আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 26

আরিয়ানের বাবা সবার এখানে থাকার জন্য একটা হোটেলে বুকিং দেয়।

তাই সবাই সেখানে পৌঁছে যে যার যার রুমের চাবি নিয়ে চলে যায়।

সেদিন আর কেউ কোথাও ঘুরাঘুরি করতে যায় না,সবাই খুব ক্লান্ত থাকার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে সব ছেলেরা এক সাথে পাহাড় ঘুরে দেখতে বাহির হয়।

তারা অনেক ঘুরাঘুরি করে পাহাড়ে একটা সুন্দর জায়গা ঠিক করে। এখানে যতোদিন থাকবে, সবাই মিলে আড্ডা এখানে দিবে।

(কিন্তু সে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া আরিয়ানের কাল হয়ে দাঁড়াবে।)

সবাই প্রতিদিন নিয়ম করে পাহাড়ে এক স্থানে বসে আড্ডা গান ফাইলামি করে।

আরিয়ান নিজের গিটার হাতে গান শুরু করে দেয়।

আসাদ বলে,”দেখ সবাই আসে পাশের সব মেয়েরা আমাদের রাজের গান শুনতে কি ভাবে জমাট বেধেছে, “আরিয়ান তোর কপাল সত্যি খুব ভালো স্কুলে মেয়েদের মেলা, এখানেও মেয়েদের মেলা ভাবা যায় “।

রাজ বলে,”মেয়েদের মেলা মানে কি আসাদ বুঝলাম না কথাটার মানে “?

সাজ্জাদ বলে(আরিয়ানের বন্ধু),”আরে রাজ তুমি তো জানো না আমাদের রাজ স্কুলের মেয়েদের এক মাএ ক্রাশ,যে কোনো মেয়ে রাজ কে দেখে ফিদা।ওর জন্য কোনো মেয়ে আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকায় ওহ না।আবার এখানে এসেও দেখো সব মেয়েরা রাজের প্রতি কি ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে”।

রাজ বলে,”বাহ তাহলে তো ভাল, রাজের অনেক জি এফ,তাই না আসাদ “?

আসাদ বলে,”সে আরেক ইতিহাস রাজ বাবু কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয় না।তার মনের মতো মেয়ে ঠিক করা আছে।তেমন মেয়ে না হলে জীবনে সে বিয়েও করবে না “।

রাজ বলে,”তাহলে তো ভাল,রাজের প্রতি অাকৃষ্ট হওয়া মেয়েদের সাথে আমি না হয় রোমান্স করবো কি বলো আরিয়ান “?রাজের যা কিছু সব কিছু তো আমারো এক চোখ টিপ দিয়ে বলে।

আরিয়ান বলে,”একদম না,তারা আমাকে পছন্দ করতে পারে।তার জন্য যে তাদের মন নিয়ে
খেলতে হবে এমন কাজ তুমি ভুলেও করতে যাবে না।আমি সব মেয়েদের অনুভূতি কে সম্মান করি “।

রাজ বলে,”আমাদের বিদেশে কিন্তু এমন না,আঠারো বছর বয়স হয়ে গেলে তুমি তোমার মতো যা খুশি করতে পারো “।

আরিয়ান বলে,”থাক এটা তোমার বিদেশ না, এটা আমাদের বাংলাদেশ। আর আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি আমাদের এমন শিক্ষা দেয় না।তুমি কোন দেয়ে আছো তা মনে রাখলে খুশী হবো”।



এর কয়েকদিন পরে আবার হঠাৎ পাহারে আসে পাশে অনেক মেয়ে দেখে রাজ এসে সবার সামনে বলে,”আরে আরিয়ান তোমার পেছনে যে মেয়েদের লম্বা লাইন বেপার টা কি??
কেমন মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে চাও তুমি”?

আরিয়ান বলে,”আরে এখুনি এতো ছোট বয়সে এসব নিয়ে আমি ভাবি না।তবে যার সময় হবে সে ঠিক চলে আসবে।

রাজ :আরে তারপর ও তো,,তুমি ও রাজ আমিও রাজ।তোমার সব কিছু তো আমারি তাই না।

আরিয়ান :তুমি আমার ভাই সাথে একি নাম।আমার আর তোমার মাঝে কি কোনো ফারাক আছে বলো হুম।

রাজ :তাহলে বলো তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?
তোমার সম্পর্কে আমার জানতে বড় ইচ্ছে হয়।দুজন মানুষেন নাম এক কিন্তু চিন্তা ধারা একদম আলাদা।

আরিয়ান আচ্ছা তাহলে বলছি , “আমার এমন মেয়ে পছন্দ যে মেয়ে গরিব কি বড়লোক তাকে দেখে বোঝা যাবে না।
সে থাকবে একদম সাধারণ মেয়ের মতো।
সে সব সময় চঞ্চল স্বভাবের হবে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ সব সময় করবে।
তার জন্য তাকে সবাই যদি ভুল ও বুঝে সে কেয়ার করবে না।
সত্যির সাথে সব সময় থাকবে তাকে তো আমার চায়”।



এর পর আমার গান শোনার জন্য সেখানে অনেক পাহাড়ি মেয়েরা আসতো।

রাজ দেখতাম সে সব মেয়েদের সাথে বেশ ভাব জমিয়ে আড্ডা দিতো।তাতে আমার কি।
ও দেখতাম মেয়েদের শরীরে হাত পর্যন্ত দিয়ে তাদের স্পর্শ করতো।আরিয়ানের কেনো জানি রাজের এসব দেখে ভালো লাগতো না।

তাই সে তার বাবার কাছে গিয়ে বলে,বাবা আমার এখান থেকে যেতে চায় “।

আরিয়ানের বাবা বলে,”তোমাদের এতো তাড়াতাড়ি ঘুরাঘুরি করে সব দেখা হয়ে গেছে”?

আরিয়ান বলে,”ঠিক তা নয় কিন্তু আমার আর এখানে ভালো লাগছে না বাড়িতে যেতে চায়।বাড়িকে খুব মিস করছি”।

আরিয়ানের মা বলে,”আচ্ছা আমার আর দু দিন থেকে চলে যাবো।এখন যাও তোমরা ইনজয় করো”।

আরিয়ান বাবা মার রুম থেকে বাহির হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।

এদিকে রাজ আরিয়ানের সব কথা বাহিরে দাড়িয়ে থেকে শুনে নেয়।আর মনে মনে বলে,”আমার যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে”।



পরেরদিন সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল,
আরিয়ান তার বন্ধু দের সাথে সারাদিন আড্ডা দেওয়া তে ব্যস্ত ছিলো।বৃষ্টির জন্য আমরা কেউ সেদিন পাহারে যেতে পারি নায়।

কিন্তু একটু পর কি মনে করে নিজের রুমে এসে রেস্ট করি তার পর সবাই আবার এক সাথে রাজের রুমে দিকে যায়।কারণ রাজ সারাদিন আমাদের সাথে আড্ডা দিতে আসে নায়।রাজের রুমে গিয়ে দেখি ও ভেজা অবস্থা খারাপ গায়ে কাদা লেগে আছে।

আমাদের সবাই কে দেখে রাজ বলে,”দেশের যদি কাদামাটি একটু না মাখতে পারি তাহলে বিদেশ গিয়ে সবাই কে কি বলবো ”

আরিয়ান বলে,”তাই বলে এমন করে কাদাজলে মাখা মাখি বেপার টা একটু অন্য রকম লাগছে না বলো।

রাজ বলে,”আরে ধুর তোমার যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি “।

তারপর সবাই যে যার যার রুমে চলে যায়।
আরিয়ানের সেদিনের বৃষ্টি টা কেনো জানি বিষাদ মনে হচ্ছিল।



একটু পর হোটেলে কিছু পুলিশ এসে হাজির হয়।

কোনো এক মেয়ে রাজের নামে রেপের চেষ্টা করার জন্য বিচার দিয়েছে।
তাই তারা রাজ কে ধরে নিয়ে যেতে আসে।

রাজের সামনে গিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাস করে রাজের রুম কোনটা,রাজ তাদের কে আরিয়ানের রুম দেখিয়ে দেয়।

এদিকে রাজ গিয়ে মামা মামী কে বলে,”তাড়াতাড়ি চলো সবাই আরিয়ান কে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে আসছে,ও নাকি কোন মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করছে “।

আরিয়ানের মা :আমার ছেলে এমন কাজ করতে পারে না।

ফুপু বলে,”কি পারে আর না পারে তা তোমার ছেলে জানে।পুলিশ বিনা কারণে তোমার ছেলেকে ধরতে আসে নায় “।

আরিয়ান কে পুলিশ হাতে হাতকড়া পড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল,তখন ওর বাবা মা সেখানে আসে।

আরিয়ান বলে,”বাবা মা বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করি নায়।এদের কোথাও ভুল হচ্ছে প্লিজ তাদের তোমরা বোঝাও “।

আরিয়ানের বাবা পুলিশের সাথে কথা বলে,”পুলিশেরা বলে,মেয়েটা আপনার ছেলের নাম বলেছে,আর এখানে প্রতিদিন সে গান করে।এর থেকে বড় প্রমাণ আর কি চায় আপনাদের ”

আরেকজন পুলিশ বলে,”আসলে আপনাদের মতো বড়লোক দের ছেলেরা কখনো মানুষের মতো মানুষ হতে পারে না, নিজের সম্মান নষ্ট না করতে চাইলে আমাদের কাজে বাধা দিবেন না”।

আরিয়ানের বাবা বলে,”আমার ছেলে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে শাস্তি দিন আমরা এসবের মাঝে নায়,বলে সে তার বউয়ের হাত ধরে চলে যায়”।

আরিয়ানের বন্ধুরা সবাই কেমন যেনো একটা দৃষ্টি তে ওর দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয় সে কোনো বড় সাজাপ্রাপ্ত আসামী।

আরিয়ান কে নিয়ে যাবার সময় আরিয়ান বার বার চিৎকার করে বলে,”বাবা মা, প্লিজ তোমার তো আমাকে বিশ্বাস করে,আমি এমন নাহ।তোমরা বিশ্বাস না করলে কে করবে বলো “?

তারপর আরিয়ান কে থানাতে এনে কারাগার বন্দী করে রাখে।
আমি সারারাত জেলখান তে বন্দি ছিলাম।
সবাই আমাকে হাজার কথা বলেছে আমার চরিএ খারাপ আমি ভালো না। আমার পরিবারের কেউ একবারের জন্য আমাকে সে রাতে দেখতে আসে নাই।
তাদের নিজের সন্তানের উপর এতোটুকু বিশ্বাস নেয় ভাবা যায়।

আমি সেদিন সারারাত নিজের রাজ নামের উপর রাগ করি।।আমার নিজের উপর খুব ঘৃণা হয়।।

তারা একবার ও আমার কাছে আসার প্রয়োজন মনে করছে না।আমাকে উপর এইটুকু বিশ্বাস নেই তাদের।

সেদিন রাতে আয়াত এসে আরিয়ানের হাত ধরে বলে,”জানি ভাইয়া তুমি এমন কাজ করতে পারো না।সবাই তোমাকে ভুল বুঝছে আমি জানি সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি শুধু আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখো “।

আয়াত চলে যাবার পর, আরিয়ান সেদিন রাতে খুব কান্না করে। একটা ভুল আমার জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছে। কেনো আমি এখানে আসতে গেছিলাম আল্লাহ জানে।



পরেরদিন সকালে সেই মেয়েটা আর তার পরিবার আসে।
মেয়েটা আমাকে দেখে বলে,,”এই ছেলে কেনো,,ঐ ছেলেটা ইনি না,,সে ছেলের চুল সোজা তার চুলে রং করা আছে “।

আরিয়ানে আর বুঝতে বাকী থাকে না ছেলেটা রাজ।

তারপর থানা থেকে আমাকে নিতে বাবা মা আর ফুপি আসে।।

বাবা মা বলে,,”আমাদের মাফ করে দিস বাবা আমরা বুঝতে পারি নাই।তোকে দেখতে আসলে আমাদের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হতো তাই আসতে পারি নায়”!

ফুপু বলে,”আমি আগেই জানতাম যে আমার আরিয়ান এমন কাজ করতেই পারে না, তোমার তো আসলে না ছেলেটাকে শুধু শুধু একটা রাত জেলে রাখলে “?

আরিয়ান সেদিন চুপ ছিল কিছু বলে নাই।
শুধু একটা কথা বলে, “ছেলের থেকে তোমাদের মান-সম্মানের মূল্য বেশি”।

তারপর হোটেলে এসে রাজ কে আরিয়ান খুব ধোলাই করে।কারণ ওর চুলে কালার করা আর একদম সোজা।

তারপর আরিয়ান তাদের সবাই কে সব কিছু বলে।
আরিয়ানের বাবা মা রাজ আর কি বা বলব,,নিজের ছেলের সাথে তো অন্যায় করছে। পরেরদিন রাজ ঢাকা এনে আবার বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।রাজের কৃতকর্মের শাস্তি হিসাবে।

তখন ফুপি ও বলে,,তোমার ছেলে এক রাত জেলে থাকছে সে দাগ মিটাতে তোমার ছেলের ও বাহিরে যাওয়া উচিৎ । শুধু শাস্তি রাজ একা পাবে কেনো।আমার ছেলে ছোট মানুষ সে ভুল করতেই পারে।

সেদিন আরিয়ানের বাবা মা প্রতিবাদ করে না। ফুপুর কথা মতো আরিয়ান কে তারা বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।

ভুল করছে একজন তার শাস্তি পায় আরিয়ান।
সেদিন বাড়ি থেকে যাবার সময় রাজ নামটা কে কবর দিয়ে শুধু আরিয়ান চৌধুরী হয়ে যায়।

যে নাম মনে পড়লে আমার জেল খানা, বাবা মার অবিশ্বাস, সবার দূরে সরে যাবার কথা মনে পড়ে।

যে নাম আমাকে এখনো কষ্ট দেয় সে নাম কেনো আমি মনে রাখবো?

এটাই আমার অতীত এর থেকে বেশী খারাপ আর কি হতে পারে বলো।যার পরিবার ভরসা করে না।যেখানে অবিশ্বাস থাকে সেখানে মানুষ কি করে ভালো থাকে।ভুল করবে একজন শাস্তি পাবে অন্য কেউ।এর পর সেই হাসিখুশী রাজ মারা যায়।দশ বছর নিজের পরিবারের কাছ থেকে দূরে থেকেছি। ছোট প্রাণ প্রিয় ভাইয়টার দশ বছর কোনো আবদার রাখতে পারি নায়।
আসলে কার ভাগ্যে কি আছে কেউ জানে না।।
সেদিনেন রাজ আজকের আরিয়ান।

আবারো সেই রাজ আমার জীবনটা বিষাক্ত করে দিবে তা আমি কি ভাবে মেনে নিতে পারি তুমি বলো।

এর পর অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে।
হঠাৎ আরিয়ান খেয়াল করে অনু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
(গল্পটা কেমন লাগছে সবাই বলবেন,আর ভুল এুটি মাফ করবেন)



চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *