জীবনের গল্প !! Part- 03
তিয়াসা,কি করছিস এখানে তুই?
বাসর ঘর সাজাতে হবেনা?
যা কয়েক জনকে নিয়ে নীলাদ্রীস আর তিয়ারার বাসর ঘর সাজিয়ে ফেল।
রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
-হুম যাচ্ছি…
আমি নিজ হাতে নীল আর তিয়ারার বাসর ঘর সাজাই।
শুধু তাই নয়,খাটের উপর খুব সুন্দর ভাবে ফুল দিয়ে N+T লিখি।
তবে এই T টা তিয়াসার জন্য লিখা না।
তিয়ারার জন্য লিখা।
বাসার সবাই আজ খুশি।
খুশি নীলের বাবা মা সহ আমার বাবা মাও।
নীলও খুব হাসি খুশি।
হাসি যেন ওর ঠোঁটে লেগেই আছে।
আর খুশি হবেই বা না কেন,
তিয়ারা যে খুব সুন্দরি।বন্ধুরা সবাই একে একে নীলকে বলে যাচ্ছে,বন্ধু জিতছো তুমি,জিতছো।
বন্ধুদের এই কথায় নীল যেন আরো ১০ গুন খুশি হয়ে যাচ্ছে।
আমি শুধু নীলের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবি,
এই সেই নীল,যে কিনা আমার জন্য সেই দূরের শহর থেকে গ্রামে আসতো।
শুধু মাত্র আমাকে একটা নজর দেখার জন্য।
কখনো কখনো বাসায়,আবার কখনো কখনো রাস্তা থেকে দেখেই চলে যেতো।
তো চলছিলো আমার আর নীলের গভীর ভালবাসা।
কিন্তু একদিন নীলের মা টের পেয়ে যায় নীল যে আমার সাথে ফোনে কথা বলে।
তাই নীলের মা আম্মুকে ফোন করে সব কিছু বলে দেয়।
আর আম্মুও আমাকে ওয়ার্নিং দেয় আমি যে আর নীলের সাথে কথা না বলি।
নীলের মা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নীলকেও না করে দেয় যে ও যেন আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে।
কারণ তারা এই সম্পর্ক মানবেনা।
কারণ তারা আত্মীয়র মধ্যে আত্মীয়তা করবেনা।
এমন সম্পর্ক নাকি তাদের পছন্দ না।
তাছাড়া নীল এখনো অনেক ছোট।
ওর বিয়ের বয়স হতে অনেক দেরি।
এত দিনে আমার বিয়েও হয়ে যাবে।
এইটাই বলে বুঝায় নীলকে তারা।
আম্মুও আমাকে না করে কারণ নীল বেকার।
তাছাড়া সবে মাত্র স্টুডেন্ট ও।বয়সও কম।
আর আম্মু আব্বুও চায়না আত্মীয়তার মধ্যে কোন সম্পর্ক করতে।
তাদের মেইন সমস্যাই নাকি ছিলো আমরা রিলেটিভ,এই কারণ।
নীল ওর বাবা মাকে বুঝায় কিন্তু তাদের ধারণা আত্মীয়তার মধ্যে আত্মীয়তা করলে নাকি সম্পর্ক টিকেনা।
সত্যি মিথ্যা আদৌ জানিনা আমি।
আর এও জানিনা,কেন দুই পরিবার আমাদের সম্পর্ক টাকে মানলোনা।
নীল আর আমি দুজনই খুব আঘাত পাই।
কিন্তু যেহেতু আমরা রিলেটিভ।তাই চাইনি আমরা পালিয়ে গিয়ে দুই পরিবারের সম্পর্ক টাকে নষ্ট করে দেই।
আর তাই দুজনই সিদ্ধান্ত নেই আমরা আলাদা হয়ে যাবো।
অন্তত আমাদের বাবা মায়ের ভালোর জন্য।
আর তাই আমরা ধীরেধীরে কথা বলা কমিয়ে দেই।
আস্তে আস্তে মায়া কাটানো শিখতে থাকি।
কিন্তু ভালবাসা ভোলা কি এতই সহজ?
একটা সময় আমাদের দুজনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
আমার যেই নাম্বার ও জানতো সেই নাম্বার নষ্ট হয়ে যায়।
আমিও আর সিম নেই নি অনেক দিন।
তাই আর কথাও হয়নি।
একদিন ভাবলাম ফেসবুক আইডি খুলি,
তারপর সবার সাথে এড হই।
যেহেতু আমার ফেসবুক আইডি নেই।
যেই ভাবা সেই কাজ,
নতুন সিম নিলাম।
একটা ফেসবুক আইডিও খুললাম।
আইডি দিয়ে আত্মীয় স্বজন সবাইকে রিকু দিলাম।
কিন্তু নীলকে রিকু দেয়ার সাথে সাথে কিছু ক্ষণ পর ওর আইডি আর আমি খুঁজে পেলাম না।
কারণ ও আমার রিকু পাওয়ার সাথে সাথে আমাকে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।
খুব অভিমান হলো।
আমিও আর কোন ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম না।
প্রায় এক বছর পর আমার ব্লক খুল্লো।
আমি মেসেজ দিলাম,
ব্লক টা খুলার কি দরকার ছিলো?
কোন রিপ্লাই দেয়নি।
মাঝে মাঝে মেসেজ লিখে রাখতাম।
দেখতো কিন্তু কোন রিপ্লাই দিতোনা।
আমিও তাই আর রাগ করে মেসেজ দেইনি।
ভাব্লাম,যে আমাকে ভুলে গেছে তাকে মনে করে আর কি লাভ!
দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেক গুলো বছর।
নীল পড়ালেখা শেষ করেছে।
নীলের মা আম্মুকে ফোন দিয়ে বল্লো,
তারা একেবারে গ্রামে চলে আসবে।আংকেলের বয়স হয়ে গেছে।
নীল এবং ওর ভাই বোনেরাও আর শহরে থাকতে চাচ্ছেনা।
নীল গ্রামে এসেই কোন একটা ব্যবসা বা চাকুরী খুঁজবে।
আম্মুও খুশি হলো।
আমি এখন অনার্স করছি আর একটা ছোট খাটো জব করছি।
জবের কারণে আমি আমার মামার বাড়ীতে থাকি।
কারণ মামা বাড়ী থেকে অফিস টা কাছে।
একদিন হুট করে ফোন দিয়ে আম্মু বল্লো,
নীলের মা বলছে,
আমি যেন আমার অফিসে নীলের জন্য একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেই।
চাকুরী টা হলেই নীলের পরিবার গ্রামে চলে আসবে।
কি আর করার,
বসকে বলে নীলের চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিলাম।
কিন্তু শহর থেকে আমাদের বাসায় এলো।দুই এক মাস পর ওর পরিবারের সবাই আসবে।
নীল জয়েন করলো চাকুরীতে।
আমার সাথে দেখা হলে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে।
আমিও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলি।
নীল আমাদের বাসা থেকেই অফিসে আসে।
আর আমি মামার বাড়ীতেই আছি।
কেটে যায় প্রায় দুই মাস।
হঠাৎ একদিন আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে বলে,
তিয়াসা,
-হুম আম্মু বলো।
-বলি যে,নীলাদ্রীস আর তিয়ারার বিয়ে হলে কেমন হয়?
তুই তো বিয়ে সাদি করবিই না।তাই ভাবলাম ওদের বিয়েটা দিয়ে দেই।
যেহেতু তিয়ারা আর নীলাদ্রীসও দুজন দুজনকে পছন্দ করে।
আর নীলাদ্রীসের বাবা মাও রাজি।
তুই কি বলিস?
আম্মুর কথা টা শুনে মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙে পড়ে।
-কি বল্লা আম্মু?
-আরে তিয়ারা আর নীলাদ্রীস দুজন দুজনকে পছন্দ করে।
দুজনের কি ভাব।
নীলও অফিস থেকে এসে তিয়ারা তিয়ারা করে পাগল হয়ে যায়।
আর তিয়ারাও ওর জন্য সেজে গুজে বসে থাকে।
আগে তো এমন করতোনা।
নীলাদ্রীসের মাও সেদিন হাসতে হাসতে বল্লো,
ছেলেকে তো দিয়ে দিয়েছি।
তিয়ারার জামাই করে রেখে দে তাহলে।
আমিও হাসতে হাসতে বললাম ওদের কান্ড কারখানা।
ওদের বাসার সবাই রাজি।
তুই কি বলিস বলতো?
এখন তো নীল বেকারও না।
সমস্যাও নেই কোন।
মনে মনে শুধু ভাবছিলাম,
এখন কি তোমরা আত্মীয় না?
নাকি এখন আত্মীয়তা শেষ?
তাহলে আমি কি দোষ করেছিলাম?
ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে বললাম,
তিয়ারা কি বলে?
আব্বু কি বলে?
আম্মু বল্লো,
তোর আব্বুকে বলার দায়িত্ব তোর।
তিয়ারা তো এক পায়ে রাজি।
আমি তিয়ারাকে ফোন দিলাম।
তিয়ারার কথা শুনে আমার দম আটকে যাচ্ছিলো।
দুই মাসে তিয়ারা নীলকে ভালবেসে ফেলেছে।
ওকে ছাড়া কাউকে বিয়েই করবেনা।
আর নীলও নাকি ওকে জিজ্ঞেস করেছে,
আমাকে বিয়ে করবে?
আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না।
ফোন টা রেখে দিলাম।
নীলকে একটা মেসেজ দিলাম,
আম্মুর কাছে শুনলাম,তুমি নাকি তিয়ারাকে…
-হ্যাঁ।আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি।
আর আমি ওকে পেয়ে অনেক হ্যাপী।
দোয়া করো আমাদের জন্য।
-হুম,দোয়া করি।
ভালো রেখো আমার বোনকে।
কোন দিন কষ্ট দিওনা।সুখী হও।
আল্লাহ্ হাফেজ।
কথা গুলো লিখতে জান টা বেড়িয়ে যাচ্ছিলো।
তবুও লিখে সেন্ড করে দিলাম।
নীল লিখাটায় একটা লাভ রিয়েক্ট দিয়ে রেখে দিলো।
পরের দিন আব্বুকে বললাম ওদের বিষয়ে।
আব্বু প্রথমে না করলেও,আমার কথা ফেলতে পারলোনা।
রাজি হয়ে গেলো।
আর নীলের পরিবার গ্রামে আসাতেই নীল আর তিয়ারার বিয়ে হয়ে গেলো।যদিও রিসিভশন টা হবে আরো কয়েক মাস পরে।
বিয়ের কেনাকাটা সব আমি আমার নিজ হাতে করলাম।
বড় বোন বলে কথা।
গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বিয়ের দিন অব্ধি ওদের এটাচ ফটো গুলো আমিই তুলেছি।
বিয়ের দিন নীলের মা বল্লো তিয়ারাকে তো বিউটিশিয়ান সাজাচ্ছে।
নীলাদ্রীসকেও তো একটু পরিপাটি করা দরকার।
ওকে একটু ফেইসপাউডার মেখে দে।
আমি ফেইসপাউডার নিয়ে নীলের রুমে গেলাম।
নীলকে ফেইস পাউডার মাখাচ্ছি।
বুকের ভেতর টা তচনচ হয়ে যাচ্ছে,
যার বউ হবার স্বপ্ন দেখেছি,তাকেই কিনা আজ আমি জামাই সাজাচ্ছি আমারই নিজের ছোট বোনের জন্য।
ফেইসপাউডার মাখাতে মাখাতে না চাওয়া সত্তেও হু হু করে কেঁদে দিলাম আমি।
-প্লিজ তিয়াসা কেঁদোনা।
প্লিজ।
-আমার কি দোষ ছিলো নীল?
-প্লিজ কাঁদিস না।তোর বোন কেই তো বিয়ে করতেছি।
সারাজীবন চোখের সামনেই থাকবি।
কাঁদিস না।
আমার আর কিছুই বলার মত ছিলোনা।
জাস্ট বললাম,
সুখে রেখো আমার বোন টাকে।
নীল আমার সামনেই পাঞ্জাবি পরা শুরু করলো।
আমি রুম থেকে বেড়িয়ে চলে আসলাম।
কিছু ক্ষণ পর আত্মীয় স্বজনরা এসে খাওয়া দাওয়া করলো।
আর তারপরই শুরু হলো বিয়ের পর্ব।
আমারই চোখের সামনে আমারই ভালবাসার মানুষের সাথে হয়ে গেলো আমারই বোনের বিয়ে।
বিয়ে আমার বোনের।
অথচ চোখ ভেজা আমার।
ও হাসছে,
আর কাঁদছি আমি।
হঠাৎ করে কেউ এক জন আমাকে ওখান থেকে টেনে নিয়ে চলে যেতে লাগলে,
-কে কে,হাত ছাড়ুন বলছি।
-না ছাড়বোনা,
বিয়ে কি তোর?যে তুই এভাবে কাঁদছিস?
আর তুই জানিস না,তুই কাঁদলে আমার ভালো লাগেনা?ছোট বেলায় খেলার সময় যখন খেলতে গিয়ে হারলে কেঁদে দিতি,তখনও আমি তোকেই উইনার বলতাম।
যাতে তুই হাসিস।
মনে নেই তোর?
মোছ চোখের জল।
মোছ।
-নিব্রাস তুই?ছাড় আমাকে।আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।
-তোকে আমি ছাড়ার জন্য ধরিনি বুঝলি?
আগে কান্না থামা।
-হাত ছাড়বি?নাকি কানের নিচে মারবো?
আর এত দেরি করলি কেন আসতে?
ভাইয়ের বিয়ে শেষ আর এখন তুই আসলি?
-রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো।আর শহর থেকে আসতে কত প্যারা বুঝিসই তো।তাই দেরি হয়েছে।ভাইয়ের বিয়ে শেষ তাতে কি?
নিজের বিয়েতে লেইট না হলেইতো হয়।
এবার আমিও বউ নিয়ে তবেই যাবো।
-তোর কপালে বউ থাকলেতো।
-বউ না থাকুক তুই থাকলেই চলবে।
-মারবো একটা থাপ্পড়,
একদম কান বরাবর।
-ভুলে যাস না,
আমি তোর বড় বোন।
পাক্কা ১২ দিনের বড় আমি তোর হুম।
আপু বল এখনি।
-উঁহু বউউউ
-তবে রে,
চলবে..