আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 43

এদিকে চার ভাই বাহিরে আড্ডা দিয়ে বেশ রাত করে বাড়িতে ফিরে আসে।
কিন্তু বাড়িতে এসে দেখে বাড়ির পরিবেশ একদম ঠাণ্ডা।এতোটা ঠাণ্ডা পরিবেশ ওদের কারো সহজে হজম হচ্ছিলো না।
রাজ বলে,”আচ্ছা এইটা আমাদের বাড়ি তো?
না কি ভুল করে অন্য কারো বাড়িতে চলে আসছি? ”
আয়াত বলে,”এটাতো আমাদের বাড়ি তবে পরিবেশ টা বদলে গেছে কি ভাবে!
তাই বুঝতে পারছি না।”

আদিল বলে,”আরে তোমরা এমন ভাব করছো কেনো? বাড়ির পরিবেশ বদলে গেছে তাতে সবার খুশি হওয়া দরকার!সবাই খুশি না হয়ে অযথা টেনশন করছো।”
আরিয়ান বলে,”না আদিল তুমি বুঝবে না।
এই বাড়ির শান্ত পরিবেশ কোনো বড় ঝড়ের দিকে ইশারা করছে তা আমরা খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।”
আরিয়ান দের বাড়ির কাজের মেয়ে ফুলি এসে কান্না করতে করতে বলে,”অনু ভাবী বাড়ি ছাড়ে চলে গেছে।”
আরিয়ান বলে,”What? এইসব কি ফালতু কথা বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ”
রাজ বলে,”এই তুই জানিস কার কথা বলছিস?
অনু কখনো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার মতো মেয়ে না।
সে সব রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে জানে।”
এমন সময় রিদি এসে বলে,”অনু সব রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে জানতো তবে শ্বশুরবাড়ি যে এমন হবে তা তো সে আগে থেকে জানতো না।”
রাজ বলে,”কি বলতে চাইছো তুমি? ”
রিদি বলে,”আমার বোন তোমার মা,মামীদের কথার সামনে নিজেকে বেশি সময় দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে নাই।তাই অনিচ্ছা থাকা সত্বেও সে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।”

আরিয়ান বলে,”রিদি বাড়িতে কি হয়েছে তা যদি একটু ক্লিয়ার করে বলতে তাহলে খুব ভালো হতো সবাই সবটা জানতে পাড়তাম।”
মৌ বলে,”আমি বলছি কি হয়েছিল অনু ভাবীর সাথে।এরপর মৌ ওদের কাছে সব কথা ডিটেলে বলে দেয়।”
মৌ এর মুখে সব কথা শোনার পর আরিয়ানের তো রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো।
কিন্তু আজ আর সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না।রাগের বসে আরিয়ান বাড়ির ড্রয়িংরুমের সব দামি দামি কাচের শো পিস সহ ফুলদানি ভেঙ্গে সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।
আয়াত গিয়ে আরিয়ান কে থামাতে চেষ্টা করে
কিন্তু পারে না।তা দেখে রাজ আদিল তিনজন মিলে আরিয়ান কে ধরে রাখে।
এদিকে এতো ভাঙ্গাচুরের শব্দ শুনে রিনা বেগম,আয়েশা বেগম,রাজের মা সবাই নিচে ড্রয়িংরুমে চলে আসে।
আয়েশা বেগম এসে দেখে আরিয়ানের দুই চোখ রক্তের মতো লাল হয়ে আছে,নাক মুখ পুরোটা লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত রাগের জন্য কপালের পাশের রগ গুলো ফুলে আছে।

আর সব থেকে বড় বেপার হলো ওর মা ছেলের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত কেটে রক্ত ঝড়ে পড়ছে।
ছেলের হাতে রক্ত দেখে আয়েশা বেগম তাড়াতাড়ি আরিয়ানের কাছে গিয়ে হাত ধরে।
তখন আরিয়ান নিজের হাত এক ঝটকানি দিয়ে মায়ের হাত থেকে সরিয়ে নেয়।
আরিয়ান বলে,”আয়াত ভাই মাকে বলো এখান থেকে চলে যেতে। আমার তার চেহারা দেখতেও ঘৃণা লাগছে।এরা সবাই মেয়ে হয়ে অারেকটা মেয়ের সাথে যে ব্যবহার করে তা ভাবতেও গা ঘিনঘিন করছে আমার।”
রিনা বেগম বলে,”দেখেছো আয়েশা তোমার ছেলেটা ঐ বউয়ের জন্য তোমাকে কতো খারাপ কথা শোনাচ্ছে?”
আয়েশা বেগম রিনা বেগমের কথায় পাত্তা না দিয়ে আয়াত কে বলে,”আয়াত আরিয়ানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দাও তাড়াতাড়ি। তুমি দেখতে পাচ্ছ না তোমার ভাইয়ের হাত দিয়ে কি ভাবে রক্ত ঝড়ে পড়ছে।”
আয়াত বলে,”তুমি না আমাদের মা!
তাহলে তোমার ছেলের হাতের বাহিরো ঝড়ে যাওয়া রক্ত দেখলে শুধু?
একবার ও কি দেখেছো মা তোমার ছেলের হৃদয়ের মাঝে কি পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে?
নাহ তুমি তা দেখতে পাবে কি করে?
তোমার চোখে তো শাশুড়ি হবার চশমা দিয়ে রেখেছো।তুমি যে আমাদের মা সে কথাটা ভুলে বসে আছো।থাকো মা তুমি শাশুড়ি মার attitude নিয়ে।
আমরা চলে যাচ্ছি তোমার চোখের সামনে থেকে।”
আরিয়ানের মা কিছু বলবে তার আগে আয়াত আরিয়ানের হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বাগানে নিয়ে চলে আসে।
আরিয়ানদেন পিছনে পিছনে আদিল,রাজ,রিদি,মৌ চলে যায়।
আয়েশা বেগম ড্রয়িংরুমের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকে পাথরের মতো।
আরিয়ানের বাবা এসে বলে,”তুমি আমার বউ একথা ভাবেতে আমার রুচিতে লাগছে।আমার বউ তার নিজের সন্তানদের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতে পারে আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবতে পারি নাই।”

আয়েশা বেগম কিছু বলবে তার আগে আরিয়ানের বাবা চলে যায়
রিনা বেগম আর রাজের মা এসে আয়েশা বেগম কে
সান্ত্বনা দিয়ে বলে,”আরে ওরা দু দিন রাগ করে থাকবে তার পর তোমার সব কিছু তোমারি হবে।”
আয়েশা বেগম আর কিছু বলে না চুপচাপ হয়ে যায়।
এদিকে আয়াত মৌ কে ফাস্টএইড বক্স আনতে বলে।
মৌ বাড়ির ভেতরে দৌড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে ফাস্টএইড বক্স এনে আয়াতের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আয়াত পরম যত্নে ভাইয়ের হাতে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
আরিয়ান বলে,”মা আজ এই কাজ কি ভাবে করতে পারছে? আমার ভাবতে কেমন অবাক লাগছে।সে আমার মা!
এতো শিক্ষিত হয়ে এমন কাজ করে কি করে? শিক্ষিত হলেই কি সত্যি মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায়? ”
সবাই একদম চুপচাপ কারো মুখে কোনো কথা নেই।
আসলে এমন পরিবেশ পরিস্থিতি তে কি বলা যায় তা ওদের কারো জানা নেই।
আরিয়ান আবার বলে,”আমি কোন মুখে আবির ভাইয়ের সামনে যাবো অনুকে ঐ বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনতে?তার কোনো প্রশ্নের উওর যে আমার জানা নেই।”
রিদি বলে,”ভাইয়া আপনি চিন্তা করেন না।

রিমি আপু আছে অনুর সাথে তাই সে সবটা ম্যানেজ করে নিবে।তবে এই বাড়ির পরিবেশ টা ঠিক করেন তাহলে হবে।”
আরিয়ান বলে,”হুম আমি জানি আমার এই বাড়ির পরিবেশ ঠিক কি ভাবে করতে হবে।”
আয়াত বলে,”তুই কি করবি আরিয়ান? ”
আরিয়ান বলে,”যা করার তাই করবো ব্রাদার।
তাই বলে সোজা গ্যারেজ থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে বাহিরে চলে যায়।”
রাজ বলে,”আল্লাহ জানে এই আরিয়ান আবার কোন বিপদ নিয়ে আসবে সবার জন্য।”
আয়াত বলে,”কোনো বিপদ যদি ভালো কাজে লাগে তাহলে বিপদ ভালো তাই নয় কি?”



এদিকে পরেরদিন সকালে আরিয়ান চৌধুরী ভিলাতে ফিরে আসে তবে একা নয় তার সাথে আরেকজন ফিরে আসে এই বাড়িতে
যাকে দেখে আয়েশা বেগমের হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
রাজের মা’র গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বাহির হচ্ছিল না।
তা দেখে রাজ বলে,”কি হলো মা তোমার মুখের ভাষা কোথায় হারিয়ে ফেলেছ?
গলা শুকিয়ে আসছে বুঝি?
দাঁড়াও এই নাও পানি পান করো তার পর না হয় কর্কশ কন্ঠে তোমার ভাবী কে কু-বুদ্ধি দিবা।”
রাজের মা রাজের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
তা দেখে রাজ বলে,”মা ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।তোমাদের দিন শেষ এখন থেকে ওনার দিন শুরু।”
এদিকে অারিয়ানের সাথে আশা মানুষ আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে।
তা দেখে আয়েশা বেগম তার দৃষ্টি নিচে মেঝেতে নামিয়ে নেয়।
সে মহিলা রাগী কন্ঠে বলতে শুরু করে,”
আমি কয়েক বছর এই বাড়িতে নেই তাতে দেখছি আমার বাড়িটা কে এরা শয়তানের বাসভবন বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
আমি দূরে থাকি বলে কি এই বাড়ি সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর রাখি না ভেবেছিলে সবাই?
আমি প্রতিদিনের খবর পাই এই বাড়ির।
কে কার সাথে কেমন ব্যবহার করে!
কে কেমন রুপ বদলেছে সবটা খবর রাখার মানুষ আমি।
আয়েশা তোমার দেখছি জ্ঞান -বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে।আমার এই বেয়াদব মেয়ের কু বুদ্ধি মতো চলতে শুরু করে দিয়েছো তুমি?
তুমি এ বাড়ির বউকে দজ্জাল শাশুড়ির ভুমিকা পালন করে শ্বশুর বাড়ি ছাড়া করেছো।
আমি তোমাকে বাড়ি ছাড়া করতে পারবো না।
কিন্তু তোমাকে দজ্জাল শাশুড়ির পজিশন থেকে সরিয়ে দম নিবো নয়তো আমার নাম রাহেলা চৌধুরী না বুঝলে বৌ মা।
বাপের ও বাপ থাকে আর আমি তোমার শাশুড়ি তুমি হয়তো সেই কথা ভুলে গেছো।”
শাশুড়ির ও যে শাশুড়ি থাকে তা কি তোমার মনে ছিলো না? আমি কি মরে গেছি যে তুমি আমার কথা ভুলে গেছো?
আমার নাতবৌ দের সাথে খারাপ ব্যবহার করো?এতো সাহস কে দিয়েছে তোমাকে?
আয়েশা বেগম বলে,”না মা ঐ মেয়েটা ভালো না।
খুব বেয়াদব মেয়ে।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”তুমি একদম চুপ।
কে বেয়াদব তা তো দেখাই যাচ্ছে।
তুমি ও তো এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলে?
আমার তো তোমাকে পছন্দ ছিলো না।
আমি কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম সেদিন? আমি যদি তোমার মতো খারাপ ব্যবহার করতাম তাহলে কি তুমি এই বাড়িতে এতো বছর সংসার করতে পারতে? ”
রাজের মা বলে,”মা তুমি না জেনে বেশি বেশি করছো? ”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”তুই একদম চুপ থাক কুটনি বুড়ি।জানি আয়েশার মগজখালি করে সেখানে শয়তানি বুদ্ধি চাষ তুউ করেছিস।
নয়তো ওর এতো বড় কলিজা ছিলো না
এতো সব উল্টা পাল্টা কাজ করার।”
রাজের মা বলে,”মা এভাবে সবার সামনে বলতে পারছো আমাকে? ”
রাহেলা বেগম বলে,”তুই চুপ থাক কুটনি বুড়ি।সবার সামনে তোমরা কাজ করতে পারো আম আমি বলতে পারবো না? ”
রাজের মা মাথা নিচু করে রাখে।
রাহেলা চৌধুরী বলে,”তা বউমা তুমি যে মেয়েকে বউমা হিসাবে মানো না।
তাকে কোন অধিকারে থাপ্পড় দিয়েছিলে জানতে পারি?
যার উপর কোনো অধিকার তোমার নেই তাকে থাপ্পড় কেনো দিলে জবাব দাও নয়তো তাকে এখুনি আমার সামনে হাজির করবে তুমি তোমাদের বিচার আমি করবো।”
আয়েশা বেগম বলে,”মা আমি ঐ মেয়ে খুঁজতে যাবো।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”খুঁজতে যাব কি চাষ করতে যাবে তা তো আমি জানি না।
তোমাদের সময় দিলাম আজ বিকালবেলার মধ্যে আমার নাতবৌ বাড়িতে থাকবে।
তাকে কোথায় পাবে তা তোমার জানো আমি না।আর আমার কথার অবাধ্য হলে কি করতে পারি তা তোমরা ভালো করে জানো।”
এরপর আরিয়ান তার দাদী মা কে সাথে করে তার রুমে নিয়ে যায়।
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)




চলবে…..