পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 44
___________________________
বাড়িটা সুন্দর।দারুন দেখতে।সামনে বিশাল জায়গা জুড়ে মাঠ।ওয়াসেনাত এক কোণায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।একটু আগেই এসেছে তাড়া।রিমির বিয়ের জন্য এই কমিউনিটি সেন্টার দুই দিনের জন্য বুক করা হয়েছে।রিমির সাথে রিমনেও অনুষ্ঠান এখানে হবে।গায়ে হলুদ এখানে হবে।বিয়েও।বিয়ের আগে রিমন নিজের বাড়ি চলে যাবে।রিমনের চাচা চাচি এসেছে।সাথে কিছু অত্নিয়।অরিত্রান পাশ কেটে যাওয়ার সময় ওয়াসেনাতকে দেখে।দাড়িয়ে পরে কিছু সময় চুপ থাকে।তারপর রেগে বলে,
-“ কয়বার কল করে ছিলাম??ফোন কই থাকে তোমার??”
ওয়াসোনাত বেশ মনোযোগ দিয়ে সব দেখছিলো।অরিত্রানের কথায় চমকায়।পিছরে ফিরে তাকায়।অরিত্রানের গায়ে সাদা গেঞ্জি।কালো ট্রাউজার।ওয়াসেনাত পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয়।তারপর বলে,
-“ কয়বার আর কল করেছেন??১০০বার তো আর করেন নি।এমন চেঁচিয়ে বলার কিছু কি হয়েছে?”
-“ ১০০ বার না ২৩০ বার কল করেছি।বলতে গেলে সারা রাত কল করেছি।আপনি কোথায় ছিলেন ম্যাডাম??এই তোমাকে তোমার হিটলার বাবা বাসায় নিয়ে মারধোর করেনি তো??এই মেরেছে কি??”অরিত্রানের উত্তেজিত গলা।ওয়াসেনাত হাসে বলে,
-“ আমার বাবা আমাকে কখনোই মারে নি।ছোট থেকে আজ পর্যন্ত।আর কাল কিছুই বলেনি।”
অরিত্রান অবাক হলো।নিজের গাল ঘঁষে বিড়বিড় করে বললো,
-“ নিজের মেয়েকে মারে নি আর আমার গাল লাল করে দিয়েছিলো??অশ্চর্য্য!!”
-“ কিছু কি বলছেন??”ছোট চোখে তাকিয়ে বললো ওয়াসেনাত।
অরিত্রানের হাতের পেকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“ এটা তোমার।আর সত্যি কিছুই বলেনি??”
-“ মিথ্যা বলবো কেন?বাবা কিছুই বলেনি।আপনি এখানে কেন?”
-“ তোমাকে দেখতে এসেছি।এই পেকেটের জিনিসটা কাল পড়বে।”
কৌতুহলি গলায় ওয়াসেনাত প্রশ্ন করে,
-“ কি আছে এতে??”
-“ খুলেই দেখো।”
অরিত্রান কথাটা বলেই চলে যেতে চায়।আবার পিছিয়ে এসে বলে,
-“ তোমার বাবার পক্ষে যেয়ে আমার হাতটা ছাড়িও না প্লিজ।আমার সাথে থাকবে তো?”
ওয়াসেনাত হাসে।বলে,
-“ আমি আপনাই থাকবো।বাবা মেনে নিয়েছে।আপনার সাথেই থাকবো।আ’ই প্রমিস।”
অরিত্রান চারপাশে একবার তারিয়েই টুপ করে চুমু খায় ওয়াসেনাতের কপালে।এতো দ্রুত কাজটা করলো যে ওয়াসেনাত চমকিত হয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়েও থাকতে পারলো না।অরিত্রান চোখ টিপে একটা হাসি দেয়।বাঁকা ঠোঁটে হাসি ঝুঁলিয়ে উধাও হয়ে যায়।ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়েই থাকে।
_________________________
মাঠের মাঝে স্টেজ করা হয়েছে।হলুদ হচ্ছে সেখানে।রিমন আর রিমির একসাথেই হলুদ হচ্ছে।রিমনের এসব ভালো লাগে না।তার তো সোজা বিয়েতে মন।বিয়ের মাঝে বাঁধা তার পছন্দ না।তবুও বার বার বাঁধা পরছে।রিমি তো একটু থেকে একটু কিছু হলেই রেগে ধমকি দেয়।বলে,
-“ বিয়ে করবো না।তোমাকে বিয়ে করতে আমার বোয়েই গেছে।বিয়ে ক্যান্সেল।”
তখন রিমনের অবস্থা হয় করুন।তাই দ্রুত করতে চাচ্ছে সব।হলুদে মাখামাখি রিমন নাচানাচি করছে।এটা যে তার বিয়ে কেউ বলবে না।যে হারে উড়াধুনা নাচা নাচি করছে।মাঝে মাঝে রিমির গায়ে হামলে পরছে।রিমি বেশ বিরক্ত!নিজের বিয়েতে এতো নাচার কি আছে।কোথায় একটু লজ্জা পাবে।হলুদ লাগাতে আসলে না না করবে।তা তো করলোই না উল্টা বাটি ভর্তি হলুদ নিজের গায়ে মাখিয়ে নিয়েছে।রিমি এসব করলো না।সে ছবি তুলবে।বিয়ে কি জীবনে বারবার করবে না কি?একবারই হবে বিয়ে।রিমনের সব পুরানো বন্ধু বান্ধব এসেছে।তাদের নিয়ে হুলুস্থুল আনন্দ তার।সব ছেলেরা পাঞ্জাবি পরেছে।শুধু অরিত্রান বাদে।সে বসে আছে স্টেজের পাশে রাখা সোফায়।গায়ে হলুদ শার্ট।রিমন জোড় করে হলুদ শার্ট পড়িয়েছে।তা না হলে তো অরিত্রান কালো শার্ট পড়ে হাজির হতো।হলুদের অনুষ্ঠানে কালো ড্রেস খুবই বাজে দেখাতো।
ওয়াসেনাতের আসতে একটু বেশিই দেরি হয়।শাড়ি সামলাতে পারে না সে।কয়েক বার খুলে ও গেছে।ওয়াসিকা মেয়ের শাড়ি ঠিক করতে করতে নিজের শাড়ি পড়ার কথা ভুলেই গেছে প্রায়।তাই তো এতো দেরি হয়েছে।অরিত্রানের হাতে ফোন।পায়ের উপরে পা।লম্বা চুল চোখের সামনে ঝুলছে।এই বিয়ের সাথে যেন তার কোন সম্পর্কই নেই।সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।চোখ তার ফোনের উপরে।কিছুক্ষণ পর পর পা দুলিয়ে উঠছে সে।ওয়াসেনাত মায়ের সাথে আসে।মা মেয়ে মিলিয়ে শাড়ি পড়েছে।বয়সটা না হলে দুজনকে জমজ বলা চলতো।ওয়াসেনাতের গায়ের একটা আলাদা গন্ধ আছে।অরিত্রান যেন বহু দূর থেকে সেই গন্ধ পায়।ওয়াসেনাত মাঠে এসে দাড়ায়।অরিত্রান চোখ তুলে তাকায়।সবুজ চোখ থমকে যায়।হলুদ শাড়ি পরেনি।লাল জামদানি পড়েছে মা মেয়ে।ওয়াসেনাতের লাল টকটকে শাড়ি।মাথায় ছোট করে বাঁধা হেজাব।হাতে লাল চুড়ি।অরিত্রান থ বনে তাকিয়ে থাকে।চোখ আটকেছে ওয়াসেনাতের লাল আভা যুক্ত গালে।ওয়াসেনাত হাসছে।রিমি লাফিয়ে পড়েছে তার উপর।দুই বান্ধুবি হাত উঁচিয়ে হালকা নাচ্ছে।
তৌফিক সাহেব বসেছে অরিত্রানের পাশে।অরিত্রান পা নামালো না।যেভাবে ছিলো সেভাবেই বসলো।তৌফিক সাহেবও সেদিকে মনোযোগ দিলেন না।সামনে তাকিয়ে অনুষ্ঠান দেখছেন তিনি।দু’জনেই অনেক সময় চুপ থেকে নিরবে সামনে তাকিয়ে ছিলো।অরিত্রান কৌতুহল দাবিয়ে রাখতে না পেরে বললো,
-“ আপনি রাজি হয়ে গেলেন কেন বলুন তো??”
-“ তাহলে তুমি কি চাও আমি রাজি না হই?”
-“ না না সেটা বলিনি।এতো সহজে মেনে নেওয়ার মানুষ আপনি নন।তাহলে এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলেন কেন??”
তৌফিক সাহেব চুপ থাকে কয়েক মুহূর্ত।হালকা হেঁসে অরিত্রানের দিকে তাকালেন।অরিত্রান পা নামিয়ে নিলো।পূর্ন্য দৃষ্টি মেলে তাকালো।তৌফিক সাহেব অরিত্রানের পিঠ চাপড়ে বললো,
-“ আমি আমার মেয়ের ভালো চাই।ও যদি তোমার সাথে হ্যাপি হতে পারে এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু তোমার জন্য আমার মেয়ের ক্ষতি যাতে না হয়।আমার অনেক ছেলে মেয়ে নেই।বা দুজনও নয়।আমার একটাই বাচ্চা।ওকে ভালোবাসি কতটুকু বলে বুঝাতে পারবো না।তাই ওর খুশি চাই।”
অরিত্রান মুগ্ধ হলো।আজ অনেক দিন পরে তার মনে হলো তার বাবাও বেঁচে থাকলে তার ভালো চাই তো।তাকে এমন খারাপ মানুষ হতে দিতো না কখনই।তৌফিক সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ রাজি কেন হয়েছি প্রশ্ন করে ছিলে না??ওই যে আমার মেয়ে হাসছে তাই রাজি হয়েছি।যদি সে তোমার মধ্যমে ভালো থাকে আমি তোমাকেও মেনে নিতে রাজি।যতই অপছন্দের মানুষ তুমি হও না কেন।আমার মেয়ে গুরুত্বপূর্ন।”
অরিত্রান তৌফিকের দৃষ্টি অনুসরন করে তাকায়।ওয়াসেনাত হাত উঁচিয়ে নাচ্ছে।হাসছে।অরিত্রানের দিকে চোখ পরতেই নাচা এবং হাসা থামিয়ে দেয়।লজ্জিত হয়।ঠোঁট টিপে পাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।অরিত্রান হাসে।চুল কপাল থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“ আপনার মেয়েকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমি নিলাম।”
তৌফিক সাহেব হাসলেন।অরিত্রানও মুচকি হাসলো।
লোকটাকে টেনে পিছনের দিকে নিয়ে এসেছে অরিত্রান।অনুষ্ঠানে ঝামেলা চায় না সে।হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে ছুড়ে মারে পাশে।রাগি চোখে তাকিয়ে কলার টেনে উপরে তুলে নেয়।বেশ কঠিন গলায় বলে,
-“ ছবি তুলবি ভালো কথা ওর ছবি কেন তুললি??আমি নিষেধ করেছিলাম না??”
লোকটা ভীতু গলায় বললো,
-“ স্যার আমি নতুন এসেছি মাত্র।আমি তো জানতাম না।স্যরি স্যার।এবারের মত মাফ করে দেন।”
অরিত্রান রাগ গিলে নিলো।ছেড়ে দিয়ে ক্যামেড়টা নিয়ে নিলো।যাওয়ার সময় বললো,
-“ টাকা দিয়ে দিবো নতুন কিনি নিও।আর সবাইকে এ ব্যাপারে নিষেধ করার দায়িত্ব তোমার।আর কেউ যদি একুই ভুল করে তাহলে কি হবে”
কথা শেষ করার আগেই চেচিঁয়ে বললো,
-“ আমি বুঝেছি স্যার।”
ক্যামেরাটা ভালো।এতো জোড়ে ছুড়ে মারার পরেও এখনো ঠিক। আছে।অরিত্রান ক্যামেরা কাজে লাগায়।নিজেই লুকিয়ে ছবি তুলে নেয়।
_______________________
রাত প্রায় ১২টার বেশি।অরিত্রানের গাড়ি থামে হসপিটালের সামনে।ইহানের কেবিনের সামনে এসে খানিটকা চমকে যায় সে।দরজা খোলা।লাইট জ্বলছে।রোগীরা এতো রাত জেগে থাকে না।থাকার কথাও না।আর হসপিটালে তো আরো কড়াকড়ি।তাহলে কি ইহান পালিয়েছে??অরিত্রান কপাল কুঁচকায়।কিছুক্ষণ দাড়িঁয়ে থাকে।ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,
-“ কে ওখানে??”
ইহান পালায় নি।অরিত্রান ভেতরে ঢুকে।ইহান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত।তারপর বলে,
-“ তুই এখানে??”
অরিত্রান চেয়ার টেনে বসে।চারপাশে একবার তাকায়।বলে,
-“ তুই নিজেই তো ঢাকলি।আমার তোর সাথে কোন কাজ নেই।তোর মত লোকের সাথে শত্রুতা ছাড়া আর কিছু হয় না।”
-“ এই শত্রুর এক ডাকে কিন্তু তুই হাজির হয়েছিস।কেন??ভয় পাছ?ওয়াসেনাতের কিছু করে ফেলি যদি??”
অরিত্রান রাগি চোখে তাকালো।চোয়াল শক্ত করে হাসলো।তারপর বললো,
-“ সেটা আমি থাকতে ইম্পসিবল।আমি হতেই দিবো না এমন কিছু।”
ইহানো হাসলো।চোয়ালের পাশ ব্যথা।বেঁকে আছে অনেকটা।চোখের কোণা ফেঁটে গেছে।মুখের অবস্থা করুন।ইহান কিছু কাগজ এগিয়ে দিলো।হাসতে হাসতেই বললো,
-“ সেটা জানা আছে।যাই হোক এগুলো দেওয়ার জন্য ডেকেছি।তোর জিনিস তুই রাখ।আমার লাগবে না।বাবার কাজের জন্য আমি ক্ষমা চাইবো না।সেটা তার কাজ।আমি নিজের কাজের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।পারলে ক্ষমা করবি আর না পারলে নাই।তোর জিনিস রাখতে চাই না।”
একদমে ইহান কথা শেষ করে।অরিত্রান কুঁচানো ভ্রু আরো কুঁচকে তাকায়।সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে,
-“ কিসের পেপার এগুলো???”
-“ তোদের বাড়ি বিজনেস সব।এগুলো আমি রাখতে চাই না।আমি নিজেই নিজের জন্য এনাফ।তোদের এসব প্রয়োজন নেই।”
-“ তাই না কি??হঠাৎ এতো ভালো??কারন কি??শত্রু থেকে বন্ধ হতে চাস বুঝি??”
-“ মোটেও না।আমি আজীবন তোর শত্রুই থাকতে চাই।তুই এসব নিয়ে যা তো।আমার বিরক্ত লাগে তোরে দেখলে।”
-“ কেন??”
ইহান ক্ষুদ্ধ গলায় বললো,
-“ তোর ভালোবাসার মানুষকে আমার হতে দেখলে বুঝতি।কেমন জ্বলে!কলিজা পুড়ে।তুই বুঝবিনা।পাখি এখন তোর নিজের তাই।যা তো।”
ইহান মুখ ফিরিয়ে নেয়।রাগ দেখায়।চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে থাকে।অরিত্রান হাসে।উঠে দাড়ায়।কাগজগুলো টেবিলে গুছিঁয়ে রাখে।ইহানের দিকে আর একবার তাকিয়ে বলে,
-“ এগুলো তোরে দিয়ে দিলাম।দান করতে আমি পছন্দ করি না।এগুলো শত্রু হিসেবে গিফট।”
ইহান সোজা হয়ে বসে।অরিত্রানের মুখের দিকে তাকায়।একটা কষ্টের সুর তুলে বলে,
-“ বিয়ে কবে করবি??”
-“ ভালো যখন বাসি বিয়েও করবো।ওয়াসেনাতের ব্যাপারে আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না।ওকে নিয়ে কথা বলবি না।”
ইহান হাসে।বলে,
-“ ওকে তোর সাথেই বেশি মানায়।স্পেশাল জিনিস স্পেশাল জিনিসের জন্যই তৈরি করা হয়।ভালো থাকিস।”
-“ তুই কি করবি??মাফিয়া বসগীরিই করবি??”
-“ না ভাবছি বিয়ে করবো।যে এতো দিন আমার সেবা করেছে তাকে ভালোবাসি বা না বাসি বিয়ে তো করাই যায়।বিয়ে করতে তো আর ভালোবাসা লাগে না।”
ইহান হেসে ফেলে।অরিত্রান তীক্ষ্ন চোখে তাকায়।ক্ষীন গলায় বলে,
-“ বিয়ে করলে ভালোবাসা হয়েই যাবে।তাকে বলে মায়ার ভালোবাসা।ভালো থাক।আমার জীবন থেকে একটু না অনেকটুকু দুরে থাক।আমি না তোকে একদম পছন্দ করি না।তাই এটাই যাতে শেষ দেখা হয়।”
অরিত্রান হনহনিয়ে বেরিয়ে পরে।রিপা কেবিনে এসে দেখে ইহান হাসছে।তার নিজেরই ভালো লাগছে।ইহানকে জড়িয়ে ধরে পিছন থেকে।ইহান ব্যথা পায়।কিন্তু কিছু বলে না।রিপা আদুরী গলায় বলে,
-“ হাসলে তোমাকে যা সুন্দর লাগে না।একদম পাগল করার মতো।আমি তো তোমার হাসিতেই মরি বহু বার হাজার বার।”
ইহান মন দিয়ে শুনে।ভালো লাগে শুনতে।জীবনে অনেক কিছু পাওয়া হয় আবার অনেক কিছু হয় না।জীমন তো ম্যাজিকের মতো।কখন কি ম্যাজিকের মত ঘটে যাবে কে যানে।যার থেকে আশা করা হয় তার থেকে পাওয়া যায় না।আবার যার থেকে আশা করা হয় না সে একটু বেশিই দিয়ে বসে।
_______________________________
সাদা পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে অরিত্রান রুম থেকে বের হচ্ছে।হঠাৎ ধাক্কা লাগায় চমকে তাকায় সে।তৌফিকও হাতা গুটিয়ে নিচ্ছে।দু’জনের চোখা চোখি হয়।চমকায়।একুই রকম পাঞ্জাবি!!!তৌফিক উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে অরিত্রানকে।অরিত্রানও দেখে।সেম সেম পাঞ্জাবি তাদের।এটা মানতেই অরিত্রানের অদ্ভুত লাগে।ওয়াসেনাত পাশের রুম থেকে শাড়ির আচঁল সামলাতে সামলাতে দু’জনকে দেখে।নিজেও চমকে যায় সে।একটু ভীতু হয়।কে আগে আক্রমন করে কথা বলবে ভাবে।তৌফিক সাহেব হাসলেন।অরিত্রানের মোটা বাহু চাপড়ে বললেন,
-“ তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।”
অবাক চোখে তাকায় ওয়াসেনাত।অরিত্রান নিজেও একটু অবাক হয়েছে।নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো,
-“ আপনাকেও সুন্দর লাগছে।”
দুজনেই হাসে ।হেসে সরে যায়।তৌফিক সাহেব সামনে হেঁটে যায়।অরিত্রান পিছনে তাকায়।সাদা জামদানি,লাল ব্লাউজ,লাল হেজাব,লাল চুড়ি।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওয়াসেনাতকে।একদম মায়াবীনির সাথে রূপবিনীও যোগ হয়েছে।পরীজাকে সাদা,লাল মিশানো পরী লাগছে।অরিত্রান থমকায়।চোখ আটঁকে থাকে ওয়াসেনাতের গালে,চোখে,লাল চুড়ি ভর্তি হাতে।ওয়াসেনাত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়।হাত টেনে ধরে অরিত্রান।নিজের বুকের শক্ত অংশে মিশিয়ে নেয়।কেঁপে উঠে ওয়াসেনাত।কেমন যেন শিহরন জাগে মনে।অরিত্রান কানের পাশটায় মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“ এতটা রূপবতী না হলেও পারতে পরীজা।”
ওয়াসেনাত লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।সরে যেতে চায়।হাত মোছড়ায়।অরিত্রান নিজে থেকে ছেড়েদেয়।ওয়াসেনাত ছুটে পালায় ।অরিত্রান হো হো করে হাসে।পাঞ্জাবির লাল পাশটায় হাত বুলায়।
_____________________
নিজের রুমের দিকে পা রাখতেই অরিত্রান ওয়াসেনাতের গলার শব্দ পায়।কিছুক্ষণ আগেই ওয়াসেনাতকে তার রুমের সামনে নামিয়ে দিয়েছে সে।কত সুন্দর সময় কাটিয়েছে তারা।জীবনে স্বপ্নের সময়গুলোতে এগিয়ে যাচ্ছে।সব যেন স্বপ্নের মত অরিত্রানের কাছে।ওয়াসেনাত গলা ফাটিয়ে আবার চিৎকার করে উঠে।অরিত্রান কান খাড়া করে।হঠাৎ করেই চিৎকারে আর্তনাদ খুঁজে পায় অরিত্রান।বুক জ্বলে উঠে।অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।দ্রুত বড় বড় পা ফেলে ওয়াসেনাতের রুমের সামনে এসে দাড়াঁয়।দরজা বন্ধ।ওয়াসেনাত ভেতরে।চিৎকারের শব্দে কান জ্বালা করছে অরিত্রানের।বুকে যন্ত্রনা হচ্ছে।এ কেমন অনুভুতি??অরিত্রান জানে না।দরজা খুলতে বলে।চেঁচিয়ে উঠে।দরজা খুলছে না ওয়াসেনাত।অরিত্রান প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে।আঁতঙ্কিত হচ্ছে।ধাক্কা দিতে দিতে দরজা ভেঙে ফেলে।রুমের আশেপাশের সবাই বেরিয়ে আসে।তৌফিক সাহেব হতবাক।মেয়ের রুমে হচ্ছে কি??খোলা দরজা।মাদৌলির হাতে ছুঁরি।ওয়াসেনাতের ডান হাতে অনবরত একের পর এক টান দিয়ে চলেছে সে।মাদৌলিকে পাগলের মত লাগছে।কি সব বিড়বিড় করছে সে।ওয়াসেনাত ছাড়াতে চাচ্ছে।কাঁদছে।আর্তনাদ করছে।অরিত্রান বাকরূদ্ধ!কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।পিছন থেকে অরূপ চিৎকার করে উঠে।ছেড়ে দিতে বলে।অরিত্রানের হুশ হয়।দ্রুত দৌড়ে যায়।ছুঁড়ি টেনে নেয়।মাদৌলির বুকের একটু উপরে বসিয়ে দেয়।চোখ ভরা আতঙ্ক নিয়ে তাকায়।সাদা শাড়ি রক্তে লাল হয়ে আছে।ফ্লোরে কাঁচের চুড়ির ভাঙ্গা অংশ হামাগুড়ি খাচ্ছে।ওয়াসেনাত লুটিয়ে পড়তে নেয়।অরিত্রান কোমড় পেঁচিয়ে ধরে।লাল হাত।চারপাশে রক্ত।অরিত্রানের চোখ জ্বলে উঠে।
তৌফিক সাহেবের মাথায় হাত।তিনি ফ্লোরে বসে পরেন।ওয়াসিকা জ্ঞান হারায়।সবাই নির্বাক হয়ে পরেছে।অরূপ নিজেও বসে পরেছে।মাদৌলির বাবা দৌড়ে আসে।মেয়েকে টানতে টানতে বলে,
-“ আমার মেয়ে পাগল ।ওর মাথা খারাপ হয়েগেছে।কিন্তু আপনারা এটা কি করলেন??ছুঁরি আঘাত!!!”
অরূপ ক্ষেপে যায়।দ্রুত এগিয়ে এসে বলে,
-“ আপনার মেয়েকে তো খুন করবো।”
মাদৌলির বুকের উপরে ছুড়িঁ লেগেছে।তাই বেঁচে আছে।মেয়েকে টেনে বেরিয়ে পরেছেন তিনি।অরিত্রানের সাদা পাঞ্জাবিও লাল হচ্ছে।ওয়াসেনাত হাত বারিয়ে বারিয়ে কলার ধরছে।অরিত্রান স্থির।বরফের মতো জমে আছে সে।কি হয়েগেলো ভেবে পাচ্ছে না।রক্তের দিকে তাকালো।এতো রক্ত!!!অরিত্রান তো রক্ত দেখতে পছন্দ করে।তাহলে আজ কি হচ্ছে??অরিত্রান অনুভব করে সে কাঁপছে।এই রক্তে তার মাথা ঘুড়ছে।দুনিয়া অন্ধকার লাগছে।ওয়াসেনাতের চোখ বুজে আসছে।অরিত্রান কাঁপা গলায় বললো,
-“ চোখ বন্ধ করবে না পরীজা।”
ওয়াসেনাত চোখ খোলা রাখতে চায়।অরিত্রানের কন্ঠ বসে গেছে।ভারি হচ্ছে গলার সব কথা।জমে গেছে গলায়।বুকের যন্ত্রনা বেড়েই চলেছে।চোখ জোড়া জলছে।অদ্ভুত!!অরিত্রানের চোখে পানি!!!নিজের চোখের পানিতে নিজে চমকে উঠে অরিত্রান।সে তো কখনোই কাঁদে না।চোখ দিয়ে পানিই আসে না।তাবে আজ কেনো??অরিত্রানের সবুজ চোখ লাল হয়।নাক জ্বলে উঠে।শরীর ঘামছে।কপালে বিন্দু বিন্দু থেকে অনেক বেশি ঘাম।ওয়াসেনাত শেষ বার অরিত্রানের কলার ধরে বিড়বিড় করে বলে,
-“ আমি চোখ খোলা রাখতে চাই।আমি বাঁচতে চাই।”
অরিত্রানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে।কত মানুষই তার সামনে বাঁচকে চেয়েছে।কিন্তু তাদের দেখে অরিত্রান হেসেছে।কিন্তু আজ!!অরিত্রানের হাতে ,জামায় রক্ত আর রক্ত।অরিত্রানের চারপাশ চক্কর দিয়ে উঠে।দুনিয়ে ঘুরে উঠে।সে বসে থাকতে পারছে না।হাত কাঁপে পা কাঁপে।অরিত্রান এই রক্ত সহ্য করতে পারছে না।নিজের চুল টানে।বলতে চায় আর্তনাদ করে,এই রক্ত সরাও।” কিন্তু বলতে পারছে না।সে পারছে না।অরিত্রান নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।ওয়াসেনাতকে দু’হাতে জড়িয়ে নেয় সে।উত্তেজনায় শরীরের প্রতিটা অংশ কাঁপছে তার।ওয়াসেনাত চোখ বুজে নেয়।সে ক্লান্ত।আর চোখ খুলে রাখতে পারে না সে।পারছে না।অরিত্রান ফ্লোরে তাকায়।প্রিয়জনের রক্তে কি এমন করেই কলিজা পুড়ে??অরিত্রানের শরীর জ্বলছে।নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।দম বন্ধ হয়ে আসছে।অরিত্রান জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে চায়।পারছে না।সবাই অনেক কথা বলছে ।অরিত্রানের কানে আসছে না।কান গরম হচ্ছে তার।ঝাঁ ঝাঁ করছে কানের পর্দা।শরীর দুলে পরছে।কাঁদছে সে।শব্দ বিহিন কান্না।অরিত্রান ওয়াসেনাতকে নিজের কোলে শুইয়ে দেয়।চিৎকার করে বলে,
-“ চোখ বন্ধ কেন করেছো??আমি মানা করেছিনা।আমার কথা কানে যায় না।চোখ খোলো ওয়াসেনাত…!ওয়াসেনাত বিনতে তৌফিক চোখ খুলতে বলেছি…!!প্লিজজ!!প্লিজজ!!চোখ খুলো!!!এতো রক্ত!!!এতো!!!”
অরিত্রান আর কিছু বলতে পারে না।চুল টেনে ধরে।পাগলের মত চিৎকার করে।শেষ বার চিৎকার করে ওয়াসেনাতের সাদা জামদানি শাড়ির একটা অংশের দিকে তাকিয়ে বলে,- আল্লাহ্ এতো রক্ত!!এতো লাল!!!
অরিত্রানের আর্তনাদে ঘর কাঁপে।ভয়ংকর শব্দে সবাই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়!!!
#চলবে…