ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 04

ধ্রুব আর তারা পার্টিতে ঢুকতেই, রাফিদ এসেই ওদেরকে রিসিভ করলো।
রাফিদঃ আরে ধ্রুব ওয়েলকাম ওয়েলকাম, এতক্ষনে আসলে।
ধ্রুবঃ আসলে এমনেই আসতে লেট হয়ে গেলো। সরি।
তারাঃ😀😀😀
রাফিদঃ মিট মাই ওয়াইফ রুবিনা। আর রুবিনা এ হলো আমার বিজনেস পার্টনার ধ্রুব আর ও হলো তারা, ধ্রুবর পি.এস।
রুবিনাঃ কেমন আছেন আপনারা। আসুন।
তারাঃ জ্বি ভালো।

ওরা পার্টিতে ঢুকলো।
সবাই যে যার মতো কথা বলছে,খাচ্ছে।
ধ্রুব রাফিদ এর সাথে বিজনেস সম্পর্কে কথা বলছে। আর তারা টেবিলে বসে জুস খাচ্ছিলো। এমন সময় একজন আসলো। আর তারাকে না জিজ্ঞেসা করেই ওর টেবিলে বসে পড়লো। তারা একটু বিরক্তবোধ হলেও কিছু না বলে নিজের মোবাইলে কাজ করতে লাগলো। কিন্তু লোকটা চেয়ার নিয়ে তারার আরও কাছে এসে বসলো। তারা একটু সরে বসলো,লোকটা আরেকটু কাছে এলো, তারা আরেকটু সরলো, এবার লোকটা আরও কাছে আসতেই তারা উঠে দাড়ালো।
তারাঃ আমার কোলেই বসে যা। সে কখন থেকে দেখতাসি খালি কাছে আসার চেষ্টা করতাসোস। এমন মাইর দিমু গালগুলা লাল কইরা দিমু। জলহস্তি একটা😤😤😡😡😡😡😡😬
এই বলে তারা চলে যেতে লাগলে লোকটা তারার হাত ধরে ফেলে।
লোকটাঃযখন বলেই দিয়েছো থাপ্পর দিবা তাহলে দিয়েই দাও। তোমার নরম নরম হাতের থাপ্পরটা একটু খেয়েই দেখি। কেমন লাগে😏😏😏
তারাঃঐ বুইড়া ছাড় বলতাসি আমার হাত।
তারা হাত ছাড়ানোর ট্রাই করছে,কিন্তু লোকটা ছাড়ছেনা। তারা চিল্লাচ্ছে কিন্তু পার্টিতে মিউজিক এর কারণে শোনায় যাচ্ছে না।
তারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমন সময় কোথা থেকে ধ্রুব চলে আসে আর লোকটার হাত ধরে ফেলে।
ধ্রুবকে দেখে তারা যেনো প্রাণ ফিরে পায়। ধ্রুব লোকটার হাত ধরতেই লোকটা তারার হাত ছেড়ে দেয়। ধ্রুব লোকটার হাত ধরে টানতে টানতে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে। । তারাও ধ্রুবর পিছন পিছন যায়।
ধ্রুব লোকটাকে একটা রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
তারা বাইরে রয়ে যায়।
তারাঃস্যার লোকটাকে রুমে কেনো ঢুকালো? কি করবে স্যার?
ধ্রুব লোকটাকে রুমে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিলো। আর লোকটি মেঝেতে পড়ে গেলো। ধ্রুবর চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রচন্ড রেগে আছে ধ্রুব। একটা মেয়েকে এভাবে অসম্মান করা ধ্রুব একদম সহ্য করতে পারে না। শুধু তারাকে অসম্মান করেছে বলে ধ্রুব রাগ করেছে এমন নয়। যেকোনো মেয়েকে করলেই ধ্রুব এমন রিয়েক্ট করতো। যদিও তারাকে অসম্মান করার জন্য ধ্রুবর মাথা অতিরিক্ত গরম হচ্ছে। ধ্রুব লোকটিকে দাড় করিয়ে মারতে শুরু করলো।

এদিকে তারা কিছু বুঝতে পারছেনা ভিতরে কি হচ্ছে। কোনো আওয়াজও শোনা যাচ্ছে না।
প্রায় ১৫মিনিট পর…..
ধ্রুবঃএকটা পার্টিতে এসেছি বলে কোনো সিন ক্রিয়েট করিনি।তুই ও একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি আমিও। পার্টিতে ঝামেলা করলে পার্টিটা নষ্ট হতো। আর আমি তা চাইনি। এজন্যই তোকে এই রুমে এনে শায়েস্তা করলাম। আর কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে খারাপ আচরণ করার আগে এই দিনটার কথা মনে রাখিস।

ধ্রুব এসব বলছে আর লোকটার কলার ঠিক করে দিচ্ছে। যাতে কেউ না জানে এখানে,কি হয়েছিলো।
ধ্রুবঃএই নে ধর টিস্যু। মুখের রক্তটা মুছে ফেল। কেউ কিছু জিজ্ঞেসা করলে বলবি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। ওকে?

লোকটি মাথা নাড়ালো।
ধ্রুবঃআর বাইরে যে মেয়েটি আছে তাকে গিয়ে সরি বলবি। আর কখনো যদি কোনো মেয়ের সাথে এমন কিছু করার চিন্তা ও করস এই ধ্রুব তোর কি করতে পারে তা তোর ভালোই জানা আছে।তাই না??
এখন বের হচ্ছি। যা যা বলেছি তা তা করবি।
লোকটিঃওকে।
তারা এখনো রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে।
ধ্রুব দরজা খুলতেই। লোকটা বেরিয়ে আসলো।
তারা লোকটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করলো।
তারাঃকিরে লোকটা যাওয়ার আগে সাদা ছিলো এখন এমন লাল হয়ে আছে কেনো?দেখতে লাল হনুমান এর মতো লাগছে লুইচ্চাটাকে।😡😡😡

লোকটাঃসরি বোন মাফ করে দেন আর জীবনেও এমন হবে না। আজ থেকে আপনি আমার বোন৷ না না সব মেয়েই আমার বোন।
আমাকে মাফ করে দিয়েন আমি যায়। ঠিক আছে বোনু।

বলে লোকটা চলে গেলো। তারা অবাক এই ব্যাটাটার কি হলো।
তারাঃস্যার আপনি কি এই লুইচ্চাটারে উত্তম মধ্যম দিসেন নাকি শালা পাল্টি গেলো কি করে?😕😕😕

ধ্রুবঃএসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। পার্টিতে চলো।
তারাঃওকে স্যার।
ধ্রুবঃওয়েট। (তারা দাড়িয়ে গেলো)
এই,লোকটা তোমার ডান হাত ধরেছিলো না?
তারাঃজ্…জ্বি স্যার।
ধ্রুবঃএদিকে আসো আমার সাথে।
বলে তারাকে ওয়াস রুমে নিয়ে গেলো।
বেসিনের সামনে গিয়ে-
ধ্রুবঃহাত ধো ভালো করে।
তারাঃমানে??
ধ্রুবঃআমি বলেছি তোমার হাত দুটো ধুতে। ঐ লোক তোমার হাত ধরেছিলো তাই না?এজন্য তুমি হাত ধুবে। ভালো করে ধুবে।
তারাঃবাট স্যার??
ধ্রুবঃইফ বাট কিছু না তুমি হাত ভালো করে ধুয়ে নিচে আসবে। আমি ওয়েট করছি। আর টেনশন করো না। ঐ লোক আর আসবে না। আমি ওকে চলে যেতে বলেছি। ও আর আসবে না। সো নো ওয়ারি।
বলে ধ্রুব চলে গেলো।তারা হাত ধুতে লাগলো।
তারার মনে ঘুরছে ধ্রুবর কথা। ধ্রুব যেভাবে তারার জন্য প্রোটেস্ট করলো। ওর খেয়াল রাখলো। তাতে তারার একটা ধারণা এলো ধ্রুবর ব্যাপারে।।
তারাঃস্যার এতো খারাপও না। এই অপদার্থে,কিছু পদার্থও আছে।
নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেললো তারা।

তারা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে। হাতে ঘড়ি পরতে,পরতে পার্টির দিকে যাচ্ছিলো।এমন সময় কিছু একটা দেখে তারা থেমে যায়। তারা দুইকদম পিছনে যায়।
তারা ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো দরজার আড়ালে এক জোড়া চোখ ওকে দেখছে। চোখগুলো,দেখেই তারা ভয় পেয়ে গেলো। কেমন বিকট লাল সেই চোখ। ঐ লোকটার নয়তো?কিন্তু স্যার তো বললো ঐ ব্যাটা আর আসবেনা তাহলে এটা কে? তারার চোখাচোখি হতে মানুষটি দরজার আড়ালে চলে গেলো। তারা লোকটিকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। তারা দরজাটার দিকে এগুতে লাগলো।
দরজার কাছাকাছি আসতেই ধ্রুব চলে এলো।
ধ্রুবঃতারা তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো?পার্টিতে সবাই আছে তুমি এখানে দাড়িয়ে,কি করছো?চলো।
তারাঃকিন্তু স্যার ঐ দরজা…
ধ্রুবঃচলো তারা।
বলে তারাকে জোর করে নিয়ে চলে গেলো। তারা চোখ এখনো ঐ দরজার দিকে।

তারা আর ধ্রুব পার্টিতে দাড়িয়ে রুবিনা আর রাফিদ এর সাথে কথা বলছে। যদিও তারার মন এখনো ঐ দরজার দিকে।বারবার মনে হচ্ছে ঐ দরজার পিছনে কিছু আছে। কিন্তু কি??

এমন সময় ধ্রুবর মোবাইলে কল আসে।
ধ্রুব কল ধরতেই-ওয়াট!!!কিভাবে?কখন? আমি এখুনি আসছি।
মোবাইল রেখেই
তারা আমাদের এখুনিই ঢাকা ব্যাক করতে হবে। বাবা সিড়ি থেকে পড়ে গেছে।
তারাঃকি বলছেন স্যার। কিভাবে হলো?
ধ্রুবঃআমি কিছু জানি না। রাফিদ আমাদেরকে এক্ষুনি যেতে। সরি বাট…
রাফিদঃআরে ইটস ওকে তুমি যাও। আর আমাকে ওখানকার আপডেট দিতে থাকবা।
ধ্রুবঃওকে
বলে তারা আর ধ্রুব গাড়িতে উঠে এয়ার পোর্টের দিকে রওনা দিলো।
ধ্রুব হোটেল ম্যানেজারকে বলে তারা আর ধ্রুবর লাগেজ এয়ারপোর্টে আনিয়ে নিয়েছে।

তারা আর ধ্রুব দেরি না করে দ্রুতই ফ্লাইট এ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.ঢাকা…….
তারা আর ধ্রুবর ঢাকায় আসতে বেশি সময় লাগেনি। রাত ২টার মধ্যে ওরা ঢাকায় চলে আসলো।

ধ্রুব আর তারা দুজনেই ধ্রুবর বাড়িতে আসলো।

ধ্রুব বাড়িতে এসেই দ্রুত ফরিদ সাহেবের রুমে ঢুকলো।

তারাও ফরিদ সাহেবের রুমে গেলো।
ফরিদ সাহেব ঘুমাচ্ছিলেন। তার পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করা। হাতে প্লাসটার করা। অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছেন।

ধ্রুব ফরিদ সাহেব এর পাশে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

এদিকে তারা মুন্নিকে জিজ্ঞেসা করলো-আংকেল কি করে ব্যাথা পেলেন?তোমরা কই ছিলে?একজন মানুষের খেয়াল রাখতে পারো না তোমরা?😡
মুন্নিঃমাফ করবেন আপা। আমাদের কোনো দোষ নাই। বড় স্যার বললেন উনি নাকি নাইট ওয়াক করতে যাবেন। তাই তিনি রাতে হাটার জন্য বের হচ্ছিলেন আর সিড়িতে স্লিপ কেটে…..
মুন্নি আর বলতে পারলো না কান্না করতে শুরু করলো। তারারও কান্না আসছে। কারণ এই পৃথিবীতে তার ফ্যামিলির পর যদি কেউ থাকে সে হলো ফরিদ আংকেল। আর তারই এমন অবস্থা। তারাও মানতে পারছেনা। খুব কষ্ট হচ্ছে।
হটাৎ ধ্রুব খাট থেকে উঠে কোথায় চলে গেলো। তারা ফরিদ সাহেবের পাশে গিয়ে কম্বলটা তার গায়ে ঠিক করে পড়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

ধ্রুবকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পারছেনা তারা।
তারাঃমুন্নি স্যার কোথায়?.
মুন্নিঃআসলে স্যার এর মন খারাপ হলে উনি ছাদে যান আজও ওখানেই গেছেন। ওখানে কেউ গেলে স্যার বকা দেন।
তারাঃআচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।
.
.
.
.
.
.
তারা ছাদে গেলো। ধ্রুব ছাদের একপাশে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। তারা ধ্রুবর কাছে গেলো।
তারাঃস্যার আপনি….

ধ্রুবঃমা মারা যাওয়ার পর বাবাই ছিলো যাকে আমি আমার পাশে পেয়েছি । আমার সব দুঃখে কষ্টে, আনন্দে বাবা সব সময় আমার পাশে ছিলো আমার যাতে কষ্ট না হয় এজন্য বাবা ২য় বিয়ে করে নাই।আমার প্রত্যেকটা সুবিধা অসুবিধার খেয়াল রেখেছেন বাবা, কখনো কাজের জন্য আমাকে ইগনোর করেননি আর আমি…. ধ্রুব ছাদের ছাদের মেঝেতে বসে পড়লো আর
ধ্রুব কান্না করতে শুরু করে দিলো। তারা অবাক। আজ প্রথম ধ্রুবকে কান্না করতে দেখছে। একজন রাগী,বদমেজাজী মানুষ যে এমনভাবে কান্না করতে পারে তারার জানা ছিলো না। তারাও ধ্রুবর পাশে বসলো।
ধ্রুব একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো -আর আমি আমার কাজের জন্য বাবাকে একা ফেলে রেখে গেলাম। আর বাবার এমন অবস্থা হলো। আমি তার ছেলে,হওয়ার যোগ্য নই। আই এম আ্য ব্যাড সন।, ভেরি ব্যাড সন।বলে ধ্রুব ছাদের রেলিং এ নিজের হাত এ বাড়ি দিতে লাগলো।
তারা দ্রুত এসে ধ্রুবর হাত ধরে ফেললো।
তারাঃস্যার কি করছেন আপনি?(চিৎকার করে)
এতে আপনার কোনো দোষ নেই এটা একটা আ্যকসিডেন্ট । আপনি থাকলেও এটা হতে পারতো। আপনি প্লিজ এমন করবেন না। এতে আপনার বিন্দুমাত্র দোষ নেই।
ধ্রুব এখনো কান্না করছে।
তারাঃদেখুন স্যার আপনি যদি আর কান্না করেন তাহলে আমি কিন্তু স্যারকে বলে দিবো আপনি একটা কাঁদুরে ছেলে।
চুপ করেন বলছি৷
ধ্রুব তার,কান্না থামালো।
তারাঃবাপ রে বাপ কি কান্না। আরে স্যার তো ঠিক আছেন। সকালেই ঘুম থেকে উঠে যাবেন। আমি ওনার কাছে নালিশ করবো আর বলবো আংকেল আপনার ছেলেটা না মেল ভার্সন অফ শাবানা।খালি কান্দে। জানেন স্যার আপনি যখন কান্না করেন আপনার নাকটা না পুরো টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়
ধ্রুবঃকি বললে তুমি?😡😡
তারাঃকি..কিছু না স্যার আমি আবার কি বলবো আমি কি কিছু বলতে পারি,?হিহিহি.
ধ্রুবঃহয়েছে। আর বলা লাগবেনা। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি ও তোমাকে ঘরে পৌছে দিবে।
তারাঃনা স্যার আমি এখন যাচ্ছি না। একেবারে আংকেল এর সাথে দেখা করে চলে যাবো।
ধ্রুবঃনা না তোমার কস্ট করার প্রয়োজন নাই। তুমি বাসায় যাও।
তারাঃবুঝেছি স্যার,আমি আপনার সাথে কথা বলছি আপনার বিরক্ত লাগছে তো?ওকে আমি যাচ্ছি। আমি মুন্নির সাথে কথা বলবো। আপনার সাথে না বলে হু😤😤😤 তারা উঠে যেতে লাগলে ধ্রুব তারাকে টেনে আবার নিচে বসিয়ে দিলো ।
ধ্রুবঃতুমি বেশি,বুঝো। চুপচাপ এখানে বসো।
তারা একটা,মুচকি হাসি দিলো।আর বসে পড়লো।
তারা ধ্রুবর মন ভালো করার জন্য কথা বলতে শুরু করলো। আর ধ্রুব আজ পর্যন্ত যার বকবকে মাথা ব্যাথা করতো তার বকবক শুনতে ভালো লাগছে।অন্যরকম লাগছে।

চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *