আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 41

এদিকে বিকালবেলা চৌধুরী বাড়িতে মেহমান এসেছে। তাদের দেখে আয়েশা বেগম এতো খুশি কি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
আয়েশা বেগম তার ভাবী রিনা বেগম কে জড়িয়ে ধরে।
আয়েশা বেগম বলে,”ভাবী তোমাদের এতো দিন পর তাহলে এই ননদের কথা বুঝি মনে পড়েছে? ”
রিনা বেগম বলে,”আরে কি যে বলো না তুমি।তোমার কথা তো আমাদের সব সময় মনে পরে তবে সময়ের সমস্যার জন্য আশা হয় না।”
আয়েশা বেগম বলে,”থাক ভাবী আর কিছু বলতে হবে না।তোমাদের দেশ-বিদেশ ঘুরাঘুরির সময় হয় কিন্তু আমাদের বাড়িতে আসার সময় হয় না।বুঝি আমি সব বুঝি বুঝেছো ভাবী। ”

রিনা বেগম বলে,”আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই বোঝো কি আর করার।”
আয়েশা বেগম বলে,”ভাবী আমাদের আদিল কোথায়। তাকে তো দেখছি না।”
রিনা বেগম বলে,”তোমার পেছনে তাকিয়ে দেখে।”
আদিল এসে ওর ফুপি মণি কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ফুপি জান তোমাকে অনেক মিস করেছি তার থেকে বেশি আমি আমার ভাইদের মিস করেছি তারা কোথায়? ”
আয়েশা বেগম বলে,”আমাকে মিস করলে দেখা করতে আসতে মাঝে মধ্যে।তোমার ভাইয়েরা সবাই তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।একটু পর চলে আসবে।”
আদিল সামনে তাকিয়ে বলে,”ফুপি ঐ দুই জন কে?”
আয়েশা বেগম বলে,” নীল শাড়ি পরা মেয়েটা রাজের বউ,আকাশী শাড়িপরিহিতা আরিয়ানের বউ।”
আদিল অনুর সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”হাই আমি আদিল আরিয়ানের কলিজার টুকরো মামাতো ভাই!
তোমার নাম কি আকাশী পরি? ”
অনু আদিলের সাথে হাত না মিলিয়ে বলে,”আমি মিসেস আরিয়ান চৌধুরী এই বাড়িতে আরিয়ানের অবর্তমানে এটাই আমার পরিচয়। আরিয়ান আসলে না হয় আমার পুরো পরিচয় ডিটেলে ওর থেকে জেনে নিবেন। ”

আদিল বলে,”আমি তোমার উত্তরে সন্তুষ্ট না তবে তোমার কথার attitude আমার খুব ভালো লেগেছে I like your attitude! ”
আরিয়ান পেছন থেকে এসে বলে,”দেখতে হবে না বউটা কার। যেমন আমি তেমন আমার বউয়ের attitude level bro! ”
আদিল ছুটে গিয়ে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাই বিয়েটা একাই করে নিলে আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? ”
আরিয়ান বলে,”আসলে সবটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে আর কিছু বলার সময় হয়ে ওঠে নাই।”
আদিল :সমস্যা নেই ব্রাদার আমি যখন এসেছি তখন আমার সবটা উশুল করে নিবো।
আরিয়ান বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে তোর যা খুশি তুই তাই করবি! ”
এদিকে আরিয়ান নিজের রুমে যাবার সময় অনুকে বলে,” আমার রুমে এক কাফ নিয়ে আসো।”
অনু জ্বি বলে তাড়াতাড়ি করে কফি বানিয়ে আরিয়ানের রুমে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে আয়েশা বেগম তার ভাবী কে বলে,”দেখছো ভাবী কি বেয়াদব মেয়ে তোমার সাথে আলাপ না করে নিজের বরের পিছনে পিছনে চলে গেছে।”
রিনা বেগম বলে,”তুই তারাতারি যা ওদের রোমান্সের মাঝে বাঁ হাত দিয়ে আয়।”
আয়েশা বেগম তাড়াতাড়ি করে আরিয়ানের রুমের দিকে যেতে থাকে।
অনু আরিয়ানের রুমে এসে দেখে আরিয়ান ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেছে।
তাই সে চুপচাপ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
এমন সময় অনুর চোখ বাহিরে যেতেই দেখে ওর শাশু মা এদিকে আসছে।
অনু রুমের ভেতর ঢুকে শাশুমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
আয়েশা বেগম বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে দরজা খোলো বলছি।আমার ছেলের রুমে তুমি কি করো? বাহিরে বেড়িয়ে আসো বলছি।”
অনু রুমের ভেতর থেকে চিৎকার করে বলে,”শাশুমা আপনার ছেলের একমাত্র বউ আমি।
আপনার প্রতি তো আমারো কিছু দায়িত্ব আছে তাই না।”

আয়েশা বেগম বলে,”কি বলতে চাইছো তুমি? ”
অনু বলে,”আপনাকে দাদী মা বানোনোর দায়িত্ব আছে না আমার।তিন মাসের মধ্যে আমি আপনাকে মিষ্টি মুখ করাবো শাশু মা। ”
আরিয়ানের মা এই কথা শুনে তাড়াতাড়ি রাজের মা আর রিনা বেগমকে ডাকতে যায়।
এদিকে বাথরুম থেকে আরিয়ান বাহিরে এসে দেখে অনু দুষ্টু হাসি দিচ্ছে।
আরিয়ান গিয়ে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
অনু আরিয়ানের এমন আচমকা স্পর্শ্যে পুরো বরফের মতো জমে যায়।
আরিয়ান অনুর এমন অবস্থা দেখে বলে,”এখনো রোমান্সের ‘র’ টা শুরু করি নাই।তাতে তোমার এই অবস্থা?
যখন রোমান্স করবো তখন তোমার কি অবস্থা হবে ভেবেই আমার খুব হাসি পাচ্ছে। ”
অনু আরিয়ান কে পেছন থেকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে এসে বল,”ওগো আমার সাধের বর তুমি যেমনটা ভাবছো আমি এতোটা ভীতু না।
আসলে এতোটা কাছে তো তুমি কোনোদিন ও আসো নাই তাই হঠাৎ আচমকা এমন হওয়াতে ভড়কে গিয়েছিলাম।”
আরিয়ান অনুকে নরমাল করতে, অনুর দু কাঁধের উপর হাত দিয়ে নিজের নাক দিয়ে অনুর নাকে স্লাইড করে বলে,”তা আমার এই মিষ্টি বউয়ের ঠোঁটের দুষ্টু হাসির রহস্য টা কি জানতে পারি? ”

অনু তাে সব গুলো দাঁত বাহির করে বলে,”শাশু মা কে বলেছি তাকে তিন মাসের মধ্যে দাদীমা বানিয়ে দিবো।”
আরিয়ান এবার বিষম খেয়ে বলে,”তুমি এতো ফাস্ট তা তো আমি জানতাম না।চলো তাহলে দেড়ি কিসের বাচ্চার জন্য যা করার তাই করি।”
অনু আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,”এই তো ছেলেদের শুধু একটু অনুমতির দরকার তাহলে লুচুগিরি শুরু।
আরে তোমাকে বাবা বানাবো সে কথা কি একবার ও বলেছি বোকা কোথাকার? তোমার মাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছি এই কথা।”
আরিয়ান বলে,”বাহ কি ভালো বউ আমার তবে সে বউ আমার মনের কষ্ট বোঝেনা এই দুক্ষু রাখবো কোথায়? ”
অারিয়ানের হাতে ঠাণ্ডা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আপাতত এই ঠাণ্ডা কফির মগে রাখো।”
আরিয়ান বলে,”এই তুমি পাগল হলে না কি এতো ঠাণ্ডা পানি হয়ে যাওয়া কফি কি খাওয়া সম্ভব? ”
অনু বলে “কেনো সম্ভব না? সামনে এতো হট বউ দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখে ঠাণ্ডা কফিটাকে গরম ভেবে খেয়ে নাও।”
আরিয়ান বলে,”যেমন তুমি তেমন তোমার শিয়াল মামা মার্কা বুদ্ধি। ”
অনু বলে,”হুহ আমার বুদ্ধি যেমন হোক তাতে তোমার কি?”
অারিয়ান বলে,”আমারি তো সব কিছু।
বউটা যে আমার।”
অনু বলে,”আচ্ছা থাক এতো বউ বউ করতে হবে না।আমি রান্নাঘরে গিয়ে তোমার জন্য আবারো কফি বানিয়ে ফুলির হাতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
অনু চলে যেতে লাগে তার আগেই আরিয়ান অনুর হাত ধরে রাখে।
অনু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ঐ ঠাণ্ডা কফি মগে চুমুক দিয়ে সেই কফি মজা নিয়ে খাচ্ছে।
আরিয়ান বলে,”বউয়ের হাতের বানানো খাবার কি কখনো খারাপ হতে পারে নাকি।
এটা একদম ঠাণ্ডা পানি হয়ে যায়নি।

তুমি আবার বানাবে তার থেকে সে সময়ভর আমার চোখের সামনে থাকো।
আমার চোখের তৃষ্ণা মিটে যাবে তোমাকে দেখার।”
অনু একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে।
এমন সময় আরিয়ান এসে টুপ করে অনুর কপালে একটা চুমা দিয়ে দেয়।
অনুও সোজা গিয়ে আরিয়ানের দুই গালে দুইটা চুমা দিয়ে দেয়।
তারপর দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে অনু আরিয়ান দু জনে একসাথে অবাকের শীর্ষে উঠে গেছে।
অনু আরিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আরিয়ান অনুর দিকে তাকিয়ে আবারো বাহিরে দেখে।
আরিয়ান অনুকে বলে,”আমি কোনোদিন ও ভাবতে পারি নাই আমার বাড়ির মহিলারা এমন ফালতু কাজ করবে।”
অনু আরিয়ানের খারাপ লাগাটা বুঝতে পেরে তাদের সবার সামনে আরিয়ানের ঠোঁটের উপর একটা চুমা দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনার কেমন রুচির মানুষ আমি তা জানি না।নতুন বিবাহিত নবদম্পতির রুমের বাহিরে আড়িপাতা আপনাদের শোভা দেয় না।এখন ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে এখন তাদের পারসোনাল জীবনটা নিজের মতো করে ইনজয় করতে দিন।
এভাবে ছেলে বউয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলে বউয়ের সম্মানের সাথে নিজেরদের সম্মান ও মাটির সাথে মিষিয়ে দিচ্ছেন।”
রিনা বেগম বলে,”এই মেয়ে বেশি বেয়াদবি করবে না।”
অনু আর কিছু না বলে সোজা নিচে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
আরিয়ানে সবাই কে বলে,”আপনাদের খুব বাড় বেড়েছে। অনু যে কি জিনিষ তা তোমরা হাড়ে হাড়ে বুঝবে যাও নিচে যাও এবার।”
ওরা সবাই নিচে চলে যায়।
(সবার থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)



চলবে….