আমার ক্রাশ বর !! Part- 10
এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে,,
সময়ের সাথে সব কিছু বদলে যায়,
কিন্তু অনুর মন থেকে রাজ কেনো মুছে যায় না।সে কি আছে না কি অনু কোনো মিথ্যে এক অনুভূতির পেছনে ছুটছে ??।
‘
‘
এদিকে চৌধুরী ভিলাতে এসে ফুপু আম্মা রাগে ফুলকো লুচি হয়ে আছে।
তা দেখে আরিয়ানের মা বলে,”বড় আপা আপনার কি হয়েছে?এমন অন্য রকম লাগছে কেনো”?
ফুপু আম্মা বলে,”আর বলো না,আজ এমন এক জঙ্গলি বুনো ওলের সাথে দেখা, কি আর বলবো বলো”।
আরিয়ানের মা,”আপা আপনি তো আরিয়ানের অফিসে গেছেন! যাবার পথে জঙ্গলে কখন গেলেন বুঝলাম না তো”! 😒
ফুপু আম্মা :আরে এক মেয়ের সাথে দেখা,,
“বাবারে বাবা মেয়ের যে কি ঝাঁজ বলা যাবে না।কোনো কথা বলার সুযোগ দিবে না।আর কথায় পারবে না”।
আরিয়ানের মা :আলহামদুলিল্লাহ্।
এমন প্রতিবাদী মেয়ে ভাল।
এখন তো খুঁজলেও এমন মেয়ে পাওয়া যাবে না।যারা এমন হয় সে মেয়েদের মন অনেক ভাল হয়।ওদের মাঝে কোনো ভেজাল থাকে না।
আরিয়ানের ফুপু বলে,,”এমন মেয়ে যেনো তোমার ছেলের বউ হয়, তোমার ঘাড়ে এসে পড়ে”।
আরিয়ানের মা বলেন,” আমিন আপা,আরিয়ানের বউ যেন এমন হয়”।
ফুপু আম্মা :তোমার এ আশা জীবনে পূরণ হবে না।আরিয়ানের জীবনের সব সিদ্ধান্ত আমি নিবো।
তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আয়াত আছে।আয়াতের বিয়ে দাও ঐমেয়ের সাথে।
আরিয়ানের মা বলে,”যদি এমনি হয় তাহলে আমি আয়াতের জন্য এমন মেয়ে আনবো,এক ছেলের বউ তো মনের মতো হবে।”
ফুপু বলে,,”তোমার আয়াত আরিয়ান না যে সে তোমার কথা মতো বিয়ে করবে”।
আরিয়ানের মা :আয়াত আমার ছেলে,,
আরিয়ানের উপর যদি অধিকার ছেড়ে দিতে পারি তাহলে আয়াতের উপর জোড় করতে পারবো ভুলে যাবেন না।
ফুপু আম্মা :তাই ভালো,,ওমন বুনো ওল আয়াতের ঘাড়ে ঝুলিয়ে দাও।
আরিয়ানের মা :ইনশাআল্লাহ আয়াতের জন্য ঐ রকম মেয়ে খুঁজবো আমি।
আরিয়ানের ফুপু বলে,,”আচ্ছা এসব বাদ দাও
বড় ছেলের বিয়ে নিয়ে চিন্তা করো।
ছোট ছেলে পালিয়ে যাবে না।”
আরিয়ানের মা :মেয়ে দেখা থেকে তারিখ ঠিক করা সব যখন আপনি করছেন।
তখন বিয়ের বাকি কাজ আপনি করেন।
বলে সে চলে যায়।
‘
‘
‘
হঠাৎ একদিন রিমা ও তার পরিবার,
অনুদের বাড়িতে আসে।
রিমার বড় বোন রিমির বিয়ে তার দাওয়াত দিতে।
অনুর পরিবার তো বিয়েতে যাবে সে যাই বলেন।
তখন রিমা বলে,”আমি অনুকে আমাদের বাড়িতে আজ কেই সাথে করে নিয়ে যেতে চাই”।😊
অনুর বাবা বলনে,”অনু যদি যেতে রাজী থাকে তাহলে আমাদের কারো কোনো সমস্যা নাই”।
অনুর মাও একই কথা বলেন।
অনু :আমি যেতে পারবো না রে,,
আমার অফিসে অনেক কাজ।।
তার উপর নতুন জব,কিভাবে এতোদিনের ছুটি চাইবো, একটু বুঝতে চেষ্টা করো।
রিমা :বুঝতে পারছি,আমাদের সবার থেকে তোর কাছে জব টা আগে।
অনু :আজব এমন কেনো হবে বল তো।
তোর বোন কি আমার বোন না।
তাছাড়া বিয়েটা তো ঘরোয়া ভাবে হবে।
কোনো অনুষ্ঠান করে দিবে না।
তাহলে সমস্যা কোথায়।
রিমা বলে, “সমস্যা আমার মাথায়”।
অনু গিয়ে রিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আরে পাগলী তোর বিয়েতে আমি এক মাস আগে যাবো দেখবি”।
রিমা :থাক অনেক হয়েছে আলগা পিরিত,, আপুর বিয়ের দিন, অন্ততপক্ষে সময় মতো পৌঁছে যাবি।এটা তো তোর থেকে আশা করতে পারি।
অনু :কেনো আমি কি লেট লতিফ যে রিমি আপুর বিয়েতে লেট করে যাবো?
রিমা :লেট লতিফ না,কিন্তু লেট লতিফা।
অনু বলে, “তুই একথা কিসের ভিত্তি তে বলতে পারছিস”?
রিমা :তুই সব কাজে ফাস্ট হতে পারিস,
কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানের কাজের সময় তুই লেট করবি। সেখানে পৌঁছাতে।
অনু :যাহ তোর বিয়ে তে যাবো নাহ😏
রিমা :আমার বিয়ে তে তোর যেতে হবে না।আপাতত আমার বোনের বিয়েতে সময় মতো আসলে আমি খুশি হবো।
অনু :দেখছো সবাই ও কি খারাপ, আমাকে ওর বিয়েতে দাওয়াত দিবে না।
তাই বলে আমি আমার বেস্টুর বিয়ের দাওয়াত মিস করতে পারবো না গো😭
সবাই এক সাথে বলে,”এ দুই মেয়ে একসাথে হলে,
ঝগড়া করবে না তা কখনো হতে পারে না।
দুজন এতো ঝগড়া করে, তারপর ও একসাথে এতো গুলা বছর পার করেছে” ।
তারপর দাওয়াত দিয়ে রিমার পরিবার চলে যায়। অনুর মায়ের লেকচার শুরু হয়ে যায় অনুর সাথে।
অনুর মা :আজ যদি আমার মেয়েটা চাকরি না করে বিয়ে করতো। তাহলে আমিও সবাই কে এভাবে দাওয়া দিতে পারতাম।
অনু :আবারো শুরু হয়েছে তোমার বিয়ে নিয়ে লেকচার।
অনুর মা :কি শুরু করছি? যা সত্যি তাই বলছি।আমাদের ও অনেক স্বপ্ন আছে তোকে নিয়ে।আমাদের সব স্বপ্নের উপর তো তুই পানি ঢেলে দিচ্ছিস।
অনু বলে,”মা পানির অপর নাম জীবন।পানি ছাড়া কেউ বাঁচবে না। আহা কি ভালো পানি”।
অনুর মা :তুই যে বিয়ে না করে বুড়ি হয়ে যাবি।।কে করবে তখন বুড়ি কে বিয়ে?
অনু : যে বুড়া বেডার ঘাড়ে আছি সেই করবে বিয়ে। তাছাড়া অন্য কেউ তো করবে না বিয়ে।
অনুর মা :তোর সাথে কথা বলা আর দেওয়ালে মাথা ফাটানো এক কথা।
অনু :তাহলে আর আসিও না আমার সাথে কথা বলতে বুঝছো মা।
অনুর মা বলে,,”যা আর বলবো না তোর সাথে কথা “।
‘
‘
‘
এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়।
দেখতে দেখতে আরিয়ানের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে।
এদিকে অফিসে অনু আরিয়ানের কাছে ছুটি চাইতে যায়।
অনু : স্যার আমার কিছুদিনের জন্য ছুটি লাগবে।
আরিয়ান :এমন ভাবে বলছো,”যেনো এটা তোমার মামা বাড়ি,আর মামার বাড়িতে আবদার করতে চলে আসছো”।
অনু :দেখুন স্যার বান্ধবীর বোনের বিয়ে। আমার ছুটি লাগবেই।এখন আপনাকে ছুটি দিতেই হবে।
অারিয়ান :মগেরমুল্লুক না কি? যে ছুটি চাইলে আমি ছুটি দিয়ে দিবো।
অনু :কেনো ছুটি দিবেন না শুনি।
আরিয়ান :আমি নিজের বিয়ের দিন ও,অফিসে আসবো,,সেখানে আমার পিএ কি ভাবে ছুটিতে থাকবে।
অনু :কি বলেন,, নিজের বিয়ের দিন ও অফিসে আসবেন?? আল্লাহ গো এইডা কি মানুষ না কি জিন ভুত।
আরিয়ান :কেনো কি হয়েছে?
অনু :ঐ কোন মানুষ নিজের বিয়ের দিন অফিসে আসে কাজ করতে ?
আরিয়ান :সবাই তো আরিয়ান চৌধুরী নয়,
যে বিয়ের মতো ফালতু কাজের জন্য সময় নষ্ট করবো।
অনু :আপনার কপালে বউ থাকবে না।।
দেখবেন একদিন আমার কথা সত্যি হবে। 😏😏
বলে চলে যায়।
‘
‘
‘
এদিকে আজ সকাল থেকে অনু সব অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি করছে কারণ অাজ রিমার বোনের বিয়ে।
অারিয়ান ও সেই বজ্জাতের বজ্জাত অনুরে অফিস টাইমের আগে ছাড়বে না।
অনুর বাড়ি থেকে বারবার ফোন করেছে তাড়াতাড়ি আসতে।
কিন্তু অনু তো যেতেই পারছে না।
আরিয়ান আজ অনুর ঘাড়ে একগাদা কাজ চাপিয়ে দিয়েছে।
সে একগাদা কাজ অনু করছে আর বারবার ভাবছে।
দেখাই যাবে আমি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখবো বিয়ে শেষ সবাই বিদায় দিয়ে কান্নাকাটি করছে,,
আমি তখন গিয়ে না দেখতে পারবো বিয়ে,
না পাবো ভাল খাবার এটা কি সম্ভব রে অনু।
অনুর চিন্তার মাঝে ঝামেলা বাধাতে,আরিয়ান চলে আসে।
আরিয়ান :আরে এইভাবে বসে বসে চিন্তা করলে হবে তাড়াতাড়ি কাজ করো না হলে বান্ধবীর বোনের বিয়ে মিস করবা তো।
অনু বলে,”তা নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা না করলেও চলবে স্যার”।
আরিয়ান :আচ্ছা আপনি কাজ শেষ হলে চলে যাবেন।
অনু :না কাজ শেষ হলে এখানে বসে ঘুমিয়ে থাকবো এবার খুশি তো?
আরিয়ান :আপনার মতো ঘাড় ত্যাড়া মেয়ের সাথে কথা না বলা ভাল।বলে আরিয়ান চলে যায়।
অনু তার কাজ শেষ করে সোজা বাড়িতে চলে যায়।
বাড়িতে ঢুকার সময় অনু ভাবতে থাকে।
এখন কি পড়ে বিয়ে বাড়িতে যাবো।
এসব ভাবতে বসলে তো রাত পার হয়ে যাবাে।
অনু নিজের রুমে এসে দেখে ওর বিছানার উপর সুন্দর একটা লাল রঙ্গের লেহেঙ্গা রাখা।
সাথে মেচিং জুয়েলারি। মেকআপের সেট সহ প্রয়োজনীয় সব এক সাথে রাখা।
এসব দেখে অনুর একমিনিট ও বুঝতে দেড়ি হলো না যে,
এসব কিছু মা ওর জন্য রেড়ি করে রাখছে।
তাড়াতাড়ি বিছানার উপর থেকে ড্রেস নিয়ে বাথরুমে যায়।
তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে বাহিরে এসে চটজলদি রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে।
উদ্দেশ্য রিমাদের বাড়ি।
কিন্তু বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে অনুর আর শেষ রক্ষা হলো না।
বিয়ে বাড়ি অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা ।
অনু বুঝতে পারছে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ।
এখন যদি বাড়ির ভেতরে যায় তাহলে আমাকে রিমা কাঁচ্চা চিবিয়ে খাবে।
আবার দেখা না করে গেলে বেচারি কষ্ট পাবে।
এসব ভাবতে ভাবতে অনু বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার সময় আবিরের সাথে দেখা।
আবির অনুর কান টেনে বলে,,,”লোকাল ট্রেন একদম সব কিছুর শেষে আসছিস না আসলেও তো পারতিস”?
অনু বলে,”আহ লাগছে ভাইয়া কান ছাড়ো যাচ্ছি তো রিমার কাছে”।
আবির: আচ্ছা যা তাহলে তাড়াতাড়ি। আমি বাহিরে থেকে আসছি।
অনু ভেতরে গিয়ে রিমার সামনে গিয়ে
দু কান ধরে বসে বলে,,,’
“সরি দোস্ত মাফ করে দে,,আসতে দেড়ি করে ফেলছি ”
“আজ বুঝলাম সত্যি আমি লেট লতিফা ”
না হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ সব কিছু ফুরিয়ে গেলে আসে।।
ওরে আমার পোড়া কপাল রে।।
এতো সাজুগুজু করে কি লাভ হলো,,
শেষে তো শালা বজ্জাত বসের জন্য
একটা সুন্দর বিয়াই ও কপালে জুটল না।😭😭
(যার কপালে দাওয়াত খাওয়া নাই😩😩
সে কি জোর করে দাওয়াত খাইতে পারে😋😋দাওয়াত মিস হয়ছে ভাল হয়েছে😏😏)
‘
‘
‘
চলবে….