পূর্ব রোদ

পূর্ব রোদ !! Part- 07

দাঁত দেখিয়ে রোদ হাসি দিলো।রোদের সামনে পূর্ব নরমাল বিহেভ করলেও রোদের করা একটু আগে ব্যবহারে পূর্বের ভয় হচ্ছে।রোদের মনে পূর্বে জন্য কোনো মায়া বা প্রেম কড়া নাড়ছে না তো?তাহলে যে পূর্ব নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাবে।কারণ যে যাই হোক অন্তত একটা মেয়ের মন নিয়ে পূর্ব খেলতে পারে না।

“রাফিয়া পরিক্ষা কেমন হলো তোর?”
“লাড্ডু হয়েছে।তোর প্রেকটিক্যাল কেমন হলো?”
“আমার তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোর লাড্ডু হলো ক্যান?”
“আর বলিস না।লাফিং গ্যাস নিয়ে কী কী হলো।”
“লাফিং গ্যাস কী?”
“লাফিং গ্যাস মানে হলো হাসার গ্যাস।”
“মানে?বুঝিয়ে বল।”
“একটা সিসির মধ্যে লাফিং গ্যাসকে আবদ্ধ করে রাখা হয়।যদি কারো নাক বা মুখের সামনে ওটা স্প্রে করে দেওয়া হয় তখন সেই ব্যাক্তি একাধারে হাসতে থাকে।”
“র‍্যালি?ইন্টারেস্টিং!আচ্ছা কোথায় পাওয়া যাবে ঐ গ্যাস?”
“আমাদের ল্যাবে আছে।তুই বললে তোকে এনে দিতে পারি।”
“কাল’কে তুই আমাকে এনে দিবি।ওকে?”
“ওক্কে!”

রোদ মনেমনে হাসলো।গতকালই তাদের প্রেকটিক্যাল পরিক্ষা শেষ হলো।কালকে রোদ পূর্বের বাড়িতে চলে যাবে।তাই আজকে সারা-রাত আলো আর রাফিয়া’র সাথে আড্ডা দিবে বলে ঠিক করেছে।আলো ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই আনতে গেছে।এই ফাঁকে রোদ সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে দিলো।শব্দের ধ্বনি বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।সাউন্ড বক্সে বাজতে থাকা “DJ ওয়ালে বাবু মেরা গানা চালাতো” গানের তালে তালে রাফিয়া আর রোদ নাচছে।নাচতে নাচতেই রাফিয়া বলে উঠলো,
“রোদ জানিস আদিত্য’কে হেব্বি লাগে।”
“হু ইজ আদিত্য?তোর কয় নাম্বার ক্রাশ?”
“বাদশা’র রিয়েল নাম আদিত্য।ওর দাড়ির স্টাইলটা উফ!জাস্ট ওয়াও।”
“তুই দেখিস আদিত্যের রিয়েল নামপ জেনে রাখছিস।”
“ক্রাশ বলে কথা!”
“তুই জীবনেও মানুষ হবি না।থাম এবার।”
রোদের কথায় রাফিয়া নাচা থামিয়ে দিলো।দুজন গিয়ে খাটে বসতে বসতে ওড়না দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফেললো।এক হাতে ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই অন্য হাতে সসের বোতল নিয়ে রুমে প্রবশ করতে করতে বললো,
“রাফিয়াপু এমন একটা ছেলের নাম বলবে যার উপর তুমি ক্রাশ খাওনি?”
“হ্যা তো!হিরো আলম।”
আলোর কাছ থেকে ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই নিয়ে হাসতে হাসতে রোদ বললো,
“হাহাহাহা।আমি তো ভাবছিলাম তুই হিরো আলমকেও বাদ দিস নি।যাক তাহলে তুই পুরা পাগল নই।”
“এই রোদ।ভালো কথা মনে পড়লো।জি..আই মিন পূর্বের যে বন্ধু আছে না?”
“কে?ইন্না-লিল্লাহ?”
“হ্যা।কাল রাতে ও’কে স্বপ্ন দেখলাম।”
“বলিস কী?কেমন স্বপ্ন দেখলি?রোমান্টিক?ভয়ংকর?”
ভ্রু কুঁচকে আলো নাকে ঢগায় নেমে আসা চশমা ঠিক করে রোদ আর রাফিয়া’র কথায় মনোযোগ দিলো।রাফিয়া অনেক’টা ভাব নিয়ে বললো,
“দেখলাম আমরা হানিমুনের জন্য সুইজারল্যান্ডে আছি।”
“নাউজুবিল্লাহ!আল্লাহ তোরে হেদায়েত দান করুক।”
“রাফিয়াপু!বিয়ে,প্রেম সব কিছু বাদ দিয়ে ডিরেক্ট হানিমুন?ইউ আর সো ফাস্ট!”
“তোর লজ্জা করে না রাফিয়া।স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা কথা বলিস?”
“আরে না।ট্রাস্ট মি।”
“কী রে?কি করিস তোরা?”
ওদের কথার মাঝখানে রোদের মা ঢুকে পড়লো।রোদের মা তার প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে রোদের উদ্দেশ্য বললো,
“তোর ফোন কোথায়?”

“ফোন তো..কই ফোন?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রোদ মনে করার চেষ্টা করলো।তখনি মনে পড়লো জানালার পাশে আছে মোবাইলটা।রোদ বিছানা থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিলো।তখনি দেখলো আননোন নাম্বার থেকে অনেকগুলা কল।রোদ ভ্রু – কুঁচকে তার মায়ের দিকে তাকালো।ধমকের স্বরে রোদের মা বললো,
“ফোন কোথায় রাখিস নিজেও জানিস না।পূর্ব কতো কল করছে দেখ।”
“পূর্ব?মানে হরিচন্দন?”
“হ্যা।কেনো দেখছিস না?”
“ও কেনো শুধু আমাকে কল করবে?মাথার তার কী ছিড়ে গেছে?”
“আজেবাজে কথা বন্ধ করে কল ফিরা।”
“কিন্তু মা..”
রোদের কথা না শুনে তার মা রুম থেকে চলে গেলো।রোদ কল লিস্টের দিকে তাকিয়ে আছে।পূর্বের ব্যবহার তাকে অবাকের পর অবাক করে দিচ্ছে।রোদের সাথে পূর্বের কোনোদিন মোবাইলে কথা হয়নি তাই নাম্বারও জানে না।রোদের অবস্থা দেখে রাফিয়া বললো,
“রোদ আমার মনে হয় পূর্ব পাল্টে গেছে।”
“উঁহু!এতো সহজে হরিচন্দন তো পাল্টাবে না।সবকিছুর পেছনে কোনো “কারণ” আছে।”
রোদ মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে আছে।রোদ একবার কল করতে চাইছে আবার না।খু-ব করে চাইছে রোদ যেন পূর্ব আরো একবার কল করে।রোদ অনুভব করতে পারলো তার এক মন দু’কথা বলছে।হুট করে রোদ মোবাইল ফোনটা বন্ধ করে দিলো।এমনটা রোদ কেনো করেছে জানে না।


“তিহান আমার মনে হয় রোদ আমার প্রতি উয়িক হয়ে পড়ছে।”
“ইন্না-লিল্লাহ!এমন কেনো মনে হচ্ছে?”
“জানি না।কিন্তু আমি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে রোদ আগের মতো জেদি নেই।”
“সেটা হলে তো ভালো।তুই..ইন্না-লিল্লাহ!এমনটা হলে তো রোদ ঠকবে।”
“তাই তো বলছি।”
“কিন্তু রোদ ঠকলে তোর কী?তুই তো শুধু নিজের স্বপ্নটা পূরণ করতে চাস।যার অস্ত্র রোদ।”
তিহানের কথায় পূর্ব জবাব দিলো না।সে এক ধ্যানে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।এতোক্ষণে নিশ্চয়ই মামুনি রোদকে বলেছে কলে’র কথা।তাহলে রোদ কল ব্যাক কেনো করছে না?নিজের অজান্তেই সে একটা কলে’র অপেক্ষা করছে।মোবাইল নিয়ে পূর্ব আরেক বার ডায়েল করলো।কিন্তু পরক্ষণে আবার লাইন কেটে দিলো।তখনি তিহান বলে উঠলো,
“ইন্না-লিল্লাহ!পূর্ব কোথায়ও তুই প্রেমে যাস না আবার।”


“মা আমি সিলেট ইন্টারনিং করতে যাচ্ছি।ভ্রমণ করতে যাচ্ছি না যে সাথে করে জাদুমন্ত্রী’কে নিয়ে যাবো।”
“রোদ’কে যদি তোর সাথে নিয়ে যাস তাহলেই তুই সিলেট ইন্টারনিং করতে যেতে পারবি।”
“রোদ সিলেট গিয়ে কী করবে?”
“ওর কম্পিউটার কোর্স আছে।”
“কম্পিউটার কোর্স তো এখানেও করতে পারে।”
“তোর সাথেই যাবে।”
“মা দেখো আমি তোমার সব কথা মেনে নিয়েছি তার মানে এই না যে এটাও মেনে নিবো।”
“আমার কথা মেনেছিস কবে?নিজের স্বার্থের জন্য রোদের সাথে ভালো ব্যবহার করছিস।এতে আমার লাভের কিছু নেই।”
“রোদকে সাথে করে কিছুতেই আমি সিলেট যাবো না।”
“”তাহলে তোর সিলেট যেতে হবে না।চট্টগ্রামে ইন্টারনিং করবি।”
“ধ্যাত!”
আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে পূর্ব রুম থেকে বেরিয়ে এলো।চাঁদনি মোহাম্মদ পূর্বকে আটকালো না।কারণ একটুপর পূর্ব নিজে এসে বলবে সে রোদের সাথেই সিলেট যাবে।
সিলেট যাওয়ার কথা উঠতেই রোদ রাজী হয়ে গেলো।কিন্তু যখন শুনলো পূর্বের সাথে যেতে হবে অমনি হাসি মাখা মুখটা মেঘে ঢেকে গেলো।দুদিন হলো সে শ্বশুরবাড়ি এসেছে।পূর্বের ব্যবহার গত দিনগুলোর মতোই ছিলো।তবে দুজন আলাদা রুমেই থাকতো।যখন শুনলো সিলেট যাচ্ছে তখন রোদ লাফিয়ে উঠলো।ছোট বেলা থেকে রোদের শখ ছিলো সিলেট ভ্রমণ করা।কিন্তু পরিস্থিতির জন্য সেটা হয়ে উঠেনি।এখন যখন সুযোগ নিজে এসে ধরা দিলো তখন “পূর্বে”র জন্য রোদ তা নষ্ট হতে দিতে পারে না।একরকম দু-টানায় ভুগছিলো।রোদ মনে মনে ঠিক করে নিলো পূর্ব নিজে এসে বললে তবে যাবে।কেনো জানে না আজ-কাল সবকিছু পূর্বের উপর নির্ভর করে।

“রোদেলা সিলেট যাবা আমার সাথে?”
মাত্র জায়নামাজ থেকে আসরের নামাজ পড়ে রোদ চাইলো পূর্ব নিজেকে এসে বলুক।এখন সত্যি সত্যি তা হওয়ার পর রোদের মুখটা “ও” আকৃতি’র হয়ে গেলো।তুড়ি বাজিয়ে পূর্ব আবারো জিজ্ঞেস করলো,
“কী হলো?যাবা?”
“এ্যাহহ?পূর্ব মোহাম্মদ আমার মতামত জানতে চাইছে?”
রোদের কথায় পূর্ব ক্রোধিত হলো।এমনিতেও মায়ের জন্য রোদকে সাথে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।তার উপর রোদের এতো ভাব।রাগিরাগি কন্ঠে পূর্ব রোদকে ধমকের স্বরে বললো,
“জাদুমন্ত্রী কালো জাদুর কথা না ভেবে দয়া করে আপনার মতামত জানাবেন?”
“হরিচন্দন নিজে এসে আমাকে বলছে..নিজে এসে?আর আমি কি’না ছোট খাটো একটা মানুষ হয়ে উনার আবদার ফেলবো?না বাপু।আমি সিলেট যাচ্ছি।”
“এতো না পেচিয়ে সোজা কথাটা বললেই তো হয়।ঢং!”
তখনি রোদ পড়ার টেবিল থেকে একটা লম্বা আকৃতির সিসির নিয়ে পূর্বের মুখের সামনে ফিস করে স্প্রে করে দিলো।দু’সেকেণ্ড বাদেই পূর্ব খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।পূর্ব খুব করে চাইছে না হাসতে কিন্তু রোদের কর্মে সে হাসতে বাধ্য।হাসতে হাসতে একসময় সোফায় বসে গেলো।বাড়ি থেকে আসার সময় রাফিয়ার দেওয়া লাফিং গ্যাস নিয়ে এসেছে রোদ।এখন পূর্বের অবস্থা দেখে রোদ নিজেও হাসতে লাগলো।দুজনে একসাথে হাসতে।
তখনি রোদের রুমে চাঁদনি মোহাম্মদ প্রবেশ করতে যাচ্ছিলো।কিন্তু ওদের হাসির শব্দ শুনে থেমে গেলো।দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো দু’জন হেসেই চলছে।এমন একটা দৃশ্যের জন্যই তো চাঁদনি মোহাম্মদ এতোকিছু করলো।অবশেষে সে সফল!কিন্তু তিনি তো জানেন না তাদের হাসিটা কৃত্রিম!দাঁড়িয়ে না থেকে তিনি দরজার সামনে থেকে সরে গেলেন।

“হাহাহাহা!আরেক বার থেকে নাকের ঢগায় রাগ নিয়ে কথা বলবি তো এই লাফিং গ্যাস স্প্রে করে দিবো।হাহাহাহা।হাসতে থাক তুই।”
“হাহাহা তোকে তো..হাহাহা তোকে আমি হাহাহ দেখে নিবো।”
“ওকে।যত ইচ্ছে দেখিস।তুই তো আর পরপুরুষ না।”
কথাটি বলে রোদের হাসি থেমে গেলো।পরপুরুষ না মানে?রোদের মন কী পূর্ব’কে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করছে?কী হচ্ছে তার সাথে এসব?


“রোদ সব গোছগাছ করে নিয়েছিস?বেরুতে হবে তো।”
“হ্যা আম্মি।আমি সব কিছুু গুছিয়ে নিয়েছি।তুমি চিন্তা করো না।”
“আচ্ছা আয়।পূর্ব গাড়িতে বসে আছে।”
চাঁদনি মোহাম্মদের পিছু পিছু কাপড়ে ব্যাগ নিয়ে রোদ নিচে গেলো।চাঁদনি মোহাম্মদ আর সূর্য মোহাম্মদ থেকে দোয়া চেয়ে পূর্ব-রোদ সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
(চলবে)