না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 09

কথা বলতে বলতে মিরা মিহান চায়ের দোকানের সামনে চলে আসে।মিরা ভেবে পায় না এত রাত পর্যন্ত কোনো দোকান খোলা থাকে?কিছু লোকজনও আছে দোকানে তারা আড্ডা দিয়ে চা খাচ্ছে।ছেলেগুলোকে দেখেই বোঝা যায় কম বয়সি বোধহয় কলেজে পড়ে অথবা চাকরি করে।মিরার ভাবনার ইতি ঘটে মিহানের কথায়।
মিহান : চাচা ভালো করে দু কাপ চা বানান তো!
লোকটা মিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে।
চাচা : আজকেও বুঝি রাতে ডিউটি ছিলো হসপিটালে?
মিহান হাসি মুখে বলে।
মিহান : জ্বী চাচা।
চাচা : তা তোমার পাশের মেয়েটা বুঝি আমাদের বউমা?
মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে।
মিহান : হ্যা চাচা খুব তাড়তাড়ি বিয়ে করতে চলেছি।দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
চাচা : আচ্ছা ঠিক আছে।তোমরা বসো আমি এখনি চা দিচ্ছি।
মিহান মিরিকে নিয়ে সামনে একটা বেঞ্চে বসে।কৌতুহল বশত মিরা মিহানকে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : এত রাতেও মানুষগুলো এই দোকানে চা খেতে আসে?
মিহান : এই ছেলেগুলো কলেজে পড়ে আশেপাশের কোনো ম্যাসে থেকে লেখাপড়া করে।রাতে পড়া শেষ‌ করে সবাই চলে আসে এই চাচার দোকানে আড্ডা দিয়ে চা খেতে।দিনের বেলায় কাজের চাপে কেউ সময় করে উঠতে পারে না।আমরাও কলেজ লাইফে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি এই জায়গায়।

এরমধ্য চাচা এসে দু কাপ চা দিয়ে যায় মিহান আর মিরাকে।মিরা চায়ে চুমুক দিয়ে দেখে সত্যি অসাধারন এক কথায়।মিরা বেশ আরাম করে চা খাচ্ছে মিহান তা ওর মুখ দেখে ঠিকই বুঝতে পারছে।ওদের চা খাওয়া শেষ হবার আগেই মিহানের মম ওদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।চা‌ শেষ করে গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি চলতে শুরু করলে ওর হাতের বকুল ফুলের গন্ধটা প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে চোখ বন্ধ করে।হঠাৎ করে মিহানের চোখ যায় মিরার দিকে চোখ বন্ধ অবস্থায় কি মায়াবি লাগছে।রাস্তায় কোনো গাড়ি ঘোড়া না থাকায় খুব তাড়তাড়ি পৌঁছে যায় খান বাড়িতে।মিরা গাড়ি থেকে নামার সময় মিহান মিরার হাত আলতো করে ধরে বলে।
মিহান : থ্যাংক ইউ।আমার কথা রাখার জন্য।পাঁচটা বাজতে আর বেশি সময় বাকি নেই এখন গিয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়ো।আমি পরে ফোন করবো।
মিরা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনি।আস্তে করে নেমে যায় গাড়ি থেকে।এবার আর চোরের মত নয় গেট দিয়েই বাড়ির ভিতর ঢুকে যায় মিরা।মিরা চোখের আড়াল হয়ে মিহান‌ একা একা মাতাল করা কন্ঠে বলতে থাকে।

মিহান : একটু একটু করে তোমার মনে আমার ভালোবাসার বীজ পুতবো।তোমাকে আমার ভালোবাসা পাগল করে দিবে।এখন যেমন তুমি ছাড়া আমি কিছু বুঝি না ঠিক তুমিও খুব তাড়তাড়ি আমি ছাড়া আর কিছু বুঝবে না।না চাইলেও তুমি আমার হবে।
মিরা রুমে গিয়ে পাচওয়াড দেওয়া একটা বক্সে খুব যত্ন সহকারে রেখে দেয়‌ বকুল ফুলগুলো।কেনো এমন কাজ করলো তা নিজেও জানে না।কিন্তু এই কাজটা করে মনে বেশ‌ শান্তি লাগছে।বক্সটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলতে থাকে।
মিরা : কেনো এমন হয় ঐ পাগল ডাক্তার আমার আশেপাশে থাকলে।অন্য কোনো ছেলে হলে তো সে বোধহয় এতক্ষনে হসপিটালে থাকতো।আমি মিহানকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারি না।আর‌ আজ আমিও ঐ পাগল ডাক্তারের মত কাজ করেছি।উনি আমাকে নিয়ে যেতে চাইলেন আমি বাধা না দিয়ে বরং তার সাথে গেলাম।তার দেওয়া ফুলগুলোও যত্ন সহকারে রেখে দিলাম।কি হচ্ছে আমার সাথে এগুলো?এগুলো নিয়ে পরে ভাবো এখন আমার একটু ঘুমের প্রয়োজন।
মিরা আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকাল নয়টার দিকে খান বাড়ির সবাই রাজশাহীর উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।সবার শেষে রওনা দেয় মিরা।নিরা মিরার সাথে যাবে বলে জেদ ধরলে মিরা নিরাকে সাথে নেয়।নিরা গাড়িতে ওঠার এক ঘন্টা পর ঘুমিয়ে যায় মিরার কোলে।বেলা বারোটার দিকে মিরা ফোন বেজে ওঠে স্ত্রিনের নাম্বারটা দেখে না চাইতেও ঠোঁটের এক কোনে হাসি ফুটে উঠে।

মিরা : হ্যালো।

মিহান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।

মিহান : গুড মর্নিং জান।

মিরা : দুপুর বেলা এখন আপনার গুড মর্নিং?

মিহান : কি করবো আমি তো ভোর বেলা ঘুমিয়েছি।তাই এখন আমার গুড মর্নিং।আচ্ছা এত গাড়ির আওয়াজ আসছে কোথা থেকে।

মিরা : রাস্তা থেকে।

মিহান : এখন না তোমার অফিসে থাকার কথা?

মিরা : হুম।কিন্তু আমি এখন রাজশাহী যাচ্ছি।

মিহান অবাক হয়ে বলে।

মিহান : কেনো?

মিরা : নিধির ভাইয়ের বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জন্য।

মিহান মন খারাপ করে বলে।

মিহান : কাল রাতে তো কিছু বললে না।

মিরা : মনে ছিলো না।

মিহান : আসবে কবে?

মিরা : কাল যেহেতু অনুষ্ঠান তাহলে পরশু রওনা দেবো ঢাকার উদ্দেশ্য।

মিহান : কি করছো এখন?

মিরা : তেমন কিছু না নিরা কোলে ঘুমিয়ে আছে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

মিহান : একটা কথা বলবে?

মিরা : কি কথা?

মিহান : তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেছো?

মিরা : আমার খেয়ে দেয়ে কি কাজ নাই যে আপনার প্রেমে পড়তে হবে!

মিহান : তাহলে আমার সাথে‌ এত ভালো ভাবে কথা বলার করন কি?

মিহানের কথা শুনে মিরা মনে মনে‌ বলে।

মিরা : আমি নিজেও জানি না কি কারনে আপনার সাথে কথা বলছি।কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে।

মিহান : কি হলো‌ কথা বলছো না যে?

মিরা : গাড়িতে বসে বসে সময় কাটছিলো না তাই ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলে একটু সময় কাটাই।

মিরা আর মিহান আরো কিছুক্ষন ফোনে কথা বলে।এরমধ্য দুপুরের লাঞ্চের সময় হয়ে যায়।ভালো একটা রেস্টুরেন্ট দেখে গাড়ি থামিয়ে সবাই মিলে লাঞ্চ করে নেয়। মিরার মামু আর বাবা দুপুরের আগেই নিধিদের বাড়ি পৌঁছে যায় একথা মিরার বাবা অনামিকাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়।নিরা এরমধ্য বায়না ধরে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য।

নিরা : মামনি আমার না এখুন আতক্রিম খেতে ইথে করথে!

মিরা : মামনি এখন আমার ব্যাগে যে চকলেটগুলো‌ আছে সেগুলো খাও।একটু পরে না আইসক্রিম খাওয়া যাবে।

নিরা কিউট ফেস করে বলে।

নিরা : মামনি ছুধু একটা খাবু।

মিরা নিরার কথা শুনে হেসে দিয়ে ডেনিকে একটা আইসক্রিম নিয়ে আসতে বলে।ডেনি আইসক্রিম নিরা হাতে দিলে ও খাওয়া শুরু করে দেয়।নিরা খাচ্ছে কম সারা মুখে মাখছে বেশি।মিরা এতক্ষন ফোন নিয়ে ছিলো।ফোন রেখে নিরার দিকে তাকিয়ে দেখে নিরার সারা মুখে আইসক্রিম মেখে রেখেছে।মিরা হাসতে হাসতে ওর ফোনে কয়একটা ছবি তুলে টিসু দিয়ে ওর মুখ মুছে দিতে দিতে বলে।

মিরা : এতক্ষন ভুতের মত চেহারা বানিয়ে ছিলো।এখন কত সুন্দর লাগছে আমার মামনিকে।

নিরা গাল ফুলিয়ে বলে।

নিরা : আমি ভুত না আমি তুমার এনদেল।

নিরার কথা শুনে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে।

মিরা : হ্যা তুমি আমার এঞ্জেল।এবার ঠিক আছে।

মিরা কথা শুনে নিরা খিলখিল‌ করে হেসে দেয়।

চলবে…🍁