জীবন

জীবন !! Part- 04

তবেরে…
দাঁড়া বুঝাচ্ছি তোকে তোর শিক্ষিতগিরি..

উফফ ব্যথা পাচ্ছিতো হাতে।
ছাড়োনা।

ছাড়ার জন্য কি এ হাত ধরেছি হুম?
তাও আবার এত কষ্টের পর ধরেছি এই হাত।এত সহজেই ছেড়ে দেবো?

তাই বলে এমন গন্ডারের মত করে ধরবে?
আমি ব্যথা পাইনা নাকি?

-ওকে দিলাম ছেড়ে।

-ওমা,সত্যি সত্যি ছেড়ে দিলে?
আমি বলেছি আলতো ভাবে হাত টা ধরতে,
ছেড়ে দিতে বলিনি।

-যাহ বাবা,হাত ধরলেও দোষ ছাড়লেও দোষ।
-হুম দোষই তো।
-লোকে ঠিকই বলে বউ মানেই প্যারা।
আজ থেকেই বুঝতে পারছি তা হারে হারে।
-কি আমি প্যারা?
-নারে বইন প্যারা না প্যারা না।
-আমি বইন?
-তা নয়তো কি?ইশ কত সুন্দর কথা বলেছিলো কেউ একদিন আমাকে,

আমি আপনাকে ভাইয়া ভাবি,
কোন দিন আপনাকে আমি স্বামী মানতে পারবোনা।তাহলে আজ কবুল বললি কেন হুম?

-বিয়ে করে খোঁটা দেয়া হচ্ছে তাইনা?
-তাহলে শুনে রাখুন ভাইয়া,
আমি আপনার জীবন বাঁচাতেই আপনাকে বিয়ে করেছি হুহ।
নইলে কি দুনিয়ায় আমার ছেলের অভাব পড়েছিলো?

-তাই নাকি?তবে রে,দাঁড়া তুই।
আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

আজ থেকে ৫ বছর আগে যেদিন সালমান বিয়ের উদ্দেশ্যে মেয়ের বাড়ী রওনা দিয়েছিলো।
ঠিক সেদিনই আমি বুঝেছিলাম আমিও সালমানকে ভালবাসি।
আর তাই ও গাড়ীতে উঠার সাথে সাথে আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াই।

যাতে আমি ওকে আমার মনের কথা বলতে পারি।
কিন্তু আমি আর সেই সুযোগ টা পাইনি।
সালমানের গাড়ীটা চলা শুরু করে দেয়।

আর আমি মাটিতে বসে পড়ে কাঁদতে থাকি।

পরে আম্মু কিছু ক্ষণ পর গিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন।

সন্ধ্যায় যখন সালমানরা বাসায় ফিরে,
বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছিলো।

সেদিন বুঝেছিলাম,সালমানও কতটা কষ্ট পাচ্ছিলো আমার জন্য।বা পেয়েছে আমার জন্য।

মেনেই নিয়েছিলাম আমার এই কষ্টটা প্রাপ্য।এখন সারাজীবন তিলে তিলে জ্বলে পুড়ে মরবো।এটাই আমার শাস্তি।

কিন্তু বিধির লিখন যে অন্যরকমই ছিলো।

তাইতো সালমানরা যখন মেয়ের বাসায় পৌছে তখনই শুনতে পায় মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে কিছু ক্ষণ আগেই পালিয়ে গেছে।

হয়তো মেয়েটা বাবা মায়ের চাপে বিয়েতে রাজি হয়েছিলো ঠিকই,কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর নিজের ভালবাসার মানুষটার জায়গায় অন্য কাউকে ভাবতে পারেনি।
বা চেষ্টা করেও মানতে পারেনি।

তাই হয়তো অন্তিম মুহূর্তে সে পালিয়ে গেছে।

যদিও সালমানের পরিবারের সবাই বলেছিলো মেয়ে পক্ষকে,

যেতে হলে আগেই যেতো আপনাদের মেয়ে।
কেন বিয়ের দিনই পালালো।
এভাবে আমাদের নাক কাটলো।

তখন মেয়ের পরিবারের লোক জন সালমানের পরিবারের কাছে ক্ষমা চায়।

সালমান বাসায় ফেরার পর আমি অনেক টা পাগলের মত হয়ে যাই।
এই ভাবতে ভাবতে যে,
এখন বুঝি সালমান ওর বউকে নিয়ে বসে আছে।এখন বুঝি সবাই ওদের মিষ্টি মুখ করাচ্ছে।

কি যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিলো বুকের ভেতর তা শুধু আমিই অনুভব করতে পারছিলাম।

আর চিৎকার করে কাঁদছিলাম।
তত ক্ষণে আম্মু বুঝে গিয়েছিলো আমার কান্নার কারণ।

আর আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলো,
এতই যখন ভালবাসতি,তবে বললি না কেন?

এখন আর কেঁদে কি হবে?
যা হবার তো হয়েই গেছে।

আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় আরো ভেঙে পড়ি।

রাতে হঠাৎ করেই সালমান আম্মুর নাম্বারে ফোন দেয়।

আম্মু রিসিভ করেই বলে,

দোয়া করি সুখী হও বাবা,
বউ নিয়ে এসো।

তখন সালমান উত্তর দেয়।
কাকী,কাকে নিয়ে সুখী হবো?
মেয়েতো তার সুখী হবার মানুষের সাথে ভেগে গেছে।

এই বলে সালমান হাসতে থাকে।

আর বলে,
কাকী,একটু পৃনয়ী কে দেয়া যাবে?

আম্মু তখন আমার রুমে এসে ফোন টা দেয়।

আর বলে,
সালমান।

আমি কথা বলতে চাইনা।
তবুও আম্মু দিয়ে চলে যায়।

আমি কাঁদতে কাঁদতে ফোন টা কানে নিয়ে বলি হ্যালো।

সালমান অবাক হয়ে যায়।ঘাবড়ে যায়।

-কি হয়েছে তোর পৃনয়ী?
এভাবে কাঁদছিস কেন?বল আমাকে।

আমি কোন উত্তর না দিয়ে আরো জোরেশোরে কাঁদতে থাকি।

-আজব বলবি তো কি হয়েছে?

-আপনি সুখী হন আপনার বউকে নিয়ে।
আজীবন ভালো থাকেন।দোয়া রইলো।
আর শুনেন ভাইয়া,আর কোন দিন আমাদের বাসায় আপনি ফোন দিবেন না।
আর জানালা টাও কোন দিন খুলবেন না।
আমি আপনার বউ এর মুখ দেখতে চাইনা।

কথা গুলো বলে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।

-আরে কি হয়েছে বলবি তো?

আমি কিছু ক্ষণ কেঁদে উত্তর দিলাম।

-আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি ভাইয়া।
খুব ভালবেসে ফেলেছি।
আর আমি এই কথা বলতে আপনার সামনেও গিয়েছিলাম।কিন্তু আপনি ততক্ষণে গাড়ীতে উঠে চলে গেছেন।

তাই আর আপনাকে ডাকিনি।

আপনার নাম্বারে ট্রাই করেছিলাম।কিন্তু বন্ধ ছিলো।

এসব বলে আর কি হবে।
আমি আমার ভুলের শাস্তি পাচ্ছি।আপনি বলেছিলেন না,আমিও একদিন কাউকে ভালবাসবো।আর যখন তাকে হারিয়ে ফেলবো বা পাবোনা।ঠিক সেদিনই বুঝবো আপনার কষ্ট। আমি আজ বুঝে গেছি ভাইয়া আপনার কষ্ট।আমি আমার ভালবাসার মানুষ টাকে আজ সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি।আর আমি সারা জীবন এখন বয়ে বেড়াবো।

আপনি যান এখন।
আর কোন দিন ফোন দিবেন না।
আপনার বউর কাছে যান।আল্লাহ্‌ হাফেজ।

-ওই পাগলী,থাম থাম।আমাকেও তো কিছু বলতে দে।লাইন কাটিস না কিন্তু।

-প্লিজ আপনি যান আপনার বউর কাছে।
আমাকে আর ফোন দিবেন না।

-বউ পাবো কই যে বউর কাছে যাবো?

-মানে?বউ কই আপনার?

-ওই মেয়েতো ভেগেছে ওর বরের সাথে।
-কি?
-জ্বী।
তুই গত রাতে আমাকে যেই জ্ঞান দিলি,আসলে সেই জ্ঞানটা ওই মেয়েকেও তোর দেয়া দরকার ছিলো।
তাহলে হয়তো বেচারি এভাবে তার প্রেমিকের সাথে পালাতোনা।আর আমারো বিয়ে না করে,বউ না নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হতোনা।

আর,আমার বিয়ে হয়নি।তাই বউও নেই।
আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে চলেন বিয়েটা করে ফেলি।
আপনিও বর পেয়ে যাবেন।আর আমিও পেয়ে যাবো আমার বউ।
ভালো হবে না?

-উঁহু একটুও ভালো হবেনা।
অসভ্য,ফাজিল।প্রথমেই বললে কি হতো?
অযথা এত কষ্ট পেলাম।কাঁদলাম।

-এই কষ্টটা পাওয়া দরকার ছিলো।নয়তো আপনার মনের কথা গুলো জানতাম কি করে?

-আমি নিজেও আজই জেনেছি আর বুঝেছি।
-হয়েছে এবার কান্নাকাটি।আর কাঁদতে হবেনা।
আমি আগামীকাল সকালেই বাবাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসছি।
কাকার সাথে কথা বলতে।
আর বলবো আমি পৃনয়ীকে বিয়ে করতে চাই।

আর পৃনয়ীও এটাই চায়।
তুমি হ্যাঁ বলতে পারবেনা তোমার বাবাকে?

-হুম পারবো।
-এবার তাহলে হাসেন।কান্না কাটি রাখেন।

পরের দিন বিকেলে সালমান ওর বাবা মা আর বড় আপুকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে।

প্রথমে কাকা কাকী আসতে চান না।
কিন্তু যখন সালমান বলে,আমি রাজি আছি।
তখন তারা আসেন।

তো সবাই এক সাথে কথা বলতে বসেছেন।

আম্মু তাদের নাস্তা দিলো।

এদিকে আমার বুকের ভেতর তুফান হচ্ছে।
আম্মু তো আমার কান্নাকাটি দেখে মোটামুটি রাজি।
কিন্তু আব্বু কি রাজি হবেন?

-তো ভাই বলেন,হঠাৎ কি মনে করে আসা হলো?

-আসলে গত কাল সালমানের বিয়েটা হয়নি।
মেয়ে বিয়ের দিনই পালিয়ে গেছে।

-ওহ!আসলেই দুঃখজনক।

তা এখন কি করবেন?

আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি পৃনয়ীর সাথে সালমানের বিয়েটা দিতে চাই।

-ওহ!এখন মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে বলে,ছেলের বদনাম হয়েছে।
তাই এসেছেন আমার মেয়ে চাইতে?

আমি আগেই তো রাজি ছিলাম না।
এখন রাজি হবো তা ভাবলেন কি করে?

-ভাই আপনি রাজি না থাকলেও ওরা দুজন কিন্তু ঠিকই রাজি।

-ভুল বললেন ভাই,আপনার ছেলে রাজি।
আমার মেয়ে নয়।

-না ভাই, পৃনয়ীও রাজি।
আর আমি সব জেনেই তারপর এসেছি।
নয়তো একবার ফিরে যাবার পর ২য় বার আর আমি আসতাম না।

-পৃনয়ীর মা,

-জ্বী।
-পৃনয়ীকে ডাকো।
-আচ্ছা।

আমি কাঁপতে কাঁপতে সবার সামনে গেলাম।

-আসসালামু আলাইকুম।

-বসো মা বসো।

-পৃনয়ী,
উনারা কেন এসেছে আমাদের বাসায় জানিস?

-না আব্বু।
-উনারা এসেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে,
সালমানের জন্য।

তুই নাকি এ প্রস্তাবে রাজি?

কথা টা কি সত্যি?

আমি এবার চুপ হয়ে গেলাম।কারণ আমার আব্বু খুবই রাগী স্বভাবের।
হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই না আবার আমার গালে ঠাস করে একটা লাগিয়ে দেয়।

-পৃনয়ী,আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে।

-পৃনয়ী চুপ কেন?সত্যি টা বলো।(সালমান)

আব্বু ধমক দিয়ে সালমানকে বলেন,

-ওই ছেলে,তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?তুমি চুপ করে বসো।

আব্বুর ধমক আর চোখ গরম করা দেখে আমি ভয়ে উত্তর দিলাম,

-না মানে আসলে।

-আমতাআমতা করছিস কেন?
উত্তর দে,তুই কি রাজি সালমানকে বিয়ে করতে?

-না আব্বু না।আমি রাজি না।

আর তখনই আমার আম্মু আমার কাছে এসে ঠাস করে আমার গালে এক চর বসিয়ে দিলো।

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *