ধ্রুবতারা !! Part- 12
২মাস পর…..………….
২টা মাস কেটে গেলো।
সেইরাতে বাবার বলে যাওয়া কথাগুলা ধ্রুবর মনে একটা বিশেষ দাগ কাটে। সকাল হতেই ধ্রুব বেরিয়ে পড়ে তারাকে খুজতে। কিন্তু অনেক খোজাখোজির পরও তারার খোজ মিলেনি। এভাবে ২টা মাস কেটে গেলো কিন্তু তারাকে ধ্রুব খুজতে পারেনি। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব এখন অনেকটায় ঠান্ডা প্রকৃতির হয়ে গেছে।এখন আর কথায় কথায় মাথা গরম করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজেকে বিজি রেখেছে। সারাটা দিন কাজ আর তারাকে খোজায় মগ্ন থাকে। রাতে বাসায় ফিরে বাগানে একলা সময় কাটায়।তারার সাথে কাটানো মহুর্তের কথা মনে করে।প্রতি রাতে চোখের জলে নিজের কষ্ট বিলিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। ফরিদ সাহেব আর নিতে পারছেন না ছেলের কষ্ট। কতই বা,দেখবেন?নিজের ছেলের এমন কষ্ট দেখে কোন বাবার ভালো লাগতে পারে?প্রতিদিন খোদার কাছে শুধু একটা জিনিসই খুজেন।নিজের সন্তানের হারিয়ে যাওয়া সুখ। আর এই সুখ আবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে তারার মাঝে।
সকালে ধ্রুব অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলো।
ঘড়িটা ড্রেসিং টেবিলে রাখা ছিলো। ঘড়ি নিতে ধ্রুব যেই না আয়নার সামনে যায়। নিজের দিকে চোখ পড়ে ধ্রুবর। নিজেকে দেখে অবাক হয়ে পড়ে । কি হয়েছে অবস্থা তার।
গাল ভর্তি দাড়ি, উশকো খুশকো চুল, চোখের নিচে কালির ছাপ, চেহারাই কেমন এক নিঃস্তেজতা বিরাজ করছে। আগের ধ্রুবর সাথে মিল পাওয়া মুশকিল, শরীরটাও শুকিয়ে পড়েছে।
ধ্রুব মুচকি হেসে টেবিলে রাখা ঘড়িটা নিয়ে পড়তে লাগলো। আর বললো-দেখেছেন মি.ধ্রুব আপনার কি অবস্থা?একটা পাগলি মেয়ে আপনার এই অবস্থার জন্য দায়ী। একটা মেয়ে যে আমাকে এভাবে পরিবর্তন করবে ধারণা ছিলো না।বাবা ঠিকই বলতো ভালোবাসা হলো এমন এক অদৃশ্য অনুভূতি যা মানুষের মাঝে দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে আসে। আমার মাঝেও পরিবর্তন নিয়ে আসলো।কিছুদিন আগেও জানা ছিলো না ধ্রুব এমনও হতে পারে। সব কিছুর জন্য দায়ী তারা।
তারা তোমাকে একবার খুজে পায় আমার সব কষ্টের উসুল তোমার থেকে করে নিবো।
ধ্রুব অফিস এর জন্য বেরিয়ে পড়লো।
.
.
.
.
.
.
জানালার ধারে বসে আছে সে। নির্মল বাতাসে চুল উড়ছে। গরম গরম কফির মগে চুমক দিচ্ছে তারা। চুলগুলো মুখে পড়ছে বারবার কিন্তু কেনো যেনো চুলগুলো পিছনে সরাতে মন চাইছেনা করুক না একটু মুখের সাথে খেলা।
এই ২ মাস তারার মাঝে অনেকটায় পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো দুষ্টুমি করে না, কথা বলে না। চুপচাপ থাকে।সেদিন ঢাকা ছেড়ে পরিবারকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসে তারা। কেউ জানে না তারা কোথায়। এখানে একটা ছোট বুটিক হাইজ খুলেছে তারা। এই বুটিক খুলতে নিলয় অনেক সাহায্য করেছে। বেশিদিন হয়নি বুটিকের। ১৬/১৭ দিন হলো।ভালোই যাচ্ছে তারার দিন । পরিবার, বুটিক আর নিলয়ের মতো ভালো বন্ধু। এতো কিছুর মাঝেও কেমন যেনো এক ধরনের শূণ্যতা কাজ করে তারার মাঝে। খালি খালি লাগে। আচ্ছা এই খালি লাগা কার জন্য? সব তো সেদিনই শেষ করে এসেছিলাম তাহলে কেনো পিছু ছাড়ছেনা সেই স্মৃতি। কেনো??ভালোবাসা তো সেইদিনই শেষ করেছিলাম।
আচ্ছা আসলেই কি শেষ হয়েছিলো??
উত্তর আজও পাইনি। জানি না পাবো কি না।
এদিকে নিলয়। এই ২মাস নিলয় ছিলো যে আমার সবচেয়ে বেশি খেয়াল রেখেছে। আমাকে সব ধরনের কষ্ট থেকে দূরে রেখেছে। আমার ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে। নইলে ঐদিনের পর আমি তো নিজের মাঝেই ছিলাম না। যাকে ভালোবাসতে চাইলাম সে তো আমাকে অপমান ছাড়া কিছুই দিলো না।
নিলয় আমাকে ভালোবাসে তা আমি বুঝতে পারি। নিলয় বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে। বাবা মা রাজি। কিন্তু আমার জন্য তারা কিছু করতে পারছে না। নিলয়ও আমাকে জোর করছে না। সবাই আমার একটা হ্যা এর জন্য অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আমি তো নিজেকে মানাতে পারছিনা। চাইলেও ভুলতে পারছি না তাকে। আচ্ছা বার বার ওনাকে কেনো মনে পড়ছে। সে তো আমাকে কখনো চাইনি, কখনো ভালোবাসেনি, আমি কেনো ভালোবাসলাম? কেনো ভুলে গেলাম বড়লোক আর মধ্যবিত্তদের শুধু গল্প আর ছবিতে মিল হয় বাস্তব জীবনে নয়। বড়লোকরা শুধু আমাদের অপমান করতে পারে, আর কিছু নয়।
আচ্ছা আমি কি নিলয় এর সাথে অন্যায় করছি?বাবা মাকে কষ্ট দিচ্ছি? আমি কেমন মেয়ে নিজের বাবা মায়ের কষ্ট বুঝতে পারছিনা। নিজের জন্য এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছি। আর দিচ্ছিও কার জন্য?ঐ মানুষটা যে শুধু আমাকে নয় আমার পরিবারকেও অপমান করেছে।
না অনেক হয়েছে আর আমার জন্য কেউ কষ্ট পাবে না। আজকেই বাবা মাকে বলবো আমি বিয়ের জন্য রাজি। আর খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে আমায়। আমি আর অতীতকে আকড়ে ধরতে চাই না। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। আজকেই সব শেষ।এখন থেকে নতুন জীবনের শুরু হবে আমার। যেখানে ধ্রুব নামের কাউকে প্রবেশ করানো হবে না।
।
।
।
।
৫দিন পর……
ধ্রুব একটা ডিলের জন্য চট্টগ্রাম এসেছে। একদিনের জন্য চট্টগ্রাম এ এসেছে ধ্রুব। আজকের রাতের ফ্লাইটে চলে যাবে।
একটা রেস্টুরেন্ট এ মিটিংটা ছিলো। মিটিং শেষ করে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলো ধ্রুব। এমন সময় গাড়ি থেমে যায় ধ্রুবর।
ধ্রুবঃকি হলো এখানে গাড়ি থামালে কেনো?.
ড্রাইভারঃ বুঝতে পারছিনা স্যার দেখতে হবে।
ড্রাইভার গাাড়ি থেকে নেমে গাড়ি চেক করলো।
ড্রাইভারঃস্যার ইঞ্জিনে একটা সমস্যা হয়েছে। আমার দ্বারা হবে না। সামনেই একটা গ্যারাজ আছে ওখান থেকে লোক আনিয়ে ঠিক করে নিবো। ১ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে।
ধ্রুবঃএতো সময় কি আমি বসে থাকবো? আচ্ছা এক কাজ করি ঐদিকে একটা শপিং মল আছে। আমি বাবার জন্য কিছু নিয়ে ফেলি। অনেকদিন বাবাকে কোনো গিফ্ট দেওয়া হয় না। আচ্ছা শুনো তাহলে আমি যাচ্ছি তুমি গাড়ি ঠিক করে শপিং মলের পাশে থাকবে।
ড্রাইভারঃজ্বি স্যার।
ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
.
.
.
.
.
ধ্রুব শপিং করছে। বাবার জন্য একটা ঘড়ি নিলো। আর পারফিউম এর সেট।বাবা খুব পছন্দ করে। এবার নিজের জন্য একটা জ্যাকেট দেখছিলো এমন সময় চোখ গেলো পাশের দোকানে থাকা ম্যানিকুইনের উপর।লাল খয়েরী এর উপর কাজ করা ব্রাইডাল লেহেঙা। ধ্রুবঃআচ্ছা এই লেহেঙায় তারাকে কেমন লাগবে?নিশ্চয় পরীর মতো।না না কোনো রাজ্যের রাজকুমারীর মতো,না না অপ্সরীর মতো লাগবে।
নিজের এমন বিচলতায় ধ্রুব নিজেই হেসে উঠলো।
ধ্রুব এক দৃষ্টিতে ম্যানিকুইন এর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কোথা একটা মেয়ের হাত লেহেঙাটার উপর পড়লো।
হাত পড়ায় ধ্রুবর ধ্যান ভাঙলো।
ধ্রুবঃউফফ এটা কার হাত??ওহহ শিটট এই লেহেঙাটা কিনে ফেলবে না তো?তারার জন্য লেহেঙাটা আমায় কিনতে হবে। তারাকে পেলে এই লেহেঙাটায় দিবো।
ধ্রুব দোকানের দিকে ছুটে গেলো। দোকানে ঢুকতে গেলে ধ্রুব কারো সাথে ধাক্কা খায়।
ধ্রুবঃআই এম স……(সামনের মানুষটিকে দেখে ধ্রুব থেমে গেলো)
সামনের মানুষটিও তাকিয়ে আছে।
ধ্রুবঃনিলয় তুমি???
নিলয়ঃআ..আপনি এখানে??
ধ্রুবঃআমি তো শপিং করতে এসেছিলাম তুমি….
নিলয়ঃ আ….আমিও। আচ্ছা ভালো থাকবেন আমি যায়।
ধ্রুবঃনিলয় ওয়েট
নিলয় থেমে গেলো।
ধ্রুবঃ নিলয়;তারা কোথায়?
নিলয়ঃআ…আমি জানি না।আমি কি করে বলবো?
ধ্রুবঃনিলয় আমি জানি তুমিই বলতে পারবে তারা কোথায়।প্লিজ নিলয় বলো তারা কোথায়?ওকে আমার খুব প্রয়োজন।আই নিড হার। প্লিজ!!!
নিলয়ঃদেখুন আমি জানি না।
ধ্রুব নিলয় এর কলার ধরে ফেললো।
ধ্রুবঃতারা কোথায়?😡😡
নিলয়ঃধ্রুব আমার কলার ছাড় বলছি।
ধ্রুবঃতারা কোথায়?
নিলয়ঃধ্রুব ছাড় বলছি।
ধ্রুবঃআই ওয়ান্ট তারা।
নিলয় আর পারলোনা। ধ্রুবকে ধাক্কা দিলো। ধ্রুব ধাক্কা খেয়ে নিজেকে সামলে নিলো
নিলয়ঃতারা আমার সাথে আছে। আর কাল ওর সাথে আমার বিয়ে৷ ও আপনাকে ঘৃণা করে। আপনাকে দেখতেও চাই না ও। তারা আপনাকে ভালোবাসে না। আর এজন্যই ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। (এক নিঃশ্বাসে বললো এসব নিলয়)
এই কথা শুনে ধ্রুবর সব কিছু উলট পালট হয়ে যাচ্ছে। তারা কি করে অন্য কাউকে….
না এটা কি করে সম্ভব।
নিলয় ঃকি হলো কি ভাবছেন তারা কেনো আমাকে বিয়ে করছে? কারণ ও আমাকে ভালোবাসে। আপনাকে নয়।
আর কাল আমাদের বিয়ে আপনি অবশ্যই আসবেন। এই নিন আমাদের বিয়ের কার্ড।
ধ্রুবর হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো। আসি ভালো থাকবেন।বিয়েতে আসবেন। তারা নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তার খুশি দেখার জন্য হলেও আসবেন কিন্তু । বলে নিলয় চলে যেতে লাগলো।
ধ্রুব হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করলো। ✊✊
ধ্রুবঃসেদিন আমাকে কেউ একজন ম্যাসেজ করেছিলো যার কারণে তারাকে আমি ভুল বুঝি আর অপমান করি। আচ্ছা নিলয় তুমি কি জানো কে হতে পারে?
নিলয় থেমে গেলো। আর এগুতে পারছেনা নিলয়।
ধ্রুব কার্ডটা ফেলে দিলো। আর নিলয় এর সামনে এসে দাড়ালো।
নিলয় এর চোখে ভয় এর ছাপ দেখা যাচ্ছে।কপালে কয়েক বিন্দু ঘাম দৃশ্যমান।
ধ্রুবঃকি হলো নিলয় তোমার কপালে ঘাম কেনো?তুমি কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছো?
নিলয়ঃআমি কেনো ভয় পাবো?
ধ্রুবঃতাহলে ম্যাসেজ এর কথা শুনে তুমি..
নিলয়ঃদে…দেখো আমার অনেক কাজ আছে কাল আমার বিয়ে আমাকে যেতে হবে। বাই
বলে নিলয় চলে গেলো।
ধ্রুব রহস্যময়,একটা হাসি দিলো।পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফোন করলো-
হ্যালো প্রিয়া আমার ফ্লাইটের টিকেটটা ক্যানসেল করে দাও। আমার ঢাকায় আসতে সময় লাগবে।
….ওকে স্যার।
মোবাইল রেখে,
আমি আসছি তারা। এবার সব রহস্য ফাঁস হবে। আমাদের মাঝে থাকা দেওয়াল আমি ভাঙবোই।
চলবে……………