পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 46

আজকের সূর্য একদম তেজি।গরমে মানুষের অবস্থা খারাপ।ঘামের সাথে অসহ্য একটা অনুভুতি।গ্রীষ্মের দুপুর মানেই রোদ।বৃষ্টি হয় না অনেক দিন।আকাশ সাদা হয়ে আছে।সূর্যের তেজে।ঠিক একুই ভাবে তেজি হয়ে আছে রিমনের ঘর।অনেক সময় নিয়ে রিমন দাঁড়িয়ে আছে।আর রিমি তার সামনে একটা একটা করে কাঁচের প্লেট ভাঙ্গছে।চিৎকার চেঁচা মেঁচি করছে।রিমন জানেনা মেয়েদের ঠান্ডা কিভাবে করতে হয়।রিমন কিছুতেই রিমিকে থামাতে পারছে না।রিমি তো কথাই শুনছে না।সে নিজের মত ভাঙ্গচুড় করছে।কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি!!রিমন বার বার বলছে,
-“ এবার থামো প্লিজ।এতো গুলো প্লেট ভেঙে দিলে দেখ।ইসশ্!!”
রিমি চোখ গরম করে তাকায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“ আমার চাইতে প্লেট বড় হলো তোমার কাছে??তোমার মত লোকের সাথে আমি আর সংসার করবো না।যার কাছে আমার চাইতে প্লেটের দম বেশি তারে আমার দরকার নাই।”
রিমি আর একটা প্লেট হাতে তুলে নেয়।ধাম করে নিচে ফেলে দেয়।রিমন গলার স্বর নিচু করে বলে,
-“ তোমার চাইতে বেশি আমার কাছে আর কিছুই না।”
-“ মিথ্যা বলবা না।এই তো কিছুক্ষণ আগেও প্লেট নিয়ে দুঃখের শেষ ছিলো না।ইশশশ্ বলতে বলতে শেষ।”
রিমন বেক্কেল বনে কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে ।তারপর বলে,
-“ আরে আমি কি বলতে বলতে শেষ করার মতো কিছু বলছি।তুমি চেত কা।”
রিমি রেগে তেড়ে আসে।বলে,
-“ কি কি আমি চেতি??তুমি সাধু???আর তোমার ওই বন্ধু??সেও সাধু??শুধু অসাধু আমি আর আমার ওয়াসু তাই তো??”
রিমন এবার সহস নিয়ে রিমির সামনে দাড়াঁয়।করুন গলায় বলে,
-“ অরিত্রান কোথায় আমি সত্যি জানি না।এই ছয় মাস ওরে সব জায়গায় খুঁজেছি কোথাও নেই সে।আমি কিছুই জানি না।”
-“ বিশ্বাস করি না।তুমি জানো কিন্তু বলছো না।তুমি জানো এই ছয়মাসে ওয়াসেনাতের কেমন অবস্থা হয়েছে??তুমি তো সবই জানো তাহলে কেনো বলছো না??”
-“ আরে ভাই আমি যদি নাই জানি তাহলে কিভাবে বলবো??”
রিমি টেবিল থেকে গ্লাস হাতে নেয়।ঠাসস করে একটা একটা করে ছুঁড়ে দেয়।তার মতে অরিত্রান কোথায় এটা রিমন জানে।অরিত্রান বিগত ছয়মাস লাপাত্তা হয়ে আছে।তাকে কেউ দেখেনি।খুঁজে চলেছে সবাই।কিন্তু পাচ্ছে না।রিমন পাশের সোফায় বসে পরে।তার একদম ভালো লাগছে না।অফিসের অনেক কাজ।অরিত্রান গায়েব??কোথায় গেলো সে??জানে না??সে সত্যি জানে না অরিত্রান কোথায়।

________________
তৌফিক সাহেবের শরীর ভালো নেই।হার্টের প্রবলেম বেড়েছে বহু গুন।মেয়ের চিন্তায় তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।ওয়াসিকা চায়ের কাপটা টেবিলের উপরে রেখে সোফায় বসলো।তৌফিক সাহেব খবরের কাগজ পাশে রেখে ওয়াসিকার দিকে তাকালেন।চায়ের কাপ তার হাতে না দিয়ে পাশে রাখার কারন যানতে চাইলেন।ওয়াসিকা চিন্তিত গলায় বললেন,
-“ অরিত্রানের কোন খবর আছে তোমার কাছে??”
তৌফিক সাহেব নিজেই উঠে দাড়ালেন।একটু দুর থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে আবার জায়গায় এসে বসলেন।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
-“ না নেই।আমার কাছে যদি থাকতো আমার মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার অভিযোগে ঠাটিয়ে কয়েকটা চড় গালে বসিয়ে দিয়ে আসতাম।”
-“ কোথাও কি আমাদের দোষ আছে??”
ওয়াসিকা অনমনেই বললো।তৌফিক সাহেব চমকালেন।বেশ চিন্তা করে বললেন,
-“ আমি তো সবই মেনে নিয়ে ছিলাম।তাহলে আমাদের দোষ কোথায়??তবে হতে পারে আগের কোনো কারনের প্রতিশোধ নিচ্ছে??”
-“ অরিত্রান তেমন না।ও ওয়াসেনাতকে খুবই ভালোবাসে।তাহলে কেন হারালো বলো তো??আমার মেয়েটা!!”
ওয়াসিকার গলা ভারী হলো।চোখের কোন বেয়ে নামলো পানি।নাকটা লাল হয়েছে।তৌফিক সাহেবও চিন্তিত।তাদের একমাত্র মেয়ের জীবন সুন্দর করতে চেয়েছিলো।কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেছে।একটা সময় সে নিজেই অরিত্রান থেকে তার মেয়েকে দূরে রাখতে চেয়েছিলো।এখন সে নিজেই চায় অরিত্রানকে।খুঁজে চলেছে অরিত্রানকে।
-“ তোমার চা ঠান্ড হয়ে যাচ্ছে।”
তৌফিক সাহেব চশমা ঠেলে চায়ের কাপের দিকে তাকায়।কোথাও কি তিনি দোষী??সেটাই মিলাচ্ছে তিনি।
-“ ওয়াসেনাত এসেছে??”
-“ না এখনো আসে নি।”
-“ হাতের অবস্থা এখন কেমন??”
-“ তেমন ভালো না।আগের মতোই।কিছু ধরতে পারে না।হাত কাঁপে।”
কথার মাঝে ওয়াসেনাতের ফুফি আসে।মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-“ তাই তো বলছি বিয়ে দিয়ে দেও।কম ছেলে তো নিয়ে আসি নি।ভালো ভালোই ছেলে ছিলো।কিন্তু ভাইয়া তোমার পছন্দই হয় না।কেন বলো তো??তোমার মেয়ে কি আগের মতো আছে যে তার জন্য রাজকুমার আসবে??”
-“ ফারিয়া(ফুফির নাম)তোকে কতবার বলবো আমার মেয়েকে নিয়ে এসব উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করতে।আমার মেয়ের জন্য রাজকুমার আসুক বা না আসুক তার বাবা রাজা তো আছেই।তোরে এতো ভাবতে হবে না।নিজের মেয়ের কথা ভাব।”
ফারিয়া রাগে কটকম করে তাকালো।ঝাঝালো গলায় বললো,
-“ কি যুগ চলে আসছে ভালো করতে চাইলেই দোষ।আমি কি তোমার মেয়ের খারাপ চাই??আমি তো তার ভালোই চাই।চাই একটা ভালো পোলার সাথে সংসার করুক।আর তুমি আমারেই এতো কথা শুনাই দিলা।”
ফারিয়া ন্যাকা করে কান্না শুরু করে।তৌফিক সাহেবের কাশি উঠে।ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।সব কথাই তার কানে গেছে।এবং যায়।তার ফুফি এই ছয় মাস না না ভাবে বুঝিয়ে চলেছে তার হাত নেই মানে তার জীবন নেই।সে একপ্রকার প্রতিবন্ধী!!!কেউ তাকে বিয়ে করতে চায় না??তাই তো অরিত্রান চলে গেছে।ওয়াসেনাত বিশ্বাস করতে চায় না।কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বুঝায় বাস্তবতা কঠিন।রাস্তায় লোকে নানা কথা বলে,কলম ধরতে হাত কাঁপে।হাত ঘামে।ডান হাতের সব কাঁটা রগ ড্যামেজ হয়েছে।এই হাত দিয়ে সে তেমন কিছুই তুলতে পারে না।একটা কলমও না।জীবনে নতুন করে বাঁচতে শিখছে সে।কলম এখন বাম হাতে তুলে নিয়েছে।কিন্তু তবুও সে পারছে না এই দুনিয়ার সাথে।এখানের মানুষগুলো তাকে সাহস দিতে নয় সাহায্য দেখাতে চায়।যেটা সে চায় না।কিছুতেই না।আর বাবা মা!!!ওয়াসেনাত বাবাকে পানি এগিয়ে দেয় বাম হাতে।পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।মৃদু একটা হাসি দিয়ে ফুফির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ ফুফি তোমার তো আমার বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তা না??যাও এখন থেকে প্রথম যে ছেলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে আমি তাকেই বিয়ে করবো।তবুও প্লিজজ আমার বাবার চিন্তা বারাবেন না।একটা মেয়ের জন্য যদি বিয়েই সব হয় তাহলে আমি ও বিয়ে করবো।যান নিয়ে আসেন পাত্র।”
ফারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়।ওয়াসিকা রেগে মেয়ের দিকে তাকায়।বলে,
-“ তুমি তো জানো কেমন ছেলে নিয়ে আসবে??সবচাইতে বাজে ছেলেগুলোই তোমার জন্য নিয়ে আসবে তোমার ফুফি।এটা তো জানো??তাদের কিভাবে বিয়ে করবে তুমি??”
ওয়াসেনাত শান্ত চাহনি দিয়ে মায়ের দিকে তাকায়।ডান হাত কাঁপিয়ে পানির গ্লাসের নিচে রাখে।পানি খেতে খেতে বলে,
-“ মা গরম অনেক বেশি।বাহিরে তো আরো বেশি।”
-“ এগুলো আমি জানতে চাই নাই।তোমার ফুফি যদি এখন মদ খোর ছেলে খুঁজে নিয়ে আসে তুমি বিয়ে করে নিবে??”
ওয়াসেনাত কিছু বললো না।উঠে গেলো।ওয়াসিকার মাথা গরম হচ্ছে।মেয়েটা কেমন শান্ত হয়ে গেছে।একদম চুপচাপ।
মেয়েকে যত দেখে তিনি অবাক হয়।তার ছোট মেয়ে মুহূর্তেই

বড় হয়ে গেছে।কিন্তু তিনি তো বড় হোক এটা চায় না।বাবা মা সব সময় বাচ্চাদের ছোট দেখতে চায়।ঠিক ততটুকু ছোট ,যতটুকু ছোট হলে তাদের নিরাপদে লুকিয়ে রাখা যায়।
_______________________
রিমনের আজ অনেক দিন পরে শৈকতের কথা মনে পড়েছে।ছেলেটা লাপাত্তা বললেই চলে।যদিও কল করলে বা দেখা করতে চাইলে এসে হাজির হয়।তবুও তেমন একটা দেখা যায় না।আগে তো অরিত্রান মাঝে মাঝে কাজের কারনে ডেকে পাঠাতো।কিন্তু ইদানিং আর আসে না।রিমন চেয়ারে বসে বসে ক্লু খুঁজে চলেছে।অরিত্রানের সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিলো হসপিটালে।খুবই চিন্তিত ছিলো সে।কেঁদে কেঁদে নিজের চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিলো।যেই মেয়েটাকে সে জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে তাকে এতো কষ্ট দিয়ে সে দূরে কেন??
-“ মাঝে মাঝে সুখেরা কষ্টের হাত ধরে আসে মিষ্টার রিমন আহমেদ।”
কেঁচের গ্লাস ঠেলে ভিতরে আসে শৈকত।ঠোঁটে একটা অদ্ভুত হাঁসি ঝুলিয়ে চেয়ার টেনে বসে।তারপর বলে,
-“ আমাকে এতো ঘটা করে ডেকে পাঠালেন কেন?আমাকে তো আর প্রয়োজন নেই জানতাম।তাহলে এভাবে ডাকার পিছনের কারন কি???”
-“ সেটাই তো আমারও প্রশ্ন।তোমার কাজ তো শেষ জানতাম।কিন্তু তুমি তো দেখছি শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছো না।”
শৈকত ভ্রু কুঁচকে নিলো।রিমন হাসলো।শৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ মজা করছিলাম।কেমন আছো??অরিত্রানের সাথে তুমিও গায়েব হয়ে গেলে তাই ভাবলাম একটু মুলাকাত করে নি।কি খবর বলো??”
-“ ভালোই।
রিমন চেয়ার ঘুরিয়ে সামনে আসে।শৈকতের দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,
-“ অরিত্রান কই??ওকে মরিয়া হয়ে খুঁজছি আমরা।সবচাইতে বড় কথা ওর জানের জীবন এলোমেলো হয়ে আছে।ও কি জানে না??কোথায় সে??”
শৈকত কাচুমাচু করে বললো,
-“ আমি কিভাবে জানবো??আমি তো জানি না।”
-“ তাই না কি??তাহলে অরিত্রান গায়েব শুনে চমকালে না কেন??বোকা পেয়েছো তুমি??অরিত্রান কোথায় বলো??তা না হলে তুমি জিন্দা যেতে পারবে না।”
-“ আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।আমি জানি না সে কোথায়।”
-“ জানো তো তুমিই।আর আমাকেও নিয়ে যাবে তার কাছে।নিয়ে যেতেই হবে।”
শৈকত ঘামছে।রিমন এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়েছে।হাসতে হাসতে নিচে গাড়ি বের করতে বলেছে।এবার দেখবে অরিত্রান যায় কোথায়?
________________________
-“ আমি কি তোমার রূপের মায়ায় পরেছি নাকি গভীর অন্তরের নাজুকতায় মরেছি জানি না”
ওয়াসেনাত চমকে উঠে।স্বপ্নেও কথাটা তার কানে বাজে।ভালোবাসা কি এমনই?যা একবার হলে আর পিছাই ছাড়ে না।ওয়াসেনাত চাদর ঠেলে উঠে বসে।কয়েক মুহূর্ত বসে উঠে দাড়াঁয়।মাথার লম্বা চুলগুলো সরিয়ে পিঠে রাখে।বারান্দায় এসে দাড়ায়।আকাশের দিকে তাকিয়ে ওয়াসেনাত আরেক ধফায় চমকায়।
আকাশটা আজ ওয়াসেনাতের দখলে।হঠাৎ করেই তার প্রিয় মেঘলা আকাশ হয়েগেছে।এই মাসে একবারো যে আকাশে বৃষ্টি নামে নি সে আকাশে আজ মেঘজমেছে!মজার ব্যাপার তো।ওয়াসেনাত নীল চোখ মেলে মেলে পরিবেশ দেখে।ডান হাতের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে।হাতে কাট কাট ৪টা দাগ কালো হয়ে আছে।এই হাতটাই যেনো তার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে।যদি সেদিন তেমনটা

না হতো,যদি না হতো!!হয় তো ভাগ্যই অন্যরকম হতো।সবগল্প রূপ কথার মতো কেন হয় না??কেন রাজকুমার এসে চলে যায়??কেন ব্রেকাপ নামক বাক্য তৈরি হয়েছে??কেন জীবনে প্রেম হয়??
-“ আমি অপেক্ষায় চোখ রেখেছি আকাশে।আপনি আসবেন বলে মনের দরজা খোলা রেখেছি,আপনি আসবেন বলে আজও পথ চেয়ে আছি,জানি আসবেন।দেখেন সময় না পেরিয়ে যায়।অপেক্ষায় না বিরক্তি চলে আসে।আপনার জায়গা যেন না দেওয়া লাগে।”
-“ নিজে নিজে কি এতো বকবক করছো তুমি??”
ওয়াসেনাত পিছনে ঘুরে তাকায়।ওয়াসিকা আজ অন্যরকম খুশি।মায়ের মুখের হাসি দেখে ওয়াসেনাত অবাক হয়।এতোটা খুশি হওয়ার মতো সকাল তো আজ না।তাহলে এতো খুশি কেন??ওয়াসেনাত মায়ের পাশে এসে দাড়ায়।বিড়বিড় করে বলে,
-“ সুন্দর।
একটু থেকে আবার বলে,
-“ তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর লাগে আম্মু।একদম স্বপ্নে আঁকা রানীর মত।”
মেয়ের কথায় ওয়াসিকা হাসে।বলে,
-“ আমার মেয়েও রাজকুমারীর মতো।আজ একটা বিশেষ দিন।অরূপের বাবা আর সে আসবে।আমার মনে হয় বিয়ে কথা বলতে আসবে।”
ওয়াসেনাত রেগে তাকায় মায়ের দিকে।তারপর কি যেন ভেবে বলে,
-“ বিয়ে করা কি এতো প্রয়োজন??”
-“ সব মেয়েকেই বিয়ে করতে হয়।তোমার বাবা অসুস্থ।আমিও।আমাদের কিছু হলে তোমাকে কে দেখবে??”
-“ এই কমন কথাগুলো আর কতবার বলবে??এবার চুপ যাও প্লিজজ।আমি এক জীবনে একজনেরই হবো কথা দিয়েছি।তাই সরি।”
-“ সে তো খবর না নিয়েই গায়েব হয়েগেছে।”
ওয়াসেনাত চুপ করে যায়।চোখে এখন আর পানি টলমল করে না।সে চুপ করে কিছুসময় ভেবে বলে,
-“ আচ্ছা তোমাদের কথাই হবে।বিয়ে করে নিবো এবার।করে নিবোই।”
____________________
গাড়িটা থেমেছে শৈকতের বাড়ির সামনে।শৈকতের অবস্থা ঘামে ভিঁজে একাকার।অরিত্রানকে খুঁজতে তার ঘরে এসেছে রিমন।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।রিমন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে।কিন্তু শৈকত নামছে না।তাকে টেনে বের করে দাড় করায় রিমন।তারপর বলে,
-“ অরিত্রান কই??কোন রুমে??চলো দেখিয়ে দিবে।”
শৈকত ভীতু।মনে মনে বলে,সব সময় আমাকেই কেন সবাই ফাঁসিয়ে দেয় আল্লাহ্।আমার কি দোষ!!বাঁচাও।
-“আল্লাহ ততক্ষণ বাঁচাবে না যতক্ষণ অরিত্রানের খবর দিবে না।চলো তো!!
ঘরের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।দেখেই রিমন চমকালো।অরিত্রান এখানে আছে সে নিশ্চিত।এই অরিত্রানকে খুঁজে বের করতে তার ছয় মাস লেগেছে।এখন পেলেই হয়।মদের বোতলটা ঘুরে ঘুরে এসে সামনে পড়ে রিমনের।রিমন হাতে তুলে নেয় বোতল।ধিরে ধিরে হেঁটে যায়।ভিতরের অবস্থা ভালো না।কেমন অন্ধকার!!সোফার উপরে উপুত হয়ে শুয়ে আছে কেউ।হাত থেকে টুপটুপ করে র

ক্ত পড়ছে।ভয়ংকর লাল রক্তে নিচের ফ্লোর লাল হয়ে আছে।
____________________
ওয়াসেনাতের মাথায় ঘোমটা।গায়ে আকাশি রঙের গাউন।মুখে কোন সাজ নেই।সে দাড়িয়ে আছে তার মায়ের পাশে।তার ডান পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে অরূপ।তৌফিক সাহেবের মুখে রাগ।তার ইচ্ছে করছে অরূপের গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে বলতে,
-“ মেরুদন্ড নেই না কি??এটা ভালোবাসা??”
না এই ছেলে তার মেয়েকে ভালোবাসেই না।ভালোবাসলে কখনোই হাতের ত্রুটির কারনে তাকে ছাড়তে পারতো না।নিজেকে রেখে অন্যকারো জন্য ওয়াসেনাতের কাছে আসতো না।অরূপ এসেছে।সাথে তার বাবা।কিন্তু নিজের জন্য না।অরূপের বাবা চায় না ওয়াসেনাত তাদের বাড়ির বউ হোক।কারন তার হাতের সমস্যা।অরূপও নিজের বাবার কথার বাহিরে কিছুই বলেনি।তৌফিক সাহেব অনেক সময় নিয়ে চুপ।ওয়াসিকা তো বাকরূদ্ধ।কি ভেবেছিলো আর কি হলো?অরূপের বাবা হেসে উঠে বললো,
-“ আকাশ কিন্তু মোটেও খারাপ ছেলে না তৌফিক।তুমি আমার বন্ধু তাই তোমার মেয়ের জন্য আমি নিজের ভাইয়ের ছেলের বিয়ের কথা বলতে এসেছি।ছেলে হিসেবে আকাশ ভালো।সমস্যার কথা বলতে গেলে ওয়াসেনাতেরও কম নেই।সে তুলো নাই আকাশের তো তেমন সমস্যাই নেই।তাই এগুলো কোন ব্যাপার না।কি বলো??”
তৌফিক সাহেব বুঝতে পেরেছেন তার বন্ধু তার সাথে বহু বছরের শত্রুতা উদ্ধার করতে এসেছে।কোনো একসময় অরূপের ফুফিকে তিনি রিজেক্ট করেছিলেন।হয় তো তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে।তিনি তো সব ভুলেই গেছিলো।কিন্তু অরূপের বাবা ভুলেনি।ভালোই হয়েছে।তাই তো অরূপের মতো ছেলেকে তিনি চিনতে পেরেছেন।তৌফিক সাহেব রেগে বললেন,
-“ আমার মেয়ের বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই আগেই বলেছি।তবুও তুমি কেন আমার বাসার দরজা পর্যন্ত এসেছো??আউট!!”
-“ আরে চিৎকার করছো কেন??”
রিমি মাত্র এসেছে।নিজের বাবার এমন কাজ দেখে সে প্রচন্ড লজ্জিত।তার বাবা তো সব সময়ই তৌফিককে পছন্দ করতো।এমন কি এয়াসেনাতকে খুব পছন্দ করতো তাহলে আজ এমন কেন করছে??আর নিজের ভাইয়ের উপরে রিমির সত্যি রাগ লাগছে।তার জানা মতে অরূপ ওয়াসেনাতকে ছোট থেকে ভালোবাসতো।এটা কেমন ভালোবাসা ??যে বিপদের সময় হাত ধরতে পারে না।তৌফিক সাহেব চিৎকার করে বললো,
-“ আমার মেয়েকে খাওয়ানোর মতো টাকা আল্লাহ আমাকে দিছে।তুমি আর ফারিয়া তুই তোদের কারো আমার মেয়েকে নিয়ে ভাবতে হবে না।যেতে পারছ তুই।”
ওয়াসেনাত মাঝ পথে বললো,
-“ মিষ্টার আকাশ আপনার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।আপনি কি একটু আসবেন??”
আকাশ ছেলেটা শ্যামলা।চিকনা লম্বা।চোখগুলো কালো সুন্দর।পেশায় ডাক্তার।ছেলে হিসেবে খারাপ না।আকাশ হাসি হাসি মুখে উঠে দাড়ায়।তৌফিক সাহেব সহ সবাই অবাক।অরূপ চমকে তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে।ওয়াসেনাত হাটে আগে আগে আকাশ পিছনে পিছনে।রুমের কাছে এসে ওয়াসেনাত আগে ঢুকতে দেয়।তারপর নিজেও ঢুকে পরে।আকাশ ঘুরে ঘুরে রুম দেখে।তাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে তার রুমটা পছন্দ হয়েছে।ওয়াসেনাত চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“ আপনি কি সব সময় হাসেন???”
আকাশ আরো একটু হেসে বললো,
-“ আমার চেহারাই এমন।”
ওয়াসেনাত কথা না বাড়িয়ে নিজের উড়নার নিচ থেকে ঢেকে রাখা হাতটা বের করে আকাশের চোখের সামনে রেখে বলে,
-“ আমি এই হাতটা চালাতে পারি না।আপনি কি জানেন??”
আকাশ যেন একটু অবাক হলো।তার জানা মতে মেয়েরা নিজেদের দূর্বলতা লুকাতে পছন্দ করে।তাহলে এখানে উল্টা কেন হচ্ছে।সে বললো,
-“ হুম জানি।”
-“ তবুও আমাকে বিয়ে করতে চান??” ওয়াসেনাতের অবাক গলা।
-“ হুম করতে চাই।আমার আপনাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ।চাচ্চুদের বাসায় অনেক দেখেছি আপনাকে।তাই তো চাচ্চুকে বলেছি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
লাজুকে হেসে বললো আকাশ।
-“ আমার কিন্তু একজনের সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছে।সে অরিত্রান খান।”
-“ জানি।এটাও জানি আপনার হাতের সমস্যার কারনে সে আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে।”
ওয়াসেনাত রেগে বললো,
-“ মোটেও না।আমার অরিত্রান এমন না।ও যদি সুস্থ থাকে বিয়ের আগেই আসবে।আমার মনে হয়ে ও প্রবলেমে আছে।”
-“ আপনি তো দেখছি তাকে খুবই ভালোবাসেন।” আকাশের কন্ঠে অবাকতা।
-“ তাই তো বলছি এতো সব যেনেও বিয়ে করবেন??আমার অরিত্রান যদি কবুল বলার মুহূর্তেও এসে হাত ধরতে চায় আমি তার হাত ধরতে বাদ্ধ।সব যেনে আশা করি আপনি আর বিয়ে করবেন না??”

আকাশ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে নীরবে ভাবে।তারপর কি যেন মনে করে বললো,
-“ তবুও বিয়ে করতে চাই।যদি কবুল বলার পরে আসে তখন তো আপনি আমার হয়ে যাবেন।”
ওয়াসেনাত অবাক হয়ে ভাবে এ আবার কোথেকে এসে পড়ছে।সে তো ভেবেছিলো বিয়ে ভেঙে দিবে।কিন্তু এতো উল্টা সব মেনে নিচ্ছে।যদিও বিয়ে সে নিজেই করতে চায়।অরিত্রানকে সামনে নিয়ে আসতে হলে বিয়ে করতে হবে।তাই বলে যে তাকে এতোটা পছন্দ করে তাকে সে করতে পারবে না।এতে তো ঠকানো হবে।তাই আবার বললো,
-“ আপনি কি আমার রূপের মায়ায় পড়েছেন??তাহলে তো বলবো বিয়েটা না করাই উঁচিত।আপনি বরং সবাইকে না বলে দিন।আমি যে দেখতে মোটামুটি ভালো আমি জানি।তাই আপনি হ্যা বলছেন।রূপ মায়া কেঁটে যাবে কয়েকদিন পরে।তখন আফসোস হবে।আপনি বরং এখনই না বলে দিন।”
ওয়াসেনাতের কথা শুনে আকাশ চোখ তুলে তাকায়।তারপর বলে,
-“ দেখেন পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ রূপের প্রেমে পরে।প্রথমেই একটা পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষন করে নারীর রূপ।সেই আকর্ষন ধীরে ধীরে গভীর হয়।জন্ম হয় ভালোবাসার।এখন আপনি বলতে পারেন রূপটাই কি সব?না।দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে সব।রূপ শুধু গায়ের রং না।প্রকৃত রূপ হচ্ছে চেহারার ভাবমূর্তি।এই যেমন আপনার রূপ এই নীলাভ চোখে ।এই পাতলা লাল ঠোঁটে।এই লাল লাল গালে।হয় তো আপনার কাছে আরো রূপের উৎস আছে।আমি হয়তো সেই সব রূপের প্রেমেও পড়তে পারি।বলাতো যায় না।তবে বলবো আমি প্রেমে পড়েছি।হয়তো প্রতি মুহূর্ত সে প্রেম বাড়বে।হয় তো বেড়েই চলেছে।তাই তো আপনার একটা হাতের দূর্বলতাও আমাকে ছুঁয়ে যেতে পারছে না।আমি সেটাকে নজর আন্দাজ করছি।ভালোবাসা তো এমনই।আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি প্রথম দেখায় আপনার ভালোবাসায় জড়িয়ে যাচ্ছি।গভীর হচ্ছে তা প্রতি মুহূর্তে।আর ভালোবাসা যখন গভীর হয় তখন ভালোবাসার মানুষের ত্রুটি,দোষ,সবই ভালো লাগতে শুরু করে।এই যেমন আমার ভালো লাগছে।প্রথম ভালো লাগাটা ছিলো আপনার রূপ।যার মাধ্যমে আমি প্রেমে পড়েছি।আর এখন আমি আপনার ত্রুটির প্রেমে পড়ছি যার অর্থ ভালোবাসা।”
ওয়াসেনাত অবাক।কি করতে নিয়ে এসেছে আর এই লোকতো প্রেমের নতুন অধ্যায় পড়াচ্ছে।ওয়াসেনাতের চোখ ভিঁজে উঠে।অনেক দিন পরে তার আবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।লোকটা কি সুন্দর করে ভালোবাসা বুঝিয়ে বলে।যদিও সবার চাইতে বেষ্ট অরিত্রান তার চোখে।ওয়াসেনাত চোখ মুছে বলে,
-“ আপনি ভুল করছেন।এভাবে ভালোবাসায় জড়িয়ে যাচ্ছেন কেন??আমার অরিত্রান !!!!”
কথার মাঝ পথে থামিয়ে আকাশ বললো,
-“ বিয়ের আয়োজন করতে বলি।আমি তো মনে প্রানে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি বিয়ে করলে আপনাকেই করবো।”
ওয়াসেনাতকে অবাক করে সে উঠে দাড়ায়।কিছু দুর যেয়ে পিছনে এসে বলে,
-“ অরিত্রানকে আমি আগে অনেক বড় বদ্ধিমান লোক মনে করতাম।কিন্তু এই মুহূর্ত থেকে বোকা মনে করছি।যে এতো সুন্দর হিরা পেয়ে হারায় সে বোকা।আমি নিজে তেমন বোকামি করতে চাই না।তাই বিয়ে মোবারক।”
ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়ে আছে।এটা কি হলো??এটা তো সে ভাবে নি।এখন কি হবে।সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে???বিয়ে!!!!অরিত্রান আসবে তো!”
#চলবে…
৪৫পর্বের উপরের অংশ নিচের অংশের আগের।হাত কাঁটার আগে তাদের এনগেজমেন্ট হয়েছিলো।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
@হাফসা_______