গে‌লো। নীরা‌তো ব‌লেই ফেল‌লো
নীরাঃ আজ বাই‌রের একটা মে‌য়ের জন্য আমাদের প‌রিবা‌রের #বদনাম হলো। আজ পর্যন্ত আমা‌দের আয়া‌তের চ‌রি‌ত্রের উপর সামান্য প‌রিমানও দাঁগ প‌ড়েনি আজ ঐ মে‌য়েটার জন্য আমাদের আয়া‌তের না‌মে এত #বদনাম হ‌লো। তু‌লির বুদ্ধি আর বিশ্বা‌সের কার‌নে ও বেঁ‌চে গে‌লেও মানুষ যে দু কথা বানা‌বে না তার কি গ্যারা‌ন্টি?
আ‌র্থিঃ একদম ঠিক বল‌ছো ভা‌বি! আজ ঐ মে‌য়েটার জন্য ভাইয়া আর তু‌লি ভা‌বিকে এত হেনস্তা হ‌তে হ‌লো। শোন তু‌লি ভা‌বি, ভা‌লো হওয়া ভা‌লো কিন্তু এত ভা‌লো হওয়া মো‌টেও ভা‌লো না।
তু‌লিঃ প্লিজ আপনারা চ‌ুপ করুন । এতে তনয়ার কোন দোষ নাই যা ক‌রে‌ছে অভি ক‌রে‌ছে। ঐ মে‌য়েটা‌কে দোষ দি‌য়ে কি লাভ? এখন আপাতত বিষয়টা বাদ দিন। আমি আয়াতের কা‌ছে যা‌চ্ছি। আমি জা‌নি এ ধর‌নের ঘটনায় আয়াত মানু‌ষিক ভা‌বে অনেক ভে‌ঙে পড়‌ছে।
আয়া‌তের মাঃ হ্যা মা তাই কর।
ত‌ু‌লি আয়া‌তের কা‌ছে যাবার আগে তনয়ার রু‌মে আস‌লো এসে দে‌খে তনয়া খুব কান্না কর‌ছে। তাই আর ডা‌কে‌নি ভাব‌লো কাঁদ‌লে হয়‌তো মনটা হালকা হ‌বে। তনয়া রু‌মে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত জানালার কা‌ছে দা‌ড়ি‌য়ে আছে আর বারবার চোখ মুছ‌ছে। তু‌লি গি‌য়ে আয়াত‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে বল‌লো
তু‌লিঃ আই বি‌লিভ ইউ ফরএভার এন্ড এভার এন্ড এভার।
আয়াত কোন কথা না ব‌লে তু‌লির দি‌কে ঘু‌রে তু‌লি‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। আর বল‌লো
আয়াতঃ জা‌নো তখন এক মুহূ‌র্তের জন্য ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌লো তুমি আমাকে অবিশ্বাস কর‌বে।
তু‌লিঃ ধূর পাগল। আমি যে নিঃশ্বাস নি‌চ্ছি এটা যেমন স‌ত্যি ঠিক তেমনি আমার প্র‌তিটা নিঃশ্বা‌সে মিশে আছে তোমার প্র‌তি ভরশা। তোমা‌কে অবিশ্বাস করার মত পাঁপ ক‌রি কি ক‌রে ব‌লো? ছয় বছ‌রের ভা‌লোবাসাময় সংসার, দশ বছ‌রের বিশ্বাসময় প‌রিচয় মাত্র সামান্য কিছু ছ‌বি ভে‌ঙে দি‌বে কখ‌নো না। আমি তোমার ভুল গু‌লো‌কেও বিশ্বাস ক‌রি। জা‌নি তু‌মি য‌দি কোন ভুল ভুলবশত ক‌রোও তার পিছ‌নেও ভা‌লো কোন উদ্দেশ্য থাক‌বে।
আয়াতঃ তু‌লি সারা পৃ‌থিবী আমায় অবিশ্বাস কর‌লেও , আমা‌কে বদনাম দি‌লেও আমার কিছু আসে যায় না। য‌দি তু‌মি আমার পা‌শে থা‌কো। লাভ ইউ তু‌লি।
তু‌লিঃ লাভ ইউ টু। পাগল! কান্না ক‌রো না প্লিজ। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
‌আয়াতঃ কি?
তু‌লিঃ প‌রে বল‌বো।
রাত দুটো——
সারা ঘরময় নিঃস্তব্ধতা। সবাই ঘু‌মি‌য়ে পড়‌ছে। তনয়ার হাতে নি‌জের কাপড় গোছা‌নো একটা ব্যাগ। দরজার সাম‌নে দা‌ড়ি‌য়ে আছে যা‌বে ব‌লে। তারপর পা বাড়া‌লো তু‌লির রু‌মের দিকে। যাবার আগে তু‌লি‌কে শেষ বা‌রের মত দে‌খে যা‌বে। তু‌লি আয়াত রু‌মে নেই বেলকানী থে‌কে হা‌সির মৃদু আওয়াজ আস‌লো তনয়া বেলকানীর আড়া‌লে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত আর তু‌লি একে অপরকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে খুনস‌ু‌টি কর‌ছে। তনয়া ওদের এক পলক দে‌খে দড়জা খু‌লে বা‌ইরে গি‌য়ে চা‌বি দি‌য়ে দড়জাটা লক ক‌রে দড়জার নি‌চের ফাঁক দি‌য়ে চা‌বিটা ঘ‌রের ভিত‌রে দি‌কে ছু‌ড়ে মার‌লো।
নাহ তনয়া চায় না এ প‌রিবা‌রের আর কোন ক্ষ‌তি ‌হোক ওর কার‌নে। ওর কার‌নে আর কোন #বদনা‌মের ভা‌গিদার হোক। তাই সবাই‌কে কিছু না ব‌লে চ‌লে আস‌লো।
নীরব রাস্তায় হাঁট‌ছে। অজানা নগরী অচেনা পথ। কোথায় যাবে? কার কা‌ছে যা‌বে ? তার কোন ঠিক নাই। হা‌তে কিছু টাকা আছে তু‌লি দি‌য়ে‌ছি‌লো হাত খর‌চের জন্য কোন কা‌জে লা‌গে‌নি তাই সেটা আছে।
নীরব রাস্তায় একা‌কি হে‌ঁটে চল‌ছে আর নি‌জের পে‌ঁটে হাত দি‌য়ে বির‌বির ক‌রে বল‌ছে জা‌নিস তু‌লিকে স‌ত্যিই নি‌জের বোন মে‌নে নি‌য়ে‌ছিলাম আর আয়াত‌কে কখ‌নো বা‌ঁজে নজ‌ড়ে দে‌খি‌নি। তা‌কে সবসময় সম্মা‌নের চো‌খে দে‌খে‌ছি। তার জন্য ম‌নে কিন‌ঞ্চিৎ প‌রিমানও ভাবনার উদয় হয়‌নি। সবসময় নি‌জের বো‌নের স্বামী হিসা‌বেই দে‌খে‌ছি। কিন্তু ভু‌লে গে‌ছিলাম সুখ আমার জন্য নয়।
জা‌নিনা কোথায় যাবে‌া? ত‌বে মাথার উপর আল্ল‌াহ্ আছে। তি‌নি যা ক‌রেন——-
চল‌বে———-