তোমাকে খোঁজে !! Part- 11
আগেরবারের মতোই খুব ধুমধাম করে সায়ান আর আদিবার বিয়ের আয়োজন করা হয়।গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হলে রুমে গিয়ে আদিবা সায়ানের মাকে বসা দেখে।আদিবা তাকে দেখেই এগিয়ে গিয়ে সালাম করতে যায় আর সে উঠে দাড়ায়। আদিবার সামনে থেকে পিছনে কিছুটা সরে দাড়িয়ে আদিবার দিকে তাকায়।ব্যাপারটা আদিবার কাছে মোটেও ভালো লাগে না।আদিবা তার কাছে প্রশ্ন করে, আন্টি কি হয়েছে আপনার?
সায়ানের মা আদিবার এমন প্রশ্নে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলে, আবার জানতে চাচ্ছো? লজ্জা করে না তোমার? তিন তিনটা দিন একটা অন্য ছেলের সাথে কাটিয়ে এসে এখন আমার ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছো?
সায়ানের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আদিবা অনেক বড় সড় একটা ধাক্কা খায়। ভাবে, এসব কি বলছে আন্টি? তাহলে কি এই বিয়েতে আন্টি খুশি না?
সায়ানের মা আবার বলে, সমাজ বলেও একটা জিনিস আছে আদিবা।চাইলেও সবাই সবকিছু পারে না।তোমাকে আমার ছেলের বউ করলে সমাজ কি বলবে আমাদের একবারও ভেবে দেখেছো? থুতু ফেলবে সমাজ থুতু। বলবে মেয়ের কি দুনিয়াতে অভাব ছিলো যে এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে ছেলের বউ করতে হলো।
সায়ানের মায়ের কথায় আদিবার প্রচন্ড কস্ট হচ্ছে। তবুও চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে। কিছুই বলছে না।কারণ সায়ানকে আদিবা ভালোবাসে।আদিবাকে এমন চুপ থাকতে দেখে সায়ানের মা রেগে যায়।আর ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তোমার বাবার তো অনেক টাকা, তোমরা পারো টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রাখতে।হয়তো সামনা সামনি কেউ কিছু বলে না কিন্তু পিছনে পিছনে তোমাকে নিয়ে লোকে কি বলে সেটা আমি খুব ভালো করেই যানি।দেখও আদিবা আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে। এভাবে সম্মানটা নস্ট হতে দিও না।
আদিবা নিরাবতা কাটিয়ে জানতে চায়, আমাকে এখন এসব কেন বলছেন আন্টি?
সায়ানের মা আদিবার প্রশ্নে আরও রেগে যায়।আর রেগে গিয়ে ঝাঁকিয়ে আদিবাকে বলে, তুমি এখনও বুঝছো না আমি কেন তোমাকে এখানে এসব বলতে এসেছি? ছোট্ট বাচ্চা তুমি? ফিডার খাও? তোমার কাছে আসার একটাই কারণ আমার আর সেটা হলো সায়ানের জীবন থেকে তুমি সরে যাও।
সায়ানের মায়ের এমন উত্তর আদিবা আশা করে নি।সায়ানের জীবন থেকে সরে যাওয়া আদিবার পক্ষে সম্ভব নয় কারণ আদিবা ছোটবেলা থেকেই সায়ানকে খুব ভালোবাসে। আদিবা বলে, আমি পারবো না আন্টি।সায়ানকে আমি ভালোবাসি।
ভালোবাসো? এতোটা নিলজ্জের মতো কথাটা বলতে পারলে?
আন্টি।প্লিজ থামুন।আপনার এসব কথা আমি আর নিতে পারছি না।
কেন আমি কি কিছু ভুল বলছি? সত্যি করে বলো তো নেহালের সাথে তোমার বিয়ে হয় নি? তুমি আর নেহাল কাছাকাছি আসো নি এমন কি প্রমাণ আছে? তোমার নোংরা খেলার সবকিছু আমাকে মিতি জানিয়ে গেছে।ছিঃ আদিবা ছিঃ এতোটা নিচু মনের মানুষ তুমি? আমার ভাবতেও লজ্জা করছে যে তোমাকে একদিন আমি আমার মেয়ের মতো দেখতাম।
আদিবা সায়ানের মায়ের এই কথাগুলো শুনে নিজের মাথাটা নিচু করে রাখে।
সায়ানের মা আবার বলে, অনেকগুলো জীবন তুমি নস্ট করেছো আদিবা।অনেকগুলো মন ভেঙেছো।মিতি? ওর কি দোষ ছিলো বলো? তোমার জন্য ও নিজের ভাইয়ের সুখের কথা ভেবে সায়ানকে পর্যন্ত কোনোকিছু না ভেবেই তোমাকে দিয়ে দিয়েছে।কোনো স্বার্থপরতা নেই ওর মধ্যে। আর তুমি অন্যের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিয়ে নিজে সুখে থাকতে চাও? এতোটা নির্দয় আর পাষাণ মেয়ে কিভাবে হলে তুমি আদিবা?
আদিবা দুই হাত দিয়ে নিজের কানটা চেপে ধরে।আর বলে, প্লিজ আন্টি থামুন আমি আর এসব শুনতে পারছি না।
কেন শুনতে পারছো না? সায়ানকে বিয়ে করলে সারাটা জীবন এই কথাগুলো তোমার শুনতে হবেই।তাছাড়াও আইনতো নেহাল তোমার স্বামী। নেহাল যদি চায় তুমি সায়ানকে বিয়ে করতে পারবে না।
তাহলে কি করবো আমি।আপনিই বলুন আন্টি?
ভুলে যাও সায়ানকে।আর নেহালের কাছে ফিরে যাও।খুব ভালোবাসে নেহাল তোমাকে।আর মিতিও খুব ভালো মেয়ে। আমি মিতিকে আমার সায়ানের সাথে বিয়ে দিবো।
সায়ানের মায়ের কথায় আদিবা নিস্তব্ধ হয়ে থাকে।কোনো জবাব দেয় না তার কথার। শুধু ভাবে, আমাকে এতোটা অযোগ্য মনে হলো আন্টির যে সায়ানের জীবন থেকে দূরে সরে যেতে বললো? আর মিতি কি এতোই যোগ্য সায়ানের?
,
,
,
,
,
,
,
,
ওদিকে নেহাল আর মিতি আজ এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে।কারণ এই শহরটা খুব বেমানান লাগছে তাদের কাছে।ছোটবেলায় বাবা মায়ের এক্সিডেন্টে মৃত্যু হওয়ার পর এই শহরে দুই ভাই বোনের থাকার কোনো জায়গা ছিলো না।তারপর এক অনাথ আশ্রম থেকে দুই ভাই বোনকেই একজন দপ্তক নেয়।দু’বছর আগে সেও মারা গেছে।এখন আর এই ইট পাথরের শহরে তাদের কেউ নেয়।তাই তারা আর থাকবে না এই নিষ্ঠুর শহরে।যেখানে মন বলতে কিছুই নেয়। আছে শুধু মন নিয়ে খেলার মানুষ।
,
,
,
চলবে,,,,,,