প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 04

শার্লক হোমস হবার ইচ্ছে আছে রিফাতের,তাই বন্ধুমহলে স্পাই আর বাসায় আমার পিছনে!
স্পাই হতে হলে তীক্ষ বুদ্ধি আর সুক্ষ বিবেচনার প্রয়োজন, কিন্তু রিফাতের মোটা বুদ্ধি! মানে আস্ত একটা মাথামোটা!
রিফাতের রুম থেকে এসে এসব ভেবে নিজের মনেই হাসছি। ওর বাচ্চামি দেখলে হাসি পায়।দিয়া ওর সমবয়সী হলেও যথেষ্ট ম্যাচুরিটি আছে।।
সন্ধ্যার আগে গোধূলির আলোয় আমার বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম।
এখানে দাঁড়িয়ে রাস্তায় মানুষের চলাচল দেখছি। অভ্যাসবশত রেহানের বাসার দিকে চোখ গেলো।
রেহানের বাসা আর আমাদের বাসার মাঝে আরেকটা বাসা থাকলেও আমার বেলকনি থেকে রেহানের বাসার অনেকটা দেখা যায়। আর রেহানের রুম,বেলকনি সবটা দেখা যায়। তবে এই সময় রেহান বেলকনিতে থাকবে না।
নিশ্চয়ই এখন বের হয়ে গেছে আড্ডা দিতে!
ফালতু একটা! আমার সাথে ভাব দেখায়!
একটু পর দিয়া দু’কাপ চা নিয়ে আসলো।
– আপু… তোর চা।
– দে… ।।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম।
– আপু…
– বল।
– সুস্মিতার সুইসাইড এটেন্ড করেছিলো!!
– সেকি! কেন??
সুস্মিতা দিয়ার ফ্রেন্ড।প্রায়ই বাসায় আসা-যাওয়া করে। ওকে ভালো করেই চিনি।
– ওর ব্রেকাপ হয়ে গেছে। ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি আরেকটা রিলেশনে জড়িয়ে গেছে।
– ভালো তো!
– ভালো?
– হা…. ভালো না? একটা রিলেশনে বেচারা বোর হয়ে গেছে, তাই অন্য রিলেশনে নতুনত্ব খুঁজতে গেছে!!
– একটা রিলেশনে থেকে অন্য রিলেশনে জড়ানো যায়?!!
– চাইলেই যায়। যাবে না কেন?
তো বেঁচে আছে না মরে গেছে?
– এক গাদা ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো। ওর আম্মু টের পেয়ে গেছে। তারপর মেডিকেল নিয়ে ওয়াশ করেছে।
– মরে যাওয়া উচিত ছিলো।।
-!! কি বলছো তুমি ??
আমার কথায় দিয়া শকড।
– শুন,সবে মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে। নিশ্চয়ই তার অনেক আগে থেকেই রিলেশনে আছে।সেদিনকার বাচ্চা মেয়ে! প্রেম করে আবার প্রেমিকের জন্য সুইসাইড করতে গেছে!!
এমন ছেলে মেয়ের মরে যাওয়া ভালো না? এরা থেকে কি হবে? ও কি একবার চিন্তা করেছে ওর বাবা-মার কথা? পরিবারের কথা? যদি একবার চিন্তা করতো তাহলে সুইসাইড করতে যেতো না। বাবা-মার জন্য কোনো ওর কোনো চিন্তা আছে? এতো কষ্ট করে লালন পালন করলো, এতো আদর যত্নের কোনো মূল্য নেই যার কাছে, তার মরে যাওয়াই উচিত।
দিয়া মন দিয়ে আমার কথা শুনলো।ও বুঝতে পেরেছে আমি কি বলতে চেয়েছি।
হঠাৎ দিয়া বললো
– আপু… দেখ। ফুপি না?
– গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখি ফুপি অটো থেকে নেমে বাসায় ঢুকছে।
দেখে মনে হচ্ছে বেশ হন্তদন্ত হয়ে আসছে।
– তাই তো।চল গিয়ে দেখি।
নিশ্চয়ই তাহসিন আনিষার কথা বলেছে আর ফুপি সেটা আম্মুকে বলতে আসছে।
– তাই নাকি?
তাহসিন ভাইয়া বলে দিলো?!
– আনিষার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তাহসিন ওকে নিয়ে পালানোর চিন্তা করছে। আমি বলেছি আগে ফুপিকে জানাতে।
– চলো নিচে যাই।
দিয়া আর আমি নিচে গেলাম। ফুপি আমাকে দেখেই বললো
– ওই তো হিয়া…
– ফুপি…
– তুই তো আমার ভাইজি ছিলি।তুই একবারও বলতে পারলি না?
– কি বলবো?
– তুই সব জানতি। কিন্তু কোনো দিন বলিসনি।
– ফুপি… আমি তোমার ভাইজি, কিন্তু আরও দুইটা পরিচয় আছে আমার।
এক, আমি বোন
দুই, আমি বন্ধু।। এবার তুমি বলো এক সম্পর্কের টা গুরুত্ব দিবো নাকি ডাবল সম্পর্কের??
আম্মু একবার আমার দিকে, একবার ফুপির দিকে তাকাচ্ছে। ফুপি ভাইজির মধ্যে কি নিয়ে কথা হচ্ছে আম্মু সেটা বুঝতে পারছে না।
রিফাত তিক্ষ চোখে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে।
আম্মু অধৈর্য হয়ে বললো
– কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে শায়না?
কিরে হিয়া… কি হয়েছে?
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফুপি বললো
– ভাবি, আমার ছেলেটা শেষ!
– শেষ মানে? কি হয়েছে বলবে তো?
– আজকে বের হয়েছে ভার্সিটিতে যাবে। দুই ঘন্টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসছে!
– তো কি হয়েছে? ভালো লাগেনি তাই হয়তো ক্লাস করেনি।
– একা আসলে তো ভালো ই ছিলো একা আসেনি।
– কার সাথে এসেছিলো? হিয়ার সাথে বোধহয় বের হয়েছিলো।
– আরে নাহ।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। হিয়ার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করে নাকি চলে আসছে।
ভাবি…. ও সাথে এক মেয়ে নিয়ে আসছে!! ওকে নাকি বিয়ে করবে!!
রুমে নিঃশব্দের একটা বোমা ব্লাস্ট হলো।
আর এতে সবচেয়ে বেশি আহত আর শকড হলো আমার গোয়েন্দা ভাই রিফাত!!
ওর তিক্ষ চোখজোড়া বিস্ফোরিত হয়ে গোলআলু হয়ে গেছে।
আম্মু একবার শুধু কটমট করে রিফাতের দিকে তাকালো।
এতে রিফাত চুপসে গিয়ে এক সাইডে সরে গেলো।
ফুপি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফুপির এই ছিঁচ কাঁদুনি স্বভাব আর গেলো নাহ!!
– আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। কি হয়েছে খুলে বলো।
কি হয়েছে রে?
– তাহসিনের সাথে একটা মেয়ের অনেক দিনের সম্পর্ক।কিন্তু মেয়েটার বাবা সম্পর্কের কথা জেনে ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। তাহসিন কোনো উপায় না পেয়ে ফুপির সাথে দেখা করাতে আনিষাকে নিয়ে এসেছিলো।
– ভাবি,এখন আমি কি করবো?
– তাহসিন যখন সাহস করে তোমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসছে,আমার মনে হয় তোমার ওর কথাটা ভেবে দেখা উচিত।
– আমার ভাবাভাবি পরে। ওর আব্বু জানতে পারলে কি হবে বুঝতে পারছো? মা- ছেলেকে এক সাথে বাসা থেকে বের করবে!!
– সেটা অবশ্য ঠিক।
আচ্ছা এক কাজ করো, সাদিক ভাইকে নিয়ে কাল একবার আসবে।আমি ফোন করবো উনাকে।
– তুমি সব সামলাতে পারবে ভাবি।আমাকে উদ্ধার করো।।
– আচ্ছা ঠিক আছে তো।কাল দেখা যাবে।
আঙ্কেল অনেক রাগি মানুষ হলেও অনেক সুন্দর মনের মানুষ। স্পষ্টভাষী। উনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর আঙ্কেল আমাকে অনেক স্নেহ করেন।
ফুপি আঙ্কেলকে বাঘের মতো ভয় পায়।তবে আঙ্কেল আম্মুকে অনেক সম্মান করেন। আম্মুর কথা ফেলতে পারেন না।
আম্মুর ভরসায় ফুপি ফিরে গেলেন।
পরদিন ভার্সিটিতে গেলাম। কিন্তু রেহানকে কোথাও দেখলাম না। এক ক্লাস পরে অফ পিরিয়ডে আমি, খুশবু,অনি বসে আড্ডা দিচ্ছি।তাহসিন আসেনি আজ, রেহানও না।
আড্ডার মধ্যেই রেহান এসে হাজির। হাতে কয়েকটা আইসক্রিম।
– কি করছিস তোরা?
– এতো লেইট করলি যে?( অনি)
– একটা কাজ ছিলো।
নে আইসক্রিম খা। সবাইকে আইসক্রিম দিয়ে আমাকে বললো
– নে তোর চকলেট ফ্লেভার।।
চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম আমার অনেক পছন্দ। আর গতকাল যে ঝগড়া হয়েছিলো আইসক্রিম গুলো সেই জন্যই, এটা সবাই জানে।
এই হচ্ছে রেহান।।
দিনে তিন বার আমার সাথে ঝগড়া করবে, কিন্তু ২৪ ঘন্টার আগেই সে নিজে এসে কথা বলবে আর সাথে আমার প্রিয় আইসক্রিম!!
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *