জুনিয়র বর—— পর্ব -০৬
খানিকবাদে পার্লার থেকে আনা
বিউটিশিয়ানরা আমাকে সাজাতে
এলো।অনিকের বউ কে উনারা
সাজিয়েছে। মেয়েটা দেখতে অনেক
সুন্দর। অনিকের বউ কে উনারা আমার রুমে
আনলো। ওর এখনো কিছু সাজুগুজু বাকি
আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ডানাকাটা
পরী বসে আছে। কিন্তু বিষণ্ণ মনে। মুখে
একটুও হাসি নেই।
হয়তো ওর বাড়ির কথা কিংবা বাবা
মায়ের কথা মনে পড়েছে।
কিন্তু এসব এখন ভেবে লাভ কি ,,?
একটুপর শাশুড়ি মা এসে তাড়া দিয়ে
গেলেন। বলে গেলেন নিচে সবাই অধির
আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে নতুন বউ
দেখবে জন্য।
এরপর আমাকে দু ঘণ্টা ধরে সাজালেন।
সাজুগুজু শেষে আমাকে আয়নার সামনে
এনে দাড় করালেন। আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা নিজেই
চিনতে পারছিনা।
আমার বিশ্বাস, আমার এই মায়ামাখা
মুখখানি একবার দেখলে,একশত ভাগ
গ্যারান্টি সে দ্বিতীয় বার দেখার জন্য
ফিরে তাকাবেই।
আমাকে অনিকের বউ এর মতো ডানাকাটা
পরী লাগছেনা তবে পেত্নী ও
লাগছেনা।
সত্যিকারের আমিটা এতো সুন্দর না।
শ্যাম বর্নের দেখতে, ঠোঁটের নিচে একটা
কালো তিল আছে। ভ্রু দুটো জোড়া, লম্বা
পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি ও ওজন ছেচল্লিশ
কেজি। হেহে, নিজের বর্ননা এভাবে
দেয়াতে হাসি পাচ্ছে।
তারপর আমার বর অভি আর অনিক এলো
আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। দুজনই একই
কালারের শেরওয়ানী পরেছে।কিন্তু
অভিকে দারুন লাগছে।
অভির দৃষ্টি এসে আমার দৃষ্টিতে থেমে
গেলো।আমার স্পন্দন বেড়ে গেলো কিন্তু
পলক পরছেনা। চোখে চোখে কথা হচ্ছে।
কি ভয়ংকর কঠিন সে চোখের ভাষা।
জানিনা এ কথার মিনিং।চোখ যেন
ছাড়বেই না কথা বলা। অতি কষ্টে
চোখকে ফিরিয়ে নিলাম।
অসভ্য চোখ আমার, তবুও সবার অগোচরে
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো।
একবার অভির চোখে ধরা পড়ে গেলাম।
অভি আমাকে দেখিয়ে ভ্রু নাচিয়ে
হাসছিলো।
লজ্জা পেয়ে মাটির দিকে মুখ করে
থাকলাম।
এরপর ভারী শাড়ি আর ভারী গহনাগাঁটি
পড়ে ষ্টেজের দিকে এগুতে থাকলাম।
এরপর আমরা ষ্টেজে এসে বসলাম।
আমার জানা ছিলোনা অভির এততো
গুরুজন। সবাইকে পায়ে সালাম করতে
করতে আমার কোমর ব্যথা হয়ে গেলো।
অনিকের বউ এর ও একই অবস্থা।
মুখ কাছুমাছু করছে।
এরই ফাকে অভি আমাকে বললো, নদী
তোমাকে একটা কথা বলতে চাই,,
— কি কথা,,
— আমার বউটাকে খুবই মিষ্টি দেখাচ্ছে।
মনে হচ্ছে,,,,,,,,,
— কি মনে হচ্ছে,,,,,,
— বলা যাবেনা, বললে তুমি রাগ করবে,,,
— আরে বলো, রাগ করবোনা
— সত্যি তো,,?
— হুম সত্যি
—তাহলে বলেই ফেলি,,,
মনে হচ্ছে তোমাকে শক্ত করে ধরে,,,,,,,
— শক্ত করে ধরে কি,,,
— শক্ত করে ধরে দিই এক দৌড়।
— কোথায়,,,!!
— কোথায় আবার,,, টয়লেটে,,,
— কিহ্,,,??
— আমি চাইনা আমার বউ কে অনিক ওর
দৃষ্টিতে ওর বউ এর সাথে কমপেয়ার করুক।
— আজব তো,,,তোমার মাথা ঠিক আছে
তো,,?
— এতোক্ষণ ছিলোনা। এখন ঠিক আছে।
— মানে,,?
— কিছুনা। তুমি এখানে ওই দিকে মুখ
করে বসে থাকবে আমি না আসা অব্দি।
— হু।
এরপর ও চলে গেলো। সত্যিই ওর এমন
পাগলামি দেখে খুব হাসি পাচ্ছিলো।
রাত নটা বাজে। আমাকে অভি আম্মুর
বাসায় যেতে দিলোনা। বললো আমি তো
কাল চলে যাবো। আজকের রাত একসাথে
কাটাই। আগামীকাল আব্বু ও আম্মু
তোমাকে রেখে আসবে।
ওর কথায় আমি সম্মতি জানালাম। আমার
ও অভিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো
না। তাই থেকে গেলাম।
অভি কাল চলে যাবে। আমি এটা কেনো
জানি মেনে নিতেই পারছিনা।যখনি
মনে হচ্ছে তখনি বুকের ভিতর চিনচিন
ব্যথা অনুভব করছি।
অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গাল
বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
অভি এসে আমার চোখের সে পানি
মাটিতে পড়তে দিলোনা। ও হাত
বাড়িয়ে দিলো।
এরপর সে রাত আমার চোখে ঘুম আনতে
পারেনি। আমি ঘুমানোর কতো চেষ্টা
করলাম কিন্তু সবটাই বৃথা।
মাঝরাতে অভির ঘুম ভেঙে যায়। ও তখন
আমাকে বললো ঘুমোওনি,,?
— না , ঘুম আসছেনা।
— কেনো,,?
— জানিনা, হয়তবা,,,,
ও আমার মুখে ওর আঙুল রেখে চুপ করতে
বললো।
এরপর ও ওর বাম হাত বাড়িয়ে বললো
এখানে এসে শুয়ে পড়।
আমি ওর বাহুতে মাথা রেখে দেই।
ও আমার এলোচুল কপাল থেকে সরিয়ে
কপালে একটি চুমু একে দিয়ে বললো
সোনা বউ এবার তো ঘুমাও,,,,
চলবে,,,