ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 15

.
ধ্রুবঃ গাড়িতে উঠো।
তারাঃ মানে কি?আপনার সমস্যাটা কি একটু বলবেন?
ধ্রুবঃ তারা বেশি কথা বলো না যা বলছি তা করো। গাড়িতে বসো।
তারাঃ না বসবো না। কেনো বসবো? সকালে উঠে বলতে শুরু করলেন রেডি হও রেডি হও। জিজ্ঞেসা করলাম কেনো রেডী হবো বললেন কাজ আছে। আরে কাজটা কি সেটাই তো বলছেন না। জোর করে রেডি করিয়ে এখন এখানে এনে বলছেন গাড়িতে বসতে। নাহহহ বসবো না আমি। কখনোই বসবো না। আপনার এই গাড়িতে আমি বসবো না। হু😣😣😣
ধ্রুবঃতারা আমি তোমাকে সব বলবো তুমি শুধু প্লিজ চুপচাপ বসো গাড়িতে একটু পরেই জেনে যাবে সব।
তারাঃনাহ নাহহ আমি আগে জানবো আপনি আমায়,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তারপরই আমি গাড়িতে বসবো।
ধ্রুবঃদেখো তারা এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে বসো।
তারাঃ ঐ মিঞা আমার ইচ্ছা আমি বেশি বেশি করবো নাকি কম কম করবো। আমি যাবো না ব্যস।

ধ্রুবঃ তুমি যাবে না?তোমার ঘাড় যাবে।
তারাঃ কিহহহহ যাবে নাহহ। আমিও যাবো না আমার ঘাড় ও যাবে না আমার মাথার একটা চুলও যাবে না। 😡😡
ধ্রুবঃ😤😤😤😤😤এবার যা হবে তার জন্য আমি দায়ী নই কিন্তু . ….
তারাঃকে……কেনো?? ক……কি করবেন আ.…আ…আপনি??😰😰😰😰
ধ্রুবঃবলবো না করেই দেখাবো।
বলে তারাকে কোলে তুলে নিলো।
তারা তো পুরাই অবাক এটা কি হলো। কথা নাই বার্তা নাই ঠুসঠাস কোলে। আমি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা? আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে ফেললো।
তারাঃকি করছেন আপনি নামান আমাকে। নামান বলছি। (নামার জন্য নড়াচড়া করছে)
ধ্রুবঃনামাবো না কি করবে?😎😎
তারাঃকি করবো? ওয়েট দেখাচ্ছি।
বলে ধ্রুবর চুল টানতে শুরু করলো।
তারাঃনামান!! নামান!!নামানননন!!! নইলে সব চুল টাইনা আপনারে টাকলু বানাই দিমু😡😡😡
ধ্রুবঃতারা ছাড় বলছি! এটা কিন্তু বাজে কথা! তারা ছাড়!!! তোমার জন্য ভালো হবে না। 😡😡😡
তারাঃনা ছাড়বো না আগে আমাকে নামান তারপর ছাড়বো।
ধ্রুবঃওকে ওকে আগে ছাড় তারপর নামাচ্ছি নইলে,কি করে নামাবো বলো?
তারাঃসত্যি নামাবেন তো?
ধ্রুবঃহুমম সত্যি নামাবো।
তারাঃওকে।
বলে তারা চুল ছাড়তেই ধ্রুব খুব জলদি তারাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারা কিছু বোঝার আগেই ধ্রুব তারাকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো।।তারাঃএটা কি হলো??আমার সাথে চিটিং আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো? তারা দরজা খুলতে লাগলে ধ্রুব জলদি গাড়িতে উঠে তারার হাত ধরে ফেলে আর গাড়ির দরজা লক করে দেয়।
তারাঃঐ হাত ছাড়েন বলছি হাত ছাড়েন আমার!!!
ধ্রুব দরজা লক করেই তারার হাত ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়েই তারা দরজা খোলার ট্রাই করতেই দেখলো দরজা লক করা।
তারাঃআপনিইইই!!!!! আপনি কি খারাপ!!!
ধ্রুবঃকেমন খারাপ??
তারাঃআপনি চিটিংবাজ,ঠকবাজ, মীর জাফর আপনি।ঘসেটি খালার ভাসুর আপনি!!জলগস্তি,গন্ডার,বান্দর,কচ্ছপ, শাকচুন্নির দেবর, পেত্নির দূর সম্পর্কের ভাই আপনি…..আপনি আপনি….

ধ্রুবঃআর কিছু বাকি আছে?.
তারাঃআহহহহহহহহহ আপনি একটা আআআআআ 😭😭😭😭😭😭 গালি মনে পড়ছেনা কেনো?
ধ্রুবঃতোমার প্রিয়তম হাসবেন্ড তো তাই আমার জন্য তোমার মুখ দিয়ে গালি আসতে চাইছে না তাই না বেবি?😍😍😍😍
তারাঃ ঐ মিশা সওদাগরের ভাতিজা আপনারে তো আমি বরার ব্যান্ড ও বানামু না হাসবেন্ড তো দূরের কথা। আর আমি কি বেবি?কোন এংগেল থেকে আমারে বেবি লাগে?ঠিক সময়ে বিয়া হইলে এতোদিনে ৩/৪টা বেবির,আম্মা হইতাম। আমারে কি আপনার ঐ ফেসবুকের টুনটুনি আফাদের মতো মনে হয় যারা তাদের ২দিনের গরুচোর বয়ফ্রেন্ডদের লগে এমন তোতলাইয়া কথা বলে যেনো কথা শিখতাসে,যেমন ওলে আমার বাবুটা,খাইসু জানু, বেবি,কিউটি, জান ফান আরে এতো বেবি ফেবি ডাকার মানে কি বেশি বেবি ফেবি ডাকলে কোনদিন কোলে উঠে ১নম্বর কাম সারায় দিবো।
ধ্রুব আর থাকতে পারলো না খুব জোরেই হেসে দিলো। 😂😂😂
ধ্রুবর হাসিতে তারার কথা বন্ধ হয় আর তারা বুঝতে পারে ও এতোক্ষন কি বলেছে।
তারাঃতারারে ও তারা তোর কি হইবো তারা তোর জীবনটা অন্ধকাররে এক্কেবারে অন্ধকার কি বলিস নিজেই জানিস না ননস্টপ কইতে থাকস 😣😣😣😣😣জীবনটা বেদনার।
ধ্রুব হাসি থামিয়ে বললো।
হয়েছে অনেক কথা বলেছেন আর যদি একটা কথাও বলো কিছু মানবো না ডিরেক্ট তোমার গালে কিস,করে দিবো।
তারাঃ😲😲😲😲😲
ধ্রুবঃ😏😏😏😏😏😏
তারা গালে হাত দিয়ে বসে রইলো।
আর বিরবির করে বলতে লাগলো-
উমমম আইসে কিস করতে আসুক কাছে সেফটিপিন দিয়ে মুখ সেলাই করে দিমু খচ্চর ব্যাটা। 😡😡😡😡
ধ্রুবঃ যদি বেশি বেশি বিরবির করো তাহলে অন্য কিছুও করতে পারি😏😏😏😏
তারাঃ😵😵😵😵😵কিছু কমু না(তারা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।)
😷😷😷😷😷😷

কিছুক্ষন পর…………………….

গাড়ি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে থামলো।
গাড়ি থামতেই ধ্রুব বললো তারা নামো।
তারা বাইরে তাকিয়ে দেখলো পুলিশ স্টেশনে এসেছে।
তারাঃ পুলিশ স্টেশন??আমরা এখানে কেনো?
ধ্রুবঃএকটু পরেই জানতে পারবে কেনো এসেছি। তার আগে গাড়ি থেকে নামো।
ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
তারাও হাজারো প্রশ্ন নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
দুজনেই পুলিশ স্টেশনে ঢুকলো।
পুলিশ স্টেশনে ঢুকেই তারা অবাক। কারন পুলিশ স্টেশনে নিলয় বসে আছে। নিলয় রক্তাক্ত অবস্থায় আছে। মনে হচ্ছে কেউ ওকে টর্চার করেছে।
তারা নিলয়কে দেখে আর থেমে থাকতে পারলো না দৌড়ে নিলয় এর কাছে গেলো।
তারাঃ নিলয়! নিলয়! তোমার কি হয়েছে?তোমার এই অবস্থা কেনো?😢😢😢😢
নিলয়,কিছু বলছেনা চুপচাপ বসে আছে।
তারাঃ নিলয় তোমার কি হয়েছে? কে এমন করেছে?
তারার কান্না আসছে। আসবেই বা না কেনো তারার সবচেয়ে ভালো বন্ধু যদি কেউ হয় সে হলো নিলয়।
তারাঃ নিলয় বলো!!!!
ধ্রুবঃ আমি বলছি তারা। নিলয় এর এমন অবস্থা কেনো হয়েছে আর কে করেছে?
তারাঃ আপনি??আপনি জানেন কে করেছে?বলেন কে করেছে!!!😢😢😢
ধ্রুবঃ আমি করেছি।
তারাঃমানে?আপনি করেছেন? কেনো করেছেন এমন? কি দোষ ওর। এতোটা নির্মম আপনি কি করে হতে পারেন?😠😠😠
ধ্রুবঃ নির্মম???নির্মমতার কথা বলছো তুমি?যদি আমি নির্মম হই তাহলে নিলয়কে কি বলবে?
তারাঃ কি বলছেন আপনি? কি করেছে ও?কি এমন অপরাধ করেছে যে ওকে এভাবে নির্মমভাবে মেরেছেন।বলেন!!!!!!😠😠😠😠😠😠😠
ধ্রুবঃ তারা তোমার কান্না আসছে তাই না যে ওকে আমি এভাবে মেরেছি? ওকে এতো টর্চার করেছি?আচ্ছা তারা যদি তোমার সাথে এসব টর্চার হতো তাহলে তুমি কি করতে? যদি তোমাকে কোনো বিদেশীর কাছে বেঁচে দেওয়া হতো আর ঐ লোক তোমার……..(ধ্রুব আর বলতে পারলো না)
তারা অবাক হয়ে বললো- কি বলছেন আপনি?
ধ্রুবঃসব বলছি তারা। তার আগে তুমি বসো এখানে।
তারাঃ না আমি বসবো না আপনি বলুন।
ধ্রুবঃ তারা বস প্লিজ!
তারাঃ দেখুন আমার বসা লাগবেনা আপনি বলুন। প্লিজ আপনি বলুন।
ধ্রুবঃ ওকে।
প্রথম থেকেই শুরু করি। তারা তুমি নিলয়কে কখন থেকে চিনো?
তারাঃ প্রায় ১ বছর আগে আমদের কোম্পানির সাথে নিলয় এর কোম্পানির একটা ডিল হয় তখন প্রথম নিলয় এর সাথে পরিচয়। আর পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। ও আমাকে ওকে স্যার ডাকতে মানা করে। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটার ভালোই যাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে কথাও হতো।দেখা খুব কম হতো।
ধ্রুবঃ হুমম ঠিক বলেছো তোমরা ভালো বন্ধু ছিলে কিন্তু তুমি কি কখনো ওর ফ্যামিলি ওর ঘর বাড়ি,আত্নীয় স্বজন সম্পর্কে জেনেছো?
তারাঃনা…নাহহ কারণ ওতো এতিম ছিলো। ওর কেউ নেই। ও নিজের কাজেই এই কোম্পানি খুলেছিলো।
ধ্রুবঃ তাহলে বলা যায় তারা তুমি তো কিছুই জানো না।তোমার জানারও কথা না। আসলে ও এতিম। চট্টগ্রামের একটা ছোট এতিমখানায় ও থাকতো। বড় হতে হতে ওর মাঝে কোনো গুণাগুণ আসুক না আসুক চুরি বিদ্যাটা শিখেইছিলো। কথায় আছে না চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা।কিন্তু নিলয় এতিমখানার কেয়ারটেকার এর হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিলো। এতিমখানার লকার থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো নিলয়। এতিমখানা থেকে ওকে বের করে দেওয়া হলো।কিন্তু ততদিনে নিলয় এর জলদি বড়লোক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা ওর মনুষ্যত্বকে গ্রাস করে ফেলেছিলো আর ঐ তাগিদেই নিলয় বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত হতে থাকে। আর ধীরে ধীরে চুরি ডাকাতি থেকে পাচার,হত্যা ইত্যাদি কাজ করতে শুরু করে। এই বিজনেস হলো জাস্ট একটা,মুখোশ যাতে কেউ সন্দেহ না করে। কোম্পানির আড়ালে সব অবৈধ কাজ করে নিলয়।
এবার আসা যাক তোমার কথা। তুমি কি করে নিলয় এর প্লানে এলে। নিলয় তার বিজনেস এর জন্য হালকা পাতলা কিছু ডিল করে যাতে ওর কোম্পানিও ভালো থাকে আর এই কোম্পানির আড়ালে সব কাজ করতে পারে৷ আর নিলয় যেসব যেসব কোম্পানির সাথে ডিল করে সেসব কোম্পানির দেখতে ভালো আর যাদের বিক্রি করলে টাকা ভালো পাওয়া যাবে সেসব মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে। এতে দুইটা কাজ হয় এক তো কোম্পানির ডিলের কারণে টাকা পায় আর ঐসব মেয়েদেরকে বিক্রি করে তার লাভ হয়। যেমন তোমার ক্ষেত্রে ও। নিলয় প্রথমে বিভিন্ন কোম্পানির মেয়েদের সাথে বন্ধু্ত্ব করে এরপর ওদের নিজের কোম্পানিতে আসার জন্য প্রস্তাব দেয় বেতন,বোনাস বিভিন্ন জিনিসের লোভ দেখিয়ে।তোমার সাথেও এটাই করতে চেয়েছিলো।কারণ আমাদের কোম্পানিতে তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছিলো বিক্রি করার জন্য। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো। আচ্ছা তারা নিলয় কি তোমাকে কখনো ওর কোম্পানিতে যাওয়ার জন্য অফার দিয়েছিলো?
তারাঃ হ…..হ্য…..হ্যা । হ্যা নিলয় আমাকে ব…. বলেছিলো ওর কোম্পানিতে যেতে কিন্তু আমি আংকেল এর প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজের কাজকে ভালোবাসি বলে যেতে চাইনি।😢
ধ্রুবঃদ্যাটস মাই গার্ল। নিলয় এর হাজারবার বলার পরও যখন তুমি ওর প্রস্তাবে রাজি হওনি। তখন নিলয় আশাটা ছেড়ে দিয়েছিলো। আর ডিল শেষ হওয়ার সাথে সাথে তোমাকে না নিয়ে যেতে পারার একটা চাপা ক্ষোভও মনের ভিতর রেখে দিয়েছিলো।চাইলে তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া যেতো কিন্তু এতে পুলিশ কেস হওয়ার ভয় ছিলো।আর নিলয় যাদের লোভ দেখিয়ে ওর কোম্পানিতে কাজ করাতো তাদের কোনো না কোনো ভাবে গায়েব করে দিতো আর ওদের ফ্যামিলিদেরও ম্যানেজ করে ফেলতো। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে ভিন্ন ছিলো। বাবার সাথে তোমার বন্ডিং দেখে নিলয় বুঝতে পেরেছিলো তোমাকে নিয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে।আমার বাবা সব সোর্স লাগিয়ে তোমাকে খুজবে আর এতে ওর ধরা পরার চান্স ছিলো।এজন্যই তোমাকে নিয়ে যেতে পারেনি।
তারা ভাবতে পারছেনা কি বলবে। সব কিছু ঘোলাটে লাগছে।
ধ্রুব একটু থেমে আবার বলতে লাগলো-
নিলয় নিজের ক্ষোভ নিজের কাছে রেখেই চলে গিয়েছিলো।কিন্তু সমস্যা হলো সেদিন রাফিদ এর পার্টিতে। সেদিন নিলয় ঐ হোটেলের একটা রুমে কিছু বিদেশি ক্লাইন্ট এর সাথে মেয়ে পাঁচার সম্পর্কে কিছু কথা বলছিলো।তখন ঐ বিদেশী লোকেরা তোমাকে জানালা দিয়ে দেখে আর তোমাকে ওদের কাছে এনে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। নিলয়ও জানালার দিকে তাকিয়ে তোমাকে দেখলে আগের সেই ভয়ংকর ক্ষোভ আবার জেগে উঠে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার আর এবারে কোনোভাবেই না হারার প্রত্যয় করে।
এরপর থেকে নিলয় তোমার উপর নজর রাখতে শুরু করে তোমার পিছু পিছু নিলয় আমার সম্পর্কে জানে। সেদিন তোমাকে না পাওয়ার জন্য যখন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তখন নিলয়ও আমাকে দেখছিলো। প্রত্যেকটা সময় নিলয় এর চোখ আমাদের উপর ছিলো। আমার ব্যাকুলতা দেখে নিলয় বুঝেছিলো আমি তোমার জন্য কি ফিল করি। আর আমার ফিলিংক্সকেই নিলয় হাতিয়ার বানাই তোমার বিরুদ্ধে। আর তোমার আর আমার মাঝে ভুল বুঝাবুঝির দেওয়াল তৈরী করে।
তারাঃমানে?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
এরপর ধ্রুব তারাকে সেদিনের সব কথা বলে।সব শুনে তারার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। কিইবা বলবে সে।
ধ্রুবঃতুমি চলে যাওয়ার পর যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলাম তখন নিজেকে মেরে ফেলতে মনে চাইছিলো। তবুও নিজেকে শান্ত করে এসবের পিছনে নাটের গুরুকে খুজতে শুরু করলাম। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ঠিক ২০দিন পর জানতে পারলাম সেদিন রাতের ম্যাসেজগুলো আর ফেক ছবিগুলোর পিছনে নিলয় ছিলো।
এতটুকু বলে ধ্রুব একটা নিঃশ্বাস নিলো।
একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো তখন আমি আরও পাগল হচ্ছিলাম শুধু তোমার জন্য না নিলয় এর জন্য কারণ ওকে খোজা খুব দরকার হয়ে পড়েছিলো। একদিন খবর পেলাম চট্টগ্রামে নিলয়কে দেখা গেছে আমিও দেরী না করে মিটিং এর নাম করে চট্টগ্রামে চলে আসি। আর এসেই একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিকেটরকে নিলয়কে খোজার দায়িত্ব দিই৷ কারণ আমার তোমাকে খোজাও দরকার ছিলো। আমি জানতাম না তোমার আসল ঠিকানা তাই আবার ঢাকায় ব্যাক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্যের খেলায় নিলয় এর সাথে দেখা হয়ে যায় আমার। নিলয় নিজেই আমাকে তোমার খবর বলে দেয়। এরপর আমি জানতে পারি তোমার ওর সাথে বিয়ে হচ্ছে। জানো তারা সেদিনের দিনটা আমার কাছে অভিশাপ মনে হচ্ছিলো। নিলয় এর প্লান ছিলো তোমাকে বিয়ে করে তোমাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে গায়েব করে দিবে।ঐ দিন নিলয় চলে যাওয়ার পর ভাবছিলাম কি করে এসব থামাবো আর তোমাকে যদি বলতাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে না কারণ ততদিনে তোমার মনে আমার জন্য ঘৃণা জমে গিয়েছিলো।কিছু মাথায় আসছিলো না তাই আমি নিলয়কে বিয়ের দিন কিডন্যাপ করে ফেলি আর তোমাকে জোর করে বিয়ে করে ফেলি।
তারার চোখ দিয়ে জল পড়ছে অনবরত।
আমি নিলয়কে কিডন্যাপ করে ফেলি আর ওকে আমার কোম্পানির পুরানো এক গোডাউনে ওকে আটকে রাখি। ওকে বারবার জিজ্ঞেসা করার পরও নিলয় মুখ খুলছিলো না আর কোনো প্রমাণ ব্যতীত আমি নিলয়কে তোমার সামনেও আনতে পারছিলাম না একদিন নিলয় আমার লোকদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেলো।তখন অনেক চিন্তায় ছিলাম কি করবো কারণ ও তো আমার নির্দোষ হওয়ার একমাত্র প্রমাণ। কিন্তু খোদার অশেষ রহমত ওকে আবার ধরে ফেলি। এরপর না চাইতেও ওর উপর টর্চার করতে হয় অনেকটায়।জানি এমন অমানবিকভাবে মারা আমার উচিত হয়নি কিন্তু ততদিনে ওর অবৈধ কাজ সম্পর্কে আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো তাই আর নিজেকে আটকাতে পারিনি এই জঘন্য মানুষ নামে কলংকটাকে তো মারার প্রয়োজন ছিলো। আর অবশেষে ওর মুখ খুললো আর কালকেই ও আমাদের সব বললো। আমি আর আমার ফ্রেন্ড ইন্সপেক্টর রায়হান ওর থেকে সব তথ্য আদায় করে নিই। আর রায়হানই ছিলো যে নিলয় এর মুখ খোলাতে পেরেছিলো। আর আজকে তোমার সামনে সব রহস্য খুললাম। ধ্রুব টেবিলে রাখা একটা সিডি নিয়ে তারাকে দেখিয়ে বললো -এটা হলো ওর মুখে ওর সব দোষের স্বীকারোক্তি। তুমি চাইলে দেখতে পারো।
তারা পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে।কি বলবে সে কাকে বলবে?যাকে সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবতো সেই এমন করলো। খুব কষ্ট হচ্ছে তারার। দাড়াতে পারছে না আর। বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। চারপাশ ঘুরছে তারার। সব কিছু কেমন যেনো ধোয়াশা লাগছে। না আর নিতে পারছেনা তারা। চারপাশ ধীরে ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তারার নিজেকে কেমন একা লাগছে। আর দাড়াতে পারলো না তারা মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো আর অজ্ঞান হয়ে গেলো।
ধ্রুব জলদি তারার কাছে এলো।
ধ্রুবঃতারা!! তারা!! তোমার কি হয়েছে?তারা ওপেন ইউর আইস তারা। ওপেন ইউর আইস।😢😢😢

চলবে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *