অনাকাঙ্ক্ষিত সে

অনাকাঙ্ক্ষিত সে !! Part- 10

নিশি নুয়াজের কাছে গিয়ে বলল,
“কি মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিস যার মধ্যে কোনো ম্যানার্সও নেই।”
নুয়াজ গায়ের স্যুট খুলতে খুলতে মিশ্মিকে বলল,
“কি হয়েছে?”
নিশি এবার রেগে বলল,
“তুই ওকে কেন জিজ্ঞেস করছিস? কথা তো আমি তোর সাথে বলছি।”
নুয়াজ এবার টাই খুলতে খুলতে বিছানায় বসলো।
“হ্যাঁ বল শুনছি।”
“তুই কাউকে না বলে এভাবে বিয়ে করলি কেন?”
“জানিয়ে বিয়ে করলে কি হতো?”
“কি হতো মানে? কাকে বিয়ে করবি না করবি তা তো আমাদের দেখতে হবে। মেয়ের কি আছে, কি করে এসব জানা প্রয়োজনীয়।”
“ঠিক এজন্যই তোদের জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি। আমি বুঝতে পারতেছি না তোদের এত সমস্যা কোথায়?”
“বিষয়টা এখানে শুধু সমস্যার না। হুটহাট কাউকে নিয়ে এসে বউ দাবি করলেই তো হয়না। তারমধ্যে সে যদি হয় এমন থার্ডক্লাশ একটা মেয়ে।”
“দেখ নিশি, ঠান্ডা মাথায় একটা কথা বলি। নিজের লিমিট ক্রস করিস না। এতদিন পর শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছিস। ভালোমন্দ রান্নাবান্না করবে, খাবি। সবার সাথে আড্ডা দিবি। কয়দিন থেকে চলে যাবি। আমার পার্সোনাল লাইফ থেকে ঘাটাতে আসবি না।”
“ওহ আচ্ছা! এখন আমি পর হয়ে গেছি তাই না?”
“হসনি। কিন্তু হওয়াতে বাধ্য করিস না।”
“মা ঠিকই বলেছিল। তোর কাছে এই দুইদিনের মেয়েটার মূল্যই বেশি।”
“তাহলে আর কথা প্যাঁচাচ্ছিস কেন?”
“আমি তো এটাই বুঝতে পারছিনা, এই মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে?”
“ওর মধ্যে ভালোবাসা আছে।”
“তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমরা তোকে ভালোবাসি না?”
“হুম ভালোবাসিস তো। নিজেদের স্বার্থে।”
নিশি এবার একটু চেঁচিয়েই বলে,
“বেশি বেশি বলে ফেলতেছিস।”
“আমার সাথে গলা নিচু করে কথা বলবি নিশি। যা আমার সামনে থেকে এখন যা। তোকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
“তা হবে কেন? এখন তো বউ আছে।”
“তুই কি যাবি?”
“হ্যাঁ যাবো। চেনা হয়ে গিয়েছে তোদের। আর বুঝতেও পেরেছি এই বাড়িতে আমার জায়গাটা কোথায়।”
নিশি কথাগুলো বলে প্রায় কাঁদতে কাঁদতেই চলে গেল। মিশ্মির খারাপ লাগল। হাজার খারাপ হোক। কিন্তু ভাইয়ের থেকে এমন ব্যবহার তো বোনের জন্য কষ্টদায়কই। তারমধ্যে আবার এভাবে তাড়িয়ে দিলো।
মিশ্মি নুয়াজের দিকে ঘুরে বসে বলল,
“এভাবে তাড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হলো না। ওকে একটু বুঝিয়ে বলতে পারতেন।”
“এতক্ষণ ও কিসব কথা বলল সেটা শুনোনি?”
“সব তো আমার জন্যই হয়েছে। আমাকে বিয়ে করেছেন বলেই তো বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে।”
“তুমি বারবার এই কথা কেন বলতেছো বলো তো? তুমি কি আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছো?”
“আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।”
নুয়াজ মিশ্মির দুইগালে আলতো করে হাত রেখে বলে,
“যে যাই বলুক পাগলী। কখনো কারো কথায় নিজেকে অপরাধী ভেবো না। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি এটাই চিরন্তন সত্য।”
“আমার ভয় করে। যদি আপনি কখনো আমায় ছেড়ে যান?”
“ছেড়ে গেলে আগেই যেতাম। আগে যখন পারিনি আর কখনো পারবোও না। সত্যিকারের ভালোবাসা এত ঠুনকো নয়।”
.
.
বিকালে নুয়াজ আর মিশ্মি রেডি হয়ে হাসপাতালে যায়। হাসপাতালের গেটের সামনে আলভী দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের থেকে হাত নাড়িয়ে কাছে আসে। মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,
“কেমন আছো হ্যাপি কাপল?”
মিশ্মি হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌।”
“চলুন ভেতরে যাই।”
“তোমার পারমিশন ছাড়াই একটা কাজ করে ফেলেছি মিশ্মি।”
“কি?”
“তোমার বাবাকে আমার বাসায় শিফ্ট করেছি। সেখানে তোমার মা আর মোহনাও আছে।”
“কেন?”
“দেখো এখন তো তুমি নুয়াজের সাথেই থাকবে। তোমার বাবাকে দেখার মত কেউই নেই। ঐদিকে আমার বাবা বিজনেসের কাজে প্রায়ই বাহিরে থাকে। মা বাসায় একা থাকে। ওরা থাকলে বাড়িটা ভর্তি থাকবে। তোমার বাবার ঠিকমত চিকিৎসাও করতে পারবো আমি।”
এর মাঝে নুয়াজ বলল,
“না ভাই আপনার এত কষ্ট করতে হবেনা। আমি একটা ফ্লাট কিনে দিবো। মিশ্মির বাবা-মা আর বোন সেখানেই থাকবে।”
আলভী মৃদু হেসে বলে,
“তোমাদের কাছে আমার একটাই রিকোয়েস্ট। তারা আমার কাছে থাকুক।”
নুয়াজ কিছু বলার আগে মিশ্মি বলল,
“বেশ! আপনার কাছেই থাকবে।”
“অনেক ধন্যবাদ কিসমিস।”
এরপর তিনজন মিলে আলভীর বাসায় যায়। নুয়াজ আর মিশ্মি গিয়ে আগে বাবাকে সালাম করে। মিশ্মি অপরাধীর মত মাথা নিচু করে আছে। মিশ্মির বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কেমন আছিস রে মা?”
“ভালো আছি আব্বু। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো আছি।”
তিনি নুয়াজকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“ভালো আছো?”
“জ্বী আব্বু ভালো আছি। আপনার শরীরের অবস্থা কেমন বলুন?”
“হ্যাঁ অনেক ভালো। আলভী যেই সেবাযত্ন করে তাতে কি আর খারাপ থাকার জো আছে?”
মিশ্মি নিচু স্বরে বলল,
“আব্বু তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো?”
“না মা। আলভী আমায় সব বলেছে। ভালোই করেছিস বিয়ে করে। নরক থেকে তো মুক্তি পেয়েছিস।”
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ওরা একসাথে সময় কাটালো। তারপর সন্ধ্যার দিকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে গেল। নুয়াজ মিশ্মিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে কি একটা কাজ আছে বলে চলে গেল। মিশ্মি বাড়িতে যেতেই শ্বাশুরী মা বললেন,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”
“বাবার কাছে গিয়েছিলাম।”
“নুয়াজ কোথায়?”
“বলল কি একটা কাজ নাকি আছে।”
“কাজ নাকি কোনো মেয়ের কাছে গিয়েছে দেখো গিয়ে।”
কথাটা তিনি বিদ্রুপ করেই বললেন। মিশ্মির ইচ্ছে হলো না কোনো রকম তর্কে জড়াতে। তাই সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে রইলো কিছুক্ষণ। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। চা বা কফি খেলে ভালো লাগবে। মিশ্মি সোজা রান্নাঘরের দিকে এগুলো। নাঈমার মা রান্না করছিল। মিশ্মিকে দেখে বলল,
“কিছু খাইবেন?”
“চা বা কফি আছে? থাকলে কোথায় আছে বলেন। আমি বানিয়ে নিচ্ছি।”
“না, না। আমি থাকতে আপনি বানাইবেন ক্যান? আমি বানাইয়া দিয়া আসমুনে।”
“আরে সমস্যা নেই। আমি বানাতে পারবো।”
“ছোট স্যার জানলে রাগ করবো। আপনি যান। আমি বানাইয়া দিয়া আসমু।”
অগত্যা মিশ্মি নিজের রুমে চলে আসলো। বসে বসে ফোন ঘাটছিল তখন নাঈমা দরজার সামনে এসে বলে,
“আপামনি আসমু?”
মিশ্মি দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসো।”
নাঈমা একটা বই নিয়ে এসেছে। বইয়ের পাতা বের করল বলে,
“আমি এই ইংলিশটা পারতাছি না। কইয়া দিবেন?”
“অবশ্যই বলে দিবো। দেখি বইটা।”

মিশ্মি নাঈমাকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে আর নাঈমা হা করে মিশ্মির দিকে তাকিয়ে আছে। মিশ্মি সেটা খেয়াল করে মুচকি হাসলো। বলল,
“পড়ার দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?”
“আপনি এত সুন্দর ক্যান?”
কথাটা বলে লাজুক হাসল নাঈমা। মিশ্মি শব্দ করে হেসে বলল,
“এতটাও সুন্দর নই।”
“না। আপনি মেল্লা সুন্দর। চেহারার মইধ্যে কেমন জানি মায়া মায়া।”
“তাই?”
“হুম।”
“আচ্ছা এখন পড়ো।”
“একটা কথা জিগাই?”
“তুমি কি পড়তে এসেছ নাকি গল্প করতে এসেছ বলো তো?”
“সত্যি কমু?”
“হ্যাঁ।”
নাঈমা কান চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“আপনেরে আমার অনেক ভাল্লাগে। কিন্তু কি নিয়া আসমু আপনার কাছে। তাই পড়ার বাহানায় আইছি।”
মিশ্মি হেসে বলল,
“তুমি তো খুব দুষ্টু। আচ্ছা তাহলে বই বন্ধ কর। গল্প করি।”
“আইচ্ছা।”
নাঈমা বই বন্ধ করার পর মিশ্মি জিজ্ঞেস করল,
“কি যেন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলে?”
“আপনি কি অনেক বড়লোক?”
মিশ্মি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
“না নাঈমা। আমিও তোমাদের মতই গরীব।”
“তাইলে আপনি এত সুন্দর ক্যান? আমি দেখছি, বড়লোকের মাইয়ারা সুন্দর হয়।”
“তুমি ভুল দেখেছো। আল্লাহ্-এর সব সৃষ্টিই সুন্দর। তুমিও অনেক সুন্দর।”
শেষ বাক্যটি শুনে নাঈমা যেন একটু লজ্জা পেল।
“আরেকটা কথা জিগাই?”
“বলো।”
“আপনার কি আগে বিয়ে হইছিল?”
“ধুর! না। কি বলো এসব? আমি পড়িই মাত্র কলেজে।”
“তাহলে ছোট স্যাররে বিয়া করলেন ক্যান? আপনার বিয়া হয়নাই আপনিও তো আবিয়াইত্তা পোলারে বিয়া করবেন।”
“মানে? তোমাদের ছোট স্যার কি আগে বিয়ে করেছিল নাকি?”
“আল্লাহ্। আপনে জানেন না?”
তখনই নাঈমার মা কফি নিয়ে রুমে আসে। মাকে দেখে নাঈমা বলে,
“ও মা দেহো আপায় নাকি জানেই না ছোট স্যারের আগে বউ ছিল।”
নাঈমার মা কফির মগটা টি-টেবিলে রাখতে রাখতে নাঈমাকে ধমক দিলেন।
“চুপ কর। কি যা তা কস? আর তুই এনে ক্যা? যা ঘরে যা।”
মেয়েকে ধমক দিয়ে মিশ্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনে ওর কথা বিশ্বাস কইরেন না তো। কি কয় না কয়।ছোড মানুষ তো।”
মিশ্মি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নাঈমার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“আপনি কিছু লুকাচ্ছেন আমার থেকে।”
“না ম্যাডাম। কি লুকামু? কিছুই লুকাই নাই। আমি যাই হ্যাঁ? তরকারি পুইড়া যাইবো।”
নাঈমাকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন। কিন্তু নাঈমা মিথ্যা বলেছে বলে মনে হলো না। কিছু তো একটা হয়েছেই। নুয়াজ কি তাহলে সত্যিই আগে বিয়ে করেছিল?কেউ তো কিছু জানালো না। মিশ্মির মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
রাত ১০টার দিকে নুয়াজ বাড়িতে আশে। মিশ্মি তখন একপাশ হয়ে শুয়ে ছিল। দরজা চাপিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়েই মিশ্মিকে জড়িয়ে ধরে। আদুরে গলায় বলে,
“বউটা কি আমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে?”
মিশ্মি নুয়াজের দিকে ঘুরে চোখে চোখ রাখে। নুয়াজ দুষ্টু হাসি দিয়ে মিশ্মির ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। মিশ্মি তখনও নুয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নুয়াজ যখন মিশ্মির গলার দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে যায় তখন মিশ্মি নুয়াজকে বাঁধা দেয়। নুয়াজ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মিশ্মির দিকে। মিশ্মি শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি আগে বিয়ে করেছিলেন?”

চলবে..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *