পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 45
ওয়াসেনাতের চোখ বাঁধা।লাল কাপড়ে বেঁধেছে চোখ।সে বার বার হাত দিয়ে দেখছে সেই চোখের কাপড়টা।অবাক হয়ে মাথা এদিক থেকে ওদিকে করছে।কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ওয়াসেনাত!কে তার চোখ বেধেছে সে জানে না।অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে মাত্র।রিমন আর রিমিকে বিদায় দিয়ে আসার সময় কেউ হুট করেই তার চোখজোড়া বেধে দিয়েছে।ওয়াসেনাত কৌতুহলি হয়ে বললো,
-“ কে কে???চোখ কে বাঁধলো??”
অরিত্রান পিছনে দাঁড়িয়ে হাসলো।ওয়াসেনাত চোখ খুলতে চাইলো।হাত চেপে ধরে অরিত্রান বললো,
-“ তোমার আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ কি আসতে পারে??”
ওয়াসেনাত কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে।তারপর বলে,
-“ চোখ কেন বাঁধলেন???”
অরিত্রান হেঁসে দু’হাতে ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নেয়।ওয়াসেনাত চমকায়।দু’হাতে অরিত্রানের পাঞ্জাবি খামছে ধরে।ভয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-“ আরে আরে কি করছেন আপনি??কোলে কেন নিয়েছেন???”
অরিত্রান ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ফিসফিস করা গলায় বললো,
-“ ভালোবাসি তাই কোলে কোলে রাখতে চাই।”
ওয়াসেনাত কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভাবে।তারপর হঠাৎ বলে উঠে,
-“ বাড়ি ভর্তি মানুষ আছে।বাবা মা আছে।যদি দু’জনকে এভাবে দেখে কি ভাববে সবাই???”
অরিত্রান বিরক্তি গলায় বলে,
-“ যা খুঁশি ভাবুক।আই ডোন্ট কেয়ার।”
অরিত্রান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।ওয়াসেনাত টের পাচ্ছে।কিন্তু কোথায় যাচ্ছে বলতে পারছে না।কৌতুহলি হয়ে ভাবছে সে।দু’হাত অরিত্রানের গলা জড়িয়ে আছে।মুখে একটা চিন্তার ছাপ।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।ছাদের মাঝে দাঁড় করিয়ে দেয় ওয়াসেনাতকে।ঠান্ডা বাতাস গায়ে আসতেই ওয়াসেনাত চমকায়!মনে মনে আওড়ায়,এটা কি ছাদ??কিন্তু ছাদে কেন আনবে??”ঠান্ডা একটা কন্ঠ কানে আসে।অরিত্রান বলে,
-“ আর যাই করি ছাদ থেকে ফেলে দিবো না।”
অরিত্রান শব্দ করে হাসে।ওয়াসেনাতের চোখের লাল কাপড় সরিয়ে দেয়।চোখ ছোট ছোট করে ওয়াসেনাত চারপাশে তাকায়।চোখ যায় সামনের সুইমিংপুলে।লাল গোলাপের পাপড়ির মাঝে সাদা গোলাপে ইংরেজি অক্ষরে লেখা,
“My fairy,Will you marry me ??”
কিছু খুশি মানুষকে বাকরূদ্ধ করে দেয়।নিঃশ্বাসকে থমকে দেয় কিছু মুহূর্তের জন্য।ওয়াসেনাতের অবস্থা এখন ঠিক তাই।তার হাত কাঁপছে।পা কাঁপছে।চোখে জ্বল জ্বল করে ভাসছে সুইমিংপুলের উপরে ভাসমান কিছু ছোট ছোট ক্যান্ডেল।সাদা পাপড়ি গুলো স্নিগ্ধ হয়ে লেপ্টে আছে লাল পাপড়ির ভাজে।অরিত্রান বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি।দমকা একটা হাওয়া বয়ে চলে।সেই হাওয়ায় দোল খায় পানি।সাথে দোলে পাপড়ি।ওয়াসেনাতের কাঁপাকাঁপি অবস্থা দেখে অরিত্রান হাসে।হাসির শব্দ হয়।ওয়াসেনাত ভাষা খুঁজে,কি বলা উঁচিত??উত্তর কোনটা বেষ্ট??হ্যা,না কি yes,না কি ok,ওয়াসেনাতের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।অদ্ভুত ভাবে সে ঘামছে।অরিত্রান অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে আসে।দু’হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নেয়।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হাসে।ওয়াসেনাত জড়িয়ে ধরে না।সে ঘোরের মাঝে আছে।অরিত্রান অস্তে করে বলে,
-“ উত্তর যে ভাষারই হোক তুমি আমার হলেই হবে পরীজা।”
লাইট জ্বলতেই অরিত্রানের বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে ওয়াসেনাত তাকায়।কেউ আসছে দেখে সরে দাঁড়ায় সে।রিমিকে দেখেই ওয়াসেনাত ভারী অবাক।চোখ বড় করে তাকায় সে।একে একে সবাইকে এদিকে আসতে দেখে ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রান হাসে।ওয়াসেনাত অবাক গলায় বললো,
-“ রিমি তুই না রিমন ভাইয়ার সাথে চলে গেছিলি??”
রিমি লেহেঙ্গা উঁচিয়ে ওয়াসেনাতের সাম
নে এসে দাড়ায়।তারপর বলে,
-“ তুই কি ভাবলি তোর এনগেজমেন্ট মিস করবো??তাও আবার আমি??ইম্পসিবল।”
-“ এনগেজমেন্ট!!!আমার??” ওয়াসেনাতের অবাক গলা।
-“ তা না হলে আমার আবার হবে না কি??”
সবাই হো হো করে হাসে।ওয়াসেনাতের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।রিমি তার হাত টেনে ছাদের রাখা সোফায় বসায়।তৌফিক সাহেবের পাশে বসেছে অরহাম খান।চোখের মোটা ফ্রেমের চমশাটা ঠেলে দিয়ে তিনি বললেন,
-“ তৌফিক,তোমার মতামত জনার প্রয়োজন তো আর নেই ?”
তৌফিক সাহেব ওয়াসিকার দিকে একবার তাকায়।তারপর হেসে মাথা নাড়ায়।অরহাম খান একটা বক্স বের করতেই অরিত্রান বললো,
-“ আমি পড়িয়ে দি।আসলে হাতে ব্যথা পাবে তো।”
অরহাম হো হো করে হাসে।ওয়াসেনাত লজ্জায় মাথা নিচু করে।অরিত্রান হকচকিয়ে চারপাশে একবার তাকায়।সবাই মিটমিট করে হাসছে।অরিত্রান পাত্তা দিলো না।চুড়ি গুলো বক্স থেকে নিয়ে ওয়াসেনাতের হাতে পরিয়ে দেয়।তারপর অংটি পড়িয়ে দেয় আঙ্গুলে।তৌফিক সাহেব এতো কম সময়ে অংটির যোগার করতে পারলো না।তার মুখটা একটু ছোট দেখালো।অরিত্রান বললো,
-“ আমি অংটি পছন্দ করি না।”
সম্পূর্ন্য ঘটনা নিঃশব্দে গিলে নিলো অরূপ।তার হাতে কিছুই ছিলো না।এতো দ্রুত সব ঘটেছে যে সে বুঝতেই পারলো না হচ্ছেটা কি।অরিত্রান যে এতো দ্রুত সব করে বসবে সে জানতো না।অরূপের দিকে তাকিয়ে অরিত্রান ঠোঁট বাঁকায়।চোখ নাচিয়ে কিছু একটা বুঝায়।অরূপ রাগে ফঁসফঁস করে।
___________________
আকাশের চাঁদটা আজ যেনো অন্যদিনের চাইতেও সুন্দর দেখাচ্ছে।বাতাসে মুগ্ধ গন্ধ।ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে অরিত্রান।তার পাশেই নিজের হাতের অংটি আর চুড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ওয়াসেনাত।ভাবতেও অবাক লাগছে পাশের দাড়িয়ে থাকা লোকটা তার বাকদত্তা!!শীত শীত একটা বাতাস ভেসে আসছে।অরিত্রান ওয়াসোনাতের শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে দেয় ভালো করে।ওয়াসেনাত চোখ তুলে তাকায়।অরিত্রানও তাকায়।হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে,
-“ আমার এখনো সব স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।তোমার বাবা মেনে নিয়েছে।তুমি আমার হয়ে যাচ্ছো।সবই ভয়ংকর স্বপ্নের মত সত্যি পরীজা।”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের বুকে হেলে দাঁড়ায়।অরিত্রান নিজের হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে ওয়াসেনাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে নেয়।আর এক হাতে বাহু জড়িয়ে নেয়।বুকের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে সে।যেন একটু ছাড়লেই পালাবে বহু দূর।দু’জনের মাঝে কথা নেই।আছে নীরবতা।ভালোবাসা চুপি চুপি বাতাসের সাথে মিশছে।নিজের রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে দু’জনকে।উষ্ণতায় ভরীয়ে দিচ্ছে দুজনের হৃৎপিণ্ডের শব্দদয়কে।ভালোবাসার স্নিগ্ধ ঘ্রাণে মিশিয়ে উজ্জ্বল রঙে ভাসিয়ে দিচ্ছে তাদের।হৃদয়ে হৃদয়ে হয় ভালোবাসার কথা।
কথার মাঝে লুকিয়ে থাকে নিঃশ্বাসের উত্তাপ।অরিত্রান হাত সরিয়ে নেয়।পিছনে এসে দাড়ায়।ওয়াসেনাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে।কাঁধের কাছে নিজের চিবুক ঠেকায়।ওয়াসেনাত খানিকটা চমকায়।অরিত্রান আরো শক্ত করে জাপ্ট ধরে ওয়াসেনাতকে।মাতাল করা কন্ঠে বলে,
-“ ভালোবাসি পরীজা।”
অরিত্রানের গভীর নিঃশ্বাস ওয়াসেনাতের হেজাব বেধ করে গলার পাশে এসে ধাক্কা খায়।ওয়াসেনাত শিউড়ে উঠে।অরিত্রানের দু’হাতের নিচে ওয়াসেনাতের দু’হাত।
-“ ভালোবেসে,সখী,নিভৃতে যতনে”
আমার নামটি লিখো-তোমার
মনের মন্দিরে।”
অরিত্রানের নেশাতুল কন্ঠ।ওয়াসেনাত চমকে পিছরে ঘুরে তাকাতে চায়।কিন্তু পারে না।অরিত্রান জাপ্টে নেয় আরো।ওয়াসেনাত ভারী অবাক গলায় বললো,
-“ আপনি তো দেখি গানও পারেন।কিন্তু কবিতা বানিয়ে ফেলেছেন।”
মৃদু একটা হাসি দিয়ে ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে ঘুরে দাড়াঁয়।অরিত্রান নিজের দু’হাত ওয়াসেনাতের দু’পাশে রাখে।বাতাসে তার সিল্কি চুলগুলো চোখের উপরে এসে পড়েছে।ওয়াসেনাত হাত বাড়িয়ে সেই চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দেয়।অরিত্রান ঠোঁটজোড়া কামড়ে হাঁসে।ওয়াসেনাতের উপরে একটু ঝুঁকে।বলে,
-“ তোমার প্রেম আমাকে সব করতে শিখিয়ে দিয়েছে।আমি বহুবার রাতের আকাশ দেখেছি।কিন্তু তুমি পাশে থাকলেই সে আকাশ ভিন্ন রূপ নেয়।বহুবার রোদের প্রখরতায় বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে নিয়েছি।কিন্তু তুমি পাশে থাকলেই সেই রোদকেও আমার গায়ে মাখাতে ভালো লাগে।চাঁদের সাথে দেখা আমার বহুবার হয়েছে।কিন্তু এর সৌন্দর্য্য তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।তুমি চাঁদের মত সুন্দর বলবো না।বলবো না তুমি সূর্যের মতো তেজি।তুমি তো সচ্ছ।এক প্রচণ্ড নেশা যুক্ত নীল সাগরের অথৈ পানির মত সচ্ছ তোমার এই চোখ।কাঁচের মত সত্যের প্রতিচ্ছবি ভাসে এই চোখে।সাদা মেঘের গুচ্ছ গুচ্ছ আবেগ জমে আছে তোমার এই নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায়।লালছে পরীরা ভীর জমিয়ে লজ্জায় রাঙা করে তোমার এই গাল।তুমি এক ঝমঝমে বৃষ্টি ভেজা সকালের মত সতেজ।যার ভাঁজে লুকিয়ে আছে আমার মরন।আর আমি বার বার তোমার মাঝে মরে তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।বহু বছর পেরিয়ে হাজারের কোটায় হাঁটতে চাই তোমার হাত ধরে।”
ওয়াসেনাত স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।অরিত্রানের চোখ গভীর।পরিবেশ নীরব।দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দে চারপাশ ভারী হচ্ছে।ওয়াসেনাত হঠাৎ জড়িয়ে নেয় অরিত্রানকে।অরিত্রান বেশ অবাক হয়।কয়েক সেকেন্ড চলে যায় বুঝতে।তারপর হেসে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।ওয়াসেনাত আবেগী কন্ঠে বলে,
-“ আপনি এতো সুন্দর করে কিভাবে কথা বলেন??”
-“ জানি না।হয় তো ভালোবাসি তাই।”
ওয়াসেনাত সরে এসে বলে,
-“ সারা জীবন এভাবেই ভালোবাসবেন??”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত নিজের হাতের ভাঁজে নেয়।তারপর বলে,
-“ ভালোবাসা একবার হৃৎপিণ্ডে জায়গা করতে পারলে তা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজের রূপ রঙ্গের কোনো পরিবর্তন করে না।”
___________________
শহরজুড়ে বৃষ্টি।শব্দ করে আকাশে চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ।নীল রেখা আঁকছে মেঘলা আকাশে।কালো হয়ে আছে পরিবেশ।হসপিটালের বেডের পাশের জানালাটা খোলা।পানি এসে পড়ছে ওয়াসেনাতের মুখে,গায়ে।নার্স কয়েকবার বন্ধ করতে চেয়েছে।কিন্তু সে দেয় নি।আজ তিন দিন জ্ঞান ফিরেছে ওয়াসেনাতের।দু’দিন সবাই তাকে নিয়ে মেতে ছিলো।এটা ওটা এগিয়ে দিতে ব্যস্ত সবাই।কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা!এই চোখ খোলা!যাকে নিয়ে সংসার করবে বলে এতো কষ্ট!!সে কই???বৃষ্টি বাড়ে।ওয়াসেনাত স্বপ্ন স্মৃতি নিয়ে কল্পনায় ভাসে।মেঘ গর্জন করে উঠে।দু’হাটু বুকের কাছে ভাজ করে বসে আছে ওয়াসেনাত।বৃষ্টির পানি গায়ে পড়তেই কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর।অরিত্রানের চিন্তায় সে মগ্ন।কোথায় সে??কেনো এলো না???নার্স বলেছে প্রথম দিনের পরে তাকে আর দেখা যায় নি।কেন???অরিত্রান তো এমন না???সে তো ওয়াসেনাতকে নিয়ে খুবই যত্নবান।তাহলে আজ এতো গুলো দিন একবারো এলো না কেন???ওয়াসেনাতের বুকে ঝড় বইছে।এক ঝড় বাহিরের ঝড়ের চাইতেও ভয়ংকর।কান্না পাচ্ছে খুব।একটা সময় সে কেঁদেই ফেলে।কান্নার শব্দ ভাসে সারা রুম জুড়ে।দরজায় শব্দ হয়।বাম হাতে চোখ মুছে নেয় ওয়াসেনাত।রিমি এসেছে।রিমির সাথে কথা বলেনা সে।কারন একবারো অরিত্রানের খোঁজ দিলো না তাকে।কেউই কিছু বলে না।এড়িয়ে চলে।যেন চিনেই না।কিন্তু কেন??রিমি পাশে চেয়ার টেনে বসে।হাসি হাসি মুখে বলে,
-“ কেমন আছেন মহারানী??আপনার অবস্থা এতো খারাপ ছিলো যে আমরা সবাই ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।আল্লাহ বাঁচাইছে।সবঠিক আছে।আজকে কেমন লাগছে??বল??”
ওয়াসেনাত মুখ ঘুরিয়ে নেয়।রিমি হাসে।
-“ ও রাগ করছস??কিন্তু ক্যান???”
-“ তুই জানছ না ক্যান??উনি একবারো আমাকে দেখতে আসে নি কেন??”
ওয়াসেনাতের রাগী কন্ঠ।রিমির মুখটা চুপসে যায়।তখনই রুমে ঢুকে ওয়াসেনাতের মা আর ফুফি।ওয়াসেনাতের পাশে এসে তার ফুফি বলে,
-“ আহারে হাতটা গেলো একদম।চিন্তা করিছ না বিয়ার ব্যবস্থা আমি করে দিমু।বাড়িতে অনেক গুলা মুদি দোকান আছে পোলার।বেশ বড়লোকই।”
ওয়াসেনাত কপাল কুঁচকে নেয়।বিরক্তি গলায় বলে,
-“ আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে এতো ভাবতে হবে না।”
-“ ভাবতে তো হবেই।এই মাইয়ার বিয়া নিয়া আমার ভাইটা চিন্তাই চিন্তাই শেষ হোই যাইতাছে।কে বিয়া করবো এখন তোরে??বড় লোক একটা পোলা তো পটাই ছিলি কিন্তু এই অচল হাতের কথা শুনার আগেই সব বুঝে ভাগছে।তবে পোলাটা মাশআল্লাহ বেশিই সুন্দর আছিলো।ছেলেরা তো রূপ দেখেই বিয়া করে।রূপ তো আছে কিন্তু নতুন যোগ হইছে খুঁত।খুঁত থাকা মাইয়াগো বিয়া সহজে হয় না।”
ওয়াসেনাত চমকায়।ওয়াসিকা রাগি গলায় বলে,
-“ আফা আপনি চুপ করবেন।এগুলো কেমন কথা।আমার মেয়ে খুঁত কই পেলেন আপনি??এসব একদম বলবেন না।”
-“ ডাক্তারের কথা আমি শুনছি।ত
কথা শেষ করার আগেই ওয়াসিকা চেঁচিয়ে বলে,
-“ আপনি চুপ করুন তা না হলে চলে যান এখান থেকে।”
ওয়াসেনাতের ফুফি মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে যায়।ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়ে আছে।সে বুঝতেই পারছে না তার ফুফি কি সব বলে গেলেন।সত্যি কি তার হাত আর কখনো ভালো হবে না??ওয়াসেনাত হাত নাড়াতে চায়।কিন্তু পারে না।কি থেকে কি হয়ে গেছে!!স্বপ্ন থেকে কঠিন বাস্তবে এসে পড়েছে সে।অরিত্রানকে খুব মনে পড়ছে।কই সে???
বিকেলের দিকে অরূপ এসেছে।ওয়াসেনাত তখন শুয়ে ছিলো।অরূপকে দেখে উঠে বসে।অরূপ পাশে বসে বলে,
-“ কেমন আছো??”
ওয়াসেনাত ছোট করে বলে,
-“ ভালো।”
ওয়াসেনাতের মনখারাপ দেখে অরূপ বলে,
-“ অরিত্রানের জন্য মন খারাপ??”
ওয়াসেনাত চকিতেই বললো,
-“ আপনি কি জানেন উনি কেন আসছে না?ফোন কেন ধরছে না??ম্যাসেজের রিপ্লাই কেন করছে না??”
অরূপ দীর্ঘ করে নিঃশ্বাস নেয়।ওয়াসেনাতের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ হাতের অবস্থা কেমন এখন??”
-“ আমি হাতটা নাড়াতে পাড়ি না অরূপ ভাই।”
অরূপ আহত চোখে তাকালো।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শান্ত গলায় বলে,
-“ ভালো হয়ে যাবে।চিন্তার কিছুই নেই।”
অরূপ উঠে যায়।ওয়াসেনাত বুঝে না।কেউই কিছু বলে না তাকে।কেন??দরজার কাছে আসতেই ওয়াসেনাত বললো,
-“ অরূপ ভাই আমি দুর্বল না।আমাকে বলবেন কি হয়েছে??আর উনি কোথায়??আমি জানি আমি বাদে সবাই যানে।বলবেন প্লিজ??”
অরূপ পিছিয়ে এসে ওয়াসেনাতের সামনে দাড়ায়।ওয়াসেনাতের চেহারায় করুন একটা ভাব।অরূপ বলে,
-“ অরিত্রানকে আমারা কেউই প্রথম দিনের পরে আর দেখিনি।সে গায়েব।তোমার যখন রক্তের খুব প্রয়োজন ছিলো তখনও তাকে দেখা গেলো না।এক কথায় সে সরে গেছে।হয় তো তার তোমাকে আর লাগবে না।আরে উনি অরিত্রান খান।কাকে রেখে কাকে ভালো লাগে বলা যায় না।তার উপরে তোমার হাত।”
ওয়াসেনাত চেতে যায়।রেগে চিৎকার করে বলে,
-“ অরূপ ভাই উনি মোটেও এমন না।”
-“ তাহলে কেমন শুনি??”
-“ আপনি উল্টাপাল্টা কথা কেন বলছেন??”
-“ আমি উল্টাপাল্টা কিছুই বলছিনা।ও এমনই।তোমার তো একটা হাত অকেজো।তাই তোমাকে এখন আর প্রয়োজন নেই তার।বিপদে পড়লে আসল মানুষকে চেনা যায়।”
-“ উনি মোটেও এমন না।উনি খুবই ভালো মানুষ।আর আমাকে ভালোবাসে।ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভালোবাসেনি।”
-“ ভালোবাসা!!আমারে কি তোমার বাচ্চা লাগে??আমি তোমার চাইতেও বেশি দুনিয়া দেখছি।এরা কোটিপতি লোক।এদের কাছে ভালোবাসা কিছুই না।এগুলো অভিনয়।হয় তো পছন্দ হয়েছে তাই বিয়ে পর্যন্ত নিতে চেয়ে ছিলো।এখন তো দেখি তার আগেই গায়েব।তাই তো ভাবী অরিত্রান খান আর ভালোবাসা!!!বড় অদ্ভুত!!”
অরূপের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি।
ওয়াসেনাত রাগে ফঁস করে উঠে।চোখে তার পানি টলমল করছে।রাগে শরীর জ্বালা করছে।বেশ রেগেই বললো,
-“ অরূপ ভাই আপনি আর আমার সামনে আসবেন না।আপনাকে দেখলেই আমার রাগ হচ্ছে।সামনে থেকে যান।”
ওয়াসেনাত মুখ ঘুরিয়ে বালিশে রাখে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সে।অরূপ যাওয়ার আগে আবার বলে,
-“ ওই ঠকবাজের জন্য তুমি কাঁদছো??তোমরা মেয়েরা সব পারো।কিন্তু ছেলেটা ভালো না আমি বলছি।মিলিয়ে নিয়ো।”
দরজাটা রাগে শব্দ করে বন্ধ করে অরূপ।মেয়েটা তো অরিত্রান ছাড়া কিছুই বুঝে না।তারও রাগ হচ্ছে এখন।
কেটে গেছে ১০ দিন।ওয়াসেনাত এখন অনেকটাই সুস্থ।কিন্তু হাত নাড়াতে পারে না।এই ১০ দিনেও অরিত্রান দেখতে আসেনি।খোঁজ নেয় নি।কল করে নি।প্রতি দিনের মত আজও বাম হাতে ফোন টিপে কল করে ওয়াসেনাত।কিন্তু পেলোনা।বার বার কল করে।মোবাইল হাঁপিয়ে যায়।কিন্তু ওয়াসেনাতের বাম হাত হাঁপায় না।সে কল করেই যায়।কোন না কোন দিন তো ধরবেই।আবার ভাবে যদি জীবনেও না ধরে??ওয়াসেনাতের ওজন কমেছে অনেক।শুকিয়ে গেছে মুখ।চোখের নিচটায় হালকা কালো ছাপ।চোখ অপেক্ষায় থাকে দরজার দিকে তাকিয়ে।যেই রুমে আসে তাকেই জিজ্ঞেস করে অরিত্রানের কথা।এমন কি তার বাবাকেও জিজ্ঞেস করেছে।সবাই একটা কথাই বলে,না কেউ দেখেনি তাকে।এমন কি রিমনও না।ওয়াসেনাতের গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে অপেক্ষার পানি।এ কয়েক দিনে এতো এতো কেঁদেছে যে তার চোখে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।সে মোটেও বাকি সবার মতো অরিত্রানকে অবিশ্বাস করছে না।সে চিন্তায় আছে অরিত্রানের কোন বিপদ হলো না তো??ওয়াসেনাতের বুক কাঁপে।ভয়ে হৃৎপিণ্ড লাফায়।অরিত্রানের সাথে কি তার আর দেখা হবে না??ওয়াসেনাতের বুকের অংশ চোখের পানিতে ভিঁজে যায়।ভালোবাসায় এতো কষ্ট!জানা ছিলো না তার।এই কষ্টে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।নিঃশ্বাস বার বার থামছে।
#চলবে…
অনেকদিন পরে গল্প দিলাম।সরি তার জন্য।আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম।টানা ৪দিনের মত জ্বরে ভুগেছি।অবস্থা কেমন হবে বুঝতেই পারছেন।গল্পটা লিখতে বসে আমার অবস্থা আরো খারাপ।যাই হোক দিতে পেরেছি এতেই ভালো লাগছে।সরি অপেক্ষা করানোর জন্য।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
@হাফসা______