ধ্রুবতারা !! Part- 05
সকালে……………
ধ্রুব আর তারা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছিলো।
ধ্রুবর বাবা ঘুম থেকে উঠেছে। তাই ধ্রুব আর তারা ওনার রুমে গেলো।
ধ্রুবঃ বাবা তুমি ঠিক আছো তো?
তোমার কি হয়েছিলো?আর তোমার কি দরকার ছিলো রাতে হাটতে যাওয়ার? তোমার কি কোনো জ্ঞান নাই? তোমার কিছু হলে আমার কি হতো? তুমি… তুমি
ধ্রুব আর বলতে পারলোনা। ফরিদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
ফরিদ সাহেবঃআরে আরে এভাবে কাঁদছিস কেনো?কি হলো?কান্না থামা বলছি।থামা!
ধ্রুব চুপ হলো।
ফরিদ সাহেবঃদেখেছো তারা মা আমার ছেলেটা নায়িকা শাবানা থেকেও ভালো করে কান্না করতে পারে😂😂
তারাঃ😂😂😂
ধ্রুবঃ😩😩
তারাঃআংকেল আপনি এখন কেমন আছেন?
ফরিদ সাহেবঃআরে আমি তো ঠিকই আছি ঐ একটু পড়ে গিয়েছিলাম আর কি । এতেই তোরা এক,একটা এমবভাবে কান্না করতাসোস একটু পরে তোদের কে হসপিটালে যাইতে হবে😁😁😁
.
.
.
.
.
.
তারা বাসায় চলে যাচ্ছে। ধ্রুবও তারাকে এগিয়ে দিতে ওর,সাথে বাইরে আসলো।
তারা গাড়িতে উঠে যেতে লাগলে ধ্রুব তারাকে ডাক দে।
ধ্রুবঃতারা!
তারাঃজ্বি স্যার
ধ্রুবঃআসলে একটা কথা বলার ছিলো?
তারাঃ জ্বি বলুন।
ধ্রুবঃআসলে আমি সহজে কারো সামনে কান্না করি না। কিন্তু কাল বাবার এমন অবস্থা দেখে আসলে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি এখন তুমি…..
তারাঃআমি যাতে কাউকে না বলি আপনি কান্না করেছিলেন তাই না??
ধ্রুবঃহ্যা কিন্তু তুমি কি করে?
তারাঃআরে স্যার আন্দাজি মারলাম লেগে গেলো হিহিহি😁😁😁
প্রমিস স্যার আমি কাউকে বলবোনা আপনি শাবানা আন্টির মতো কান্না করেন।
ধ্রুবঃ😒😒😒
তারাঃ😁😁আচ্ছা স্যার আমি আসি।
ধ্রুবঃ তারা শুনো,
তারাঃকিছু বলবেন স্যার?
ধ্রুবঃআমরা কি বন্ধু হতে পারি??
তারা মুচকি হেসে বললো না আপনার মতো ধুমকেতু আমার ফ্রেন্ড না তবে ধ্রুব আমার ফ্রেন্ড হতে পারে 😂😂😂
বলে তারা চলে গেলো।আর ধ্রুব তারার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।ধ্রুব ঠোঁটে মুচকি খেলাধুলা করছে।
৭দিন পর………….
এই ৭ দিনে ধ্রুব আর তারার সম্পর্কটা অন্যরূপ নিয়েছে। তারা আর ধ্রুবর একসাথে কাজ করা, লান্চ টাইমে একে অপরের টিফিন থেকে খাওয়া, তারা ধ্রুবর ঘরে গিয়ে ফরিদ সাহেবের সাথে গল্প করা,তিনজন মিলে বিকালে চা খাওয়া, অফিস থেকে প্রতিদিন তারাকে বাড়ি পৌছে দেওয়া এসব এর মাঝে কখন যে বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার পর্যায়ে চলে গেলো তা তাদের নিজেরও জানা নেই। যখন জানতে পারলো তখন তা বলার আগেই সব শেষ হয়ে গেলো।
বর্তমান………..
ভোর হয়ে গিয়েছে। চারপাশে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ধ্রুবর ধ্যান ভাঙলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো সোনালি সূর্য নীল চাদর ভেদ করে আলো ছড়াচ্ছে গোটা পৃথিবীটাতে। শীতল বাতাস ত্বককে স্পর্শ করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ধ্রুব ঘড়িতে সময় দেখলো ৫টা ৫৬মিনিট। ধ্রুব রুৃমে ঢুকলো। তারা ঘুমিয়ে আছে এখনো। জানালায় জড়ানো পর্দার ফাঁক দিয়ে যে আলো আসছে। তাতে তারার মুখটা আরো উজ্জল হয়ে উঠেছে। সামনের চুলগুলো কপালের সাথে লেগে আছে। মুখটা তৈলাক্ত হয়ে আছে তবুও দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ভালোবাসা হয়তো এমনি প্রিয় মানুষের সব কিছুকেই ভালো লাগাতে শিখায়।
হটাৎ ধ্রুবর দূরদর্শন প্রেম এর ব্যাঘাত ঘটে তারা নড়ে যাওয়ায়৷ তারার ঘুম ভেঙে গেলো।তারা শোয়া থেকে উঠে বসলো। মাথাটা অসহ্য ব্যাথা করছে।চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছে।অনেক কষ্টে তারা ধীরে ধীরে চোখ খুললো। চোখ খুলতেই তারা দেখলো তার সামনে ধ্রুব দাড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই তারার মাথাটা আরো ব্যাথা করতে শুরু করলো।ধ্রুব তারার পাশে এসে বসলো।
ধ্রুব তারার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না।
ধ্রুবঃতারা তোমার এখন কেমন লাগছে?মাথা ঘুরছেনা তো?পানি খাবে?
তারাঃ……..
ধ্রুবঃকি হলো তারা কিছু বলছো না কেনো?
তারাঃআমার ড্রেস কে চেন্জ করলো?
ধ্রুবঃওহহ ড্রেস! কেনো আমি চেন্জ করেছি।
এটা বলার সাথে সাথে তারা চোখ বড় করে ধ্রুবর দিকে তাকালো।
তারার ভয়ংকর রাগে রঞ্জিত চোখ দেখে ঢোক গিলে বললো-আরে আমি তো মজা করছিলাম।আমি কেনো তোমার ড্রেস চেন্জ করবো। মু..মুন্নি আছে না ও চেন্জ করেছে।
তারা সন্দেহের দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকালো।
ধ্রুব ঃআরে সত্যি বলছি মুন্নি করেছে আমি না ।
তারাঃএবার মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে খাটেই বসে রইলো।
ধ্রুবঃতারা তোমার,কি কিছু দরকার?আমাকে বলো আমি এনে দিচ্ছি।
তারাঃযা বলবো তা এনে দিবেন?
ধ্রুবঃতুমি বলেই দেখ।
তারাঃসত্যি?
ধ্রুবঃহুমমম
তারাঃতাহলে আমাকে মুক্তি দিন।
ধ্রুবঃমানে??
তারাঃহ্যা আপনি আমাকে যেতে দিন। আমি থাকবো না আপনার সাথে।
তারার এমন কথায় ধ্রুবর বুক ফেটে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ,সুচ দিয়ে হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করছে।তবুও নিজেকে সামলে ধ্রুব বললো ঠিক আছে তোমাকে যেতে দিবো।
এই কথা শুনে তারার মুখে হাসি ফুটে এলো।
ধ্রুব ঃকিন্তু তার আগে….
ধ্রুব খাটের পাশে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে ফল কাটার ছুড়ি তারার হাতে দিয়ে বললো এই নাও এখান থেকে যাওয়ার আগে আমাকে মেরে যাও,।নাও মারো।
ধ্রুব তারার হাতে জোর করে ছুড়ি দিয়ে নিজেকে মারার চেষ্টা করতে লাগলে তারা ছুড়িটি ছিটকে ফেলে দিলো আর ছুড়িটা মেঝেতে পড়ে গেলো। তারাঃকি করছেন আপনি?আর কেনো?সেদিন আমাকে অপমান করে, সবার সামনে নিচু করিয়ে আপনার সাধ,মিটেনি যে আমাকে জোর করে বিয়ে করলেন। আমার ভাইকে নিজের ঢাল বানিয়ে আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমার বাবা মা আমাকে ভুল বুঝেছে শুধুমাত্র আপনার জন্য। আর কি চান আপনি?
এই বলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়লো। ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারার দিকে কতই কষ্ট না দিয়েছে নিষ্পাপ মেয়েটাকে। আজ নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে ধ্রুবর।
অনেকটা সময় পর তারা চুপ হলো।
চোখ মুছে নিলো তারা।
তারা যেই না খাট থেকে নামতে যাবে তখনই ধ্রুব বলে উঠলো -কোথায় যাচ্ছো তুমি?
ধ্রুবর এই কন্ঠে যে প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়টা আছে তা বুঝতে তারার,বেশি সময় লাগেনি কিন্তু আজ কেনো যেনো ধ্রুবর উপর ঘৃণাটায় বেশি কাজ করছে যার কারণে ধ্রুবর অন্য অনুভূতিগুলো তারার মনের বন্ধ দরজাকে খুলতে সহায়ক হচ্ছে না। তারা যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে সেদিনের কালো রাতটাকে সে,জীবন থেকে মুছে দিতো। যদি কোনো প্রিয় মানুষ বিন্দুমাত্রও মনে আঘাত করে তাহলে তা ভোলা যায় না। এই বিন্দুমাত্র আঘাত সারাজীবন মনের শান্ত শিষ্ট জগৎটাতে কালবৈশাখীর ঝড়ে রূপান্তর করে আর ধ্রুব তারাকে যে আঘাত দিয়েছিলো তা তো মনের সব অনুভূতি আবেগকে মেরেই ফেলেছিলো।
তারাঃ আমি বাথরুমে যাচ্ছি তাতেও কি আপনার পারমিশন লাগবে?
ধ্রুবঃসরি আসলে…
ধ্রুবকে বলতে না দিয়ে তারা খাট থেকে উঠে বাথরুমে চলে গেলো।
ধ্রুবঃআমি জানি তারা আমি তোমার সাথে যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। তোমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা হতে চেয়েছিলাম তোমার জীবনে সব সুখের কারণ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার সব দুঃখের কারণ হয়েছি। কিন্তু এখন কোনো দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না এটা আমার ওয়াদা তোমার কাছে। তোমার জন্য যে ভয়ংকর ফাঁদ তৈরী করা হয়েছে তা থেকে তোমাকে আমিই বাঁচাবো এটা তোমার কাছে আমার ওয়াদা।
চলবে……..