আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 42

এদিকে আরিয়ান ভাবতে থাকে!
এই ভাবে আর যাই হোক সুখে সংসার করা যায় না।
এখুনি সব কিছু থামিয়ে দেওয়া দরকার বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবার আগে।
তার জন্য আমাকে যা করতে হবে তা আমি খুব ভালো করে জানি।
ভুলটা আমারি জানতাম এমন সমস্যা হবে।
তারপর ও বাড়ির মহিলাদের উপর ভরসা করা মোটেও আমার উচিৎ হয়নি।
তিন মাথা যখন এক স্থানে হয় তখন শয়তান সেখানে উকিঁ দিবে এটাই নিয়ম হয়তো।
এদিকে অনু রান্না ঘরে এসে মুরগির গোস্ত টুকরো করতে থাকে।
যতো রাগ ছিলো সবটা গোস্তের উপর দিয়ে ঝড় হয়ে বয়ে যাচ্ছে।
তা দেখে রিদি অনুর কাধে হাত দিয়ে বলে,”বুড়ি এবার একটু শান্ত হয়ে যা প্লিজ নয়তো এই গোস্ত গুলো কেউ খেতে পারবে না।একদম পিয়াজ কুচি হয়ে যাবে।”
অনু বলে, “বাড়ির বউ খারাপ হবে কি ভালো হবে সবটা নির্ভর করে সেই বাড়ির পরিবেশের উপর।কিন্তু এই বাড়ির যে পরিবেশ তাতে আমার মনে হয় আমি তার ছেলের বউ না!

তারা আমার ছেলের বউ আমি তাদের শাশুড়ি। সব দায় আমার তাদের সঠিক পথ আমাকে দেখাতে হবে। এটা কোথাকার নিয়ম বলবে আমাকে? ”
রিদি বলে,”দেখ অনু ভুল মানুষ মাএ হয়।
তবে ভুল থেকে মানুষ কে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।
এখন বাড়ির বড়রা সবাই ভুল করছে।
তাদের ভুল গুলো অবশ্যই আমাদের ধরিয়ে দেওয়া উচিৎ।সব কাজ কঠোর ভাবে সমাধান করা সম্ভব না।তেমন কোনো কাজ সহজে হয়ে যাবে এটারো কোনো মানে হয় না।
মাঝেমধ্যে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিতে হবে।
যাতে কেউ মনে কষ্ট না পায়।
আবার তারা নিজের ভুলটা বুঝতে পারে।”
অনু বলে,”তুমি কি বলতে চাইছো আমি তাদের সাথো যে ব্যবহার করছি তা ভুল?
তারা কেমন ব্যবহার করছে তাদের বাড়ির নতুন বউয়ের সাথে
তা তোমাদের চোখে পড়ছে না?
তাদের উচিৎ আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া আর তারা কি না আমাকে তাদের প্রতিদ্বন্দী ভাবতে শুরু করে দিয়েছে।”
রিদি বলে,”আমি কিন্তু একবার ও তোকে ভুল বলি নাই।তুই তো এমন মেয়ে যে কিনা সবাই কে সোজা পথ দেখাতে পারে।তবে এটা ভুলে যাবি না একটা পরিবারের পরিবর্তন কিন্তু আমরাই আনতে পারি।
এই কাজ বাহিরের কেউ করতে পারবে না।”
অনু বলে,”হুম নিজের বাড়ির মানুষ কে তো পরিবর্তক আমরাই করতে পারি অন্য কেউ করবে না।তবে আমি এটাও ভালো করে জানি কি ভাবে এদের সোজা পথে আনতে হবে।”

রিদি বলে,”তোর উপর আমার বিশ্বাস আছে।”
এমন সময় রিনা বেগম এসে বলে,”বাহ এখানে তো দেখছি দুই বোন মিলে যুক্তি পরামর্শ করা হচ্ছে।
তা বাছা এতো পরামর্শ করে কি আমাদের বাড়ি ছাড়া করবে না কি? ”
অনু বলে,”বাড়ি ছাড়া হবার ইচ্ছা থাকলে হতেই পারেন।আমরা তাড়িয়ে দেওয়ার কে?”
রিদি বলে,”না মামী আপনি ভুল বুঝছেন।
আমরা এমন কোনো কথা বলছিলাম না।”
আয়েশা বেগম বলে,”বউমা বড়দের মুখে মুখে একদম তর্ক করবে না।আমার এইসব একদম পছন্দ না।আজ শাশুড়ি হয়েছে।
একদিন আমরাও তোমাদের মতো বউ ছিলাম বাড়ির।”
অনু বলে,”থাক রিদি আপু মার কাছে মাসির বাড়ির বাড়ির গল্প করে লাভ নেই।”
রাজের মা বলে,”রিদি তুমি অনুর থেকে দূরে থাকবে।ঐ মেয়ে তোমার বোন আগে ছিলো এখন সে তোমার জা হয়,সে কথা ভুলে যাবে না।
শ্বশুর বাড়িতে বোনের সম্পর্কের কোনো মূল্যবোধ থাকে না।এখানে সে তোমার জা এটাই বড় কথা।”
রিদি বলে,”মা আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন এটা আমার শ্বশুর বাড়ি না।এটা আমার নানা শ্বশুরের বাড়ি।আমি তো বিয়ের পর নিজের শ্বশুরের বাড়িটা এখন পর্যন্ত চোখেই দেখি নাই।

যেখানে নিজের শ্বশুর বাড়িতে যতোদিন না যাচ্ছি ততোদিন অনুকে জা ভাবতে পারবো না।
অনু আমার বোন ছিলো সে সারাজীবন বোন থাকবে।”
রাজের মা বলে,”আজ রাজ বাড়িতে আসুক ওর কাছে বিচার দিবো।এই মেয়ে আমাকে আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা শোনাচ্ছে। ”
রিদি বলে,”মা কথা শোনাই নাই।
এটা আপনার ভাইয়ের কষ্টের টাকায় তৈরি করা বাড়ি।সে বাড়িতে এসে আমরা সবাই দইয়ের উপরের মাছির মতো বসে আছি।
তারা ইচ্ছা করলে আমাদের মাছি ভেবে যে কেনো সময় তাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই এই বাড়িতে আমরা মেহমান হয়ে দু দিনের জন্য আসতে পারি সারাজীবনের জন্য থেকে যেতে পারি না।আমার শ্বশুরের যদি খড়ের তৈরি ঘর থাকে তবুও সে ঘরটাতে হবে আমার সংসার।
এখানে সংসার করাটা আমার কাছে চড়ুই পাখির বাসার মতো মনে হচ্ছে।”
অনু বলে,”হ্যাঁ রিদি আপু বিয়ের পর বরের সব কিছু নিজের হয়।ঠিক তেমন বউয়ের সবটা বরের কাছে আপন হওয়া উচিৎ।
এটা আমার শ্বশুরের বাড়ি।
এই বাড়ির উপর আমার আর রিমি আপুর যতোটা অধিকার আছে ততোটা অধিকার তোমার নেই।
তার মানে এটা নয় যে ফুপু তার ভাইয়ের বাড়ি এসে থাকতে পারবে না।
অবশ্যই ফুপুর যখন ইচ্ছা হবে সে এখানে এসে বেড়িয়ে যাবে তোমরা আসবে যাবে।
তাই বলে যদি কেউ তার বাবার বাড়িতে সংসার করা শুরু করে দেয় তাহলে সে বাড়িতে মেয়ের আদর কমে যায়।
এমনকি সম্মান আর আগের মতো থাকে না।কোনো ননদ যদি ভাইয়ের সংসারে কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করে দেয় তাহলে একটা সময় পর সে বাড়ির পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে যায়।”

রিদি এবার তার শাশুড়ি মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”মা আজ যদি আপনি আপনার নিজের বাড়িতে থাকতেন তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না।
আমাদের তো খুব ছোট পরিবার।
আমি মৌ রাজ আর আপনি।
আমরা চারজন মিলেমিশে তো খুব সুখে দিন কাটাতে পারি।আমি কেনো নিজের শ্বশুরের ঘর রেখে পরের ঘরে চড়ুই পাখির মতো বাসা বাধতে যাবো?”
মৌ এসে বলে,”মা ভাবী একটা কথাও ভুল বলে নাই। আমার বাবার কি বাড়ি নেই?
আমাদের নিজের বাড়ি থাকতেও আমরা মামার বাড়িতে পড়ে আছি কেনো বলতে পারো?
শুধু মাএ তোমার জেদের জন্য।
আমরা মামার বাড়ি মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসবো কতো মজা করবো।
আমাদের কতো আদর থাকবে।
কিন্তু তোমার জন্য বাবা মারা যাবার পর থেকে এখানে আছি।কই একবার ও কি তোমার নিজের সংসারের কথা মনে পড়ে না?
সেই ঘরবাড়ি কোন অবস্থায় পড়ে আছে?
একবার ও খোঁজ নিয়েছো সে বাড়ির কোনো? ”
রাজের মা বলে,”তোদের দেখছি কথা কেঁচির মতো চলছে আমাকে বেশ ভালো জ্ঞান দিতে এসেছিস সকলে দেখছি।”
মৌ বলে,”তোমাকে কিছু বলাটাই বৃথা।

আজারে তোমাকে কিছু কেন যে বলতে আসছিলাম আল্লাহ জানে।”
রিনা বেগম বলে,”দেখেছো আয়েশা বাড়িতে দু দিন এই মেয়ে গুলো আসতে না আসতেই সংসার নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে।
দুদিন পর দেখা যাবে এরা সম্পত্তির জন্য তিন ভাইয়ের মাঝে ঝগড়া বাধিয়ে দিবে।
এই তিন বোন দেখছি খুব বিপদজনক।
এদের থেকে তোমরা আর ছেলেদের দূরে রেখো বুঝলে।”
অনু বলে,”সম্পর্কে তো মামী শাশুড়ি হন আপনি।
আপনি ননদের বাড়িতে এসেছেন বেড়াতে।
এখানে বেড়াতে এসে অন্যের সংসারের কি নাক গলানো টা উচিৎ হচ্ছে আপনার?
আমাদের ব্যক্তি গত বেপার এটা নিজেদের মধ্যে বুঝে নিতে দিন না।”
রিনা বেগম বলে,”এই মেয়ে ভুলে যাবে না এটা আমার ননদের সংসার।”
অনু বলে “ভুলে যাবেন না আমি এই বাড়ির বউ।সংসার টা যেমন আপনার ননদের এখন থেকে ঠিক সেই পরিমাণ অধিকার সহ এটা এখন থেকে আমাদের সংসার।
তাই আমাদের সংসারে প্লিজ নাক না গলালে খুশি হবো।”
রিনা বেগম বলে,”আয়েশা কিছু বলবি না।
তোর ছেলের বউ আমাকে কতো কথা শোনাচ্ছ দেখছিস?”
আয়েশা বেগম এসে অনুর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”বেয়াদব মেয়ে তুমি কোন সাহসে আমার ভাইয়ের বউকে অপমান করছো? ”
অনু নিজের গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে বলে,”আপনি যদি নিজের ছেলের বউকে সবার সামনে অপমান করতে পারেন তাহলে আমাকে তো নিজের সম্মান বাঁচাতে আওয়াজ তুলতে হবে শাশু মা।”

রিদি বলে,”মা আপনি যদি আজ মেহমান হয়ে যদি এই বাড়িতে আসতেন তাহলে আমাদের জন্য ওদের এতো সমস্যা হতো না।
মেহমান যদি বাড়ির মানুষ হতে চেষ্টা করে তাহলে সেই বাড়ির পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়।আর আজ এই বাড়ির।
অবস্থা দেখে আমাদের তাই মনে হচ্ছে।”
অনু কোনো কিছু না বলে সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে যায়।
রিদি বলে,”মামী মা আপনার ছোট ছেলের বউ এই রাতের বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তাকে আটকানো উচিৎ ছিলো আপনার।
আমরা এই বাড়িতে মাএ দু দিনের অতিথি।
অনু আর রিমি সারাজীবন থাকবে এই বাড়িতে এই কথাটা ভুলে যাবেন না।
আমাদের থেকে কাছের মানুষ কিন্তু ওরা আপনার।আমরা আপনাদের সুখের সময় আসবো।আর ওরা আপনাদের সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকবে।তাদের।বাড়ির বউ না ভেবে একবার মেয়ে ভেবে দেখবেন প্লিজ। ”
মৌ বলে,”চলো ভাবী আমরা রুমে যায়।
আজ ভাইয়ারা বাড়িতে আসলে তাদের সব কিছুর বিচার করতে বলবো।”
এদিকে চার ভাই বাহিরে আড্ডা দিয়ে বেশ রাত করে বাড়িতে ফিরে আসে।
কিন্তু বাড়িতে এসে দেখে বাড়ির পরিবেশ একদম ঠাণ্ডা।এতোটা ঠাণ্ডা পরিবেশ ওদের কারো সহজে হজম হচ্ছে না।
কোথাও তো কিছু না কিছু গণ্ডগোল আছেই।



চলবে…..