তোমাকে খোঁজে

তোমাকে খোঁজে !! Part- 12

আদিবা ভাবতে থাকে এখন কি করবে! একদিকে সায়ানের প্রতি তার ভালোবাসা আর অন্যদিকে সায়ানের মায়ের করা অপমান।এমন টানা পোড়ানের মধ্যে হঠাৎ খেয়াল করে তার ফোনটা বাজছে।কিন্তু রিসিভ করতে পারছে না।সায়ানের মা ইশারায় বোঝায় ফোন বাজছে রিসিভ করো।আদিবা ভয়ে সায়ানের মায়ের সামনে আস্তে করে ফোনটা রিসিভ করে।তারপর ফোনটা কানের কাছে নিয়ে যেটা শোনে সেটা শুনেই আদিবা একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়।

কি হলো আদিবা? কে ফোন করেছে? সায়ানের মায়ের এমন প্রশ্নে কেঁপে ওঠে আদিবা।সায়ানের মা আবার বলে, কোনো কথা বলছো না কেন?

আদিবা তখনও চুপ।আদিবার এমন চুপ থাকাটা সায়ানের মায়ের পছন্দ হয় না।সে টেনে আদিবার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের কানের কাছে ধরে।আর বলে, হ্যালো! কে বলছেন?

ওপাশ থেকে যে প্রতিউত্তর আসে সেটা শুনে সায়ানের মা দু’পা পিছিয়ে যায়।আর রাগি দৃস্টিতে আদিবার দিকে তাকায়। তারপর বলে, এবার খুশি হয়েছো তো আদিবা? অবশেষে তুমি যা চাচ্ছিলে? বাসের এক্সিডেন্ট হয়েছে নেহাল আর মিতির।ওরা এখন হসপিটালে।বাঁচবে কিনা মরবে সেটা এক আল্লাহ যানে।

আদিবা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।সায়েনের মা আদিবাকে ঝাঁকিয়ে বলে, এরপরও তুমি সায়ানকে বিয়ে করবে আদিবা?

তাহলে আমি কি করবো আন্টি? আপনিই বলুন এখন আমি কি করতে পারি?

নেহালের কাছে যাও। ওর এখন তোমাকে খুব প্রয়োজন।

এটা আপনি কি বলছেন আন্টি? কাল আমার আর সায়ানের বিয়ে।

বাহহ আদিবা এতোটা নিলজ্জের মতো তোমার মুখে এখনো সায়ানের কথা বলছো? আর নেহাল? ওতো তোমার স্বামী। একবার ভেবে দেখো আদিবা তুমি কি ভুল করতে যাচ্ছ।কখনো কখনো মানবতার কাছে ভালোবাসাকে হার মানতে হয়।যাও আদিবা নেহালের কাছে যাও।

আন্টি বুঝছেন না আপনি।এটা বিয়ে বাড়ি।সারা বাড়ি ভর্তি মেহমান।এর মধ্যে ভীর ভাট্টা উপেক্ষা করে কিভাবে আমি নেহালের কাছে যাবো।

তুমি চাইলেই সব সম্ভব আদিবা।

না সম্ভব নয়। এভাবে আমি সকলের সামনে বলতে পারবো না নেহালকে দেখতে যাচ্ছি।

ঠিক আছে আমিই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।কথাটা বলে আদিবার আলমারি থেকে দুইটা শাড়ি বের করে বেলকনিতে বেঁধে ফেলে।আর বলে এখান থেকে বেয়ে নেমে যাও।আমি নিচে গাড়িতে তোমার অপেক্ষা করছি।

না আন্টি, পরে গিয়ে যদি আমার হাত,পা ভেঙে যায়।

কিচ্ছু হবে না যাও। বলে ঠেলে আদিবাকে নিচে নামিয়ে দেয় সায়ানের মা।

নিচে নেমে আদিবা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাই না।আদিবা বুঝছে না কি করবে।কিছুক্ষণ পর ঘুরে তাকিয়ে দেখে সায়ানের মা গাড়িতে হর্ণ বাজাছে।আদিবা তার দিকে তাকালে গাড়ির জানালার কাচের বাহিরে নিজের মাথাটা আর হাতটা বের করে দিয়ে আদিবাকে ইশারায় ডাকে।

না চাইতেও আদিবা এগিয়ে আসে।তারপর টেনে সায়ানের মা আদিবাকে গাড়িতে উঠায়।আর আদিবা চুপটি করে সায়ানের মায়ের পাশে বসে থাকে।কিছুক্ষণে মধ্যে আদিবা আর সায়ানের মা হসপিটালে চলে আসে।

হসপিটালের,,,,

চারিদিকে ভির আর আহাকার।একটা বাসের সাথে ট্রাকের এক্সিডেন্ট হয়েছে। ট্রাক চালক এক্সিডেন্টের সাথেই মারা যায়। আর বাসের সব যাত্রীই আহত।আর তিনজন নিহত। সায়ানের মা টেনে আদিবাকে এতো লোকজনের মধ্যে থেকে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর সেই নাম্বারে ফোন নেয় যেই নাম্বার থেকে আদিবার ফোনে ফোন এসেছিলো।একজন নার্স রিসিভ করে আর বলে, প্রেসেন্টের ফোনের লাস্ট ডায়াল কলটিতে আপনার নাম্বার ছিলো তাই আপনাকেই ফোন করা হয়েছে।ফোনে কথা বলতে বলতে নার্স এগিয়ে আসে আদিবাদের দিকে।তারপর সামনে এসে জিজ্ঞেসা করে আপনারাই কি প্রেসেন্টের বাড়ির লোক?

আদিবা চুপ করে থাকে।সায়ানের মা বলে হ্যাঁ, ইনি প্রেসেন্টের স্ত্রী।

সায়ানের মা কথাটা বলার পর নার্স আদিবার হাতে একটা ফরম পূরন করতে দেয় আর বলে।এটা পূরণ করে রিসিপশনে জমা দিয়ে আসুন।

আদিবা না চাইতেও সায়ানের মায়ের সামনে কিছু বলে না।সে যা যা করতে বলছে আদিবা তাই তাই করছে।রিসিপশনে ফরমটা জমা দেওয়া হলে পিছনে ঘুরে দাড়িয়ে দেখে মিতি দাড়ানো।মিতির হাতে, পায়ে ব্যান্ডেজ।আর কপালেও কিছুটা ব্যান্ডেজ করা।

মিতি কিছু না বলেই আদিবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে, তুমি এসেছো ভাবি? আমি জানতাম তুমি আমার ভাইয়ের ভালোবাসা একদিন ঠিকই বুঝবে। আমার ভাইয়ের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তুমি ছুটে এসেছো তাই না ভাবি?

আদিবা কিছু বলে না।সায়ানের মা মিতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, হ্যাঁ মা।ঠিক বলেছো তুমি।তারপর মিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সায়ানের মা সেই আন্টিটা মিতির হাতে আবার পরিয়ে দেয়।

এটা কি করছেন আন্টি? মিতি জানতে চায় সায়ানের মায়ের কাছে।

যেটা ঠিক মনে হয়েছে সেটা করছি।আদিবা তো তোমার ভাইয়ের কাছে চলে আসলো।এখন আমার ছেলেটার কি হবে? ওকে যে তোমার বিয়ে করতে হবে মা।

আদিবা কথাটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো।সত্যি কি আন্টি মিতির সাথে সায়ানের বিয়ে দেবে? এমন একটা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আন্টি খেললো আমার সাথে? নাহ এ মেনে নেওয়া যায় না।আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনই মিতি বলে উঠলো।আমার ভাইয়া কোথায়? এক্সিডেন্টের পর আমি অজ্ঞান ছিলাম।আমার আর কিছু মনে নেই। ভাবি আমার ভাইয়াকে দেখেছো তুমি?

সায়ানের মা বলে, নাহ এখনো দেখিনি আমরা।একজন নার্স এখানে ওয়েট করতে বলেছে।এক্ষুনি এসে আমাদের নিয়ে যাবে তোমার ভাইয়ের কাছে।

কিছুক্ষণ পর নার্সটা আসে আর আদিবাদের ডেকে নেহালের কেবিনের সামনে নিয়ে যায়। আর বলে, এখানে আপনারা দাড়ান।প্রেসেন্টের অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল।বাঁচা মরা একমাত্র আল্লাহর হাতে।

চলবে,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *