একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 49
_______________________
—” আপনি এখানে কি করছেন??”
নিভ্র সাফার দিকে ঘুড়ে তাকায়।কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—” তুমি উনাকে চিনো??”
—” হুম।কিন্তু আপনি এই লোককে চিনেন কিভাবে??”
নিভ্র ভারী অবাক হওয়া গলায় বললো,
—” লোকটাকে নয় মেয়েটাকে চিনি।মানে একদিন দেখা হয়েছে।আরিফের মামার মেয়ে টাইপের কিছু হবে। এটাই বলেছিলো সেদিন।”
সাফাও বেশ অবাক।পা গুটিয়ে বসে সাফা বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো,
—” আপনারা একে অপরকে চিনেন??”
নিভ্র তাদের উত্তরের আগেই বললো,
—” তুমি এই লোককে কিভাবে চিনো??”
—” উনি বাবার ক্লাইন্ড হয়।”
দুজনেই বেশ আগ্রহের সাথে সামনে তাকিয়ে আছে।সামনের দুজন বেশ হেঁসেই ভিতরে ডুকে পড়ে।নিভ্র তীক্ষ্ণ সুরে প্রশ্ন করে,
—” আপনারা এখানে কেনো??”
ছেলেটা হাঁসতে হাঁসতেই বেডে বসতে নেয়।নিভ্র কপাট রাগ দেখিয়ে তার দিকে তাকায়।ছেলেটা লাফিয়ে সরে গিয়ে বললো,
—” স্যরি স্যরি। বসবো না। ভুল করে সেদিকে চলে গিয়েছি।আপনি থাকতে আপনার সাফারানীর ধারে কাছে যাওয়া মসকিল হি নেহি নামুনকিন হে এটা আমি জানি।”
নিভ্রর কৌতুহল বাড়ে।খুব মনোযোগী হয়ে সোজা হয়ে বসে সে।ছেলেটা পাশের টুল টেনে নিভ্রর সামনা সামনি বসে।মেয়েটাকে উদ্যেশ করে ছেলেটা বললো,
—” রুহি তুমি সাফার পাশেই বসো।”
রুহিও বেশ তড়িঘড়ি করে সাফার বেডে বসে।সাফা অবাকের চরম পর্যায়ে আছে।কে এই মেয়ে??রুহির মুখে বেশ হাসি লেগে আছে।সে মহা খুশি।মনে হচ্ছে খাজানা পেয়েছে সে।ছেলেটা নিভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
—” আমি সিফাত।”
নিভ্র হাত মিলালো না।চোখ সরু করে তাকিয়ে বললো,
—” আপনি যেই হন আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু কেনো এখানে এসেছেন তা বলেন।অত সময় নেই আমার।”
সিফাত বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” আপনাকে যখনি কিছু বলতে যাই আপনার সময় থাকে না।এত আজব কেনো আপনি বলবেন??”
নিভ্র চট করে বললো,
—” আপনার সাথে আমার এটা প্রথম দেখা।তাই আপনার সাথে কথাও প্রথম।আর আপনি এমন ভাবে বলছেন মনে হয় অনেক আগের পরিচায় আমাদের??”
—” তা নয় তো কি।সেদিও আপনি এটাই বলেছেন সময় নেই।আজও বলছেন।আজব না??”
নিভ্র বিস্ময়ে তাকালো।সিফাত আবার বললো,
—” ভাই সেদিন তো বলেছেন যা চাইবো তাই দিবেন আর আজ একটু হাত মিলাতে দিলেন না??খুবই দুঃখজনক।”
নিভ্র কিছুক্ষণ ভাবলো।হুট করেই উঠে জাপ্টে ধরে সিফাতকে।টাল সামলাতে না পেরে পিছনে ঠেস দিয়ে বসে সিফাত।সাথে সাথেই হেঁসে ফেলে।সাফা ভ্রুকুঁচকে অদ্ভুত নয়নে এই দৃশ্য দেখে।রুহি হাসিতে গদগদ হয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আমরাও একজন আর একজনকে জড়িয়ে ধরি!!”
সাফা হা করে তাকিয়ে আছে।রুহি সাফার কাছে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে নিয়েছে।সাফাও হালকা ধরে কিন্তু তার মাথায় কিছুই আসছে না।সিফাত হাঁসফাঁস করতে করতে বললো,
—” ভাই ছাড়েন এবার।দম বন্ধ হয়ে আসছে।আপনার এই বডি আল্লাহ!!”
নিভ্র হেঁসে ছেড়ে দিলো।সিফাত জোড়ে জোড়ে কিছু দম ফেলে বললো,
—” আপনার ভালোবাসা আসলেই ভয়ংকর। বাপ রে।”
নিভ্র হেঁসে বললো,
—” আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।আপনার জন্যেই আমি আমার সাফারানীকে পেয়েছি।থ্যাংক্স।”
—” আরে ধন্যবাদ আমাকে না আপনার হবু শ্বশুরকে দেন। তিনিই আপনাদের আবার এক হতে সাহায্য করেছে।”
নিভ্র অবাক।সাফা চেঁচিয়ে বললো,
—” বাবা!!”
—” হ্যা আপনার বাবা।আসল কাহিনিটা হলো আমি একজন মডেল।ছোট খাটো মডেল তাই নিভ্রনীল আমাকে চিনেনা।আমি খবরের কাগজে ছবি দেখেছি সাফার। অনেক দিন পুরানো কাগজ দেখেছিলাম।ভাগ্য ক্রমে সেদিনই আপনার বাবা সাথে আমার দেখা।একটা জমির ব্যাপারে কথা ছিলো।আঙ্কেলের সাথে কথা বলে রাস্তা ক্রশ করতেই তিনি সেন্সলেস হয়ে পড়ে।আপনাদের বাসাই নিয়ে যাই আর আপনাকে দেখেই আমার ছবির কথা মনে পড়ে।আপনার বাবাকে সব খুলে বলি তিনিই বলেছে নিভ্রনীলের সাথে যোগাযোগ করে আপনাদের মিলিয়ে দিতে।দুজনের মাঝে কোনো এক কারনে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।আপনি তাকে ছেড়ে এসেছেন।এখন নিভ্রনীল আপনাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে।এ দেখে বুঝা যায় আপনাকে তিনি কতটা ভালোবাসে।এটা আপনি না বুঝলেও আপনার বাবা বুঝেছেন। নিভ্রনীলের পার্সোনাল নাম্বার খুঁজতে আমার অনেক সময় লেগে যায়।তারপর রুহি বলেছে তার ভাইয়ের স্যার হয় নিভ্রনীল। তারপর আরিফ ভাই থেকে আপনার নাম্বার জোগার করে আপনাকে কল করলাম।ব্যস কাহিনী শেষ।তবে শেষ হলো না।নিভ্রনীলের আকুলতা আর মারিয়া ভাব আমাকে হসপিটাল অবদ্ধি টেনে নিয়ে এসেছে।এতটা ভালোবাসে সে আপনাকে আমি একদিন কথা বলেই বুঝলাম আর আপনি এত সময়েও বুঝলেন না??”
সাফা মাথা নিচু করে।চোখে ভর করে কান্না।সত্যিই সে বোকার মত কাজ করেছে।তার নিভ্রকে ছেড়ে আসা উঁচিত হয় নি।কিছুতেই না।অপরাধী লাগছে নিজেকে।রুহি বিরক্তি মুখে বললো,
—” আরে তুমি জানো না।এই মেয়ে কতটা ভালোবাসে নিভ্রনীলকে।তাই তো ডায়রির ভাঁজে নিভ্রর ছবি রেখে দিয়েছে।আর সমুদ্রের পারে বসে সেই ছবির সাথে সে কত আলাপ করেছে।আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না!!”
সবাই এবার রুহির দিকে তাকায়।সাফা বেশ অবাক।ভালো ভাবে রুহিকে পর্যবেক্ষণ করছে সে।আরে একে খুব চেনাচেনা লাগছে।কথাও তো দেখেছে কিন্তু মনে পড়ছে না।নিভ্রর আগ্রহ বারে খুব।সাফা নিজের ভালোবাসা কখনোই প্রকাশ করে না।সে জানে সাফা তাকে ভালোবাসে কিন্তু কখনোই তা দেখায় না।তাই নিভ্রর আগ্রহের মাত্রা বাড়ে।রুহি বেশ ভাবসাব নিয়ে বললো,
—” আরে মি.নিভ্রনীল আপনার মনে আছে আপনাকে বলেছি আমি কোথাও দেখেছি আপনাকে??”
নিভ্র চোখ ছোট করে জবাব দেয়,
—” হুম।”
—” আপনি তো শুনলেন না।উল্টা আমাকে ধমকে চলে গেলেন।কষ্ট😔😔যাই হোক আসল কথায় আশি।কক্সবাজারে এসে সমুদ্রের পাড়ে এই সাফাকে আমি অনেক সময় এই একটা ছবি হাতে বসে থাকতে দেখেছি।বিষন্ন চেহারায়।আগ্রহ নিয়ে সামনে যেতেই সে ছবি উনি ডায়রীর ভাঁজে লুকিয়ে ফেলে।কিন্তু ধাক্কা লেগে আবার সে ছবি পড়ে যায় আর আমি দেখে ফেলি।যখন আপনাকে দেখি তখন বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ভালো করে মনেও ছিলো না আর আপনিও কিছু শুনলেন না।পরে সিফাত বললো বলে আবার মনে পরলো।যদিও সাফাকে আমি চিনতাম না।সিফাত ছবি দিলো।আপনার ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো।ব্যস সব সেট।আমারও আপনাদের এক সাথে দেখার খুব আগ্রহ ছিলো তাই দেখা করতে চলে এলাম।”
নিভ্র সাফার দিকে একবার তাকালো।তারপর তাদের উদ্যেশে বললো,
—” আপনারা একে অপরের কি হন??”
সিফাত লজ্জা লজ্জা ভঙ্গি নিয়ে বললো,
—” ও আমার গার্লফ্রেন্ড। ”
নিভ্র হালকা হাসলো।ভাগ্য বরই বিচিত্র।কত অদ্ভুত ভাবে তাদের আলাদা করেছে আবার অদ্ভুত ভাবে মিলিয়ে দিয়েছে।নিভ্র সিফাতের কাঁধ চাপড়ে বললো,
—” গার্লফ্রেন্ড লিস্টে রেখে লাভ নেই ভাই।বউ বানাও।তা না হলে অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহিনতায় ভুগতে হবে।”
সবাই হেঁসে উঠে।সাফা গভীর ভাবে তার বাবার কথা ভাবছে কতটা ভালোবাসে বাবারা কিন্তু মুখে কখনোই তা প্রকাশ করে না।আসলেই বাবাদের সাথে কিছুর তুলনা হয় না।সামনে না থেকেও পিছন থেকে ভালোবাসে।বাবা তো বট বৃক্ষের মত। ফল দেক বা না দেক ছায়াঁ আর আশ্রয় দিয়ে সব কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখাই তার কাজ।যার নেই শুধু সেই বুঝে সে কি হারিয়েছে।সাফা দীর্ঘশ্বাস নেয়।সবাই মিলে গল্প করা শুরু করে।
______________________
নিভ্ররা কক্সবাজারেই আছে।সাফাদেরকে একসাথে নিয়েই ফিরবে তারা।সাফার বাবার কিছু অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে।তাই তাদের আরো কিছু দিন এখানে থাকতে হবে।নিভ্রকে বাসায় নেওয়ার পর থেকে সাফাকে সে খুব কম সময় নিজের সাথে পায়।সাফা তার বাবার সাথেই থাকে।আর নিভ্র নিজের পরিবারের সাথে।রাজিব,মাহবুব আর সাখাওত চৌধুরীরা ঢাকায় চলে গেছে।সবাই কাজে ব্যস্ত।ঢাকায় গিয়ে নিভ্র আর সাফার বিয়ের তারিখ ঠিক করবে সবাই মিলে।নিভ্র একদম সময় নষ্ট করতে চায় না।
নিভ্র নিজের রুমে পায়চারি করছে।সন্ধ্যা থেকে সাফার ফোন অফ। নিভ্রর মনে হয় প্রতি সেকেন্ড তার সাফাকে প্রয়োজন।ভয়।ভয় জিনিটা খুবই খারাপ।নিভ্রর মনে এই খারাপ জিনিসের প্রকট বেশি।তার এখন সব সময় ভয় হয়।সাফাকে হারানোর ভয়।এত ভয় তার কেনো হয় তা সে জানে না।তবে হয়।নিভ্র আবার কল করলো এবারো সেই বিখ্যাত মহিলার সুরেলা কন্ঠ ভেসে এসেছে। যা এতটাই বিরক্তি কর যে নিভ্র নিজের ফোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।তবে ভাগ্য ক্রমে তা বিছানার উপড়ে পড়েছে।
রাত ১১টা ছুঁই ছুঁই। সাফা এত সময় পরে নিজের ফোন খুলেছে।আজ অভি এসেছে তাদের বাসায়।থাকবে কিছু দিন।সাফাদের সাথে ফিরবে।ঝুমাকে বিয়ে করতে চায় সে।তাই সাফার বিয়ের পরে বা আগে ঝুমাকে বিয়ে করবে। চাকরি পেয়ে গেছে অনেক আগে।অভিই বিরক্ত হয়ে সাফার ফোন বন্ধ করে রেখেছে।সেই কখন থেকে দেখছে এক ঘন্টা পর পর নিভ্র কল করছে তাই বিরক্ত হয়ে সে ফোন অফ করেছে।তারা এত সময় গল্প করে এখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাচ্ছে। সাফা ফোন অন করতেই নিভ্রর কল।সাফা কল রিসিভ করতেই নিভ্র চেঁচিয়ে বললো,
—” দরজা খোলো!!”
সাফা অবাক হয়ে বললো,
—” আমাদের ঘরের দরজা খুলে আপনার কি হবে??”
নিভ্র বেশ রাগি গলায় বললো,
—” কারন আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।তাড়াতাড়ি খোলো।”
সাফা চারপাশে একবার চোখবুলালো।বেশ ভয় আর অবাকতা নিয়ে সে দরজা খুলে দিলো।নিভ্র দাঁড়িয়ে আছে।সাফার বিশ্বাসই হচ্ছে না।নিভ্র বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।কারন নিভ্র বাহিরে দাড়িয়ে থাকে না সোজা ব্যালকুনি বেয়ে রুমে চলে আসে।কিন্তু আজ দাঁড়িয়ে আছে।অবাক করা ব্যাপার।নিভ্র সাফার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।দরজা টেনে সাফাকে কোলে তুলে হাটাঁ দেয় সিঁড়ির দিকে।সাফা হা করে তাকিয়ে আছে।নিভ্র সাফাকে বিরক্তির সহিত বললো,
—” সামনের চুলগুলো সরিয়ে দেয়ও তো!!”
সাফা ডান হাত দিয়ে নিভ্রর কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে দিলো।নিভ্র সিঁড়ি বাইছে তো বাইছেই।সাফাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র বললো,
—” ব্যালকুনিতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা গল্পে বিজি ছিলে তাই বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর বাসায় মেহমান আছে এটা বললেই হতো।ফোন অফ করার কি আছে??টেনশন হয় যানো তো!!”
সাফা আগের মতই বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,
—” আপনি এই নিয়ে কতসময় দাঁড়িয়ে আছেন??মানে কখন এলেন??”
—” সে অনেক সময়। বাদ দেও।”
—” ছাদে কেনো নিচ্ছেন??”
—” ছাদে কেনো নিচ্ছি মানে কি??আমার ইচ্ছা আমি নিচ্ছি ব্যস।”
—” এটা আমার বা আপনার বাসা না এটা একটা ভাড়া বাসা।অনেক মানুষ এখানে থাকে।কেউ কিছু বললে বা দেখলে তখন কি হবে??”
নিভ্র অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
—” কিছু বলবে মানে?আর দেখলে দেখুক।নিভ্রনীলকে কিছু বলবে এটা আদো পসিবল বলে তোমার মনে হয়??নো চান্স।চিললল বাবু।”
সাফা রাগি গলায় বললো,
—” কয়বার বলেছি বাবু ডাকবেন না।আমি কি বাবু নাকি??আজব।”
নিভ্র হাঁসে কিছু বলেনা।সাফার এমন কুঁচকানো মুখ, গালের সেই ভয়ংকর টোল তার দেখতে বরাবরি ভালো লাগে।সে দেখতে ভালোবাসে।তাই সে সাফাকে বিরক্ত করতে চায়।কিন্তু সাফা আগের মত আর চঞ্চল নেই।এটা নিভ্রর খুব খারাপ লাগে।তার তো চঞ্চল সাফাকেই বেশি ভালো লাগতো।পরক্ষনেই আবার ভাবে সাফা তার কাছে থাকলেই হবে।সেটা যেভাবেই থাকুক।নিভ্র আর একটু জড়িয়ে সাফাকে কোলে নেয়।
সাফা বসে আছে ছাদের ফ্লোরে। আর নিভ্র সাফার কোলে মাথা রেখেছে।সাফা বসে বসে নিভ্রর চুলে বিলি কাটঁছে।নিভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে। পাশেই সমুদ্র।সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্তাপের শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দে চারপাশ মোহনীয় হয়ে উঠেছে।সাফার মাথার কাপড় উড়ছে।নিভ্র উঠে বসে।সাফার মুখের দিকে তাকায়।সাফা ও তাকায়।চোখে চোখে দৃষ্টির মিলন হয়।নিভ্র সাফার কাছে এসে বললো,
—” তোমার চুল আগের থেকে অনেক বড় হয়েছে সাফা।”
সাফা হাঁসে কিছু বলে না।নিভ্র সাফার মাথার উড়না সরিয়ে বেণী করা লম্বা চুলগুলো সামনে এনে হাত বুলিয়ে দেয়।একটা চুমু খায়।আবার সরিয়ে দেয়।মাতাল করা ঠান্ডা চোখে সাফার দিকে তাকায়।একটু কাছে এগিয়ে এসে নেশাতর কন্ঠে শীতল গলায় বললো,
—” সাফারানী একটা চুমু খাই??”
সাফা বিষম খেলো।চোখের পাতা বার কয়েক ফেলে বড় বড় চোখে নিভ্রর দিকে তাকালো।নিভ্র ঠোঁট কামড়ে হাঁসে।চোখেমুখে দুষ্টুমি ভাব।সাফা বুঝেও না বুঝার ভাবে নিয়ে বললো,
—” সেটা তো আপনি যখন তখনই দেন।দিয়ে দেন।কপাল বাড়ালাম।”
নিভ্র আর একটু কাছে এসে চুল কানের পাশে গুঁছিয়ে দিতে দিতে বললো,
—” আরে আজ কপালে না অন্য গভীরতায় চুমু দিবো।”
সাফা নিভ্রকে ঠেলে পাশে ফেলে নিভ্রর বুকে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বললো,
—” হার্টের সাথে সাথে আপনার চরিত্রও দূর্বল হয়ে পড়েছে মনে হয়।যান ভাগেন।”
নিভ্র শব্দ করে হেঁসে উঠে আবার বসে। সাফাকে এক হাতে জড়িয়ে বলে,
—” মজা করছিলাম।এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই কুল।”
সাফা নিভ্রর বুকের একপাশে মাথা করে।গভীর ভাবে নিভ্রর বুকের ধুকপুকুনির শব্দ শুনে।নিভ্র সাফার মাথায় উড়না পরিয়ে দিতে দিতে ক্ষীণ কন্ঠে বলে,
—” ভালোবাসি।”
সাফা প্রতিবারের মতই নিরব হয়ে সেই মধুর কথা শুনে।চারপাশের পরিবেশের সাথে মিশে কথাটা এক মাতাল করা সুরে রূপ নিচ্ছে।সাফা বললো,
—” আবার একবার বলবেন??”
নিভ্র সাফাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে আবার বললো,
—” ভালোবাসি আমার সাফারানীকে। খুব খুব খুব বেশি।”
দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে বাতাসের ঘ্রাণ নেয়।শুনে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।গভীর রাত চলে।সব দিকে নিরবতা।কিন্তু দুটি মন উষ্ণতায় এক হয়ে আছে।সাফা এক পাশে বসে আর নিভ্র অপর পাশে।সাফার চোখ চাঁদের দিকে।আর নিভ্রর চোখ সাফার দিকে।নিভ্র একবার চোখ বুজে আবার খোলে।সাফাকে তার মনে হচ্ছে সে সব জায়গায় দেখে।চোখ বন্ধ করলেও চোখ খুললেও।নিভ্রর নিঃশ্বাস দ্রুত চলে।সাফার হাত ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
—” অনেক দিন পরে আজ একটা ছন্দ মাথায় ঘুড়ছে শুনবে??”
সাফা গভীর চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।মিনমিনে গলায় বলে,
—” আপনার সব কথা শুনতেই আমার ভালো লাগে।আর আপনার ঠান্ডা গলায় কথা গুলো বরফের মত শীতল।আর হাওয়ার মত প্রাণবন্ত। তাই আমি সারা জীবন আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে আশা সব কথা শুনতে চাই।অনুভব করতে চাই।বলেন।”
নিভ্র সাফার হাতটা নিজের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ভাঁজে নেয়।হালকা হেসেঁ নিভ্র বললো,
—” 🍁
প্রেম নামক ভয়ংকর পিড়ায় আমি দগ্ধ
তোমার সৃষ্ট আগুনে আমি বিষাক্ত
মুক্তি চাই আমি সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়ে
বাড়িয়ে নেও তোমার দুহাতে আমাকে আগলে।”
সাফা নিভ্রকে জাপ্টে জড়িয়ে নেয়।নিভ্র হাঁসে।সাফার কোমড় জড়িয়ে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
—” ভালোবাসি।তাই ভয়ে থাকি।তুমি হিনা আমি নিঃশ্ব সাফারানী।তোমাকে ছাড়া আমার দমবন্ধ লাগে।তোমাকে ছাঁড়া আমি বাচঁতে পারবো না।তোমাকে ছাড়া আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো সাফারানী।”
সাফা মাথা তুলে তাকায়।নিভ্রর নিঃশ্বাস তার চোখে মুখে বাড়ি খায়।সাফার নীলাভ চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।চোখে অশ্রু ভরা।একটু ছুঁয়ে দিলেই টপকে পড়বে।সাফা নিভ্রর দু’গালে হাত রাখে।চোখে চোখ রেখে বলে,
—” আমি তোমাকে ছাঁড়া বাচঁবো না এটা তো অনেকেই বলে। খুবই কমন কথা।আপনি তো অনকমন। সবার থেকে আলাদা।আমার ডাক্তার।আমার ভিলেন। আমার মডেল-ফডেল। একান্ত আমার নিভ্র।আপনি সবার মত কেনো বলছেন??আপনার তো আলাদা হওয়া উঁচিত।”
নিভ্র কিছু বুঝলো না।সবুজ চোখে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে সে।সাফা ছোট কিছু শ্বাস ফেলে আবার বললো,
—” আপনার তো বলা উঁচিত ভিন্ন মাত্রায়।আপনি না হয় আলাদা ভাবে বললেন আমি তোমার জন্য বেচেঁ থাকবো।ভালোবাসলে সবাইকে রোমিও হতে হয় না। সে ইতিহাসে নিজেকে প্রমান করেছে।আপনি কেনো সে হতে চাইবেন??আপনি হবেন নিভ্র।ভালোবাসা মানুষকে বাচঁতে শিখায়।তাহলে কেনো আপনি আমি হিনা মরে যাবেন??আমার কিছু হলেও আপনি বেচেঁ থাকবেন।নিজেকে শক্ত রাখবেন। কারন আমার অস্তিত্বের কিছু হলেও আমাদের ভালোবাসা ঠিক থাকা চাই।আমি নাই তো আপনার মাঝে বেচেঁ থাকবে আমাদের ভালোবাসা।ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রেমিক প্রেমিকার কাজ।বুঝলেন??”
নিভ্র বুঝতে চাইলো না।তাই নাছোড়বান্দার মত বললো,
—” এসব কথা বলার মানে কি??ছাড়ো এসব।কত রোম্যান্টিক একটা পরিবেশ।আর তুমি আছো আজগোবি কথা নিয়ে।চুপ করো তা না হলে আমার কাছে অন্য রাস্তা আছে চুপ করানোর।”
কথাটা বলেই নিভ্র চোখ মারে।সাফা রেগে সরে গিয়ে নিভ্রর সামনের চুল টেনে বললো,
—” এই আপনি মদ, সিগারেট, গাঁজা,ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়ার সাথে সাথে পবিত্র চরিত্রটাও খেয়ে ফেললেন নাকি?? কি সব বলছেন??দুর হন।নির্লজ্জ একটা।”
নিভ্র হেঁসে চুল সরাতে সরাতে বলে,
—” প্রেমিক মানুষকে একটু নির্লজ্জ হতে হয় বাবু। সবই প্রেমের লিলা খেলা।”
সাফা নিভ্রর হাতে জোড়ে জোড়ে ঘুষি দেয়।নিভ্র সাফার দু’হাত ধরে হাঁসতে হাঁসতে বললো,
—” তোমার এই ধুম ধাম মারামারির রোগ হলো কিভাবে বলবে?? হাতটাও কত শক্ত করে ফেলেছো।
বলেই নিভ্র নিজের চাপা দাড়িতে সাফার হাত ঘোঁষতে লাগলো।এমন কান্ডে সাফা হেঁসে দেয়।
.
.
#চলবে_____________