পেইন

পেইন !! লেখাঃ এপিস ইন্ডিকা !! Part- 09

এক বছর পর,,,!!!

ফজরের আযানের মধুর ধ্বনি চারপাশটায়।।
আযানের শব্দ ঘুম ভেঙ্গে যায় মাটিতে মাদুরের শায়িতা বিন্দুর।।এই এক বছর মাদুর হয়েছে তার শয্যা সঙ্গী।। ঘরে নরম তুলতুলে বিছানা থাকতেও সে এখানেই ঘুমোয়।।ঘুমবেই না কেন!!শিশিরও তো এই এক বছর এভাবে থেকেছে।।

নামাজ পড়ার জন্য উঠে বসে বিন্দু।।মাদুরটি ভাজ করে পাশের দেয়ালে রেখে দেয়।।তারপর অজু করতে চলে যায়।।আজ বিন্দু অনেক খুশি আজ এই এক বছরের বনবাসের অবসান ঘটতে চলছে।।চট জলধি বাথরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে হাত পা মুছে,ভাল করে ওরনাটা গায় চেপে নিল।।তারপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়িয়ে যায় বিন্দু।।চারপাশটা তখন অন্ধকার।।শুধু আশেপাশ থেকে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শুনা যাচ্ছে।।ফযরের নামাজ শেষ আরো দু রাকাত শুকরিয়ানা নামাজও পড়ে নিল সে।।তারপর কন্দন রত হয়ে মোনাজাত ও করে নেয় সে।।
আজ আল্লাহর কাছে হাজারটা শুকরিয়া জানিয়ে উঠে পড়ে সে।।

.
হালকা ভোরের আভাস দেখা যাচ্ছে।।পূর্ব দিক হালকা সোনালি আলো উকি দিচ্ছে।।চারপাশটার অন্ধকার দূর করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।।যেমনটি বিন্দুর ও আজ তার জিবনের বিগত ১ বছরের অন্ধকারের আবসান ঘটিয়ে আলোর দেখা মিলতে যাচ্ছে।।বারান্ধায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভেবে যাচ্ছে বিন্দু।।কিছু একটা মনে হতেই বিন্দু ছুট লাগায় রান্না ঘরের দিক।।আজ নিজ হাতে সব করবে সে।।রান্নার সব আইটেম করবে তার শিশিরের পছন্দের।।রান্না করা প্রায় শেষের দিকেই।।আজ বিন্দু তার শিশিরকে পেট পুরে খাওয়াবে।।তার জন্য আজ মন পছন্দ আইটেমের একটি ও বাদ রাখে নি।।যেমন: চেপা ভর্তা, মাংসের শুটকি, করলা দিয়ে বড় মাছ,, ধনেপাতা দিয়ে মাসের ডাল,, আর বুটের হালুয়া।।



কাজ শেষে হাত মুছতে মুছতে রুমে আসে বিন্দু।।ঘড়ির তাকিয়ে আছে সে,,সময় যেন আজ কাটচ্ছেই না।। আর যেন তর সইছে না তার।।খাটের পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে পড়ে বিন্দু।।খাটের পাশের সেন্টার টেবিল একটি ছবি হাতে নিয়ে শাড়ির কোনা দিয়ে মুছে বলতে লাগে,,

—-আর কতো অপেক্ষা করবো।। এই অপেক্ষা আমাকে যে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে জলধি চলে আসেন না।।দেখছেন কি হাল হয়েছে তার।।এতটা #পেইন কেন দেন।।কাঁদতে লাগে বিন্দু।।প্লিজ তাড়াতাড়ি আসেন।। প্লিজ।।

কাঁদতে লাগলো বিন্দু।।আর ঢুব দিল সেই বছর খানিক আগের তাদের বিচ্ছেদের দিন গুলিতে।।

এক বছর আগে,,,!!

রাহিন আর তার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।।তাদের সামনে সেন্টার টেবিলে রাখা কিছু ছবি।।বিন্দুর আর শিশিরের বিয়ের।। সাথে একটি খাম,,। যেখানে আছে ফটোকপি করা একটি কাবিননামা।। যা দেখে রাহিনের মা বার বার ফিট হচ্ছে।।রাহিনের বউ তার মাথায় পানি ঢালছে বার বার।।

—-আমি জানতাম এই মেয়েটার জন্য নাক কাটবো আমাদের।। আর তাই হলো।।

—-বাবা এখন এসব বলে লাব নাই।।যা করার আমাদের করতেই হিবো।।

—-আর কি করবো??আর এই শিশির কেমনে বাচঁলো।।আমরা তো ওরে সহ!!

—-এই পুইচকা পোলা শুরু থেকে আমারে জালাইসে।।এবার আর ছাড়মু না।।

—-শুন বাপ আমাগের সাথে যারা জড়িত তারা ওল রেডি মইরা গেছে।।আমার তো সন্দেহ ওগো এই পুইচকা পোলাই মারছে।।

চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।।
তারপর কাউকে কল করে রাহিন!!
—-হুম আমি বলছি।।

—-

—-ওরা এখন কই??

—-

—-আধ ঘন্টার মাঝে আমার সব খবর চাই।।
কেঁটে দিল ফোন।।



—-দোস্ত এগুলো করাটা কি ঠিক??

—-হুম ঠিক??এখন ওরাই আমাদের কাছে ধরা দিবে!!আমি শুধু নিজ হাতে রাহিনকে মারতে চাই।।

—-আমি তোর সাথে আছি শিশির।।

—-তুই আছিস তাই এতো দূর এগিয়েছি।।তোকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব!!

—-ছোট করছিস আমায়।।তুই ভুলে যাচ্ছিস ভাই হোস আমার।।

জড়িয়ে ধরে রাহুলকে শিশির।।তখনি ডাক পড়ে জোজোর।।

—-ভাইয়া আসুন নাস্তা রেডি।।

শিশির আর রাহুল দুইজনই খাবার টেবিলে আসে বিন্দু আজও শিশিরের পছন্দ মতো খাবার বানিয়েছে।।
পছন্দের খাবার গুলো চোখের সামনে পুরোনো স্মৃতি মনে হতে থাকে তার।।এই খাবার গুলো তার মা, বোন খুব মজা করে রান্না করতো।।আর তাদের হাতে খুব আয়েশ করে খেতে বসতো শিশির।।শিশিরের চোখে মুখে বিষন্নতা ফুটে উঠে যা বিন্দুর চোখে এড়ালো না।। বিন্দু এসে শিশিরের কাঁধে হাত রেখে বসালো।।আজ বিন্দুরো কষ্ট লাগচ্ছে।। আর ফ্যামেলির জন্যই আজ শিশির এতো দূরে।।শিশির চেয়ার টেনে খেতে বসলো।।সাথে রাহুল ও।।ভাত বেরে দিতে লাগে বিন্দু।।শিশির আর রাহুল মাত্রই ভাতটা মুখে দিল।।তখনি ফোনটা বেজে উঠে,,,

চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *