The villain lover ।। পার্ট : ২৪
ছোয়া বিছানায় শুয়ে, শুয়ে কাঁদছে।
হঠাৎ কারো উপস্থিতি অনুভব করে উঠে বসতেই,,,
রুদ্র ছোয়ার মুখ চেপে ধরলো,
– প্লিজ জান চিৎকার দিও না, বাসায় বড়রা আছে কি না কি মনে করবে, তুমিও লজ্জায় পড়বে আর আমিও।
ছোয়া বড়, বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে,
– ইস কান্নাকাটি করে চোখটাকে একেবারে ফুলিয়ে ফেলেছো।
ছোয়া জোরে রুদ্রের হাতটা সরিয়ে ফেললো,
– কেনো এসেছেন এখানে? কেনো এসেছেন? তখন থাপ্পেম মেরে হয়নি? এখন আবার মাড়তে এসেছেন?
– উফফফ তুমি বড্ড বেশি কথা বলো শুধু বেশি কথা না। বেশি ফাও কথা বলো।
– আমি যা ইচ্ছা তাই বলি তাতে আপনার কি বেড়িয়ে যান এখান থেকে।
-যদি না যাই??
– আমি চেঁচাবো!
– ওকে চেঁচাও হাসবেন্ড সাথে ওয়াইফ এভাবে চেচাবে ব্যাপারটা কতো লজ্জার তাইনা। কিন্তু তুমি তো তা বুঝলে না, থাক আমার কোনো সমস্যা নেই তুমিতো জানো আমার এমনি লজ্জা কম।
আমার রাগ উঠাবেন না যান এখান থেকে,
– এই ছোয়া, প্লিজ এতো রেগে থেকোনা তখনকার জন্য সরি, আমি চাইনি কিন্তু তুমি না বুঝেই,
রুদ্র ছোয়ার অনেক কাছে চলে এলো ছোয়ার ঘাড়ে নাক ঘষতে, ঘষতে।
বিশ্বাস করো তোমাকে ছাড়া অন্য কাওকে ভালোবাসার চোখে দেখিনা আমি,আর তুমি ভাবলে কিভাবে আমি ওমন কিছু করতে পারি?
– রুদ্র অনেক রাত হয়েছে যান এখান থেকে,
– তুমিকি জানোনা, একজন স্বামীর তার বউ এর কাছে আসার জন্য রাত দিন পরোয়া করেনা, তার যখন ইচ্ছা সে আসতে পাড়ে, মহান আল্লাহ এই অধিকার একজন স্বামীকে দিয়েছে।
ছোয়ার অনেক কাছে এসে কথাগুলো বলছে রুদ্র।
– হ্যা আর সেই স্বামী যখন নিজের বউকে বাপের বাড়ি ফেলে অন্য মেয়ের সাথে হাসাহাসি করে, ঘুরতে বের হয় তখন? তখন সেটা কি।
রুদ্র ছোয়ার ঘাড়ের থেকে মুখ সরিয়ে ছোয়াকে জড়িয়ে ধরলো,,,
– তোমাকে কি করে বোঝাই ছোয়া,
– আমাকে কিছু বোঝাতে হবে না,
-ওকে বোঝাবো না, তবে কাল তোমার সাথে আমার দেখা হচ্ছে কোর্টে।
– মানে?? কেন?
– তুমিতো আমার সাথে থাকতে চাওনা তবে এই রিলেশনে নিজেকে আটকে রাখতে চাইনা,তাই কাল এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।
– রুদ্র( করুন ভাবে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে)
– হুম, আমি জানি তুমি অনেক খুশি। তুমিতো এটাই চেয়েছিলে,
– তাহলে আজ স্বামীর অধিকারে এখানে কেনো এসেছেন?
– বাহ রে এতোদিন একটা মেয়ের সাথে থাকলাম কিছুটা মায়া তো পড়েই গিয়েছে, আর আজকেই তো শেষ দিন তাই শেষ বারের মতো ভাবলাম।
ছোয়া রুদ্রকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,
– আপনি এতো খারাপ রুদ্র,ছি।
– আরে ছি বলার কি আছে? তোমার জন্য আর কতোদিন এভাবে একা কাটাবো। এরপর বিয়ে সাদি করে আবার নতুন করে সব শুরু করতে চাই,
– মানে? আপনি বিয়েও করছেন?
– হুম কালকেই।
– এটা হতে পারেনা।
– কেনো পারে না, তুমি দেখো কালকেই আমার বিয়ে হবে। আর শোনো আগে থেকে আবার হাউমাউ করে কেঁদে এসব সবাইকে জানিয়ে দিও না, কাল সবাইকে নিয়ে কোর্টে যাবে আমি সবাইকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবো।
বলেই রুদ্র বিছানা থেকে উঠে বেড়িয়ে গেলো।
আর ছোয়া আগের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে,
রুদ্রের বলা কথাগুলো যেন কানে বাজছে ছোয়ার। ছোয়া যেন আজ নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
তাকে পাগলের মতো ভালোবাসার লোকটা কাল থেকে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে এটা যেন সে মানতেই পাড়ছে না। তার কথা সে ভাবছে না কিন্তু তার সন্তান, তার সন্তানের কি হবে। সে কি তবে বাবার আদর পাবেনা, বাবার হাত ধরে কখনো চলতে পারবেনা!!
– হ্যা রোজা এই অবস্থায় ওকে প্রেশার দিতে পারবোনা আমি, তুমি তো আজ দেখলেই ও কিছু না বুঝেই চিল্লায়। অবুঝের মতো করে, তবে এটা আর বেশি চলতে দেয়া যাবে না। আমি চাইনা আমার ছোয়া আর আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হোক।
– হুম ঠিক বলেছো এসব শেষ হওয়া দরকার
পরেরদিন সকালে,,,,,
ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো ছোয়ার মামার,
– হ্যালো মামা,( রুদ্র)
– মামা ছোয়াকে নিয়ে এখনি কোর্টে চলে আসুন বিশাল গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে,
– কি হয়েছে বাবা?.
– মামা প্রশ্ন করার সময় নেই, আপনি আগে আসুন।
– আচ্ছা বাবা আমরা সবাই আসছি।
ছোয়ার মামা সবাইকে ডেকে এক করলো আর সবাইকে নিয়ে কোর্টে রওনা দিলো,
ছোয়া আনমনে বসে আছে, কারন সে জানে কি হতে যাচ্ছে। আজ সে তার সন্তানের পিতার থেকে আলাদা হতে যাচ্ছে। রুদ্র একদিন বলেছিলো মরন ছাড়া তার থেকে ছোয়াকে কেও আলাদা করতে পারবে না, ছোয়া আর ওর সন্তানকে নিয়ে রুদ্র এক স্বপ্নের ঘর বাধবে যেখানে থাকবেনা কোনো ভুল বোঝাবোঝি থাকবে কোনো রাগ।
তবে আজ কি হলো, আজ তারই চোখের সামনে রুদ্র অন্য কারো হয়ে যাবে তার দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা। ছোয়া চোখের কোনে আজ বিন্দু জলগুলো যেন বাধাহীন হতে চাইছে,
গাড়ি ব্রেক করতেই বাস্তবে ফিরলো, ছোয়া,
সামনে তাকাতেই রুদ্রের দিকে চোখ গেলো ছোয়ার, রুদ্র আজ ব্লু কালার পাঞ্জাবি পড়েছে। ছোয়ার পছন্দের কালার। তবে রুদ্র কখনো পাঞ্জাবি পড়তে চায়না আজ হয়তো অন্য কাওকে নিয়ে নতুন ভাবে জীবন শুরু করবে তাই এই পাঞ্জাবি টা পরেছে। তাই বলে ছোয়ার পছন্দের কালারটাই কেনো পরতে হবে। কালারের কি আকাল পড়েছিলো নাকি। নাকি ছোয়াকে দেখাতেই তার পছন্দের কালারের পাঞ্জাবি পরা, রুদ্রের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে ছোয়া।
– রুদ্র ছোয়ার দিকে তাকালো না, ছোয়ার মামার সাথে কথা বলতে ভেতরে গেলো।
ছোয়া আর ছোয়ার মা ও তাদের সাথে, সাথে ভেতরে গেলো,,,,
– মামা ছোয়া এটা কেমন পাগলামি করলো বলেনতো, ওর কথা না ভাবুক দোহা, দোহার তো একটা ফিউচার আছে তাইনা,
– কি হয়েছে বাবা? ( ছোয়ার মা)
– আসলে আম্মু ছোয়া ওর সব সম্পত্তি এতিমখানা দান করে দিয়েছে, আমাকে আমার এক পরিচিত এসব ফোন করে বলেছে তাই তো আপনাদের সবাইকে ডাকলাম,
ততক্ষনে ছোয়ার পেছনে রোজা এসে দাঁড়িয়েছে,
ছোয়া রুদ্রের কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা রুদ্র এসব কি বলছে নিজেও জানেনা ছোয়া,
ছোয়া কিছু বলতে যাবে তখনি রোজা ছোয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
– ছোয়া যা হচ্ছে হতে দাও, কিছু বলো না,একটু পর সব বুঝতে পারবে,
– মানে, এসব কবে করলো ছোয়া, যার জন্য এতো বছর ধরে এই দুটো মেয়ে লালন পালন করে বড় করলাম আরর আজকে শুনে সে জিনিসই নাকি অন্য কারো নামে হয়ে গিয়েছে!! তার মানে আমার এতো বছরের কস্টের কোনো দাম নেই।
ইচ্ছা করছে বাপের মতো এই দুটো মেয়েকেও মেড়ে ফেলি।
– ছোয়া তার মায়ের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো, লালন পালন করেছে মানে আর বাপের মতো মেড়ে ফেলি মানে কি!! আম্মু এসব কি বলছো তুমি?
– এই মেয়ে আম্মু ডাকবিনা আমাকে, আমার সব প্লেন শেষ করে দিয়ে আম্মু ডাকা হচ্ছে?? মা জন্ম দিয়ে মরেছে ভেবেছি তোদের বাপকে বিয়ে করে সম্পত্তির মালিক হবো, কিন্তু তোর বড় বোন পালিয়ে যাওয়ার পরে তোর বাপ সে রাতেই ঠিক করলো সব সম্পত্তি রুদ্রের নামে করে দেবে কারন তোর সাথে রুদ্রের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই রাতে তোর বাবা রুদ্রকে এসব বলতে ডাকলো কতো প্লেন করে তোর বাপকে মাড়ালাম লোক দিয়ে, আর ফাঁসিয়ে দিলাম রুদ্রকে এতোকিছু করার পর এখন যদি শুনতে হয় সব কিছু অনাথ আর ফকিরদের দান করে দিয়েছিস তাহলে এতো কিছু করার মানে কি দাড়ালো,
– তার মানে তুমি আমার মা না?
– না আমি তোর মা না, তোর মা তোরা অনেক ছোট থাকতেই মাড়া গিয়েছিলো, আমার ভাই তোর বাবার ভালো চেনাজানা ছিলো সেইভাবে তোদের দেখাশোনার জন্য তোর বাবা আমাকে বিয়ে করে,আর এটাও জেনে রাখ তোর এই মামা আমার ভাই না, এটা তোর মড়া মায়ের ভাই।
– মামা এসব কি সত্যি? তুমি এসব আমাদের বলোনি কেনো,,,
– আমি বলছি ছোয়া,( রুদ্র)
তোমার মামা তোমাদের জন্য অনেক করেছেন, তোমার বাবার অবর্তমানে তোমাদের সব সম্পতির মালিক তার স্ত্রী মানে তোমার এই মা, আর সেই ভাবেই এই মহিলা দিনের পর দিন তোমার মামাকে ভয় দেখিয়েছে যে সে যদি তোমাদের সত্যিটা বলে তবে এই মহিলা তোমাদের জীবিত রাখবে না, আর তোমার বাবাকে মাড়ার বিষয়টাও তোমার মামা জানতো কিন্তু তার কাছে কোনো প্রমান ছিলোনা তাই সে কিছু বলতে পারেনি,তোমাদের বাচানোর জন্য এই মহিলা যা বলেছে তাই করেছে।
তোমার কাছ থেকে সম্পত্তির সাইন মহিলাকে দিয়ে, তোমাদের নিয়ে অনেক দূরে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো মামা, কিন্তু এর মাঝে আমি ফিরে আসি তোমার জীবনে, তখন মামা আরো বেশি ভয় পায় যে তোমার সাথে,সাথে আমার ও না কোনো ক্ষতি করে দেয় এই মহিলা,
তোমার মনে আছে ছোয়া,তোমাকে নিয়ে তোমার মামা বাড়ি যাওয়ার পর মামা আমাকে কতো অল্পতেই বিশ্বাস করে ফেলেছিলো, তোমারর একটুও অবাক বা লাগলেও আমার খুব অবাক লেগেছিলো,
আমি সেইদিন থেকে সব খোজখবর নিতে শুরু করি,, আর আমি কিছু টিপ সেট করেছিলাম তোমার বাবার খুনিকে ধরার জন্য। তুমি আমাকে ওইভাবে ছুড়ি মারার পর আমার সন্দেহ হয়েছিলো যে আমার দোহাকে বাচাতে যাওয়া আর ঠিক তখনি তোমার সেখানে উপস্থিতি আর দোহার ছুড়ি লাগা আমার কাছে মনে হয়েছিলো এটা ছিলো একটা ফুলপ্রফ প্লেন,
তাই আমি আরো ভালোভাবে খোজ নেই,
মনে আছে তোমার মামা বাড়ি থেকে দোহাকে আর তোমাকে আমি নিয়ে আসার সময় তোমার মামা কতো ঘাবড়ে ছিলো, তখন মামাকে দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিলো, তারপর আমি মামার পেছনেও লোক লাগাই, তার পর আমি যে সত্যিটা জানতে পারি, তা শুনে আমার মাথা পুরোটা এলোমেলো হয়ে যায়,
তোমার মামা আর তোমার মায়ের কথার ভয়েস রেকর্ড আর তাতে এই মহিলা,বলছিলো যে মামা যদি কাওকে কিছু জানাতে চেষ্টা করে তবে দোহাকে মেরে ফেলবে কারন দোহা ছোট,সম্পতির সাথে এখনো ওর কোনো লেনদেন নেই।
– ছোয়া ততক্ষনে কাঁদতে, কাঁদতে মাটিতে বসে পড়েছে,,
চলবে,,,
(কেমন হলো ধামাকাটা? সামনে আরী বড় ধামাকা আছে)