জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০৫

সবার খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে অনিকের
বউ এর রান্না অনেক মজার হবে।
কিন্তু আমার রান্না করা টমেটোর চাটনি
ও কম টেষ্টি হয়নি,, সবাই চেটেপুটে
খাচ্ছে।
সবার অগোচরে অনিক ওর বউ এর মুখে কি
যেন উঠিয়ে দিলো।
সাংঘাতিক সাহস তো ওদের,,!!
আমি আমার বরের খাওয়া দেখছি। ওর
খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে ও গত তিনদিন
যাবত অভুক্ত। তাই কোনো দিকে না
তাকিয়ে প্লেটের দিকে ওর দৃষ্টি আটকে
গেছে। শুধু খাচ্ছে আর খাচ্ছে।
আমি চুপিসারে অভির কাছে গিয়ে ওকে
বললাম এতো খাও কেনো,, অল্প খেতে
পারোনা?
আমার কথায় ও জোরে বলে উঠলো এতো
টেষ্টি খাবার কে রাঁধতে বলেছে হু।
আমার যে খাইতেই ইচ্ছে করছে।
শাশুড়ি মা বললেন কে নিশেধ করেছে
খেতে, খা তুই যতো খেতে ইচ্ছে করে।
অনিকের বউ এর মুখে দেখি এক চিলতে
হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
মেয়েটির হাসি তো দারুণ।
খাওয়া শেষে অভি বললো রেডি হয়ে
নাও। আজ তোমাকে একখানে বেড়াতে
নিয়ে যাবো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কই যাবে,,?
ও বললো গেলেই দেখতে পাবে। এরপর ওর
পাঞ্জাবীর কালারের সাথে ম্যাচিং
করে আমিও নেভি ব্লু কালারের এক
শাড়ি বের করলাম। ওকে বললাম ঠিক
আছে তো?
ও বললো হু।
এরপর প্রায় ত্রিশ মিনিট ব্যয় করলাম
শাড়ি পরার জন্য। কিন্তু পারলাম না।
শেষমেশ কোনোভাবে গায়ে জড়ায়ে
বের হলাম।
অভিকে নেভি ব্লু কালারের
পাঞ্জাবীতে দারুন মানিয়েছে ।
করা পারফিউম দিয়েছে।
চুলগুলো বাতাসে উড়ে কপালে এসে
থমকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ফুঁ দিয়ে চুল
গুলো কপাল থেকে সরিয়ে দেই।
ফর্সা গাল ভর্তি খোঁচাখোঁচা দাড়ি।
অসাধারণ লাগছে দেখতে। এভাবে বুঝি
ওকে কখনো দেখিনি।
হিহিহি, এটা আমার বর। জুনিয়র বর।
ও আমার দিকে চেয়ে বললো তুমি কি
এভাবে যাবে,,?
এতোক্ষন কি করলে তুমি? উফফফ, এ জন্যই
মেয়েদের নিয়ে কোথাও যাওয়ার প্লান
করতে নেই।
— আমি শাড়ি পড়তে পারছিনা। এতোক্ষন
তো চেষ্টা করছিলাম।
— কেমন চেষ্টা করছিলে শুনি,,?
একটা শাড়ি পরতে পারোনা,,!
— আমি কি বিয়ের আগে শাড়ি পরতাম
নাকি,
যে শাড়ি পরা শিখবো,?
— ঠিক আছে আমি আম্মুকে পাঠিয়ে
দিচ্ছি। উনি তোমাকে পড়িয়ে দিবেন।
— আচ্ছা,
একটু পর অভি এসে বললো আম্মু বাসায়
নেই। তুমি এসব বাদ দিয়ে অন্য কিছু পর।
— আচ্ছা আরেক বার চেষ্টা করে দেখি,
এই বলে আবার শাড়িটা পরতে ধরলাম।
অভি আমার শাড়ি পরা দেখছিলো বুঝি,
তাই ও এগিয়ে এলো। এরপর দুজনের
চেষ্টায় শাড়ি পরতে সক্ষম হই।
অভি বাইক চালায় আর আমি পিছনে বসে
ওর কাঁধে হাতটি রাখি।
ঝড়ের বেগে বরটি আমার বাইক
চালাচ্ছে।
খুব ভালো লাগছে। বাতাসে আমার চুল
উড়ে বারবার অভির মুখে ও ঘাড়ে পড়ছে।
কিছুদূর গিয়ে অভি বাইক থামিয়ে
আমাকে নিয়ে একটা ফুচকার দোকানে
আসলো। এরপর আমরা ফুচকা খেলাম।
তারপর আমরা একটা পার্কে আসলাম। অভি
আমাকে নিয়ে নিরিবিলি এক জায়গায়
এসে ঘাসের উপর বসলো। জায়গাটি বেশ
মনোমুগ্ধকর।
পাশেই একটি শানবাঁধানো পুকুর। আমি
সেখানে গেলাম। উফফফ দৃশ্যটি দেখতে
কি যে ভালো লাগছে,,,!!
পুকুরে মাছ গুলি ভাষছে আর ডুবছে।
এরপর আমরা দুজন অনেক গল্প করলাম। অভি
অনেক সুন্দর করে গোছায়ে কথা বলতে
পারে। জুনিয়র হলেও ও অনেক
রোমান্টিক। কথা বলতে বলতে কখন যে
ওর হাতের ভিতর আমার হাতটি
নিয়েছিলো বুঝতেই পারিনি।ও যখন
বিষয়টি বুঝতে পেলো তখন সাথে সাথেই
হাতটি সরিয়ে নিলো।
এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।মাথার উপর
দিয়ে এক ঝাক পাখি উড়ে গেলো তাদের
গন্তব্যে।
এরপর আমরা আমাদের নিড়ে ফিরলাম।
রাতে অভি তাড়াতাড়ি বাসায় এলো।
এসেই ও পড়তে বসলো। দু মাস পর ওর
অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল
এক্সাম।
আমি ওকে বিরক্ত না করে শুয়ে পরলাম।
রাত একটায় জেগেছি। দেখি ও পড়তে
পড়তে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর
ওকে ডাক দিলাম। ওর কোনই সাড়া
পেলাম না, কাছে
গিয়ে ওর গায়ে হাত রাখতেই চমকে
উঠলাম।একি,,!!
গায়ে তো প্রচণ্ড জ্ব্রর। কি করবো ভেবে
পাচ্ছিলাম না। সারারাত জেগে ওর
সেবা করলাম।
পরদিন ঘুম থেকে উঠলাম এগারো টায়।
উঠে দেখি আমাকে জরিয়ে ধরে অঘোরে
ঘুমোচ্ছে। আমি কাশি দিলাম। সাথে
সাথেই অভি লাফ দিয়ে উঠে বসে
পরলো। ও অপ্রস্তুত এর মধ্যে পরে গেলো।
বিষয়টি আমার চোখ এড়ালো না।
আজ আমার বৌভাত।
এগারোটা বেজে গেছে। না জানি
কতোজন এসে ডেকে সাড়া না পেয়ে
ফিরে গেছে।
ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে বারান্দায় এসে
দাড়ালাম। যাক বাঁচা গেলো,,এদিকে
কেউ নেই।
অভি ফ্রেশ হয়ে এসে বললো আগামীকাল
আমি ঢাকায় যাবো। তুমি চাইলে তোমার
বাবার বাড়ি যেতে পারো আজ তোমার
বাবা মায়ের সাথে।
অভি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
অভির যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে
গেলো। ওকে বললাম আর কটা দিন থেকে
যাওয়া যায়না,,?
— না। সামনে আমার পরিক্ষা।
— কবে আসবে?
— পরিক্ষা শেষে
— তোমাকে খুবই মিস করবো।
— হুম, আমিও
— আমিও কি
ও আমার কাছে এসে এই প্রথম আমার দু
চিবুক ধরে আমার মুখ উপরে উঠিয়ে আমার
কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকিয়ে
চোখে চোখ রেখে বললো বললো, তুমি
তো
আমার বউ, তাহলে আমি কাকে মিস করবো
বলোতো,,,
অবশ্যই তোমাকে। ভেবোনা, আর তো
দুমাসেরই ব্যাপার। দেখতে দেখতেই
কেটে যাবে। এরপর এসে
আমরা পুর্ণরুপে স্বামী স্ত্রী হবো।
চলবে,,,