প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 09

হাঁটছি তো হাঁটছি।কিন্তু পদ্ম পুকুর কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
– পদ্ম পুকুর কোথায়, জয়িতা?
জয়িতা চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে। এমন ভাবে হাঁটছে যেন আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না।
আরও দুবার জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু জয়িতার মুখে কোনো কথা নেই।
এবার একটু ভয় লাগে।
বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলো থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি এটা বুঝতে পারছি। এরাস্তায় গত দুদিনে একবারও আসিনি।
সন্ধ্যার আগে বাংলোয় ফিরতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।
আর জয়িতার অদ্ভুত ব্যবহার ভয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পিছন থেকে দ্রুত হেঁটে জয়িতার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না? কোথায় তোমার পদ্ম পুকুর? পদ্ম পুকুর দেখতে হবে না, আমাকে বাংলোয় দিয়ে আসো।
– ওইযে পদ্ম পুকুর।।
তাকিয়ে দেখি একটু দূরেই একটা পুকুর দেখা যাচ্ছে।
যাক বাবা! পুকুর পেলাম। আমি তো ভয় পেয়েছিলাম! কিনা না কি!
– পুকুর তো দেখলাম,কিন্তু তোমাকে ডাকলাম কথা বলোনি কেন?
– মন ছিলো না গো। মন ছিলো না।
– মন কোথায় ছিলো?
– পদ্ম পুকুরে।।
– পদ্ম পুকুরে?!! কেন?
– চলো দেখবে।
জয়িতা আমাকে পদ্ম পুকুরের পাড়ে নিয়ে গেলো। শান বাধানো পুকুরের ঘাট বলে দিচ্ছে কোনো সৌখিন লোকের কাজ। যদিও অনেক পুরনো, তবুও এতো সুন্দর ঘাট সচারাচর দেখা যায়না।
পুরো পুকুরে শতশত পদ্ম ফুটে আছে।
এক মুহূর্তে মন জুড়িয়ে গেলো।
– এসো।এখানে পা ভিজিয়ে বসো।দেখো কত্ত ভালো লাগে।
জয়িতার কথা মতো ওর পাশে পানিতে পা ডুবিয়ে বসলাম। পড়ন্ত বিকালে এমন পদ্ম পুকুর পাড়ে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছি, চারিদিকে নীরব। মাঝেমধ্যে নীরবতা ভেঙে দু’একটা পাখির ডাক চমকে দেয়।
– ইসস!! কত্ত সুন্দর!!
– জমিদার বাবুর পুকুর ছিল।।
লোকজন তেমন একটা আসে না। ভয় পায়।
হাহাহা….
লোকজন ভয় পায় এটা যেন মজার কথা। জয়িতা খুব মজা পেয়েছে!
আমার কিন্তু ভীষণ ভালো লাগছে। উঠতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পদ্ম তুলতে।।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখছি সবকিছু। হঠাৎ কানে আসলো সেই বাঁশির সুর।
পুকুরের দিকে এগিয়ে আসছে সুর।
– জয়িতা… শুনতে পাচ্ছো? কে যেন বাঁশি বাজাচ্ছে।
জয়িতার মুখের রঙ বদলে গেলো হঠাৎ করে।
কঠিন মুখ করে দাঁতে দাঁত চেপে চাপা স্বরে বললো – শীতল!!
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমাদের পাশে এসে গেছে বাঁশির সুর।
পিছনে ফিরে দেখি পুকুর পাড়ের উপরে সেই লোক টা!!
যাকে দেখে সেদিন ভয় পেয়ে রেহানের হাত ধরেছিলাম।
তারমানে সেদিন রাতেও এই লোকটাই বাঁশি বাজিয়েছে।
এলোমেলো চুলে লোকটাকে ভয়ংকর লাগছে। ভয় পাচ্ছি। আমি আর জয়িতা।কেউ নেই আমাদের সাথে।
কেন যে রেহানের সাথে জেদ করে এসেছিলাম।
– জয়িতা! লোকটা কে? কেমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে।
আমি জয়িতার হাত ধরলাম। ধরার সাথে সাথে মনে হয়েছে ঠান্ডা একটা শর্ট খেলাম। এতো ঠান্ডা জয়িতার হাত।
কিছু মানুষের হাত অসম্ভব রকমের ঠান্ডা হয়ে থাকে। জয়িতার ও তেমন ঠান্ডা হাত।
জয়িতাও এবার পিছনে ফিরে তাকালো।
উপরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলো। বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন দৌড়ে হাঁপিয়ে গেছে।
লোকটা হাত দিয়ে ইশারা করছে আর বলছে
– যা… যাহ…চলে যা কাঞ্চন..
যাহ..যা…
লোকটা হাত দিয়ে আমাদেরকে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু কাঞ্চন কে? এখানে আমরা ছাড়া তো কেউ নেই!!
জয়িতা ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।
– জয়িতা.. উনি এমন করছেন কেন??
কাঞ্চন কে??
জয়িতা ঠান্ডা গলায় বললো
– ও শীতল পাগলা। পাগল.. সারাদিন উল্টো পাল্টা বলে আর বাঁশি বাজায়।
জয়িতা উঠে এগিয়ে গেলো শীতল পাগলার দিকে।
– চলে যা শীতল। চলে যা এখান থেকে, নাহলে খুব খারাপ হবে। মেহমান এসেছে। তুই না গেলে দেখবি আমি কি করবো?
শীতল মনে হয় কিছু টা ভয় পেয়েছে। ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে যায়..
পিছিয়ে গিয়ে আবার বলে
– যা… যাহ
জয়িতা আরও একটা পা এগুলে শীতল দৌড়াতে থাকে
– কাঞ্চন আবার নিলো.. কাঞ্চন চলে যা।
কাঞ্চন আবার নিলো.. কাঞ্চন চলে যাহ…
দৌড়াচ্ছে আর এসব প্রলাপ বকছে।
জয়িতা আবার এসে নিজের যায়গায় বসলো।
আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– লোকটা বারবার কাঞ্চন.. কাঞ্চন বলছিলো।
কাঞ্চন উনার কে?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয়িতা বললো – সে অনেক কাহিনী। কষ্ট হয় কাঞ্চনের জন্য। আহারে…
– কেন? কি হয়েছিলো?
– শুনবে কাঞ্চনের কথা? জয়িতাকে বেশ আগ্রহী মনে হলো।
আমার নিজেরও অনেক আগ্রহ হচ্ছে।
– হা… শুনবো বলো।
” প্রায় দশ বছর আগের কথা। এই বাগানের এক কুলির মেয়ে কাঞ্চন। কাঞ্চন… কাঞ্চন…
চঞ্চল একটা মেয়ে।বাগানের প্রতিটা পথ তার চেনা।ছোটবেলা থেকে চষে বেড়িয়েছে এই বাগানের আনাচে কানাচে। শীতল ছিলো কাঞ্চনের খেলার সাথী। তারা সমবয়সী।এক সাথে হেসেখেলে, ঝগড়াঝাটি, মারামারি করতে করতে বড় হয়েছে।
কাঞ্চন ষোড়শী মেয়ে। বয়সে বড় হলেও সেই ছোট্ট বেলার মতো বাগানে হরিণের মতো ছুটে বেড়িয়েছে।
একদিন বাগানের মালিক তার পরিবার নিয়ে আসলো বাংলোয়।
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *