পেইন

পেইন !! লেখাঃ এপিস ইন্ডিকা !! Part- 10 ( Last-Part )

আমাদের সমাজে একটি প্রচলন আছে বাড়া ভাত নাকি রেখে যেতেনেই।।আজ আজকের সমাজের মানুষ মানে না।।বিন্দুও ঠিক তাই।।তারপরও কেন জানি শিশির রাহুলকে এভাবে ভাত রেখে চলে যাওয়াতে বিন্দুর মনে খচখচ করতে লাগে।।সে বুঝতেই পারছে না, এমন কেন হলো?কি এমন কল আসলো যে দুজনি বের হয়ে গেল।।আজ শিশিরের সাথে থাকছে ১ মাস হলো।।এ এক মাসে শিশির এমনটি কখন করে নি।।সে খাবার অপচয়কারি মানুষদের যেন পছন্দ করে না তেমনি নিজেও করে না।।
তখন ভাত মাখিয়ে এক নলা মুখে দিবে তখনি ফোন আসে শিশিরে ফোনে।।ফোনটি রিসিভ করতেই, সাথে রং পাল্টে যা তার মুখের।।সাথে সাথে বলে উঠে,,
—আসচ্ছি।।
পাশা থাকা রাহুল কেবল হাত ভাতের এক নলা মুখে পুরে ছিল।।শিশিরকে এমন ভাবে দেখে জিগাসা করলো,,,
—- কি হয়েছে??
শিশির হাত ধুতে ধুতে বলে,,
—উঠে এখনি যেতে হবে ফ্যাক্টরিতে মারামারি লেগেছে।।আমি যাচ্ছি তুই ভাত খেয়ে আয়!
রাহুল সাথে সাথে উঠে হাত দুয়ে বলতে লাগে,,,
—-নাহ আমিও যাবো চল।।
আর কথা না বারিয়ে বের হতে নেয় তারা।।তখনি বিন্দু তরকারির বাটি নিয়ে খাবার টেবিলে আসে দেখে তারা চলে যাচ্ছে,,তখন পিছন থেকে বিন্দু বলতে লাগে,,
—-ভাতটা শেষ করে যান!!কোথায় যাচ্ছেন আপনারা??
কোনো জবাব পাইনি আর।।
তখন থেকে খচ খচ করছে তার মন।।

.
ফ্যাক্টরিতে এসে কাউকে দেখতে পায় না তারা।।
অথচ কলটি ফ্যাক্টরিতে লাগানো টেলিফোন বুথ থেকে কল এসেছে।।তার উপর এ সময় সব গেল কই।। কিছু মাথায় আসচ্ছে না তাদের।।তখনি পিছন থেকে রাহুলের আওয়াজ শুনা গেল।।তাৎক্ষণিক পিছনে ফিরে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে রাহুলকে।।রাহুলের সাদা শার্টে লাল হয়ে গেছে মুহুর্তে।। হটাৎ এমন হওয়াতে স্তব্ধ হয়ে যায় শিশির।।চোখের সামনে প্রিয় বন্ধুকে ধাপড়াতে দেখে আর সামলাতে পারছে না নিজেকে,,, অশ্রুসিক্ত নয়নে চিৎকার করে ডাকছে।। কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না।।লাস্ট পর্যন্ত নিজেই গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।।হাত পা কাঁপছে শিশিরের।।আজ দ্বিতীয়বার তাকে সেই কাছের মানুষ দের হারানোর #পেইন কেমন বুঝতে অনুভব করতে হচ্ছে।।কেনই বা এত #পেইন তার জীবনে??
রাহুলকে অটিতে নিয়া হয়েছে।।
পৃথীবিতে শিশিরের যেমন কেউ নেই।।তেমনি বাপ- মা মারা যাওয়ার রাহুলের ও কেউ নেই।।দুজন দুজনকে আকরে বেচেঁছে।।আর আজ তার বন্ধু তার ভাই এই #পেইন সহ্য করছে।।
ওটির সামনেই হাটু গেড়ে বসে কাঁদছে শিশির।।তখন চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে পরে।। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে, দাঁতে দাঁত চেপে বের হয়ে যায়।।আর বিরবির করে বলতে লাগে,,
—সব কটাকে আজ শেষ করে দেব!!আজ কাউকে ছাড়বো না।।

.
রাতের গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে,,।।
সাথে বিন্দুর চিন্তাও।।তখনি জায়নাজে বসে আল্লার কাছে দু হাত তুলে দোয়া করতে থাকে।।আজ যে তার মন ভাল নেই! সমানে তু ডাক ডেকে যাচ্ছে।। এ কদিনে শিশির এত রাত করেনি।।সব সময় টাইমলি ঘরে ফিড়েছে।। সালাত আদায় করতো,,।।বাজে সব নেশা ছেড়েছিল।।এমনকি রাতের সালাত দুজনি আদায় করতো।।তাহলে এমন কি হলো যে শিশিরের আজ কোনো খবর নেই।।সাথে রাহুলের ও।।এই ছেলটা যে বিন্দুকে ভাইয়ের মতো আদর করতো।।বিন্দুর কথায় এ বাড়িতেই থাকতো রাহুল।।দিন গুলো তো ভাল কাটছিল তাহলে কেন এসব হচ্ছে??
প্রশ্নের উত্তর একটাও নেই তার কাছে।।

.
পুলিশের সামনে বসে আছে শিশির।।সারা মরীরে রক্ত মাখা।।চুল গুলো এলো মেলো।।হাতে থাকা ছুড়িটি এগিয়ে দিয়ে সব।। আর বলতে রাগে,,
—-আমি মাত্র খুন করে এসেছি দুটো।।তার আগেও করেছি অনেক গুলো।।একটি পেনড্রাইভ এগিয়ে দেয়।।
আবার বলতে লাগে,,
—-এখানে সকল তথ্য আছে।।আপনি আমাকে এখন জেলে নিতে পারেন।।
পুলিশটি যেন থ হয়ে গেছে।।তিনিও জানে যাদের শিশির মেরেছে এরা কতটা খারাপ ছিল।।তাদের ধরার সামর্থ্য তাদের নেই।।
পুলিশের লোকটি অনেক খুশিই হয়।।তাই শিশিরকে ছেড়ে দিতে চায়।।কিন্তু তাতে শিশির রাজি না।। বাধ্য হয়েই জেলে ঢুকাতে হয় শিশির কে।।

.
এভাবে কেটে যায় কয়েকমাস।। সেদিনের পর থেকে শিশিরের জেল হয় ১ বছরের।।আর বাড়তো।।কিন্তু পুলিশেরা তা করতে দেয়নি।।তারা অনেক সাপোর্ট করছে শিশিরকে।।এদিকে রাহুল ও সুস্থ।।কিন্তু শিশিরের জন্য মন অনেক খারাপ।।শিশিরের সাঁথে রাহুল ও জড়িত।।তাহলে সব কিছু থেকে কেন তাকে বিরত রাখলো।।
বিন্দু বাপ-ভাইযের জন্য শোকে থাকলেও তার বাপ-ভাইয়ে কৃতকর্ম শুনার পর এক ফোঁটা কাদেনি।।কাদবেই বা কেন??তাদের জন্য কত নিরিহো মানুষ প্রান হাড়িয়েছে।।কত মেয়েরা তার সম্মান হারিয়েছে।।
তাই সে খুশি।।তাদের আল্লাহ বিচার করেছে।।


বিন্দু এতেও খুশি তার শিশির নিচের ভুল বুঝতে পেরেছে।।শিশির জেলে যেভাবে ছিল বিন্দুও ঠিক তেমন ভাবে থাকার ট্রাই করেছে।।যেমন শিশির ওখানে মাটিতে ঘুমাতো বিন্দুও তাই করতো।।শিশর সেখানে দুমুঠা চাল চাল ভাত,, কাচঁা মরিচ,শক্ত রুটি এসব খেতো বিন্দুও তাই।।দুজনে এক প্রকার বনবাসের মতো কাটিয়েছে।।এক বছরে শিশিরের জন্য ভালবাসা বেরেই চলেছে তার।।শিশির স্পর্শ গুলো মিস করেছে।।

.
বাসার কলিং বেল বাজতেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে বিন্দু।।রাহুলের সাথে শিশিরকে দেখে।।আর শইতে পারে না সে।।দৌড়ে ঝাঁপটে ধরে তাকে।।শিশিরও তাই।।জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।।আর কাঁদতে রাগে দুজন।। আজ যেন অপেক্ষার দিন শেষ হলো।।জোজো, আর রাহুল ও কেঁদে দিল তাদের এভাবে কাঁদতে দেখে।।



ঘড়ির কাঁটা টিং টিং করে বেজে জানান দিচ্ছে বারটো বেজে গেছে।।কিন্তু বারান্ধার ফ্লোরে বসে থাকা দাম্পত্যের যেন সেই খেয়াল নেই।।দূর আকাশের মিটিমিটি তারা গুলো দেখতে ব্যস্ত তারা।।তার সাথে নানা গল্পে মেতে।।শিশির দেয়াল ঘেসে বসে,,তার কোলে বিন্দু।।বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শিশির।।আর বিন্দুর নানা কথা শুনছে।।কথার এক পর্যায় বিন্দুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শিশির সাথে সাথে কেঁপে উঠে বিন্দু।।আর শিশির বলতে লাগে,,
—-তোর সাথে অনেক অন্যয় করেছি বিন্দু আমাকে মাফ করে দিস।।এক বছরে তোকে অনেক মনে করেছি।।কতবার এমন হয়েছে ছুটে আসতে চেয়েছি তোকে।।কিন্তু পারিনি।।
শিশিরের কথার মাঝে বিন্দু তার ঘারে ভেজা অনুভব করলো।।বুঝতে বাকিনেই শিশর কাঁদছে।।বিন্দুর চোখ টল টল করছে।।
শিশির বলতে লাগে,,
—-আমার লাইফে যতটা #পেইন আমি সহ্য করেছি।।তা আমি বাচ্চাদের করতে দেব না।।তাদের অনেক হপি রাখবো।।একটা হেপি ফ্যামেলি বানাবো।।পাশে থাকবিতো আমার।।
বিন্দু মাথা নাড়ায়।।শিশির হেসে দেয়।।আর উঠে দাড়ায়।।তা দেখে বিন্দু তার দিকে তাকায়।।বিন্দু কিছু বলতে নিবে তার আগেই।।শিশির বিন্দুকে কোলে তুলে নেয়।।আর ঘরের দিক পা বাড়ায়।।সকল মান, অভীমান, পেইন ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে পা বাড়ায়।।
.
.
জীবনতো এমনি হাসি কান্না মিলে।।আমাদের জীবনটা একটা কাহিনীর মতো।।আমাদের জীবনে সুখ আসে তেমন দুঃখ।।তেমনি প্রতিটি মানুষের জীবন ভুলভ্রান্তিও হয়।।তাই বলে এই নয়।।তাদের আমরা ভুল যাবো।।আমাদের সবার দরকার নিজেদের ভুল শোধরাবার।। তার সাথে যারা ভুল করে তাদের একটা সুযোগ দেয়ার।।পৃথীবিতে আমাদের সবার মনেই #পেইন আছে ছোট বড়।।তাদের জয় করা উচিত।।নাকি ভাগ্য ভেবে ছেড়ে দেয়া।।তাহলে াপনার থেকে বোকা আর কেউ নেই।।
❤❤The End❤❤

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *