না চাইলেও তুই আমার !! Part- 07
মিরা অনেকক্ষন ধরে বসে আছে অনুর পাশে অনু যা কিছু বলছে সব মিরার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এরমধ্য অনু মিরাকে এ বাড়ির সবাই কি পছন্দ করে,কি কি খাবার খেতে ভালোবাসে,ছুটির সময় তারা সবাই কোথায় কোথায় ঘুরতে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি অনু মিরাকে সব বলে দিয়েছে।এরমধ্য একবার অনু নিজের রুমে গিয়ে অনেকগুলো চকলেট একসাথে নিয়ে এসে শুধু একটা চকলেট নিজের জন্য রেখে আর সবগুলো মিরার হাতে দিয়ে বলে।
অনু : ভাবী এইগুলো সব তোমার।তোমাকে আমার খুব ভালো লাগছে তাই আমি তোমাকে আমার এই চকলেটগুলো দিলাম।
মিরা : আমার লাগবে না তুমি খাও।
অনু : আমার আরো আছে আবার ভাইয়া আর পাপা আসার সময় আমার জন্য নিয়ে আসবে।এগুলো তুমি খেও।
মিরা ভালোই বুঝতে পারছে অনু নাছোড় বান্দা।মিরা আর কথা না বাড়িয়ে চকলেটগুলো ব্যাগে রেখে দেয়।এরমধ্য মায়া কফির সাথে আর কি কি জানি খাবার তৈরি করে নিয়ে এসেছে।মায়া মিরার পাশের সোফায় বসতে বসতে বলে।
মায়া : জানো আমার ছেলেটাকে না অনেক মেয়ে প্রপোজ করেছে এমকি ওর হসপিটালের কিছু মেয়ে ডাক্তারও প্রপোজ করেছে।কিন্তু ও কখনো কারো দিকে ফিরে তাকায়নি।ও সব সময় বলতো যাকে দেখে ওর হার্ট বিট বেরে যাবে সেই হয়তো ওর মনের মানুষ হবে।তোমাকে যেদিন প্রথম দেখে সেদিনই আমাদের বলেছে ওর মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছে।এখন তোমাকে আমার ঘরের বউ করে আনতে পারলেই আমার সংসার ভরে উঠবে।
মিরা : আন্টি আপনি যে বললেন আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসে এটাকে ভালোবাসা বলে না এটাকে মোহো বলে।কিছুদিন পর এ মোহো কেটে গেলে আপনার ছেলে আর আমাকে চিনবে না।কে আমি?তার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক?কিছু মনে থাকবে না।আমি আমার জীবন থেকে শিখেছি।তাই বলছি আপনার ছেলের ভালোর জন্য তাকে বুঝান অযথা মোহোর পিছনে না দৌড়াতে।আপনার ছেলে আমার ট্রিটমেন্ট করেছে আমি চাইবো না আমার কারনে তার কোনো ক্ষতি হোক।
মায়া মিরার কথা কানে না দিয়ে বলে।
মায়া : সেসব তোমাদের বেপার তোমরা বুঝে নেও।ওসব কথা ছাড়ো এখন বলো তুমি বিয়েতে কি পরবে সোনার গয়না না কি ডায়মন্ড জাতীয় কিছু।জানো আমার না অনেক শখ আমার ছেলের বউ বিয়ের দিন সোনার গয়না পড়বে আর বৌভাতের দিন ডায়মন্ডের।
মিরা বুঝে গেছে এরা মিরার কোনো কথা পাত্তা দিবে না বা দিচ্ছে না।মিরার এখন নিজের উপরই রাগ কেনো এখানে আসতে গেলো।সব ভাবনার ইতি ঘটিয়ে হঠাৎ মিরার ফোন বেজে ওঠে।মিরা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে ও বাড়ি থেকে ফোন করেছে।মিরা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিরার ফুপি বলে।
ফুপি : হ্যালো মিরা!
মিরা : বলো।
ফুপি : কখন বাড়ি আসছিস?তুই নিরাকে না কি বলেছিলিস বিকালে তুই আর ও নাকি এক সাথে খেলবি।এখন তোর উপর রাগ করে বসে আছে কারো সাথে কথা বলছে না।
মিরা : আমার একদম মনে ছিলো না।আমি এখনি আসছি।
মিরা ফোন রেখে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : আন্টি আসি ভালো থাকবেন।
মিরা মায়ার উত্তরের অপেক্ষা না করে দূত বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।মিরা বেরিয়ে গেলে অনু ওর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
অনু : মম ভাবী কী সুইট তাই না?
মায়া : হুম।মিহান কাল ওর বেপারে সব কিছু বলো।দেখলি ওকে দেখে একটুও বোঝা যায় না ওর ভিতরে কত কষ্ট লুকিয়ে আসে।
অনু : হুম।
গাড়িতে বসে ডেনি মিরাকে জিজ্ঞাসা করে।
ডেনি : মেম আপনি কিসের জন্য ঐ বাড়ি গেছিলেন?
মিরা : পাগল ডাক্তারের মাকে বুঝাতে আমার পিছনে যেনো আর না ঘুরে।
ডেনি : কাজ হয়ে গেছে?
মিরা : না।
ডেনি : কেনো মেম?
মিরা বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে।
মিরা : যার কাছে পাগল ডাক্তারের নামে বিচার দিতে গেছি সেই হলো ঐ বাড়ির পাগলদের মধ্য সব থেকে বড় পাগল।
ডেনি অবাক হয়ে বলে।
ডেনি : বুঝলাম না মেম!
মিরা : বোঝা লাগবে না বাড়ি চলো।
কিছুক্ষনের মধ্যে মিরা বাড়ি পৌঁছে যায়।মিরা হল রুমে গিয়ে দেখে সবাই সোফায় বসে কফি খাচ্ছে।নিরা ওদের পাশে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।মিরাকে দেখে অনামিকা জিজ্ঞাসা করে।
অনামিকা : কফি খাবে?
মিরা : না এখন আর কিছু খাবো না।
মিরা গিয়ে নিরার পাশে বসে ওকে কোলে নিয়ে বলে।
মিরা : সরি মামনি কাজ পড়ে গেছিল!
নিরা : আমি তোমাল সাথে কথা বলবু না।
মিরা : কাল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো তাহলে রাগ কমবে?
নিরা : না।
মিরা : তাহলে?
নিরা : কাল আমলা থবাই মিলে তাতি মার বাড়ি বেলাতে যাবু আল তুমি দদি আমাল থাথে যাও তাহুলে আল লাগ কলবো না।
মিরা একথা শুনে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে নিরাকে প্রশ্ন করে।
মিরা : তোমাকে একথা কে শিখিয়ে দিয়েছে?
নিরা : তেউ না তো!
মিরা : সত্যি বলো না হলে মামনি কিন্তু রেগে যাবো।
নিরা মিরার দাদির দিকে তাকিয়ে বলে।
নিরা : বলো মাম্মা বলেছে বলতে।
মিরা ওর দাদির দিকে তাকালে তিনি এমন ভাব ভঙ্গি করছেন দেখে মনে হচ্ছে এখানে কি হচ্ছে তিনি কিছু বুঝতে পারছেন।দাদি একটা ঢোক গিলে বলে।
দাদি : ঐ তুই আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?শোন না তুই না দেশটা ঘুরে দেখতে চেয়েছিলি কাল চল না আমাদের সাথে রাজশাহী।নিধির বাবা তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে।তাছাড়া পরশু নিধির ভাই ভাবীর বিবাহ বার্ষিকী।চল না খুব আনন্দ হবে।
নিরা : মামনি লাজি হয়ে যাও না।
মিরা কিছুক্ষন ভেবে বলে।
মিরা : ঠিক আছে যাবো আমি।
বাড়ির সবাই খুশি হয়ে যায়।মিরা ওর ব্যাগ থেকে অনুর দেওয়া চকলেটগুলো বের করে নিরাকে দিয়ে দেয়।নিরা খুশি হয়ে ওর সারা মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়।মিরা ওর রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।নিরা বাড়ির সবাইকে একা একা চকলেট দিয়ে বাকিগুলো নিজের কাছে রেখে দেয়।
রাত নয়টার দিকে মিরা ওর রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসলে নিরা মিরাকে জোর করে নিচে নিয়ে যায়।মিরা এক কোনায় সোফায় বসে ফোন নিয়ে ঘাটা ঘাটি করছে আর নিরা ওকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।কিছুপর নিঝুম এসে ওদের সাথে বসে।নিঝুম আর নিরা দুজনেই দুষ্টুমি করে যাচ্ছে।এরপর একে একে মিরা দাদি,ফুপি,ভাইয়ের বউরা সবাই আসে একসাথে আড্ডা দিবে বলে।কিন্তু মিরা তেমন কিছু বলছে না।হঠাৎ করে নিধি মিরাকে জিজ্ঞাসা করে।
নিধি : আপু তুমি কি সত্যি গান চালাতে পারো?
মিরা : হুম।
ফুপি : ছাড় তো এসব কথা।তোর ঐখানে কোনো বন্ধু হয়নি?
মিরা : আছে দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড।
ফুপি : নাম কি রে?
মিরা কিছু বলার আগেই জন এসে বলে।
জন : মেম আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
মিরা : বলো।
জন : অনেকেই জেনে গেছে আপনি এখন বাংলাদেশে আছেন।মিডিয়ার লোকজন আপনার ইন্টারভিউ নিতে চাচ্ছে। হঠাৎ করে আপনার বাংলাদেশে আসার কারন জানতে চাচ্ছে।
মিরা : এখন এসব কিছু হবে না।তুমি ডেনিকে বলো ও সব সামলে নেবে।
জন চলে গেলে নীলা বলে উঠে।
নীলা : আপু তোমার হাতের চুড়িগুলো তো খুব সুন্দর।কোথা থেকে কিনেছো?
নীলার কথা শুনে মিরা হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে।
মিরা : ইশশ!আন্টির চুড়িগুলো দিয়ে আসতে মনে ছিলো না।কাল না হয় পরশু গিয়ে চুড়িগুলো ফেরত দিয়ে আসবো।
দাদি : হ্যা সত্যি তো খুব সুন্দর মানিয়েছে তোর হাতে।
মিরা : এগুলো আমার না।একজন আন্টি আমাকে জোর করে পরিয়ে দিয়েছে।
আর কেউ কিছু বলবে তার আগে অনামিকা সবাইকে খাবারের জন্য ঢেকে যায়।খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।
রাত দুইটা বাজে মিহান সবে হসপিটালের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো।মিরাকে মিহান ফোন করতে চেয়েছিল কিন্তু সারাদিন মিরাকে দেখেনি আর কিছু না ভেবে মিরার বাড়ি চলে যায় মিহান।চোরের মত মিরার রুমে ঢুকে আস্তে আস্তে মিরাকে ঢেকে তুলে ঘুম থেকে।মিরা ঘুম থেকে উঠে চোখের সামনে মিহানকে দেখে চমকে যায়।
মিরা : আপনি এখানে?এত রাতে কি করছেন?
মিহান : এই আস্তে আস্তে এতো জোরে কথা বলছো কেনো?এখন চলো আমার সাথে।
মিরা : আপনার সাথে কোথায় যাবো?আর কেনোই বা যাবো?
মিহান আর কিছু না বলে মিরাকে কোলে তুলে নেয়।মিরা অবাক হয়ে ডেবডেব করে মিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে…🍁