জীবন !! Part-05 (শেষ)
-না আব্বু না।আমি রাজি না।
আর তখনই আমার আম্মু আমার কাছে এসে ঠাস করে আমার গালে এক চর বসিয়ে দিলো।
-এই তুমি মারলে কেন?
-আরে মারবোনাতো কি করবো?জানো তোমার মেয়ে গত কাল কি করেছে?সারাদিন পাগলের মত কেঁদেছে।
না পেরেছি কান্না থামাতে,না পেরেছি কিছু খাওয়াতে।
-কেন কেঁদেছে?আর কাল কেঁদেছে কাল খায়নি তাই বলে তুমি আজ ওকে এই ভাবে সবার সামনে মারবে?
-কেঁদেছে কারণ ও ভেবেছে সালমানের বিয়ে হয়ে যাবে বা গেছে।এই ভেবে কেঁদেছে।
কারণ তোমার মেয়েও সালমানকে ভালবাসে।
আর এখন যখন তুমি ওকে জিজ্ঞেস করছো,ভয়ে বলছে আমি রাজি না।
একটু পরে যখন আবার সালমানের বাবা মা ওর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে,
তখনই আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।
তাই আগেই থাপ্পড় মেরে ঠিক করছি ওকে।
যাতে সত্যি সত্যি বলার সাহস পায়।
এবার জিজ্ঞেস করো তোমার মেয়েকে।
রাজি কিনা।
-আম্মু,বলোতো তোমার আম্মু যা বলছে সত্যি কিনা?
আমি একবার সালমানের দিকে তাকালাম।
দেখি সালমান রাগে ফুসফুস করছে।
আরেক বার আম্মুর দিকে তাকালাম।
আম্মুও সেইম অবস্থায় আছে।
আমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলাম,
-হ্যাঁ আব্বু।
বলেই কেঁদে দিলাম।
আর চলে গেলাম আমার রুমে।
আব্বু বুঝতে পেরেছেন আমি আব্বুর ভয়ে এত ক্ষণ চুপ করে ছিলাম।
-তাহলে ভাই আর তো কোন সমস্যা রইলোনা।
ছেলে মেয়ে যেহেতু রাজি,সেহেতু বিয়েটা দিয়ে দেয়াই ভালো।
কি বলেন?(সালমানের বাবা)
-জ্বী ভাই আমিও তাই মনে করি।(আম্মু)
-না।আমি তা মনে করিনা।(আব্বু)
-কি বলছো তুমি?
-হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি।
আমার মেয়েকে আমি অশিক্ষিত কোন ছেলের কাছে বিয়ে দিতে রাজি নই।
আর সালমান এস.এস.সি পাশ ও নয়।
কিভাবে আমি আমার মেয়েকে এমন একটা ছেলের হাতে তুলে দেই?
যেখানে আমার মেয়ে অলরেডি ইন্টার পাশ।
আব্বুর কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়।
-তাহলে কি পৃনয়ীকে বিয়ে করতে হলে আমার এস.এস.সি পাশ করে আসতে হবে?
-না।ইন্টার পাশ করতে হবে।
যদি তুমি তা পারো,
তবেই আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিবো।তার আগে নয়।
সবাই বলে উঠে,তা কি করে সম্ভব?এটা তো কোন দিনো সম্ভব না এখন আর।
-অসম্ভব বলে কিছু নেই দুনিয়ায়।চেষ্টা করলেই সব সম্ভব।
আর যদি আপনাদের ছেলে সেটা পারে তবেই আমি আমার মেয়েকে আপনাদের বাড়ীর বউ করে পাঠাবো।
তার আগে নয়।
আর যদি আমার মেয়ে চায়,আমার কথা অমান্য করে আপনাদের বাসায় চলে যেতে।
তবে আমি বাধা দিবোনা।চলে যাক ও।
কিছু ক্ষণ পরিবেশ নিশ্চুপ থাকলেও,
নিশ্চুপতা কাটিয়ে একটু পর সালমান উত্তর দেয়,
-আমি আপনার মেয়েকে আপনার অনুমতি ছাড়া নিবোনা কাকা।
আর আপনি চান তো আমি ইন্টার পাশ করি?
ঠিক আছে।
আমি ইন্টার পাশ করেই পৃনয়ীকে নিয়ে যাবো আমার ঘরের বউ করে।
তবে আপনাকে কথা দিতে হবে,
আমার ইন্টার পাশ না করা অব্দি আপনি ওকে যত্ন করে আমার জন্য আগলে রাখবেন।
-ঠিক আছে।যাও আগে এস.এস.সি পাশ তো করো।তারপর না ইন্টার পাশ।
আমি রুম থেকে সব শুনতে পাচ্ছি।
আর মনে মনে বলছি,এ তুমি কি করছো?
সব কিছু এত ইজি না।
তুমি পারবেনা এত দিন পর আবার পড়ালেখা করতে।
এটা অসম্ভব।
কিন্তু সালমান সেদিনের পর সব কিছুই সম্ভব করে দেখালো।
সেদিন আম্মুকে সালাম করে দোয়া নিয়ে,আব্বুর কাছে দোয়া চেয়ে ও চলে গেলো।
আর আশেপাশে,সব জায়গায় খবর নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলো উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে
নবম শ্রেণীতে।এখানে নবম শ্রেণী দশম শ্রেণী পড়ে তারপর এস.এস.সি পরীক্ষা দিতে হয়।
এখানে শুধু মাত্র শুক্রবারে ক্লাস করতে হয়।আর পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিতে হয়।
এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝরেপড়া ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হয়।বা বয়স্করাও ভর্তি হতে পারেন।
অনেক চেষ্টা আর কষ্টের পরে সালমান এস.এস.সি পাশ করে আব্বুকে দেখিয়ে দিলো।
যেহেতু ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলো তাই ওর গণিত বাদে আর কোন সাবজেক্টে তেমন সমস্যা হয়নি।
আর ও ইংলিশে ভালোই ছিলো।শুধু মাত্র বন্ধু বান্ধবের আড্ডায় পড়ে,মাঝ পথে পড়াশোনা টা ছেড়ে দিয়েছিলো।
আর এত দিন পর আবার শুরু করলো শুধু মাত্র আমার জন্য।
আর এদিকে আমিও আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।
এস.এস.সি পাশ করার পর সালমান ভর্তি হলো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এখান থেকে ও ইন্টার পাশও করলো।
দীর্ঘ সময় নিয়ে সালমান করলো এস.এস.সি এবং ইন্টার পাশ।আর আমি তত দিনে করে ফেললাম আমার অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট।
এর মাঝে আমাদের ফোনে কথা হতো।
মাঝে মাঝে দেখাও হতো।
তবে আব্বুর চোখ ফাঁকি দিয়ে।
পরিশেষে সালমান হাজির হলো ইন্টার পরীক্ষায় পাশের মিষ্টি নিয়ে আমার আব্বুর সামনে।
আর এসেই বল্লো,
এবার তো আমার হাতে পৃনয়ীকে তুলে দেয়া যায়।
নাকি এখন বলবেন,আপনার মেয়ে মাস্টার্স পাশ আর আমি ইন্টার পাশ।আমাদের মানায় না।
যদি তাই বলেন,তাহলে আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি,
আমি অতি শীঘ্র ডিগ্রী বা অনার্সেও ভর্তি হবো।
শুধু মাত্র পৃনয়ীর জন্য।
আর সেদিনই আব্বু সালমানের কথা শুনে সালমানকে বুকে জড়িয়ে নেন।
আর পরে কি হয় সেটা তো আপনাদের জানা ই।
তারপর ধুমধাম করে সবার সম্মতিতে হয়ে যায় আমার আর সালমানের বহু প্রতীক্ষিত বিয়ে।
আসলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়,
আর এটাই সত্যি।
আমি সালমানকে পেয়ে নিজেকে আসলেই ভাগ্যবতী মনে করি।
ওর মত কাউকে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
যে আমার জীবন টাকে পুরোটাই বদলে দিয়েছে।
নিজেকে এবং নিজের ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে আমাকে বুঝিয়েছে আসলে ভালবাসা কি,জীবন কি।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন,যেন আমরা সারাজীবন একে অপরকে এই ভাবে ভালবেসে যেতে পারি।
-পৃনয়ী,এই পৃনয়ী আমার তোয়ালে টা কই?
উফফ এই ছেলেটার আমাকে ছাড়া কিচ্ছু হয়না।
আমাকে ছাড়া এখন যেন এক কদমও চলতে পারেনা।
আমি ওকে তোয়ালেটা দিয়ে আসছি কেমন?
আমাদের জীবন কাহিনী টা কেমন লেগেছে না বলে যাবেন না কিন্তু!
সমাপ্ত।
#ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনারা চাইলে অতি শীঘ্র আবার অন্য কোন গল্প নিয়ে হাজির হবো।
আসসালামু আলাইকুম।
অনেকে সুন্দর❤️