আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 27

আরিয়ান অনুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসে।
রাস্তায় আসার সময় আয়াত কে কল দিয়ে বাড়িতে আসতে বলে।
আয়াত বাড়িতে এসে দেখে অনু অজ্ঞান হয়ে আছে।

আয়াত আরিয়ান কে বলে,”ভাবীর এমন অবস্থা কি করে হয়েছে “?

আরিয়ান বলে,”কান্নাকাটি করতে করতে দেখি সেন্সলেস হয়ে গেছে।
এভাবে বাড়িতে নিয়ে আসছি তুই আছিস “।

আয়াত অনুকে চেকআপ করে বলে,”তেমন কিছু হয়নি ভাবীর,অতিরিক্ত টেনশন আর শরীর দুর্বল তাই জ্ঞান হারিয়ে গেছে।নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলে আর একটু বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে”।

আরিয়ান বলে,”তুই ঠিক বলছিস তো,না কি হাসপাতালে নিয়ে যাবো “?

আয়াত বলে,”আমার ডাক্তারি নিয়ে তোর এতো সন্দেহ, তাহলে আমাকে কেন দেখতে বলিস তুই “?

আরিয়ান বলে,”আসলে হয়েছে কি ঘরে ডাক্তার থাকতে কি জন্য টাকা খরচ করে বাহিরে দেখাতে যাবো তাই “।

আয়াত উঠে একটু পানি অনুর মুখের উপর ছিটিয়ে দেয় তাতে অনুর জ্ঞান ফিরে আসে।

আরিয়ান অনুর পাশে বসে বলে,”এখন কেমন লাগছে তোমার,যদি খারাপ লাগে তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো”।

অনু বলে,”আরে না,,এমনি কিছুদিন আপনার জন্য আজারে টেনশন করে আমার বিপি লো করে ফেলছি।
এই একটু কাহিনী বলতে শালার বর আমাকে কতো দিন এভোয়েড করছেন ভুলি নাই আমি “।

আয়াত বলে,”ঝগড়া করবা ঠিক আছে রুমে গিয়ে করো,এখানে যে আমি আছি সে কথা ভুলে যাও কেনো”?

অনু বলে,”যখন দেখছো আমরা দু জন এখানে আছি তুমি কেনো দাঁড়িয়ে আছো তামাসা দেখতে “?

আয়াত আবুল হয়ে যায় অনুর এমন কথা শুনে।
তারপর বলে,”ভাই ভাবী কে কিছু খাবার এনে খাওয়ায় তার মাথা ঠিক কর আমি আসছি “।

আরিয়ান তাড়াতাড়ি কিছু খাবার নিয়ে জোর করে অনুকে খাওয়ায় দেয়।

তারপর রুমে নিয়ে গিয়ে বলে,”এবার তোমার যতো ইচ্ছা ঝগড়া করো সমস্যা নায় “।

অনু উঠে আরিয়ানের চুল ধরে জোড়ে টানতে থাকে আর বলতে থাকে,”শয়তার, কুত্তা, বিড়াল,, উগান্ডার জামাই,,
ঐ রাজের জন্য আমাকে এভাবে এভোয়েড করতে কে বলছিল।
আমি কি তোমাকে ভালো বাসি না?
না কি আমার উপর একটু বিশ্বাস ছিলো না “?

আরিয়ান অনুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,” তোমার উপর নিজের থেকে বেশী বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু নিজের এসব কথা বলার মতো সাহস ছিলো না”।

অনু আরিয়ান কে বলে,”ঐ রাজ কে তো আমি মজা দেখাবো “!

আরিয়ান বলে,”না থাক তুমি রাজের পিছনে লাগতে যাবে না,,অতীত দশ বছর আগে পার করে চলে আসছি।তাই তুমি আর কিছু করবা না”।

অনু বলে, “আচ্ছা কিছু করবো না “।

তারপর দুজন একসাথে বারান্দাতে যায়।
আরিয়ান ইজিচেয়ারে বসে অনুকে কোলের উপর বসিয়ে রাখে।
অনু আরিয়ানের বুকের উপর মাথা রেখে দুজন একসাথে জোৎস্না বিলাস করছে।

অনু আরিয়ান কে বলে,”আচ্ছা আমি কি তোমার মনের মতো সেই মেয়ে হতে পারছি যার জন্য তুমি এতো মেয়েকে এভোয়েড করছো “?

আরিয়ান :হুম তুমি একদম আমার কল্পনার মেয়েটার মতো।
তোমার কথা বলার স্টাইল,,
তোমার সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করা,,
না ইগো দেখানো,একদম আমার মন ছুঁয়ে গেছে।সেই জন্য তো সেদিন ফুপির কথার উপর দিয়ে গিয়ে ইচ্ছা করে তোমাকে বিয়ে করেছি।
জানি তুমি হয়তো আমাকে মেনে নিবে না,
কিন্তু দেখো শেষ পর্যন্ত আমাকে তুমি মেনে নিয়ে আপন করেছো “I real really love you jan “।

অনুর কোনো উওর না পেয়ে আরিয়ান অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝতে পারে অনু ঘুম।

আরিয়ান অনুকে কোলে করে বিছানাতে নিয়ে যায়।তারপর লাইট বন্ধ করে দু জন ঘুমিয়ে যায়।



সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু গোসল করে আজ একটা নীল রং এর শাড়ী পরে রেড়ি হতে থাকে।

আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে তার সুন্দরি বউ রেডি হচ্ছে।তাড়াতাড়ি আরিয়ান উঠে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে বলে,”বাহ অনেক সুন্দর স্মেইল তো তোমার চুলের “।

অনু বলে,”বাথরুম যে শেম্পুর বোতল আছে না, এটা সেই শেম্পুর সুগন্ধি যা আপনা চুল দিয়ে বাহির হয় “।

আরিয়ান বলে,”থাক হয়েছে আর বলতে হবে না,একটু রোমান্স করতে দাও”।

অনু :এখন রোমান্স করার সময় নায়,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসুন,, অফিসের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে বলে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।

আরিয়ান কি আর করবে রেডি হয়ে নিচে যায়।

খাবার টেবিলে বসে বলে,”অনু তোমার আর অফিসে যেতে হবে না,,তুমি বাড়িতে কিছুদিন বিশ্রাম করো”।

অনু বলে,”আমি বাড়িতে বসে বিশ্রাম করি আর তুমি ঐ দিকে সীমা অথবা দিশার সাথে প্রেম করো তাই না “?

সবাই অনুর এমন কথা শুনে হেসে দেয়।

আরিয়ান উঠে বলে,”তোমার যা খুশী তুমি তাই করো কিন্তু লাঞ্চ টাইমের পর আজ থেকে বাড়ি চলে আসবে এটাই আমার শেষ কথা “।


এদিকে অনু অফিসে এসে নিজের কাজ করতে থাকে হঠাৎ দেখে আরিয়ান দিশার সাথে হাসতে হাসতে কথা বলে কোথাও যাচ্ছে।

আরিয়ানের এমন হাসাহাসি করে কথা বলাতে অনুর কেমন জানি রাগ রাগ লাগছিল।

অনু সোজা উঠে গিয়ে আরিয়ানের হাত ধরে গরুর মতো টানতে টানতে কেবিনে নিয়ে যায়।
তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়।

তা দেখে আরিয়ান বলে,”তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,এমন আজব ব্যবহার করছো কেনো “?

অনু বলে,”বাহিরে এসব কি ছিলো”?

আরিয়ান বলে,”কি ছিলো মানে কি”?

অনু বলে,”এখন তো কিছুই বুঝবে না,আমি তো পুরাতন হয়ে গেছি,নতুন সুন্দরি পিএ কে পেয়ে তো আমাকে ভুলেই যাবেন।
কিন্তু আমি আপনাকে ছেড়ে দিবো না, মরে গেলেও না “।

আরিয়ান অনুর মরে যাবার কথা শুনে তাড়াতাড়ি অনুর মুখ চেপে ধরে বলে,”একদম মরার কথা বলবে না,,তাহলে তোমাকে খুন করে ফেলবো “!

অনু মুখ থেকে হাত নামিয়ে বলে,”খুন করলে আর বেঁচে থাকবো কি করে “?

আরিয়ান :থাক এতো কথা দিয়ে কাজ নায়,এবার বলো “তোমার কি হয়েছে”?

অনু এবার কান্না করে বলে,”ঐ দিশার সাথে এতো হেসে কেনো কথা বলছিলেন,আমার পছন্দ না। আপনি আমি ছাড়া আর কারে সাথে এতো কথা বলবেন না “।

আরিয়ান বলে,”এই তুমি ঠিক আছো তো তোমার কি হয়েছে,অফিসে যদি মেয়েদের সাথে কথা না বলি তাহলে হবে না কি বলো তো “??

অনু বলে,”জানি না,আপনার যা ইচ্ছে হয় করেন আমার কি? বলে অনু সোজা বড়িতে চলে যায় “।

আরিয়ান সোজা আয়াত কে কল দিয়ে বলে,”এই তোর ভাবী এতো খিটখিটে মেজাজের কেন হয়ে গেছে,,জানিস আজ কি করেছে , তারপর পুরা কাহিনী বলে “।

আয়াত বলে,”হয়তো শরীর দুর্বল তাই খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে,তুই একটু ভাবী কে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে চলে যা তাহলে হবে”।

আরিয়ান বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায় “।

আয়াত বলে,”শুধু দেখিস না, কাজেও লাগাবি তাহলে হবে “।

আরিয়ান বলে,”থাক ভাই আর জ্ঞান দিতে হবে না রাখছি “।



এদিকে অনু বাড়িতে এসে ওর ভালো লাগছে না।
কেমন যেনো সব কিছু বিরক্তিকর লাগলে,

তখন ওর রুমে মৌ এসে বলে,”ভাবি সেদিন তো সব ছবি দেখলে না তাই আজ আবার ছবি গুলা এক সাথে নিয়ে আসছি, একা একা ছবি দেখে মজা লাগে না।

অনু কি করবে,ভালো লাগছে না,তারপর ও মৌ এর সাথে ছবি গুলা আবার দেখতে শুরু করে।

এবার মৌ সে দশ বছর আগের পাহাড়ের ছবি দেখায়।

অনু তার রাজ কে দেখছে আর মনে মনে বলে,”আজারে তোমার পেছনে আমার দশটা বছর মাটি করে দিলাম,,আগে জানলে কখনো এমন করতাম না “।

এবার মৌ আরিয়ানের ছবি দেখিয়ে বলে,”ভাবী এটা আমাদের আরিয়ান ভাইয়া “!

অনু একবার আরিয়ানের ছবি দেখে একবার মৌ কে দেখে। তারপর বলে,”এই ছবির সাথে তো আরিয়ানেরন কোনো মিল নেয় “?

মৌ বলে,”ভাবী তুমি কি বোকা”?

অনু বলে,”কেনো গো “?

মৌ বলে,”দশ বছর আগের সেই চেহারা কি দশ বছর পরে এক থাকে,,সময়ের সাথে চেহারা বদলে যায়।মেয়েদের চেহারার থেকে বেশি ছেলেদের চেহারার পরিবর্ত হয় “।

অনু তখন বোকার মতো একটু হাসি দিয়ে বলে,”হুম তাই তো,আমি দশ বছর আগের মানুষ কে এখন কেমন করে পাবো,তাই বলে মৌ কে জড়িয়ে ধরে “।

মৌ বলে,”দশ বছর আগের মানুষ মানে ভাবী “?

অনু বলে,”আরে বাদ দাও বুঝবে না,সেসব কথা”।

তারপর মৌ রাজের ছবি দেখিয়ে বলে,”এই যে চুলে কালার করা বান্দর এটা আমার ভাই “।

অনু রাজের ছবি দেখে ভাবে,আরে এই তো সে যাকে রাজের কথা জিজ্ঞাস করছিলাম।

তারপর বুঝতে পারে সেদিন আরিয়ানের ছবি কে আয়াত ভেবে মিছেমিছি কান্নাকাটি করেছি।

তারপর মৌয়ের সাথে একটু আড্ডা দেয়
তারপর মৌ নিজের রুমে চলে যায়।

অনু পুরো রুমের মাঝে খুশি তে লাফা-লাফি করতে থাকে,আর ঘুরাঘুরি করতে থাকে
বলে,”ওরে আমার দশ বছর আগের ক্রাশ টা আজ আমার ক্রাশ বর ভাবা যায়”।
আমি বোকা দেখে নিজের বর টাকে চিনতে পারি নাই।
তাতে কি হয়েছে বর কে তো ভালোবাসি।
এখন ক্রাশ বর হিসাবে দ্বিগুন ভালো বাসবো।
আমার বরটা আগের থেকে কতো স্মার্ট হয়ে গেছে ভাবা যায় না।
অবশেষে আমার ক্রাশ কে বর হিসাবে পেয়েছি আমি।
উফ বর তুমি আজ আসো দেখো কি সারপ্রাইজ দেই তোমাকে।
ঠিক তখনি অনু শাড়ীর সাথে পা পেঁচিয়ে পড়ে পায়ে ব্যাথা পেয়ে কান্না করতে থাকে।



চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *