The villain lover

The villain lover ।। পার্ট : ২৩

পরেরদিন সকালে,
– ছোয়া, এই ছোয়া তাড়াতাড়ি ওঠো!
– চোখ মেলতেই ছোয়া দেখলো রুদ্র তাকে ডেকেই যাচ্ছে,
– কি হয়েছে ডাকছেন কেনো? ( ঘুম, ঘুম চোখে)
– আজ না তুমি তোমাদের বাসায় চলে যাবে এতো সময় ঘুমালে হবে? ওঠো তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও নাস্তা করে রেডি হও। আর আমি তোমার ব্যাগ ও গুছিয়ে দিয়েছি।
– ছোয়া এবার বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে, কাল অবদি যে মানুষটা শুধু মাত্র সে চলে যাবার কথা বলেছে বলে তাকে থাপ্পড় মেরেছে আজ সেই মানুষটা নিজেই তাকে নিজের থেকে আলাদা করে দিচ্ছে, শুধু তাই না ব্যাগ ও নিজের হাতে গুছিয়ে দিয়েছে। ছোয়ার কাছে এসব যেন কোনো স্বপ্নের থেকে কম না,
– আপনি কি করছেন? কাল তো আপনার কাছ থেকে দূরে যাবো বলেছি তাই আমাকে থাপ্পড় দিলেন, কিন্তু আজ।
– আসলে আমি ভুল ছিলাম কেও না থাকতে চাইলে তো আর বেধে রাখা যায়না তাইনা, আর তুমি যখন আমার কাছে থাকতেই চাইকা তোমাকে শুধু, শুধু আটকে রেখে কষ্টইবা দেবো কেনো বলো? আর যতো তাড়াতাড়ি তুমি যাবে মায়াটাও ততো কম পরবে, চলেই যখন যাবে দেরি করে তো লাভ নেই বলো।
ছোয়া রুদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের কথাগুলো শুনছে, রুদ্র কি বলছে সে বুঝেও যেন বুঝচ্ছেনা।
– কি হলো আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে যাও তাড়াতাড়ি রেডি হও।
আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।
– আমি একা যেতে পারবো।
– আরে না তোমাকে এই অবস্থায় একা ছাড়া ঠিক হবেনা।
– বাকি জীবনটা তো একাই ছেড়ে দিচ্ছেন তবে আজ একা গেলে ক্ষতি কি ( অভিমানী সুরে বললো ছোয়া)
-বাকি জীবনটা একা যেও আজ নাহয় আমার সাথেই যাও!!!
রুদ্রের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ছোয়া বাথরুমে ঢুকে গেলো,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছোয়া, আজ রুদ্রের থেকে দূরে যেতে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। যতোই খারাপ কথা বলুকনা কেনো সে রুদ্রকে অনেক ভালোবাসে, রুদ্রকে ছাড়া থাকার কথা সে চিন্তা করেনি, কিন্তু কালকের পএ সে নিজেই আলাদা হতে চেয়েছে রুদ্রের থেকে, কিন্তু আজ যখন রুদ্র তাকে তার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে ছোয়া যেন তা মেনে নিতে পারছেনা, কারন সে যে রুদ্রের জোর করে ভালোবাসাটাকেও খুব ভালোবেসে ফেলেছে রুদ্র যে তার # The villain lover# তাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে সে। কথাগুলো ভাবছে আর আয়নার সামনে তাকিয়েই চোখের পানি ফেলছে ছোয়া।
কিছুক্ষন পর ফ্রেস হয়ে বের হলো ছোয়া,
– তুমি এসে গেছো চলো আমি নিচে আছি রেডি হয়ে আসো নাস্তা করেই বের হবো।
ছোয়া কিছু না বলে রেডি হতে লাগলো,
রুদ্রের বাসার সবাই জানে ছোয়া মায়ের কাছে যাচ্ছে বেড়াতে,আর রুদ্রও ছোয়াকে রিকুয়েস্ট করেছে ছোয়া যেন এখনি সত্যিটা কাওকে না বলে, রুদ্র পরে সবাইকে সব বুঝিয়ে বলবে,
খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নয়ে বেড়িয়ে গেলো রুদ্র, ছোয়া,আর দোহা।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আর রুদ্র ড্রাইভ করছে।
দোহা তার পুতলের ওপরে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর ছোয়া আনমনে তাকিয়ে আছে গাড়ির বাহিরে,
রুদ্র আর চোখে ছোয়া দেখছে, মুখ শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে ছোয়ার।
– ছোয়া নিজের খেয়াল রেখো।
– চুপ( ছোয়া)
-আর আমার সন্তানের ও।
– চুপ(.ছোয়া)
রুদ্র তার এক হাত ছোয়ার হাতের ওপরে রাখলো,
ছোয়া তখনো নিরব।
– জানো ছোয়া, জীবনে অনেক এমন সময় আসে যখন প্রিয় মানুষের থেকে দূরে সরে যাওয়াটা হয় মঙ্গলজনক। অনেক কারন থাকতে পারে এর পেছনে, তবে কষ্ট কিন্তু যে কোনো একজন পায়না। পায় কিন্তু সবাই, তোমার আমার মাঝে যাই হোক সে কষ্টের আগুনে আমাদের সন্তান যেন কখনো পুড়ে না যায়।
এটা খেয়াল রেখো ও নিষ্পাপ পবিত্র যেমনটা আমার কাছে তুমি!! আমি সেদিন হয়তো বিলিন হয়ে যাবো যেদিন তোমার আর আমার সন্তানের থেকে আমি আলাদা হয়ে যাবো। তোমাকে বিয়ে করার পর মেনে না নেয়া আমার জীবনের অনেক বড় ভুল ছিলো, তোমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তেমন কোনো ভূল আমি আর করবো না।
-এবার ছোয়া তাকালো রুদ্রের দিকে,
মানে? আপনি তো আমাকে আর আমার সন্তানকে দূরেই করে দিচ্ছেন।
– তা ঠিক( মুচকি হেসে) রুদ্র আবার ড্রাইভিং এ মন দিলো, যেন তার মুকের মুচকি হাসিতে আছে কতো প্রশ্নের উত্তর।
ছোয়া পৌছে গেলো তাদের বাড়িতে,
– কেমন আছিস মা, তোর শরীর ভালো, বাবা তুমি কেমন আছো?( ছোয়ার মা,
ছোয়া কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
– কি হয়েছে বাবা?
– কিছুনা আম্মু ওর একটু মন খারাপ কিছুদিন আপনার কাছে থাক।
– আচ্ছা বাবা, তা সমস্যা নেই তুমি আজ থেকে যাবে কিন্তু।
– না আম্মু আমার একটু কাজ আছে আমাকে যেতে হবে।
– থাকলে ভালো হতো বাবা,
– আসবো আম্মু, আম্মু মামা কোথায়?
– ও সকালে একটু বেড়িয়েছে বাবা,
– ওহ আচ্ছা আম্মু আমি আসি, ছোয়ার খেয়াল রাখবেন।
– আচ্ছা বাবা,
ছোয়াকে বাসায় পৌছে দিয়েই রুদ্র বেড়িয়ে পড়লো। ছোয়ার সাথে দেখা হলে হয়তো এখান থেকে আর যেতে ইচ্ছা করতো না রুদ্রের।
ছোয়া রুমে যেয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে,
ছোয়ার মা রুমে এসে ছোয়াকে ডাকবে তখনি ছোয়ার মায়ের মনে হলো ছোয়া হয়তো ঘুমিয়ে গেছে তাই, আর ছোয়াকে ডাকলোনা সে।
ছোয়া সেভাবে চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো।
দুপুরে একবার জেগে খেয়ে নিয়েছিলো তারপর আবার রুমের ভেতরেই ছোয়ার সারাটাদিন কাটলো।
কিছুই ভালো লাগছে না,
ফোনের রিংটোন বাজতেই ছোয়া ফোনের দিকে তাকালো,
রুদ্রের নাম্বার সেফ করা ভালোবাসা দিয়ে, রুদ্র যখন ছোয়ার জন্য ফোন কিনে এনেছিলো, সেই ছোয়ার হাতে ফোনটা দিতে ছোয়া ফোনে ভালোবাসা দিয়ে নাম্বার সেফ করা দেখে রুদ্রের কাছে জানতে চেয়েছিলো এটা কে?
রুদ্র উত্তর দিয়েছিলো তোমার পূরোনো প্রেমিক, রুদ্রের এমন উত্তর শুনে ছোয়া সেদিন অনেক রেগে গিয়েছিলো,
– মানে? এসব কি বলছেন আপনি আমার কোনো প্রেমিক ছিলো না,
– মিথ্যা বলোনা, তুমি ধরা পরে গিয়েছো, তবে তুমি তোমার প্রেমিকের সাথে কথা বলতে পারো আমার কোনো সমস্যা নেই,
– আমি এখনি প্রমান করে দিচ্ছি আমার কোনো প্রেমিক নেই, আর আপনি বাজে কথা বলছেন। বলেই রুদ্র সে নাম্বারে ফোন দেয় আর রুদ্রের ফোন বেজে ওঠে। রুদ্র ফোন ধরে বলে,
– হ্যা জান বলো, আমাকে অনেক মিস করছো আমি জানি!!
– (ছোয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে) এটা তো আপনার নাম্বার? আমাকে মিথ্যা বললেন কেনো? যে আমার প্রেমিকের নাম্বার??( রেগে)
– আরে আমিতো তোমার প্রেমিক, পূরোনো সে প্রেমিক যাকে ভালোবাসার অনুভূতি আগে জাগেনি তোমার কিন্তু এখন তো জেগেছে তাইনা?? তার মানে আমিইতো তোমার পূরোনো প্রেমিক হলাম তাইনা?
ছোয়া মুচকি হেসে সেইদিন রুদ্রকে জড়িয়ে ধরেছিলো,
ূরোনো কথা মনে করতেই ছোয়া মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো,
ফোনের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে,ভাবতে অলরেডি দুবার ফোন কেটে গিয়েছে,
বাস্ততে ফিরলো ছোয়া, নিজেকে স্বাভাবিক করে আরেকবার ফোন আসতেই ফোন রিসিভ করলো,,,
– হ্যালো??
– কি করছো??
– কিছুনা, শুয়ে আছি।
– আচ্ছা ছোয়া,আমার হোয়াইট টি- শার্ট টা কই,
এবার ছোয়া রেগে গেলো,
– এই রাতে, এই জন্য ফোন দিয়েছেন আপনি, জানি কোথায় খুজে দেখেন বলেই ফোন কেটে দিলো ছোয়া।
আপনি কি আমাকে কখনো বুঝবেন না, আমার কতো কষ্ট হচ্ছে আপনাকে ছাড়া আর আপনি কিনা। আর কখনো কথা বলবোনা আপনার সাথে,,কখনো না।
এদিকে রুদ্র,
– আমি জানি জান খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার, তবে তোমাকে শক্ত করার জন্যই এসব করছি জান, তোমার গলাটা শোনার জন্য আমার মনটা খুব ছোটফোট করছিলো, আমি যদি তোমাকে বলতাম তবে তুমি অনেক ভেঙে পড়তে। একটু কষ্ট সইতে তোমাকে হবেই,
তবে আর বেশিদিন না খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।
ছোয়ার ছবি দেখতে, দেখতেই রুদ্র ঘুমিয়ে পড়লো,
– আপুনি, আপুনি।
-কি হয়েছে,এতো সকালে ডাকছো কেনো?
– আপুনি ১১ টা বাজে,,
– কি? লাফ দিয়ে উঠলো ছোয়া,
– হ্যা, মামা বলেছে আমাদের সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হতে বলেছে,
– আমি যাবো না, তোমরা যাও
– আপুনি তুমি না গেলে আমি যাবো না,( কাঁদো, কাঁদো গলায়)
– আচ্ছা, আচ্ছা আমি যাবো।
– আচ্ছা তাইলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।
– আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
দোহা যাওয়ার পর ছোয়া উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো,তারপর নাস্তা করতে বসলো।
– কিরে মা তোর শরীর ঠিক আছে?
– হ্যা মামা ঠিক আছে,
তারপর খাওয়াদাওয়া করে সবাই বের হলো,,,,
শপিং মলে যেয়ে ছোয়া একেকটা জিনিস দেখতে লাগলো, বাচ্চাদের খেলনা, বাচ্চাদের জামা অনেক কিছু।
দেখতে,দেখতেই ছোয়ার চোখ গেলো,
রুদ্র আর রোজা, কি যেন কেনাকাটা করছে আর হাসাহাসি করছে,,,
ছোয়া সেদিকে একপলক তাকিয়ে রইলো, তার মানে এই জন্য রুদ্র তাকে মায়ের কাছে রেখে যেতে আপত্তি করলোনা।
ছোয়া দারিয়ে না থেকে ওদের কাছে গেলো,
– বাহ, এই জন্যই কাল আমাকে আম্মুর কাছে রেখে যেতে দ্বিধা করলেন না???
– ছোয়া তুমি???( রুদ্র)
– হ্যা আমি, ভুল সময়ে এসে গিয়েছি তাইনা। সরি এখন আমার এখান থেকে যাওয়া উচিত!!
– আসলে ছোয়া, ( রোজা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই রুদ্র বলে উঠলো ছোয়া বাজে কোনো কথা বলবে না।
– হ্যা আমিতো কথাই বলি আসলে আমি কিছু বলারই বা কে। আমার কিছু বলার তো কোনো অধিকারই নেই।
– ছোয়া আমার কথা প্লিজ শোনো, ছোয়াকে ধরতে যাবে তখনি।
– আপনি ছুবেন না আমাকে, আমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে যেয়ে এসব করতে লজ্জা করছেনা? আরে ডিভোর্স এ ওয়েট তো করতে পারতেন?
– ঠাসসসসসসসস
সবার সামনে ছোয়াকে থাপ্পড় দিলো রুদ্র, আর ছোয়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
– এটা কি করলে রুদ্র?( রোজা)
– লজ্জা করলোনা? লোকভর্তি মানুষের মাঝে নিজের প্রেগন্যান্ট বউয়ের গায়ে হাত তুলতে???
আপনি আর কখনো আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না বলেই ছোয়া চলে গেলো,
– রুদ্র এটা একদম ঠিক করলেনা,মেয়েটা কতো কষ্ট পেয়েছে।
রুদ্র চুপ করে দাঁড়িয়ে ছোয়ার চলে যাওয়া দেখছে। আর ছোয়া কাঁদতে, কাঁদতে চলে যাচ্ছে।
– মেয়েটা অনেক অবুঝ রোজা, ওর কথায় কিছু মনে করোনা।
– কিরে মা কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?
– কিছুনা মামা চলো বাসায় যাবো,
– আরে এখনি? পেছনে রুদ্রকে দেখেই, আরে রুদ্র বাবা তুমি। ছোয়া ওইদেখ রুদ্র।
– ভালো আছেন মামা?
– হ্যা বাবা ভালো আছি, তুমি কাল চলে আসছিলে কেনো? আজ আমাদের সাথে চলো।
– না মামা আরেকদিক আজ একটু কাজ আছে, রোজা এটা ছোয়ার মামা, মামা এটা আমার বন্ধু রোজা।
– ভালো আছো মা, তা রুদ্র ওকে নিয়েই চলো বাড়িতে
– না মামা, আরেকদিক আজ আমাদের একটু কাজ আছে,
– মামা তাদের কাজ আছে জোর করোনা, চলো বাসায় যাবো,,,( ছোয়া)
– এ কেমন কথা ছোয়া? বাবা ছোট মানুষ ওর কথায় কিছু মনে করোনা।
তাহলে রোজা মা একদিন এসো আমাদের বাসায়!!
– আচ্ছা মামা আসবো,
ছোয়া আর কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো,
এই ছোয়া দাড়া, দেখোতো কি হলো মেয়েটার আচ্ছা বাবা আমি যাই। তোমরা এসো কিন্তু।
– আচ্ছা মামা,
ছোয়ার মামা ছোয়ার পেছনে যাচ্ছে আর রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই।
বাসায় এসে বিছানায় অনেকক্ষন শুয়ে, শুয়ে কেঁদেছে ছোয়া,
আর ওদিকে রুদ্রের ছোয়াকে থাপ্পড় মারা নিয়ে অনুশোচনার শেষ নেই
ছোটফোট ছোয়াকে একবার দেখার জন্য। রুদ্র আর কিছু না ভেবে ছূটে গেলো ছোয়ার কাছে,,,
চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *