তোমার জন্য ফিরে আসা

তোমার জন্য ফিরে আসা !! Part- 07

এলোপাতাড়ি থাপ্পড় দিয়ে লোকটাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে গলায় ছুরি ধরে আলিব বললো,
-তুই কি এখনো স্বীকার করবি না যে তোর ভাইকে তুই খুন করেছিস?
-না আমি খুন করি নি আর তুই কে আমার গায়ে হাত তোলার তুই জানিস এর শাস্তি কি হতে পারে?
-আগে তুই বেঁচে থেকে আমার শাস্তির কথা ভাবিস
-আমাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই
-আমার আছে তোকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেখবি তোর কি করতে পারি।
আলিবের চোখ বড় হয়ে রক্ত বর্ন হয়ে গেছে। গায়ের প্রচন্ড শক্তি নিয়ে এক হাতে লোকটাকে উপরে তুলে দিলো। ফ্লোরে অনেক গুলো ছুরি সোজা করে রাখা, সারা রুম কাচঁ ভাঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। ইভা আলিবের ভয়ংকর রুপ দেখে ভয় পেয়ে গেলো। আলিব সত্যি অনেক কিছু করতে পারে ওর ভালো মন মানসিকতার সাথে খুব খারাপ রুপ আছে সেটা আজ ইভা দেখলো।
আলিব লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো,
-তুই সত্যি কথা স্বীকার করবি নাকি নিচে ফেলে দিবো?
-না না আমি সব সত্যি কথা বলবো , দয়া করে আমার মেরে ফেলো না।
আলিব আস্তে করে লোকটাকে বিছানার উপর নামিয়ে দেয় তারপর লোকটা নিজে থেকে বলা শুরু করলো,
-হ্যাঁ আমি আমার ভাইকে খুন করিয়েছি। কয়েক দিন ধরে ব্যাবসায়ের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলো। আমার পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব না তাই কয়েকজন লোক ঠিক করে ওকে মেরে ফেলি। ভেবেছিলাম ওর লাশ পুড়িয়ে দিবো কিন্তু খুন করার পর আমাদের কেউ একজন দেখে ফেলে সেটা বুঝতে পেরে লাশ রেখে চলে আসি।
-ও তো ওর প্রাপ্য টাকা চেয়েছিলো এটা ওর দোষ না, শুধু মাত্র টাকার জন্য নিজের ভাইকে খুন করে দিতে হলো।
-হ্যাঁ মেরে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। ওর সব টাকা ফেরত দেওয়া মানে আমি ভিখারি।
আলিব লোকটাকে থাপ্পড় মেরে বললো,
-তোদের মতো কিছু স্বার্থপর লোকেদের জন্য কারো সুন্দর পরিবার নষ্ট হয়ে যায়। এবার তুই সারাজীবনের মতো জেলে পঁচে মরবি। সকাল হলে সবার সামনে তোর কুকর্মের কথা বলবি মনে থাকে যেনো।
আলিব আসল রুপে ফিরে এসে ইভাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইভা এতোক্ষণ অদৃশ্য হয়ে ছিলো তবে ও অদৃশ্য হয়েছে বাগান বাড়ির পদ্মফুলের পুকুরে পানিতে হাত ডুবিয়ে। আলিব ইভাকে ওর বাসায় পৌঁছে দিলো। আলিব বুঝতে পেরেছে ইভা ওকে দেখে ভয় পেয়েছে তাই আলিব বললো,
“মহারানী কি আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে?”
ইভা কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,
“হুম, আপনি এতো ভয়ংকরী আমার জানা ছিলো না নয়তো কোনোদিন আপনার সাথে যেতাম না ”
“আমি সাধারণ মানুষ না এটা তো জানো তাহলে কেনো ভয় পাও? ”
“আপনি যে কারো ক্ষতি করতে পারেন তাই ”
“যারা অন্যায় তাদের শাস্তি দেই তারা ছাড়া আর কারো ক্ষতি করি নি ”
“আমি আপনার কাছে হাত জোড় করে বলছি আপনি আমার পরিবারের কারো ক্ষতি করবেন না ”
“আমার উদ্দেশ্য সফল না হলেও আমি তোমার পরিবারের কারো ক্ষতি করবো না কথা দিচ্ছি ”
“হুম, আপনি এখন যান আমি ঘুমাবো ”
“আচ্ছা ”
আলিব চলে যাওয়ার পর ইভা ঘুম আসছে না। বার বার মনে পরছে আলিবের ভয়ংকর রুপ। এতোটা ভয় জীবনে আগে কোনোদিন পায় নি।সিদ্ধান্ত নিলো কালকে সকালে ওর মাকে আলিবের বিষয়ে সব কথা বলে দিবে। চোখ গেলো ওয়াড্রোবের পাশে ফাঁকা জায়গাটাতে ওখানে পদ্মফুল রাখা ছিলো, এখান নেই তাহলে গেলো কই? শোয়া থেকে উঠে রুমের সব জায়গায় খুঁজতে লাগলো কিন্তু পদ্মফুল নেই। সাথে সাথে আলিবকে ডাকে,
“পদ্মফুলটা খুঁজে পাচ্ছি না এখন কি হবে?”
“পদ্মফুটা কোথায় রেখেছিলে? ”
আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ওয়াড্রোবের পাশের জায়গাটা,
“ওখানে এসব জিনিস রাখে, কেউ যদি দেখে ফেলে তাই আমি খাটের নিচে কর্নারে রেখে দিয়েছি ”
“আপনি সরিয়ে রেখেছেন তা আমাকে বলেন নি কেনো? আমি ভয় পেয়ে গেছি যদি কেউ ফেলে দিতো তাহলো আপনার কতো সমস্যা হতো ”
“মহারানী বুদ্ধি একটু কম আছে সেটা জেনে কাজটা করেছি ”
“হ্যাঁ সব বুদ্ধি তো রাজামশাইয়ের মাথা ঠাসা ”
“ইসসসহ্ কি যে দরুন লাগলো রাজামশাই শুনে ”
“হয়েছে আপনি যান ”
“না আমি থাকি তুমি ঘুমাও ”
“আপনি থেকে কি করবেন কি শুনি”
“তোমার ঘুৃমান্ত মায়াবী চেহারা দেখবো ”
“ঢং না যান তো ”
“উফফফ্ তুমি ঘুমাও ”
আলিব ইভার মাথায় হাত রাখতে ইভা ঘুমে মগ্ন হলো। সারা রাত আলিব ইভার ঘুমান্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে, ভোর হতে আলিব চলে গেলো।
ফয়সালের ভাই রাতের ঘটনার পরেও সকালে পরিকল্পনা করে “পালিয়ে যাবে তার দোষ স্বীকার করবে না”। দূরে চলে গেলো তাকে কেউ পাবে না। বাড়িতে থেকে বের হতে চাইছে কিন্তু তার পা সামনে আগাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করলো বাড়ির সীমানা অতিক্রম করতে পারে নি। পরক্ষণে মনে হলো লোকটার কেউ শার্টের কলার্ট ধরে টানছে, পিছনে তাকাতে দেখতো পেলো কালকে রাতের সেই ভয়ংকরী আলিবকে। লোকটা এবার কেঁদে দিয়ে বললো,
–ভাই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, আমি এক্ষুনি সবার সামনে স্বীকার করবো আমি আমার ভাইকে খুন করেছি।
–রাতের ঘটনার পরেও তোর এতো সহস দেখে অবাক হচ্ছি৷ তুই ভেবেছিলি পালিয়ে গেলো তোকে কেউ ধরতে পারবে না কিন্তু তোর থেকে আমার বুদ্ধি যে বেশি তাই তোর বাড়ির চারকোনে চারটা কালো গোলাপ রেখে দিয়েছি যাতে তুই বাড়ির সীমানা অতিক্রম করতে না পারিস।
-মাফ চাই আর কোনো দিন কারো ক্ষতি করবো না
-সবার সামনে স্বীকার কর যা।
লোকটা সবার সামনে দোষ স্বীকার করে এবং তার সাথে আরো যারা ছিলো তাদের ধরিয়ে দেয়। পুলিশ খুনিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আলিব ইভার কাছে এসে লোকটার কথা বলে তখন লিমা বললো,
-তুই মাঝে মাঝে একা কথা বলিস কেনো? একা কথা বলা এটা কোন রোগ রে?
-কাউকে সঙ্গী হিসাবে পাই না তাই একা কথা বলি।
-আমার এতো সুন্দর বোনটার এখনো সঙ্গী পেলো আফসোস!
-তোর আফসোস করে লাভ নেই সময় হলে ঠিক আসবে
-হুম, চল তো একটু ছাঁদে যাই
-আচ্ছা চল।
ইভা হাত থেকে ইশারা করলো আলিবকে চলে যেতে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো রাত হলো তাও ইভা আলিবকে ডাকে নি কেমন যেনো ভয় হচ্ছে আলিবের প্রতি। রাত বারোটার আগেই ইভা ঘুমিয়ে গেলো। আলিব এসে একটা ফুলের তোড়া রেখে চলে গেলো। পরের দিন সকালে লিমা ওদের বাসায় চলে গেলো। আলিব আর ইভার মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দেখতে দেখতে আমাবস্যা রাত চলে এলো। আমাবস্যা রাতে খুব বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, ইভা জানালার কাছে বসে বৃষ্টি দেখছে ওর চুলগুলো খোলা ছিলো ঠিক সেই সময় জানালা বাতাসে জোরে ধাক্কা খায়। সাথে সাথে ইভা জানালা বন্ধ করে দিতে আলিব চলে আসে । আজকে আলিবের চোখ মুখ অন্য রকম দেখাচ্ছে, অনেক মায়াবী চেহারা। খাটের নিচ থেকে পদ্ম ফুল বের করে আলিব ইভাকে বলে,
“ফুলটা তুমি একশো টুকরো করো তারপর মোমবাতি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেও।
” এসব করলে কি হবে? ”
” আমার অতীতের কথা তোমাকে বলতে পারবো, আমি নতুন জীবন ফিরে পেতে সক্ষম হতে পারবো ”
“আচ্ছা ”
আলিবের কথা মতো ইভা মোমবাতি জ্বালিয়ে ফুলটা পুড়িয়ে দিচ্ছে আস্তেধীরে আলিবের শরীর নিস্তেজ হয়ে পরছে। ইভা বেশ কয়েকবার আলিবকে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই এখন কি করবে বুঝতে পারছে। হঠাৎ ইভার চোখ গেলো আলিবের হাতের একটা আংটির দিকে। একদিন আলিব বলেছিলো “আমাবস্যা রাতে ইভার হাতের আংটি ওর হাতের মুঠোয় রাখে যেনো ” ইভার এই কথা মনে পরতে ওর হাতের আংটি খুলে আলিবের হাতের মুঠোয় রাখে। কিছুক্ষণ পরেও আলিবের শরীর ঠিক হয় নি। আরো একটা কি যেনো আলিব করতে বলেছিলো? ইভা বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়লো পদ্মফুল যে রুপোর ছোট্টো কলসিতে ছিলো ওই পানিতে কালো গোলাপ আর নীল গোলাপ ডুবিয়ে তার পানি আলিবের গায়ে ছিটিয়ে দিতে হবে, ইভা তাই করলো। কাজটা করার পরে আলিব চোখ মেলে তাকায়।
চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *