জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 02

আমি চার্জার লাইটের আলোতে নীলাদ্রীসের মুখটা দেখতে পাই।
নীলাদ্রীস আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আর আমিও অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাই।
ওর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করি।
ও ধীরেধীরে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার কাছের কাছে ওর ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বলে,
এই মেয়ে ভালবাসি।
আমি চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে যাবো আর তখনই নীলাদ্রীস আমার মুখ আবারো চেপে ধরে বলে,
এই এই আস্তে আস্তে,
এত তাড়া নেই।যা বলার পরে ভেবে চিন্তে বলো,
কেমন?
আমি যাচ্ছি।
তুমি এসো।
সেদিন আমি যতটা না অবাক হই।তার থেকে বেশি খুশি হই।আমার ভালো লাগা টা অবশেষে ভালবাসায় রুপ নিতে চলেছে।
প্রোগ্রাম শেষ হয়।
প্রোগ্রাম শেষে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা যে যার মত ঘুমাবো।
কিন্তু নীলাদ্রীস আমাকে ডেকে বলে,
আজ ঘুমাতে হবেনা তোমার।চলো আমরা সারারাত গল্প করি।
আমি না বলি।
আর বলি,আমার ঘুম পাচ্ছে।
দিনে কথা হবে।
নীলাদ্রীস রাগ করে আমার সাথে।আর আমি হাসতে হাসতে আমার রুমে চলে যাই।
পরের দিন সকালে সবাই মিলে এক সাথে নাস্তা করি আমরা।
তারপর আমি আর নীলাদ্রীস ঘুরতে বের হই।
সারা রাস্তা হাঁটতে থাকি।কিন্তু ওর মুখে কোন কথা নেই।
বুঝতে পেরেছি যে ও অভিমান করেছে।গত কাল রাতে ওর সাথে গল্প করিনি বলে।
ওর সাথে রাত জাগি নি বলে।
-উঁহু উঁহু
কোন সাড়া নেই।
-কি হলো?কথা বলবেন না?
আচ্ছা রাগ করেছেন বুঝি?
-আরে বুদ্ধু,একটা রাত গল্প করিনি বলে এত অভিমান?একটা রাত তোমার সাথে জাগিনি বলে এত রাগ?
কোন কথাই বলছেনা নীলাদ্রীস।
যাও এর শাস্তি হিসেবে আমার জীবনের সমস্ত রাত গুলো তোমায় দিলাম।
সাথে দিলাম সব গুলো দিনও।
এবার খুশিতো?
-তিয়াসা,
আরেক বার বলো কি বললে?
-আই লাভ ইউ বুদ্ধু।আই লাভ ইউ।
নীলাদ্রীস আমার কথা শুনে কান্না করে দেয়।
আমি ওর কান্না দেখে অবাক হয়ে যাই।
-কি হলো?

এভাবে কাঁদছো কেন?
-আসলে আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো রাজি না।
সেই জন্য আমার সাথে গল্প না করেই ঘুমাতে চলে গেছো।
-তুমি আসলেই একটা পাগল।
এবার চিন্তা মুক্ত হয়েছো তো?
এবার পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী ধরো বুঝলে?
আমার বাবা মা কিন্তু বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবেনা,হুম।
-ওসব তোমার চিন্তা করতে হবেনা।তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।
-হুম থাকবো।
শুরু হয় আমাদের এক সাথে ভালবাসার পথ চলা।
কয়েকদিন থেকেই নীলাদ্রীস সহ ওর পরিবারের সবাই আবার শহরে চলে যায়।
আমাদের বাড়ীটা পুরো খালি হয়ে যায়।বাড়ীর চেয়ে
নীলাদ্রীসের জন্য বুকের ভেতরটাই আরো বেশি ফাঁকা হয়ে যায়।
চলতে থাকে আমাদের অবুঝ প্রেম।
সারারাত জেগে মুঠো ফোনে কথা বলা।
কনকনে শীতের রাতে নীলাদ্রীস ফ্যান চালিয়ে আমার সাথে কথা বলে।
-নীলাদ্রীস,
-হুম।আমি না তোমাকে নীল বলে ডাকবো।তোমার কোন আপত্তি আছে?
-একদম নেই মহারাণী।
আমার কোন আপত্তি নেই।
তোমার যা ইচ্ছে তুমি আমায় বলতে পারো।যেই নামে ইচ্ছে আমাকে ডাকতে পারো।
-আজ খুব শীত তাইনা?
-হুম খুব।
-তোমার তো গরম লাগে আমার মনে হয়।
-কেন কেন?এটা মনে হয় কেন?
-মনে হবেই বা না কেন বলো?
এই শীতের রাতে তুমি ফ্যান চালিয়ে শুয়ে আছো।
গরম না লাগলে এই শীতে কেউ ফ্যান চালায়?
আর নয়তো তুমি পাগল হয়ে গেছো।তাইতো এই শীতে ফ্যান চালিয়ে শুয়ে আছো।
-হায়রে,যার জন্য করি পাগলামি সেই বলে পাগল।
-মানে?
-মানে হচ্ছে,
আমি এই কনকনে শীতের রাতে ফ্যান চালাই ঠিকই,কিন্তু কম্বল গায়ে দিয়ে জাপ্টে ধরে শুয়ে থাকি।
-কম্বলই যদি গায়ে দাও তাহলে ফ্যান ছাড়ার কি দরকার?
-এইটুকুই যদি বুঝতে তাহলে কি আর আমাকে এত কাহিনী বুঝাতে হয়?
ফ্যান চালাই যাতে আম্মু আব্বু কোন রকম কথার আওয়াজ না পায়।
ফ্যানের শব্দে আমি যে কথা বলি সারারাত যেটা যেন না বোঝা যায়।
তাই ফ্যান ছেড়ে কম্বলের নিচে ঢুকে মুখ গুঁজে কথা বলি।
বুঝলা গাধী?
যার জন্য এত কিছু করি সে ই বুঝেনারে আমায়।
-হায়রে,এত ভালবাসা রাখবো আমি কোথায়?
-কেন?কলিজায়।
-হা হা হা।
দেখতে দেখতে আমাদের ভালবাসার অনেক গুলো দিন কেটে যায়।
আমার জন্মদিনও চলে আসে এর মধ্যে।
আমি সারারাত ওর উইশের অপেক্ষা করি।
ও রাতে আমার সাথে কথা বলে ঠিকই কিন্তু একটা বারের জন্য আমাকে উইশ করেনা।
যখনই কথার মাঝে আমার নাম ধরে ডেকে উঠে,
ভাবি এই বুঝি উইশ করবে,এই বুঝি উইশ করবে।
কিন্তু না।
ও আমাকে আর উইশ করেনা।
মন টা খুব খারাপ হয়ে যায়।
কান্নাও পায় খুব।কিন্তু কিছু বলিনা।

হঠাৎ কথার মাঝখানে আমাকে বলে আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা।রাখি এবার।
আমি আরো বেশি আঘাত পাই।একে তো আজ আমার জন্মদিন।তার উপর ও উইশ করেনি।
আবার আজ কিনা মাঝ রাতেই ফোন রেখে দিতে চাইছে।
আমি কিছু বলে উঠার আগেই নীল লাইন টা কেটে দেয়।
আমি মন খারাপ করে কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
হঠাৎ সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার সারারুম বেলুন দিয়ে সাজানো।
আর আমার ড্রেসিং টেবিলের পাশে অনেক গুলো ফুল,ছোট একটা বক্স আর একটা কেক।
সকাল সকাল এমন সারপ্রাইজ তিয়ারা ছাড়া আর কে দিবে।
আমি তিয়ারা তিয়ারা করে চিল্লাই।
তিয়ারা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,কি হয়েছে আপু?
কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?
ভয় পেয়েছো?
-আরে না।থ্যাংক ইউ।তোকে থ্যাংক ইউ বলতে ডেকেছি।
-কেন আপু?
-আমি অনেক খুশি হয়েছিরে এই সারপ্রাইজ পেয়ে।
থ্যাংক্স এগেইন।
-ওহ এই কথা?তাহলে তুমি আমাকে না।
নীলাদ্রীস ভাইয়াকে থ্যাংক ইউ দাও।
-মানে?তাকে কেন দিবো?
-কারণ,এই প্ল্যান টা আমার।
আমি নীল কে দেখে অবাক হয়ে যাই।
-নীল তুমি?
নীল আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
হ্যাপী বার্থডে তিয়াসা।
এই সারপ্রাইজ টা দেয়ার জন্যই উইশ টা করিনি।
সরি।

আমি খুশিতে কাঁদবো নাকি হাসবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
নীল আমার কাজিন হয় বলে আম্মুও কোন কিছু মাইন্ড করেনি।
এমন কি তিয়ারাও না।
তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আম্মুকে ডেকে সবাই মিলে কেক কাটি।
পরে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে আমি বক্স টা খুলে দেখি।
বক্সটার ভেতরে একটা শোপিচ।
যেখানে একটা ছেলে পুতুল মেয়ে পুতুলকে ধরে রেখেছে নাচের ভঙ্গিতে।
আমি গিফট টা পেয়ে খুব খুশি হই।
সাথে আরো খুশি হই ওকে দেখে আর সারপ্রাইজ পেয়ে।
নীল দুপুরে আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে বিকেলের দিকে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
*
তিয়াসা,কি করছিস এখানে তুই?
বাসর ঘর সাজাতে হবেনা?
যা কয়েক জনকে নিয়ে নীলাদ্রীস আর তিয়ারার বাসর ঘর সাজিয়ে ফেল।
রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
-হুম যাচ্ছি…
চলবে…