প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 13
ও আমাকে মেরে ফেলবে! বাঁচাও!!
আমি ওদের ফেলে পালাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু দিয়া আর রেহান জোর করে আটকে রেখেছে!.
– কে?? কে মেরে ফেলবে? কিচ্ছু হবে না, দেখ আমি আছি,আমরা সবাই আছি।
– আপু তোর কি হয়েছে? এমন করছিস কেন? কে ওখানে??
দিয়া কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলো।
আমার মুখ থেকে আর কথা বের হচ্ছে না। তবুও ওদের বুঝাতে চাইলাম।
আঙুল দিয়ে জমিদার বাড়ি দিকে দেখাতে ওই দিকে ফিরে দেখি কাঞ্চন ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে!!
কি বীভৎস চেহারা! এর কি রূপ কাঞ্চনের!!
আ…..
আমি চোখ খুলতে পারছিনা,সমস্ত শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম বাংলোয় আছি।আমার পাশে সবাই বসে আছে। দিয়া,খুশবু,আনিষা আমার বিছানায় বসে আছে।
রেহান, রিফাত,অনি,তাহসিন ওদের ও দেখলাম এ রুমেই কেউ বসে ,কেউ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আর পলাশ মামা গম্ভীরমুখে চেয়ারে বসে আছেন।
সবাইকে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে গিয়ে দেখি মাথা তুলতে পারছি না। প্রচন্ড ভার হয়ে আছে মাথা।জ্বরে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত আড়াই টা বাজে।
– আপু…. উঠিস না। এখন কেমন লাগছে তোর?
উদ্বিগ্ন হয়ে দিয়া জিজ্ঞেস করলো।
মুখে কিছু না বলে চোখের ইশারায় ওকে সান্ত্বনা দিলাম।
পলাশ মামা তাড়াতাড়ি উঠে কাছে এসে বললেন – তুমি ঠিক আছো তো?
– মামা, আমরা সকালেই চলে যাবো। যাবার ব্যবস্থা করে দিন।
পলাশ মামার মুখ আরও গম্ভীর হয়ে গেছে।
– আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন ওকে তাড়াতাড়ি কিছু খায়িয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
আনিষা উঠে গিয়ে গরম স্যুপ নিয়ে এসে আমাকে খায়িয়ে দিলো।
তারপর জ্বরের ঔষধ দিলো।
রেহান কাছে এসে বসলো।
– সরি হিয়া….
– সরি কেন বলছিস?
– তুই আমার সাথে থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলি আমি টের পাইনি। এতোটা কেয়ারলেস হলাম কি করে!!
কিন্তু তুই ওখানে কেন গিয়েছিলি? কি হয়েছিলো?
রেহান কথায় আমার সব মনে পড়লো। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
সব কিছু খুলে বললাম।
– আমি ওর ছবিও তুলেছিলাম।
রেহান বললো – রিফাত ক্যামেরাটা নিয়ে আয়।
ক্যামেরা নিয়ে আসলো, ছবিও আছে কিন্তু শুধু শিউলি ফুলের ছবি। এছবিতে কেন; কোনো ছবিতেই কেউ নেই!
আমি রেহানের হাত থেকে টান দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে নিজে দেখলাম।সত্যিই জয়িতা / কাঞ্চনের কোনো ছবি নেই!
ভয়ে হাত পা জমে আসছে আমার।
– ও আমাকে মেরে ফেলবে! ও আবার আসবে আমাকে মারতে।
– কিছু হবে না। আমরা সবাই আছি এখানে।
তাহসিন সান্ত্বনা দিলো।
অনি বললো
– ধুর! কিসব আবুল তাবুল বলছিস! ভূত বলে কিছু আছে নাকি! তুই নিশ্চয়ই একা একা হারিয়ে গেয়েছিলি তাই ভয় পেয়েছিস!
জানিস তো ভয় পেলে অবচেতন মনের ভাবনা মস্তিষ্কে হিট করে আর হ্যালুসিনেশন হয়!
অনি কিছুতেই বিশ্বাস করছেন না।
– দেখ অনি, কুসংস্কার বলে সব এড়িয়ে যেতে পারবিনা।এমন অনেক কিছু আছে যা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে না পেরে কৌশলে এড়িয়ে গেছে!
আর হিয়া কখনো মিথ্যা বলে? ( খুশবু)
– আমি কি বলেছি মিথ্যা বলেছে? বললাম এটা ওর ভ্রম!(অনি)
– হিয়া যা বলেছে সবটাই সত্যি। ( রেহান)
– সত্যি মানে? তুই কি করে জানিস??
অনি চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো।
– জানি। হিয়াকে নিয়ে আসার পরে পলাশ মামার সাথে কথা হয়েছে। হিয়া কেন অদ্ভুত আচরণ করছিলো এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেনেছি – প্রায়ই প্যারানরমাল কিছু ঘটে থাকে বাগানে!
কাঞ্চন নামের একটা মেয়ে সুইসাইড করেছিলো। আর ছোট কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো এটাও সত্যি। বাগানের সবার মুখে মুখে এই কাহিনী।
আর হিয়ার সাথে এমন কিছু হয়েছে কিনা সেটা নিয়েই আমার চিন্তিত ছিলাম।
এখন ওর মুখ থেকে শুনে সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
আর ওটা মাত্র দশ বছর আগের ঘটনা, সবার সামনে ঘটেছে। বিশ্বাস না হলে মামাকে জিজ্ঞেস কর।( রেহান)
সবাই অবাক হয়ে শুনছে।
– অদ্ভুত! (রিফাত)
এবার পলাশ মামা মুখ খুললেন
– বাগানে প্যারানরমাল ঘটনা নতুন না। তোমার ভয় পাবে বলে কিছু বলিনি, কারণ তোমাদের আনন্দ মাটি করতে চাইনি। তাছাড়া তোমাদের সন্ধ্যার পরে বের হতেও দিতাম না। এটা আমার খেয়ালে রেখেছি সবসময়, কিন্তু এর মধ্যেও এমন ঘটনা ঘটে যাবে বুঝতে পারিনি।
তিনটা মেয়ের মৃত্যু হয়েছে ওই পদ্ম পুকুরে।তাই অইদিকটায় তোমাদের নিয়ে না গিয়ে, অন্যপথে ঘুরিয়ে জমিদার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো।
তিনজনের মধ্যে একজন সেই মালিকের ছেলে, মানে ওদের ছোট বাবুর স্ত্রী, আর বাকি দুজন দুই ম্যানাজারের স্ত্রী।
পুলিশ তদন্ত করে কোনো কূল কিনারা না পেয়ে অপমৃত্যু বলে কেইস ক্লোজ করে দিয়েছে।
এখানকার লোকদের বিশ্বাস সেই মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা এসব করেছে। শীতল পাগল নাকি প্রত্যেক মৃত্যুর আগে অস্থির হয়ে বাগানে ওই মেয়ের নাম ধরে ডাকতো আর ছোটাছুটি করতো!
পলাশ মামার কথায় অনি আর অবিশ্বাস করতে পারলো না।
– অবিশ্বাস্য! এমন কিভাবে সম্ভব! সত্যি অবিশ্বাস্য ঘটনা! হিয়াও বলেছে শীতল পাগলের কথা!
পলাশ মামা আবার বললেন – তোমাদের সাথে আমার বয়সের ডিফারেন্স বড়জোর ৮-১০ বছর; তাই বলে ভেবো না আমি কুসংস্কার মানি!
কিন্তু আমি নিজের চোখে যা দেখেছি তা তো অবিশ্বাস করতে পারিনা।
– কি দেখেছেন মামা?
খুশবু ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো।
– প্রায়ই বিভিন্ন কাজে বাংলোয় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। তো প্রায় সময় দেখি একটা মেয়ে খোলা চুলে বাগানে পাতা তুলে।
আমি দেখেও না দেখার মতো চলে আসি।
কারণ দেখলেই সমস্যা।
ফ্যাক্টরির একটা ছেলে ছিলো, অসীম নাম।
একদিন রাতে সেও দেখেছিলো।
দেখে বুঝতে পারেনি। ওর মধ্যে একটু প্রব্লেম ছিলো! বুঝতেই পারছো…
তো মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো
– এতো রাতে পাতা তুইছিস কেনু?
– আমার মুনে চাইছে।
– বিড়ি আছে তুর কাছে?
– আছে।
– দিবি? ছরিল, মাতা বিশ করের( শরীর,মাথা ব্যথা করছে)
– তুই এছে নিয়া যা….
বেচারা বিড়ি আনার নাম করে কাছে যাওয়ার পরে বুঝতে পারে… এটা কোনো মানুষ নয়!
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে!
ও দৌড়ে পালাতে চাইছিলো, কিন্তু পিছন থেকে একটা থাপ্পড় মারে পিঠে।
কোনো রকমে রাস্তায় এসে পড়ে, তখন দুই- তিনজন কুলি রাতে বাড়ি ফিরছিলো, ওদের সামনে পড়লো।
ওরা বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু পরদিন প্রচন্ড জ্বর উঠে। ওর পিঠে পাঁচ আঙুলের দাগ সাথে নখের আচড় পাওয়া যায়।
ছেলেটা মারা যায়।মারা যাবার আগে সবকিছু বলে গেছে।
এখন বুঝতে পারছো কি ঘটে এখানে!!
পলাশ মামার কথা শুনে সবার মুখ শুকিয়ে গেছে।
খুশবু কেঁদেই ফেললো – মামা, আমরা কাল সকালেই চলে যাবো!
– হা, মামা… আমাদের দ্রুত চলে যাওয়া উচিত।
তাহসিন বললো।
– যাওয়া উচিত, কিন্তু কালকে যে হরতাল। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ!
– মামা,ট্রেনেই যাবো।ঢাকা পৌঁছাতে পারলেই হবে। তারপর ওখান থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা হবে। ( রেহান)
– ঠিক আছে, ট্রেনে যাওয়া যাবে।সকালেই ফোন করে ইমার্জেন্সি টিকিট করে দিবো।এখন হিয়াকে একটু ঘুমাতে দাও,তোমরাও শুয়ে পড়ো।( পলাশ মামা)
– আমি একা হিয়ার সাথে থাকবো না।দিয়াও এখানে থাকবি।( খুশবু)
– ওরে বাবা.. আমি তাহলে একা ঘুমাবো নাকি? আমি পারবো না! ( আনিষা)
– ধুর! বাংলোয় কি হবে? তাছাড়া আমরা সবাই তো আছি?
রেহান বললো!
খুশবু মুখ পেঁচার মতো করে বসে আছে।
ওরা নিজেদের রুমে যাওয়ার পরে খুশবু নাকেমুখে চাদর দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। আমিও মাথা ঢেকে শুয়ে আছি। মনে মনে সূরা পড়ছি।
রাতে আর তেমন কিছু ঘটেনি। বাকি রাতটা স্বাভাবিক কেটে গেলো।
সকালের সূর্যটা অন্যদিনের মতো উঠলেও আমাদের জন্য অন্যসব স্বাভাবিক দিনের মতো হয়নি। কারণ সকাল বেলায় একটা দুঃসংবাদ পেলাম।
চলবে……